মুসনাদে ইমাম আযম আবু হানীফা রহঃ

৪. নামায অধ্যায়

হাদীস নং: ১৩৭
যদি কেউ একা নামায আদায় করে, অতঃপর মসজিদে প্রবেশ করে এবং এ সময়ে নামাযের জামাআত শুরু হলে, তখন কি করতে হবে
১৩৭। হযরত জাবির ইবনে আসওয়াদ (রাযিঃ) অথবা হযরত আসওয়াদ ইবনে জাবির (রাযিঃ)-এর পিতা থেকে বর্ণিত আছে, নবী করীম (ﷺ)-এর যুগে দু' ব্যক্তি যোহরের নামায ঘরে আদায় করেন এই ধারণার বশবর্তী হয়ে যে, হয়ত লোকজন জামাআতের সাথে নামায শেষ করেছেন। অতঃপর মসজিদে এসে দেখেন যে, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) নামাযে মগ্ন রয়েছেন। তখন তাঁরা এই ভেবে মসজিদের এক কোণায় গিয়ে বসে পড়লেন যে, (একবার ফরয আদায়ের পর) এবার জামাআতে অংশগ্রহণ করা তাদের জন্য জায়েয নয়। যখন রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) নামায থেকে অবসর হলেন এবং তিনি তাদেরকে (এক কোণায় পৃথকভাবে) বসে থাকতে দেখলেন, তখন লোক পাঠিয়ে তাদেরকে ডেকে আনালেন। অতঃপর তাদেরকে এমন অবস্থায় সেখানে উপস্থিত করা হলো যে, তাঁদের কাঁধের গোশ্ত এই ভয়ে কাঁপছিল যে, (হয়ত) তাদের সম্পর্কে কোন শাস্তির নির্দেশ জারী হয়েছে। হুযূর (ﷺ) তাঁদেরকে জামাআতে অংশগ্রহণ না করার কারণ জিজ্ঞাসা করেন। তাঁরা তখন নবী করীম (ﷺ)-কে সম্পূর্ণ ঘটনা বর্ণনা করেন। তখন তিনি ইরশাদ করেনঃ তোমরা যখন এরূপ করবে (ঘরে নামায পড়ে আসবে) তখন লোকদের সাথে জামাআতে অংশগ্রহণ করবে এবং প্রথম নামাযকে ফরয মনে কর।
একদল এই হাদীসকে হযরত আবু হানীফা (রাহঃ) থেকে, তিনি হযরত হায়সাম (রাহঃ) থেকে এবং তিনি এই হাদীস মরফূ' বর্ণনা করেছেন [অর্থাৎ এই হাদীস মুরসাল (مرسل) এবং ইমাম আবু হানীফা (রাহঃ)-এর মতে এই হাদীস দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য]।
عَنِ الْهَيْثَمِ، عَنْ جَابِرٍ بْنِ الْأَسْوَدِ أَوِ الْأَسْوَدِ بْنِ جَابِرٍ، عَنْ أَبِيهِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: أَنَّ رَجُلَيْنِ صَلَّيَا الظُّهْرَ فِي بُيُوتِهِمَا عَلَى عَهْدِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُمَا يَرَيَانِ أَنَّ النَّاسَ قَدْ صَلُّوا، ثُمَّ أَتَيَا الْمَسْجِدَ، فَإِذَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي الصَّلَاةِ، فَقَعَدَا نَاحِيَةً مِنَ الْمَسْجِدِ، وَهُمَا يَرَيَانِ أَنَّ الصَّلَاةَ لَا تَحِلُّ لَهُمَا، فَلَمَّا انْصَرَفَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَرَآهُمَا أَرْسَلَ إِلَيْهِمَا، فَجِيءَ بِهِمَا، وَفَرَايِصُهُمَا تَرْتَعِدُ مَخَافَةَ أَنْ يَكُونَ فِي أَمْرِهِمَا شَيْءٌ، فَسَأَلَهُمَا، فَأَخْبَرَاهُ الْخَبَرَ، فَقَالَ: «إذَا فَعَلْتُمَا ذَلِكَ، فَصَلِّيَا مَعَ النَّاسِ، وَاجْعَلَا الْأُولَى هِيَ الْفَرْضَ» ، قِيلَ: قَدْ رُوِيَ هَذَا الْحَدِيثُ عَنْ جَمَاعَةٍ، عَنْ أَبِي حَنِيفَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، فَقَالُوا: عَنِ الْهَيْثَمِ يَرْفَعُهُ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ

হাদীসের ব্যাখ্যা:

উপরোক্ত হাদীসের দ্বারা ফিকহর এই মাসয়ালা জানা যায় যে, যদি কেউ ঘরে নামায আদায় করার পর মসজিদে লোকদেরকে জামাআতে নামায আদায় করতে প্রত্যক্ষ করেন, তবে তিনি যেন জামাআতে অংশগ্রহণ করেন, পৃথকভাবে বসে না থাকেন। তার একা আদায়কৃত নামায ফরয হিসেবে গণ্য হবে এবং জামাআতের সাথে আদায় করা নামায নফল হবে। যেমন তিরমিযী, আবূ দাউদ ও নাসাঈসহ অন্যান্য কিতাবে বর্ণিত আছে إنما ذلكم نافلة কিন্তু হানাফী মাযহাবে ফজর, মাগরিব ও আসর এই নির্দেশের আওতাভুক্ত নয়। কেননা সহীহ হাদীস অনুযায়ী ফজর, মাগরিব ও আসরের পর নফল নামায জায়েয নয়। এছাড়া দারে কুতনী সহীহ সনদের মাধ্যমে হযরত ইবনে উমর (রা) থেকে বর্ণনা করেন। إذا صليت في أهلك ثم أدركت الصلوة فصلها إلا الفجر والمغرب "যখন তুমি পরিবারবর্গের মধ্যে নামায আদায় করবে, এরপর জামাআতে নামায পাবে, তখন ঐ নামাযে অংশগ্রহণ করবে। কিন্তু ফজর ও মাগরিব ব্যতীত।” এ ব্যাপারে হাদীসের মধ্যে ব্যতিক্রম নির্দেশ রয়েছে। মাগরিব নামারে যদিও নফল নামায জায়েয, কিন্তু তিন রাকাআত নফলের প্রমাণ নেই। সুতরাং এ তিন ওয়াক্ত নামায এই নির্দেশের আওতা বহির্ভূত রাখা হয়েছে।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
মুসনাদে আবু হানীফা রহঃ - হাদীস নং ১৩৭ | মুসলিম বাংলা