মুসনাদে ইমাম আযম আবু হানীফা রহঃ
১. ঈমান-আকাঈদ অধ্যায়
হাদীস নং: ২৫
শাফাআতের বর্ণনা
২৫। হযরত আবু সাঈদ (রাযিঃ) আল্লাহ্ তা'আলার পবিত্র বাণীঃ عَسَى أَنْ يَبْعَثَكَ رَبُّكَ مَقَامًا مَحْمُودًا (তোমার প্রতিপালক তোমাকে মাকামে মাহমুদে পৌছাবেন) সম্পর্কে হযরত (ﷺ) থেকে বর্ণনা করেন যে, 'মাকামে মাহমুদ'- এর অর্থ হলো শাফা'আত। আল্লাহ মুমিনদের একটি দলকে তাদের পাপের কারণে শাস্তি প্রদান করবেন। অতঃপর হযরত মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর শাফা'আতের কারণে তাদেরকে দোযখ থেকে বের করা হবে। এরপর তাদেরকে হায়াওয়ান নামক নহরে নিয়ে গোসল করানো হবে এবং জান্নাতে নিয়ে যাওয়া হবে। কিন্তু জান্নাতে তাদের নাম জাহান্নামী বলে পরিচিত হবে। তাই তারা এই ব্যাপারে আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করবে। তখন আল্লাহ্ তাদের এ নাম মিটিয়ে দিবেন।
অন্য এক রিওয়াতে এভাবে বর্ণিত আছে যে, ঈমানদার ও কিবলা বিশ্বাসী জাহান্নামে প্রবেশকারী একটি দলকে আল্লাহ হযরত মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর শাফাআতে জাহান্নাম থেকে বের করে মুক্তি প্রদান করবেন এবং এটাই হলো মাকামে মাহমুদ। অতঃপর তাদেরকে হায়াওয়ান নামক নহরে নিক্ষেপ করা হবে। তখন তারা টাটকা শশার মত তাজা ও সতেজ হয়ে উঠবে। অতঃপর সেখান থেকে বের করে তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে। কিন্তু জান্নাতে তাদের নাম জাহান্নামী হিসেবে পরিচিত হয়ে যাবে। ফলে তারা আল্লাহর নিকট এ নাম মিটিয়ে দেওয়ার জন্য ফরিয়াদ করবে। তখন আল্লাহ তাদের এ নাম মিটিয়ে দিবেন।
এ বর্ণনার শেষে عُتَقَاءَ اللَّهِ অর্থাৎ "আল্লাহ কর্তৃক আযাদকৃত" সংযুক্ত করা হয়েছে (এ নামে ডাকা হবে)। আবু হানীফা (রাযিঃ) এ হাদীস আবী রাওবা শাদ্দাদ ইবনে আব্দুর রহমান থেকে এবং তিনি হযরত আবু সাঈদ (রাযিঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন।
অন্য এক রিওয়াতে এভাবে বর্ণিত আছে যে, ঈমানদার ও কিবলা বিশ্বাসী জাহান্নামে প্রবেশকারী একটি দলকে আল্লাহ হযরত মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর শাফাআতে জাহান্নাম থেকে বের করে মুক্তি প্রদান করবেন এবং এটাই হলো মাকামে মাহমুদ। অতঃপর তাদেরকে হায়াওয়ান নামক নহরে নিক্ষেপ করা হবে। তখন তারা টাটকা শশার মত তাজা ও সতেজ হয়ে উঠবে। অতঃপর সেখান থেকে বের করে তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে। কিন্তু জান্নাতে তাদের নাম জাহান্নামী হিসেবে পরিচিত হয়ে যাবে। ফলে তারা আল্লাহর নিকট এ নাম মিটিয়ে দেওয়ার জন্য ফরিয়াদ করবে। তখন আল্লাহ তাদের এ নাম মিটিয়ে দিবেন।
এ বর্ণনার শেষে عُتَقَاءَ اللَّهِ অর্থাৎ "আল্লাহ কর্তৃক আযাদকৃত" সংযুক্ত করা হয়েছে (এ নামে ডাকা হবে)। আবু হানীফা (রাযিঃ) এ হাদীস আবী রাওবা শাদ্দাদ ইবনে আব্দুর রহমান থেকে এবং তিনি হযরত আবু সাঈদ (রাযিঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন।
عَنْ عَطِيَّةَ، عَنْ أَبِي سَعِيدٍ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، " {عَسَى أَنْ يَبْعَثَكَ رَبُّكَ مَقَامًا مَحْمُودًا} [الإسراء: 79] ، قَالَ: الْمَقَامُ الْمَحْمُودُ: الشَّفَاعَةُ، يُعَذِّبُ اللَّهُ تَعَالَى قَوْمًا مِنْ أَهْلِ الْإِيمَانِ بِذُنُوبِهِمْ، ثُمَّ يُخْرِجُ بِشَفَاعَةِ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَيُؤْتَى بِهِمْ نَهْرًا، يُقَالُ لَهُ: الْحَيَوَانُ فَيَغْتَسِلُونَ فِيهِ، ثُمَّ يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ فَيُسَمَّوْنَ فِي الْجَنَّةِ الْجُهَنَّمِيِّينَ، ثُمَّ يَطْلُبُونَ إِلَى اللَّهِ تَعَالَى فَيُذْهِبُ عَنْهُمْ ذَلِكَ الِاسْمَ "
رِوَايَةٍ، قَالَ: " يُخْرِجُ اللَّهُ قَوْمًا مِنْ أَهْلِ النَّارِ مِنْ أَهْلِ الْإِيمَانِ وَالْقِبْلَةِ بِشَفَاعَةِ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَذَلِكَ هُوَ الْمَقَامُ الْمَحْمُودُ فَيُؤْتَى بِهِمْ نَهْرًا يُقَالُ لَهُ: الْحَيَوَانُ، فَيُلْقَوْنَ فِيهِ فَيَنْبُتُونَ بِهِ كَمَا يَنْبُتُ الثَّعَارِيرُ، ثُمَّ يَخْرُجُونَ مِنْهُ وَيَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ، فَيُسَمَّوْنَ فِيهَا الْجَهَنَّمِيِّينَ، ثُمَّ يَطْلَبُونَ إِلَى اللَّهِ تَعَالَى أَنْ يُذْهِبَ عَنْهُمْ ذَلِكَ الِاسْمَ، فَيُذْهِبَ عَنْهُمْ ".
وَزَادَ فِي آخِرِهِ: فَيُسَمَّوْنَ عُتَقَاءَ اللَّهِ، وَرَوَى أَبُو حَنِيفَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ هَذَا الْحَدِيثَ، عَنْ أَبِي شَدَّادِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، عَنْ أَبِي سَعِيدٍ.
رِوَايَةٍ، قَالَ: " يُخْرِجُ اللَّهُ قَوْمًا مِنْ أَهْلِ النَّارِ مِنْ أَهْلِ الْإِيمَانِ وَالْقِبْلَةِ بِشَفَاعَةِ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَذَلِكَ هُوَ الْمَقَامُ الْمَحْمُودُ فَيُؤْتَى بِهِمْ نَهْرًا يُقَالُ لَهُ: الْحَيَوَانُ، فَيُلْقَوْنَ فِيهِ فَيَنْبُتُونَ بِهِ كَمَا يَنْبُتُ الثَّعَارِيرُ، ثُمَّ يَخْرُجُونَ مِنْهُ وَيَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ، فَيُسَمَّوْنَ فِيهَا الْجَهَنَّمِيِّينَ، ثُمَّ يَطْلَبُونَ إِلَى اللَّهِ تَعَالَى أَنْ يُذْهِبَ عَنْهُمْ ذَلِكَ الِاسْمَ، فَيُذْهِبَ عَنْهُمْ ".
وَزَادَ فِي آخِرِهِ: فَيُسَمَّوْنَ عُتَقَاءَ اللَّهِ، وَرَوَى أَبُو حَنِيفَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ هَذَا الْحَدِيثَ، عَنْ أَبِي شَدَّادِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، عَنْ أَبِي سَعِيدٍ.
হাদীসের ব্যাখ্যা:
শাফা'আতের অধ্যায়ে যে সমস্ত হাদীস বর্ণিত হয়েছে, তা মুতাওয়াতিরের স্তর পর্যন্ত পৌঁছেছে। এ পর্যায়ে হযরত আবূ সাঈদ খুদরী (রা) থেকে ইমাম মুসলিম (রাহঃ) এক দীর্ঘ হাদীস গ্রহণ করেছেন। বাযযায হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে নির্ভরযোগ্য সনদের মাধ্যমে মারফূ হাদীস রিওয়ায়েত করেছেন। আল্লামা তিবরানী আওসাত নামক গ্রন্থে হযরত মুগীরা (রা) থেকে মরফূ হাদীস রিওয়ায়েত করেছেন। উক্ত গ্রন্থে হযরত আনাস (রা) থেকে সামান্য পরিবর্তনসহ একই হাদীস বর্ণিত হয়েছে।
আল্লামা জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (র) 'কানযে মাদফুন' নামক গ্রন্থে নবী করীম (সা)-এর শাফা'আত আট প্রকার বলে উল্লেখ করেছেন। প্রথম হলো শাফা'আতে ওযমা যা আম্বিয়া ও রাসূলগণের মধ্যে একমাত্র হযরত (সা)-এর (সৌভাগ্য) হবে এবং দ্বিতীয় প্রকার শাফা'আত যা এই উম্মতের হিসাব দ্রুত গ্রহণ করার জন্য আল্লাহর দরবারে সুপারিশ করা হবে।
ইবনে আবিদ-দুনিয়া একটি দীর্ঘ হাদীস বর্ণনা করে বলেছেনঃ হুযূর (সা) বলবেন হে রাব্বুল আলামীন! তাদের হিসাব দ্রুত গ্রহণ করুন। তখন তাদেরকে ডাকা হবে। তৃতীয় শাফা'আত ঐ সমস্ত লোকের জন্য করা হবে যাদেরকে জাহান্নামে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দান করা হয়েছে। অতঃপর এ শাফা'আতের কারণে তারা মুক্তিলাভ করবে। ইবনে আবিদ-দুনিয়া এ সম্পর্কে এক মরফূ' হাদীস বর্ণনা করেছেন যে, হযরত (সা) বলেছেনঃ আমার উম্মতের একটি দলকে জাহান্নামে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হবে। তখন তারা বলবে, হে মুহাম্মদ (সা) আপনি আমাদের জন্য শাফা'আত করুন। তখন আমি ফিরিশতাদেরকে বলব, তাদেরকে একটু থামাও। অতঃপর আমি আল্লাহর দরবারে হাযির হওয়ার জন্য দরখাস্ত পেশ করব। তখন আমাকে সিজদাবনত হওয়া এবং শাফা'আতের জন্য অনুমতি প্রদান করা হবে। এরপর আমাকে বলা হবে, যাও, তোমার উম্মতদেরকে নিয়ে যাও। চতুর্থ শাফা'আত যা হযরত (সা) তাঁর চাচা হযরত আবূ তালিবের জন্য করবেন। ফলে তাঁর আযাব হ্রাস পাবে।
পঞ্চম শাফা'আত হযরত (সা) এমন কয়েকটি জাতির জন্য করবেন যারা হিসাব ব্যতীত জান্নাত লাভ করবেন। কাযী আয়ায (রা) এ বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। ষষ্ঠ শাফা'আত হুযূর (সা) মুমিনদের জান্নাতে প্রবেশের জন্য করবেন। সপ্তম শাফা'আত হযরত (সা) জান্নাতবাসীদের মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য করবেন। ফলে তারা স্বীয় আমলের চেয়ে অধিক মর্যাদা লাভ করবে। মু'তাযিলারা এ শাফা'আতকে বিশ্বাস করে থাকে। অষ্টম শাফা'আত যা হুযূর (সা) গুনাহে কবীরাকারী জাহান্নামবাসীদের জন্য করবেন। ফলে এই শাফা'আতের কারণে তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করা হবে এবং মুক্তি প্রদান করা হবে। ইমাম গাযালী (র) ইহইয়াউল উলূম গ্রন্থে এ বিষয়টি বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছেন।
আল্লামা জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (র) 'কানযে মাদফুন' নামক গ্রন্থে নবী করীম (সা)-এর শাফা'আত আট প্রকার বলে উল্লেখ করেছেন। প্রথম হলো শাফা'আতে ওযমা যা আম্বিয়া ও রাসূলগণের মধ্যে একমাত্র হযরত (সা)-এর (সৌভাগ্য) হবে এবং দ্বিতীয় প্রকার শাফা'আত যা এই উম্মতের হিসাব দ্রুত গ্রহণ করার জন্য আল্লাহর দরবারে সুপারিশ করা হবে।
ইবনে আবিদ-দুনিয়া একটি দীর্ঘ হাদীস বর্ণনা করে বলেছেনঃ হুযূর (সা) বলবেন হে রাব্বুল আলামীন! তাদের হিসাব দ্রুত গ্রহণ করুন। তখন তাদেরকে ডাকা হবে। তৃতীয় শাফা'আত ঐ সমস্ত লোকের জন্য করা হবে যাদেরকে জাহান্নামে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দান করা হয়েছে। অতঃপর এ শাফা'আতের কারণে তারা মুক্তিলাভ করবে। ইবনে আবিদ-দুনিয়া এ সম্পর্কে এক মরফূ' হাদীস বর্ণনা করেছেন যে, হযরত (সা) বলেছেনঃ আমার উম্মতের একটি দলকে জাহান্নামে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হবে। তখন তারা বলবে, হে মুহাম্মদ (সা) আপনি আমাদের জন্য শাফা'আত করুন। তখন আমি ফিরিশতাদেরকে বলব, তাদেরকে একটু থামাও। অতঃপর আমি আল্লাহর দরবারে হাযির হওয়ার জন্য দরখাস্ত পেশ করব। তখন আমাকে সিজদাবনত হওয়া এবং শাফা'আতের জন্য অনুমতি প্রদান করা হবে। এরপর আমাকে বলা হবে, যাও, তোমার উম্মতদেরকে নিয়ে যাও। চতুর্থ শাফা'আত যা হযরত (সা) তাঁর চাচা হযরত আবূ তালিবের জন্য করবেন। ফলে তাঁর আযাব হ্রাস পাবে।
পঞ্চম শাফা'আত হযরত (সা) এমন কয়েকটি জাতির জন্য করবেন যারা হিসাব ব্যতীত জান্নাত লাভ করবেন। কাযী আয়ায (রা) এ বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। ষষ্ঠ শাফা'আত হুযূর (সা) মুমিনদের জান্নাতে প্রবেশের জন্য করবেন। সপ্তম শাফা'আত হযরত (সা) জান্নাতবাসীদের মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য করবেন। ফলে তারা স্বীয় আমলের চেয়ে অধিক মর্যাদা লাভ করবে। মু'তাযিলারা এ শাফা'আতকে বিশ্বাস করে থাকে। অষ্টম শাফা'আত যা হুযূর (সা) গুনাহে কবীরাকারী জাহান্নামবাসীদের জন্য করবেন। ফলে এই শাফা'আতের কারণে তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করা হবে এবং মুক্তি প্রদান করা হবে। ইমাম গাযালী (র) ইহইয়াউল উলূম গ্রন্থে এ বিষয়টি বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছেন।


বর্ণনাকারী: