মুসনাদে ইমাম আযম আবু হানীফা রহঃ

৪. নামায অধ্যায়

হাদীস নং: ১৪১
খুতবার বর্ণনা
১৪১। হযরত ইবরাহীম (রাহঃ) থেকে বলেনঃ কোন ব্যক্তি [ইবনে মাজাহ শরীফের বর্ণনা অনুযায়ী তিনি ছিলেন হযরত আলকামা ইবনে কাসেম (রাযিঃ)] হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাযিঃ) এর নিকট নবী করীম (ﷺ)-এর জুমুআর খুতবা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন। হযরত ইবনে মাসউদ (রাযিঃ) বলেনঃ তোমরা কি সূরা জুমুআ পাঠ কর না ? তখন ঐ ব্যক্তি বলল, হ্যাঁ। কিন্তু আমি এর মর্ম যথাযথ উপলব্ধি করতে পারিনি। অতঃপর হযরত ইবনে মাসউদ (রাযিঃ) পবিত্র কুরআনের এই আয়াত তিলাওয়াত করেনঃ
وَإِذَا رَأَوْا تِجَارَةً أَوْ لَهْوًا انْفَضُّوا إِلَيْهَا وَتَرَكُوكَ قَائِمًا
"যখন তারা দেখলো ব্যবসা ও কৌতুক, তখন তারা তোমাকে দাঁড়ানো অবস্থায় রেখে তার দিকে ছুটে গেল।" (৬২:১১)
عَنْ حَمَّادٍ، عَنْ إِبْرَاهِيمَ، أَنَّ رَجُلًا حَدَّثَهُ، أَنَّهُ سَأَلَ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ مَسْعُودٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ " عَنْ خُطْبَةِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ الْجُمُعَةِ، فَقَالَ لَهُ: أَمَا تَقْرَأُ سُورَةَ الْجُمُعَةِ؟ قَالَ: بَلَى، وَلَكِنْ لَا أَعْلَمُ، قَالَ: فَقَرَأَ عَلَيْهِ: {وَإِذَا رَأَوْا تِجَارَةً أَوْ لَهْوًا انْفَضُّوا إِلَيْهَا وَتَرَكُوكَ قَائِمًا} [الجمعة: 11]

হাদীসের ব্যাখ্যা:

উপরোক্ত হাদীসে হযরত ইবনে মাসউদ (রা) যে পবিত্র কুরআনের উপর গভীর জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন, তা প্রকাশ পেয়েছে। তিনি এই আয়াতের দ্বারা সূক্ষ্ম দলীল পেশ করে হুযূর (সা)-এর দাঁড়ানো অবস্থায় খুতবা প্রদানকে প্রমাণিত করেছেন। দলীলের মূল উৎস হলো وَتَرَكُوكَ قَائِمًا অর্থাৎ (হে রসূল) আপনাকে তারা দাঁড়ানো অবস্থায় ছেড়ে গিয়েছে। এতে প্রতীয়মান হয় যে, হুযূর (সা) দাঁড়িয়ে খুতবা প্রদান করেছেন। হযরত জাবির ইবনে সামুরা (রা), হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা), হযরত আবু হুরায়রা (রা) এবং হযরত ইবনে আব্বাস (রা) সহ অন্যান্য সাহাবা (রা) থেকে এটাই বর্ণিত আছে। খুতবা সম্পর্কে এখানে কয়েকটি বিষয় আলোচনা প্রয়োজন । প্রথমত খুতবা দাঁড়িয়ে পড়া সুন্নত অথবা খুতবা সহীহ হওয়ার জন্য দাঁড়ানো শর্ত। ইমাম আবূ হানীফা (রা)-এর মতে দাঁড়িয়ে পড়া সুন্নত। অর্থাৎ যদি কেউ বসে খুতবা পাঠ করে, তবুও খুতবা সহীহ হবে। কেননা খুতবা প্রকৃতপক্ষে বক্তৃতা প্রদান করা, যা বসেও করা যেতে পারে। কিন্তু এটা যেহেতু রাসূলুল্লাহ্ (সা) এবং সাহাবায়ে কিরামের আমলের বিরোধী, তাই এটা মাকরূহ বলে গণ্য হয়েছে। অবশ্য উত্তম হলো দাঁড়িয়ে খুতবা প্রদান করা যাতে খতীবের আওয়ায বহু দূর পর্যন্ত পৌঁছতে পারে। ইমাম শাফিঈ (র) দাঁড়ানোকে খুতবার শর্ত বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন যে, যদি কেউ বসে খুতবা পাঠ করে, তা হলে যেন খুতবা দেওয়া হল না। তাঁদের দলীল হলো এই যে, নবী করীম (সা) ও সাহাবায়ে কিরাম থেকে এরূপ প্রমাণিত আছে। ইমাম মালিক (র) এক রিওয়ায়েতে ইমাম শাফিঈ (র)-এর সাথে ঐকমত্য পোষণ করেছেন। ইমাম আহমদ (র)-ও এ ব্যাপারে তাদেরকে অনুসরণ করেছেন।
ইমাম আবু হানীফা (র) মুসলিম শরীফে হযরত কা'ব ইবনে উজরা (রা) বর্ণিত হাদীস দলীল হিসেবে পেশ করেছেন। বর্ণিত আছে, তিনি মসজিদে প্রবেশ করেন, সেখানে আবদুর রহমান ইবনে উম্মুল হিকামকে বসে বসে খুতবা প্রদান করতে দেখে বলেন انظروا الى هذا الخبيث يخطب قاعدا "এই খবীস ব্যক্তির প্রতি লক্ষ্য কর, সে বসে বসে খুতবা দিচ্ছে।” পবিত্র কুরআনের আয়াত- وَإِذَا رَأَوْا تِجَارَةً أَوْ لَهْوًا الاية এরদ্বারা নামায ফাসেদ হওয়া সম্পর্কে কেউ কোন ব্যাখ্যা প্রদান করেননি। দ্বিতীয় আলোচ্য বিষয় হলো, সংক্ষিপ্ত খুতবা এবং শীর্ঘ নামায। সুন্নত হলো এই যে, খুতবা সংক্ষিপ্ত করে নামায দীর্ঘ করতে হবে। মুসলিম শরীফে হযরত আম্মার (রা) থেকে বর্ণিত আছে : إن طول صلاة الرجل ، وقصر خطبته مئنة من فقهه ، فأطيلوا الصلاة ، وأقصروا الخطبة ، فإن من البيان سحراপুরুষের নামায় দীর্ঘ করা এবং খুতবা সংক্ষিপ্ত করা তাদের ইলমে ফিকহর জ্ঞানের পরিচায়ক। সুতরাং নামায় দীর্ঘ কর এবং খুতবা সংক্ষিপ্ত কর। অবশ্য কোন কোন বর্ণনা যাদুমিশ্রিত।” মুসতাদরাক গ্রন্থে বর্ণিত আছে, হযরত আম্মার (রা) বলেন : হুযূর (সা) আমাদেরকে খুতবা সংক্ষিপ্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন। তৃতীয় হলো, লাঠির উপর হাত রেখে খুতবা প্রদান করা। এটাও হুযূর (সা) থেকে বর্ণিত আছে। আবূ দাউদে হাকাম ইবনে হাযম (র) থেকে বর্ণিত আছে, আমরা জুমুআর নামাযে হাযির হয়েছি তখন হুযূর (সা)-কে লাঠি অথবা ধনুকের উপর ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে খুতবা দিতে দেখেছি। হযরত বারা' (রা) বলেনঃ আঁ হযরত (সা) ঈদের সময় ধনুকের উপর ভর দিয়ে খুতবা দিতেন।
মুসনাদে আবু হানীফা রহঃ - হাদীস নং ১৪১ | মুসলিম বাংলা