মুসনাদে ইমাম আযম আবু হানীফা রহঃ

৩. পবিত্রতা অর্জনের অধ্যায়

হাদীস নং: ৭৮
কাপড় থেকে বীর্য খুঁটে ফেলা
৭৮। হযরত হাম্মাদ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে, কোন এক ব্যক্তি উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা (রাযিঃ)-এর বাড়িতে মেহমান হলেন। তার জন্য তিনি একটি লেপ পাঠালেন। রাতে সে এটা মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। ঐ সময় তার স্বপ্নদোষ হয়ে যায়। সে সম্পূর্ণ লেপটি ধুয়ে দেয়। হযরত আয়েশা (রাযিঃ) এ বিষয়টি জানার পর বললেনঃ পূরা লেপটি কেন ধৌত করলে? এটা খুঁটে ফেললেই তো যথেষ্ট হতো। আমি রাসুলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর কাপড় থেকে বীর্য খুঁটে পরিষ্কার করে দিয়েছি অতঃপর এ কাপড়ে তিনি নামায আদায় করেছেন।
عَنْ حَمَّادٍ، عَنْ إِبْرَاهِيمَ، عَنْ هَمَّامٍ، أَنَّ رَجُلًا أَضَافَتْهُ عَائِشَةُ أُمُّ الْمُؤْمِنِينَ، فَأَرْسَلَتْ إِلَيْهِ بِمِلْحَفَةٍ، فَالْتَحَفَ بِهَا اللَّيْلَ فَأَصَابَتْهُ جَنَابَةٌ، فَغَسَلَ الْمِلْحَفَةَ كُلَّهَا، فَقَالَتْ: مَا أَرَادَ بِغَسْلِ الْمِلْحَفَةِ، إِنَّمَا كَانَ يُجْزِيهِ أَنْ يَفْرُكَهُ «لَقَدْ كُنْتُ أَفْرُكُ مِنْ ثَوْبِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، ثُمَّ يُصَلِّي مَعَهُ»

হাদীসের ব্যাখ্যা:

বীর্য অপবিত্র ও পবিত্র হওয়া সম্পর্কে ইমামদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। ইমাম শাফিঈ (র) এবং ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (র)-এর মতে বীর্য পবিত্র। ইমাম মালিক (র), ইমাম আবূ হানীফা (র) এবং ইমাম আহমদ (র) এক বর্ণনায় একে অপবিত্র বলেছেন। ইমাম শাফিঈ (র) ও ইমাম আহমদ (র) বর্ণনা এবং বিবেক-বুদ্ধি উভয়ের দ্বারা স্বীয় মাযহাবের উপর দলীল পেশ করেছেন। তাঁদের একটি দলীল হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত হয়েছে। যাতে বলা হয়েছে যে, বীর্য মৃত। এটা পরিষ্কার করে ফেল। বায়হাকী আতা ইবনে আব্বাসের সূত্রে মরফূ হিসেবে এ হাদীস সংগ্রহ ও সংকলন করেছেন। তবে সহীহ হলো, এই হাদীসটি মওকুফ। দ্বিতীয় দলীল ইবনে খুযায়মা, দারে কুতনী এবং বায়হাকী হযরত আয়েশা (রা) থেকে রিওয়ায়েত করেছেন। তিনি বলেছেন, আমি হুযুর (সা)-এর কাপড় থেকে বীর্য খুঁটে ফেলতাম এবং তিনি ঐ কাপড় দিয়ে নামায আদায় করতেন। যুক্তি হিসেবে (عقلي دليل) তাঁদের মত হলো এই যে, যেহেতু আম্বিয়া আলাহিমুস সালাম এবং আওলিয়ায়ে কিরাম এই বীর্য থেকে সৃষ্টি হয়েছেন, তাই বীর্য কিভাবে অপবিত্র হতে পারে। এরূপ পবিত্র ব্যক্তিদেরকে অপবিত্র বস্তু থেকে সৃষ্টি করা বোধগম্য নয়।
বীর্য থেকে পবিত্রতা অর্জনের ব্যাপারে ইমাম মালিক (র) এবং ইমাম আবূ হানীফা (র)-এর মধ্যে সামান্য মতপার্থক্য রয়েছে। ইমাম মালিক (র) বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত বীর্য ধৌত করা না হবে, ততক্ষণ কাপড় পবিত্র হবে না। ইমাম আবূ হানীফা (র) বলেন, শুদ্ধ বীর্য খুঁটে ফেলে দিলেই কাপড় পবিত্র হয়ে যায় কিন্তু আর্দ্র বা তরল হলে ধৌত করা ব্যতীত কাপড় পবিত্র হবে না। ইমাম মালিক (র) এটা রক্তের বিধানের মত মনে করেন। কেননা রক্ত ধৌত করা ব্যতীত পবিত্র হয় না। ইমাম আবূ হানীফা (র) সহীহ্ আবূ আওয়ানায় হযরত আয়েশা (রা) হতে বর্ণিত হাদীসের দ্বারা দলীল পেশ করেন।
হযরত আয়েশা (রা) বলেন, বীর্য শুষ্ক হলে আমি নবী করীম (সা)-এর কাপড় থেকে তা খুঁটে পরিষ্কার করে দিতাম আর আর্দ্র হলে তা ধুয়ে দিতাম। হযরত আয়েশা (রা)-এর এ কাজের পর নবী করীম (সা)-এর নীরব থাকা এ কথার স্পষ্ট দলীল যে, বীর্য নাপাক। অন্যথায় বিনা কারণে তা ধৌত করার জন্য হুযূর অনুমতি দিলেন কেন? এর থেকেও বলিষ্ঠ দলীল হল এই যে, মুসলিম শরীফের বর্ণনায় আছে, হযরত আয়েশা (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) নিজে বীর্য ধৌত করতেন এবং এরপর সে কাপড় পরিধান করে সালাতের জন্য চলে যেতেন। তখন কাপড়ে আমি ধৌত করার আলামতও দেখতে পেতাম। বীর্য তিনি নিজেই ধৌত করতেন অথবা ধৌত করার নির্দেশ দান করতেন, কিন্তু উভয় অবস্থায় বীর্য অপবিত্র হওয়া প্রমাণিত হয়। এছাড়া দারে কুতনী হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসার (রা) থেকে বর্ণনা করেন যে, হুযূর (সা) বলেছেনঃ يَا عَمَّارُ إِنَّمَا يُغْسَلُ الثَّوْبُ مِنْ خَمْسٍ: مِنَ الْغَائِطِ وَالْبَوْلِ وَالْقَيْءِ وَالدَّمِ وَالْمَنِيِّ "হে আম্মার! কাপড় পাঁচটি বস্তুর কারণে ধৌত করা হয়- মল, মূত্র, বমি, রক্ত এবং বীর্য।” এতে তিনি বীর্যকে পাঁচটি অপবিত্র বস্তুর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করছেন। সুতরাং হযরত ইবনে আব্বাস (রাযিঃ)-এর হাদীস সহীহ মনে করা হলে তা রহিত (منسوخ) হবে। শুধু খুঁটে ফেলার ফলে কপড় পবিত্র হওয়া এই হাদীসের দ্বারা প্রমাণিত হয়। যদি কেউ বলে যে, এটা পবিত্রতার কারণে ছিল, অপবিত্রতার কারণে নয়, তা হলে এ দাবির স্বপক্ষে কোন দলীল নেই।
যুক্তিগত দলীল (دليل عقلي) হলো এই যে, বীর্য বের হওয়া বড় ধরনের অপবিত্রতা বলেই পূর্ণাঙ্গ পবিত্রতা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে এবং গোসল ওয়াজিব হয়েছে। এরপর বীর্যকে পরিত্র বলে মত পোষণকারীদের দলীলের জওয়াব হলো এই যে, যদি আম্বিয়ায়ে কিরাম ও আওলিয়ার সৃষ্টি বীর্য থেকে হওয়া এর পবিত্রতার দলীল হয়, তাহলে আবূ জাহল ও আবূ লাহাবের মত কাফির-মুশরিকের সৃষ্টিও এই বীর্য থেকেই হয়েছে- এর কি জওয়াব? অতঃপর অপবিত্র বস্তুর সৃষ্টির মধ্যে কি মন্দ থাকতে পারে? যেমন রক্ত থেকে দুধ তৈরি হয়ে থাকে। বরং অপবিত্র বস্তু থেকে পবিত্র বস্তু সৃষ্টি করা আল্লাহর কুদরতের বহিঃপ্রকাশ। দ্বিতীয়তঃ যদি এটা পবিত্র হয়, তাহলে বের হওয়ার কারণে পবিত্রতা নষ্ট হয় কেন? সুতরাং এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, বীর্য অপবিত্র।
মুসনাদে আবু হানীফা রহঃ - হাদীস নং ৭৮ | মুসলিম বাংলা