মুসনাদে ইমাম আযম আবু হানীফা রহঃ

৪. নামায অধ্যায়

হাদীস নং: ১৩৮
জুমুআর দিন গোসল করা
১৩৮। হযরত আয়েশা (রাযিঃ) বলেনঃ লোকজন জুমুআর নামাযে অংশগ্রহণের জন্য এই অবস্থায় আগমণ করতেন যে, তাদের শরীর থেকে দুর্গন্ধ বের হতো এবং শরীরে ধূলিমাখা থাকত। অতঃপর তাদেরকে নির্দেশ দেওয়া হলো যে, যারা জুমুআর নামাযে অংশগ্রহণের জন্য আগমণ করবে, তারা যেন (নামাযের পূর্বে) গোসল করে।
অন্য এক রিওয়ায়েতে আছে যে, লোকজন কৃষিকাজ করত। যখন জুমুআর নামাযের জন্য গমন করত, তখন ঘাম ও ধূলিবালিতে জর্জরিত থাকত। এ অবস্থায় রাসুলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেন যখন তোমরা জুমুআর নামাযের জন্য আগমণ করবে, তখন এর পূর্বে গোসল করে নেবে।
عَنْ يَحْيَى بْنِ سَعِيدٍ، عَنْ عَمْرَةَ، عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا، قَالَتْ: كَانُوا يَرُوحُونَ إِلَى الْجُمُعَةِ، وَقَدْ عَرَقُوا وَتَلَطَّخُوا بِالطِّينِ، فَقِيلَ لَهُمْ: «مَنْ رَاحَ إِلَى الْجُمُعَةِ، فَلْيَغْتَسِلْ» ، وَفِي رِوَايَةٍ: كَانَ النَّاسُ عُمَّارَ أَرْضِهِمْ، وَكَانُوا يَرُوحُونَ يُخَالِطُهُمُ الْعَرَقُ وَالتُّرَابُ، فَقَالَ لَهُمْ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إذَا حَضَرْتُمُ الْجُمُعَةَ، فَاغْتَسِلُوا»

হাদীসের ব্যাখ্যা:

উপরোক্ত হাদীস জুমুআর দিন গোসল করা সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে। জমহুর (جمهور) উলামা এবং অধিকাংশ আয়িম্মার মতে জুমুআর দিন গোসল করা ওয়াজিব নয়; বরং সুন্নত। কারো কারো মতে জুমুআর দিন গোসল করা ওয়াজিব। কাযী আয়ায এটা ইমাম মালিক (র)-এর মাযহাব বলে উল্লেখ করেছেন। ওয়াজিব হওয়ার পক্ষে মতামত প্রদানকারী দল বুখারী ও মুসলিম শরীফে হযরত ইবনে উমর (রা) বর্ণিত হাদীস পেশ করেন। إذا أتى أحدكم الجمعة فليغتسل "যখন তোমাদের মধ্যে কেউ জুমুআর নামায আদায়ের জন্য আগমণ করবে, তবে সে যেন পূর্বে গোসল করে নেয়"। অথবা বুখারী ও মুসলিম শরীফে হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা) বর্ণিত হাদীস : غسل يوم الجمعة واجبٌ على كل محتلمٍ "প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির উপর জুমুআর গোসল ওয়াজিব।” বাহ্যিক দৃষ্টিতে এই হাদীসের দ্বারা গোসল ওয়াজিব প্রমাণিত হয়।
জমহুর (جمهور) উলামায়ে কিরাম সহীহ হাদীসের দ্বারা তাঁদের দলীল পেশ করেন। প্রথমতঃ বর্ণিত হাদীসের দ্বারা দলীল পেশ করে বলেনঃ জুমুআর দিন গোসলের নির্দেশ এইজন্য করা হয়েছে যে, লোকজন কৃষিকাজ করার ফলে ধূলিবালি ও ঘামে জর্জরিত হয়ে জুমুআর নামাযে আগমণ করত, যার ফলে মুসল্লীদের কষ্ট হতো। মোটা কাপড় পরিধান করে আরবের তীব্র গরমের দ্বিপ্রহরে কৃষিকাজ করে ধূলিবালি থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব নয়। তাই তাদের অবস্থার প্রেক্ষিতে তাদেরকে গোসল করার জোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যখন এই অবস্থা দূরীভূত হয়ে যায়, তখন ঐ নির্দেশও সহজ করে দেওয়া হয়। দ্বিতীয় দলীল হলো হযরত উমর (রা) এবং হযরত উসমান (রা)-এর ঘটনা। একবার হযরত উসমান (রা) বিলম্ব করে জুমুআর নামাযে আগমণ করেন। এতে হযরত উমর (রা) খুতবা চলাকালেই বিলম্বের কারণ জিজ্ঞাসা করেন। হযরত উসমান (রা) ওযর বর্ণনা করে বলেন : একটি কাজে এই বিলম্ব হয়েছে যার ফলে শুধু উযূ করে এসেছি। এতে হযরত উমর (রা) আরো অধিক আশ্চর্য হয়ে বলেন নিশ্চয়ই আপনি গোসলের সুন্নত পরিত্যাগ করেছেন। যদি গোসল ওয়াজিব হতো তাহলে হযরত উমর (রা) তাঁকে গোসলের জন্য ফেরত পাঠাতেন এবং তাঁর ওজরের উপর চুপ থাকতেন না। এছাড়া উপস্থিত সাহাবীগণের মধ্যে কেউ বলেননি যে, আমীরুল মু'মিনীন! হযরত উসমান (রা) ওয়াজিব ত্যাগ করেছেন। এ অবস্থায় তিনি কিভাবে চুপ থাকবেন? তৃতীয় দলীল মুসলিম শরীফে হযরত আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত আছে, لو اغتسلتم লোকদেরকে বলা হয়েছে যে, (যদি তোমরা গোসল করতে) তা হলে কত ভাল হতো। এই বাক্যের দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, গোসল ওয়াজিব নয়। চতুর্থ দলীল তিরমিযী, আবু দাউদ ও অন্যান্য হাদীসে হযরত সামুরা ইবনে জুনদুব (রা) বর্ণিত হাদীস : من توضأ فبها ونعمت ومن اغتسل فالغسل أفضل "যিনি উযূ করেছেন; তিনি ভাল মূলত সুন্নতের উপর আমল করেছেন আর যিনি গোসল করেছেন, তিনি উত্তম কাজ করেছেন কেননা গোসলই উত্তম।" উপরোক্ত হাদীসসমূহের দৃষ্টিকোণ থেকে ওয়াজিব সম্পর্কিত হাদীসসমূহের ব্যাখ্যা এইভাবে করা যায়, যেমন فليغتسل এর মধ্যে امر (নির্দেশ) ওয়াজিবের জন্য নয়; বরং মুস্তাহাবের জন্য বলা হয়েছে। এখানে ,واجب শব্দের অর্থ প্রকৃত ওয়াজিব নয়।বরং প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির জন্য জুমুআর দিনে গোসলের জোর তাকিদ করা হয়েছে। অতঃপর এই গোসলের মধ্যে ওয়াজিব নয় এমন বিষয় যেমন মিসওয়াক করা ও সুগন্ধি ব্যবহারের বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। কিন্তু এ দু'টি ওয়াজিব নয়। সুতরাং গোসল কিভাবে ওয়াজিব হবে?
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন
মুসনাদে আবু হানীফা রহঃ - হাদীস নং ১৩৮ | মুসলিম বাংলা