আল মুওয়াত্তা-ইমাম মুহাম্মাদ রহঃ

১৮- বিবিধ প্রসঙ্গ।

হাদীস নং: ৮৭২
রেশমী বস্ত্র পরিধান (পুরুষদের জন্য) নিষিদ্ধ।
৮৭২। আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। উমার ইবনুল খাত্তাব (রাযিঃ) মসজিদে নববীর দরজায় রেশমী কাপড় বিক্রি হতে দেখে রাসূলুল্লাহ ﷺ -কে বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি যদি এই রেশমী বস্ত্র কিনে নিতেন এবং জুমুআর দিন ও প্রতিনিধিদল আগমন উপলক্ষে তা পরিধান করতেন। তিনি বলেনঃ “আখেরাতে যাদের কোন অংশ নেই কেবল তারাই এই পোশাক পরতে পারে।” পরবর্তী সময়ে রাসূলুল্লাহ ﷺ -এর কাছে এই ধরনের কতগুলো রেশমী কাপড় আসে। তিনি তা থেকে উমার (রাযিঃ)-কে একটি কাপড় উপঢৌকন দেন। তখন তিনি বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আমাকে এই কাপড় পরিধান করতে দিচ্ছেন অথচ ইতিপূর্বে আপনি উতারিদের (এক ব্যক্তির নাম) রেশমী কাপড় সম্পর্কে এই কথা বলেছেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ মামলা বলেনঃ “আমি তো এ কাপড় তোমার পরিধানের জন্য দেইনি । অতএব উমার (রাযিঃ) মক্কায় তার মুশরিক বৈপিত্রেয় ভাইকে তা দান করেন।
ইমাম মুহাম্মাদ (রাহঃ) বলেন, মুসলিম পুরুষদের জন্য রেশমের যাবতীয় পোশাক এবং স্বর্ণালংকার পরিধান করা জায়েয নয়, চাই প্রাপ্তবয়স্ক হোক অথবা অপ্রাপ্ত বয়স্ক । কিন্তু মহিলাদের তা পরিধান করায় কোন দোষ নেই। অনন্তর শত্রু রাষ্ট্রের বা অমুসলিম রাষ্ট্রের মুশরিক নাগরিকদের তা উপঢৌকন দেয়ায়ও কোন দোষ নেই। কিন্তু তাদেরকে যুদ্ধাস্ত্র, লৌহবর্ম ইত্যাদি উপঢৌকন দেয়া জায়েয নয়। ইমাম আবু হানীফা (রাহঃ) এবং আমাদের ফিকহবিদ সাধারণেরও এই মত।
بَابُ: مَا يُكْرَهُ مِنْ لُبْسِ الْحَرِيرِ، وَالدِّيبَاجِ
أَخْبَرَنَا مَالِكٌ، أَخْبَرَنَا نَافِعٌ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ، أَنَّ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَرَأَى حُلَّةَ سِيَرَاءَ تُبَاعُ عِنْدَ بَابِ الْمَسْجِدِ، فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، لَوِ اشْتَرَيْتَ هَذِهِ الْحُلَّةَ، فَلَبِسْتَهَا يَوْمَ الْجُمُعَةِ، وَلِلْوُفُودِ إِذَا قَدِمُوا عَلَيْكَ؟ قَالَ: «إِنَّمَا يَلْبَسُ هَذِهِ مَنْ لا خَلاقَ لَهُ فِي الآخِرَةِ» ، ثُمَّ جَاءَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْهَا حُلَلٌ، «فَأَعْطَى عُمَرَ مِنْهَا حُلَّةً» ، فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، كَسَوْتَنِيهَا، وَقَدْ قُلْتَ فِي حُلَّةِ عُطَارِدٍ مَا قُلْتَ؟ قَالَ: «إِنِّي لَمْ أَكْسُكَهَا لِتَلْبَسَهَا» .
فَكَسَاهَا عُمَرُ أَخًا لَهُ مِنْ أُمِّهِ مُشْرِكًا بِمَكَّةَ.
قَالَ مُحَمَّدٌ: لا يَنْبَغِي لِلرَّجُلِ الْمُسْلِمِ أَنْ يَلْبَسَ الْحَرِيرَ، وَالدِّيبَاجَ وَالذَّهَبَ، كُلُّ ذَلِكَ مَكْرُوهٌ لِلذُّكُورِ مِنَ الصِّغَارِ وَالْكِبَارِ، وَلا بَأْسَ بِهِ لِلإِنَاثِ وَلا بَأْسَ بِهِ أَيْضًا بِالْهَدِيَّةِ إِلَى الْمُشْرِكِ الْمُحَارِبِ، مَا لَمْ يُهْدَ إِلَيْهِ سِلاحٌ أَوْ دِرْعٌ.
هُوَ قَوْلُ أَبِي حَنِيفَةَ، وَالْعَامَّةِ مِنْ فُقَهَائِنَا

হাদীসের ব্যাখ্যা:

হাদীছে জানানো হয়েছে, রেশমী পোশাক পরে এমন ব্যক্তি, আখিরাতে যার কোনও অংশ নেই। অর্থাৎ যে ব্যক্তি জান্নাতে যাবে না। তার মানে এটা অমুসলিমদের পোশাক। অন্য হাদীছে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি দুনিয়ায় রেশমী পোশাক পরে, সে আখিরাতে রেশমী পোশাক পরবে না। আর এ কারণে মুমিনদেরকে রেশমী পোশাক পরতে নিষেধ করা হয়েছে। সারমর্ম হল- রেশমি পোশাক দুনিয়ায় অমুসলিমদের পোশাক। তাই মুসলিম ব্যক্তির জন্য দুনিয়ায়। এটা পরা জায়েয নয়। তা সত্ত্বেও কোনও মুসলিম ব্যক্তি যদি রেশমী পোশাক পরে, তবে আখিরাতে সে এ পোশাক পরতে পারবে না। অর্থাৎ এ হুকুম অমান্য করার কারণে সে শুরুতে জান্নাতে যেতে পারবে না। জান্নাতের পোশাক রেশমী পোশাক। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে-
وَلِبَاسُهُمْ فِيهَا حَرِيرٌ
‘সেখানে তাদের পোশাক হবে রেশমের’ (সূরা ফাতির, আয়াত ৩৩)

কাজেই 'দুনিয়ায় যে মুমিন রেশমী পোশাক পরে, আখিরাতে সে তা পরবে না' দ্বারা বোঝানো হয়েছে সে প্রথমে জান্নাতে যেতে পারবে না। প্রথমে তাকে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে হবে। শাস্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ঈমানের বদৌলতে সে জান্নাত লাভ করবে। জান্নাত লাভ করার পর জান্নাতের অপরাপর নি'আমতের মতো রেশমী পোশাকও সে পাবে। কেউ কেউ বলেন, দুনিয়ায় যে মুমিন ব্যক্তি রেশমী পোশাক পরবে, সে জান্নাত লাভ করলেও জান্নাতের অন্যান্য নি'আমত ঠিকই পাবে, কিন্তু রেশমী পোশাক পাবে না।

প্রশ্ন দাঁড়ায়, তবে তো তার মনে রেশমী পোশাক না পাওয়ার কষ্ট থেকে যাবে, অথচ জান্নাত কষ্টের জায়গা নয়?
এর উত্তর হল, জান্নাতে এমন ব্যক্তির অন্তর থেকে রেশমী পোশাকের চাহিদাই দূর করে দেওয়া হবে। অন্তরে যখন এ পোশাকের চাহিদা থাকবে না, তখন না পাওয়ার দরুন কোনও কষ্টও সে পাবে না, যেমন সাধারণ স্তরের জান্নাতীগণ উচ্চস্তরের জান্নাতবাসীগণের মতো মর্যাদা না পাওয়ার কারণে কোনও কষ্ট বোধ করবে না।

হাদীছের মূল বার্তা হল মুমিনদেরকে রেশমী পোশাক সম্পর্কে সতর্ক করা, যাতে তারা এটা না পরে। কেননা এটা পরলে শরী'আতের হুকুম অমান্য করা হবে। পরিণামে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে হবে, যদি না আল্লাহ তা'আলা মাফ করেন।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. দুনিয়ায় রেশমী পোশাক অমুসলিমদের পোশাক। তাই মুসলিমদেরকে অবশ্যই এ পোশাক পরিধান করা হতে বিরত থাকতে হবে।

খ. রেশমী পোশাক পরিধান করলে আখিরাতে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে হবে।

গ. দুনিয়ায় রেশমী পোশাক পরিধান করলে জান্নাতে এ নি'আমত থেকে বঞ্চিত থাকতে হবে।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন
আল মুওয়াত্তা-ইমাম মুহাম্মাদ রহঃ - হাদীস নং ৮৭২ | মুসলিম বাংলা