মুসনাদে ইমাম আযম আবু হানীফা রহঃ

২. ইলম অধ্যায়

হাদীস নং: ৩৯
ইচ্ছাকৃতভাবে রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর প্রতি মিথ্যারোপের শাস্তি
৩৯। হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তিইচ্ছাকৃতভাবে আমার উপর মিথ্যা আরোপ করবে, সে যেন জাহান্নামে তার ঠিকানা বানিয়ে নেয়। হযরত আতিয়া বলেন, আমি সাক্ষ্য প্রদান (কসম খেয়ে) করছি যে, আমি হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাযিঃ)-এর উপর মিথ্যা আরোপ করিনি এবং তিনিও ছযূর (ﷺ)-এর উপর মিথ্যা আরোপ করেননি।
عَنْ عَطِيَّةَ الْعَوْفِيِّ، عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ كَذَبَ عَلَيَّ مُتَعَمِّدًا، فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ» ، قَالَ عَطِيَّةُ: وَأَشْهَدُ أَنِّي لَمْ أَكْذِبْ عَلَى أَبِي سَعِيدٍ، وَأَنَّ أَبَا سَعِيدٍ لَمْ يَكْذِبْ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ

হাদীসের ব্যাখ্যা:

মিথ্যা হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে শাস্তির ব্যাপারে এই হাদীস এরূপ গুরুত্বপূর্ণ যে, যার ফলে কোন কোন উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন সাহাবায়ে কিরাম ও আয়িম্মায়ে ইজাম হাদীস বর্ণনা করা থেকে যতটুকু সম্ভব বিরত থাকতেন এবং হযরত (সা)-এর বাণী বর্ণনা করতে গিয়ে কেঁপে উঠতেন। এমনকি কম হাদীস বর্ণনা করা তাঁদের জীবনের একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনায় পরিণত হয়েছে।

কোন এক ব্যক্তি হযরত আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়র (রা)-কে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি দীর্ঘদিন হুযুর (সা)-এর সংস্পর্শে থাকার সৌভাগ্য লাভ করেছেন অথচ আপনি খুব কম সংখ্যক হাদীস বর্ণনা করেছেন। পক্ষান্তরে হযরত ইবনে মাসউদ (রা) সহ অন্যান্য সাহাবা (রা) কতো অধিক হাদীস বর্ণনা করেছেন। তখন হযরত আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়র (রা) বললেন, যখন আমি ইসলাম গ্রহণ করেছি, তখন থেকে হুযূর (সা)-এর সঙ্গ থেকে পৃথক হইনি। কিন্তু আমি হযরত (সা)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন نْ كَذَبَ عَلَيَّ مُتَعَمِّدًا، فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ

সুতরাং এই হাদীসে বর্ণিত শাস্তির ভয়ে আল্লাহ-ভীরু লোকদের কোন কিছু বর্ণনা করা অর্থবা দ্বীন প্রচারে উৎসাহ-উদ্দীপনা হ্রাস পেয়ে থাকে। তবে এতে তাঁদেরকে অভিযুক্ত করা যায় না এবং তাঁদের ইলূমের মধ্যে কোন ত্রুটিও সৃষ্টি হয় না। এ পর্যায়ে হযরত আবূ বকর সিদ্দীক (রা)-এর দিকে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় যে, তাঁর কাছ থেকে কি পরিমাণ হাদীস বর্ণিত হয়েছে এবং অন্য সাহাবা থেকে কি পরিমাণ। কিন্তু এতে বলা যাবে না যে, তিনি কোন হাদীস শুনেননি অথবা তিনি হুযূর (সা)-এর সংসর্গ লাভ করেননি; বরং তাঁদের অন্তরে আল্লাহ্-ভীতি পূর্ণভাবে বিদ্যমান ছিল। হাদীস বর্ণনার পূর্বে তাঁরা খুব চিন্তা ও গবেষণা করতেন, তখন আযাবের চিত্র তাঁদের সামনে ফুটে উঠত, ফলে তাঁরা অত্যধিক সতর্কতা অবলম্বন করতেন। খুব বেশি প্রয়োজন হলে কিছু বর্ণনা করতেন, নতুবা চুপ থাকতেন।

এখন ঐ সাহাবায়ে কিরাম (রা) সম্পর্কে আলোচনা করা যায়, যাঁদের থেকে অধিক সংখ্যক হাদীস বর্ণিত হয়েছে। যেমন হযরত আবূ হুরায়রা (রা), হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রা) প্রমুখ সাহাবা (রা)। এই বুযর্গদের মধ্যে আল্লাহ্-ভীতি বিরাজমান ছিল। কেননা তাঁদের সামনে ঐ সমস্ত হাদীস বিদ্যমান ছিল যাতে সত্য গোপন করার জন্য কঠোর আযাবের কথা উল্লেখ রয়েছে। যেমন হাদীসে আছে, কিয়ামতের দিন এরূপ ব্যক্তিকে আগুনের লাগাম পরিধান করানো হবে, যারা পৃথিবীতে ইলমে দ্বীন মানুষ থেকে গোপন করেছে এবং প্রচারের বিনিময় গ্রহণ করেছে। শুধু দৃষ্টিভঙ্গির কারণে উভয়ের মধ্যে কিছু পার্থক্য রয়েছে। কেউ আল্লাহর ভয়ে তথা জাহান্নামের আযাবের ভয়ে হাদীস বর্ণনা থেকে বিরত থেকেছেন, আবার কেউ জাহান্নামের ভয়ে হাদীস বর্ণনার কাজে এগিয়ে এসেছেন।

আয়িম্মায়ে ইজামের মধ্যে হযরত ইমাম আযম আবূ হানীফা (র) হুযূর (সা)-এর অতি নিকটবর্তী যুগের ছিলেন এবং অনেক সাহাবায়ে কিরাম (রা)-কে তিনি স্বচক্ষে দেখেছেন, তাঁদের থেকে ইলম হাসিলের সৌভাগ্য লাভ করেছেন কিন্তু তবুও তিনি খুব কম হাদীস বর্ণনা করেছেন।

কারণ অনেক উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন সাহাবায়ে কিরাম (রা)-এর মত তাঁর সামনে মিথ্যা হাদীস বর্ণনা সম্পর্কিত এই হাদীস বিদ্যমান ছিল। নতুবা ইমাম মুহাম্মদ (র) এবং ইমাম আবূ ইউসূফের মত ছাত্র [এবং তাঁদের ছাত্র ছিলেন ইমাম শাফিঈ (র) ও ইমাম আহমদ ইবন হাম্বল (র)] থাকা সত্ত্বেও ইমাম সাহেবের ইল্‌ম কম হওয়া সম্পর্কে সমালোচনা করা মূর্খতা ছাড়া আর কিছু নয়।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান