আল মুওয়াত্তা-ইমাম মুহাম্মাদ রহঃ

১৫- ক্রয় - বিক্রয়ের অধ্যায়

হাদীস নং: ৮০৬
বিচার ব্যবস্থার সাথে সংশ্লিষ্ট কিছু কথা।
৮০৬। আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেনঃ “তোমাদের কেউ যেন নিজ প্রতিবেশীকে তার দেয়ালের সাথে খুঁটি পুততে নিষেধ না করে।” (অধস্তন রাবী) আরাজ (রাহঃ) বলেন, অতঃপর আবু হুরায়রা (রাযিঃ) বলেন, কি ব্যাপার! আমি তোমাদেরকে এ হাদীসের নির্দেশ প্রত্যাখ্যান করতে দেখছি। আল্লাহর শপথ! তোমরা যদি অস্বীকার করো, তবে আমি তা তোমাদের পার্শ্বদেশে নিক্ষেপ করবো।**
ইমাম মুহাম্মাদ (রাহঃ) বলেন, নিজেদের মধ্যে আপোষে সহজতা বিধান, পরস্পরের জন্য সুযোগ-সুবিধা করে দেয়া এবং সৌজন্যমূলক ব্যবহারের জন্য হাদীসে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কিন্তু বিচার-ব্যবস্থার দৃষ্টিকোণ থেকে এই নির্দেশ কার্যকর হবে না অর্থাৎ এক প্রতিবেশী তার জায়গায় খুঁটি গাড়তে না দিলে অপর প্রতিবেশীর পক্ষে তা জোরপূর্বক গাড়ার রায় দেয়া যাবে না। আমরা জানতে পেরেছি যে, কাযী শুরায়হ্-এর কোর্টে এই ধরনের একটি মামলা উত্থাপিত হয়েছিল । যে ব্যক্তি খুঁটি পুঁতেছিল, তিনি তাকে নির্দেশ দিলেন, তোমার পা তোমার ভাইয়ের সওয়ারী থেকে সরিয়ে নাও। অতএব আমাদের মতে, এই নির্দেশই কার্যকর হবে। তবে প্রতিবেশীর সুযোগ-সুবিধা করে দেয়াই উত্তম।
بَابُ: الْقَضَاءِ
أَخْبَرَنَا مَالِكٌ، أَخْبَرَنَا ابْنُ شِهَابٍ، عَنِ الأَعْرَجِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «لا يَمْنَعُ أَحَدُكُمْ جَارَهُ أَنْ يَغْرِزَ خَشَبَةً فِي جِدَارِهِ» ، قَالَ: ثُمَّ قَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ: مَا لِي أَرَاكُمْ عَنْهَا مُعْرِضِينَ؟ وَاللَّهِ لأَرْمِيَنَّ بِهَا بَيْنَ أَكْتَافِكُمْ.
قَالَ مُحَمَّدٌ: هَذَا عِنْدَنَا عَلَى وَجْهِ التَّوَسُّعِ مِنَ النَّاسِ بَعْضِهِمْ عَلَى بَعْضٍ وَحُسْنِ الْخُلُقِ، فَأَمَّا فِي الْحُكْمِ فَلا يُجْبَرُونَ عَلَى ذَلِكَ.
بَلَغَنَا أَنَّ شُرَيْحًا اخْتُصِمَ إِلَيْهِ فِي ذَلِكَ، فَقَالَ لِلَّذِي وَضَعَ الْخَشَبَةَ: ارْفَعْ رِجْلَكَ عَنْ مَطِيَّةِ أَخِيكَ، فَهَذَا الْحُكْمُ فِي ذَلِكَ، وَالتَّوَسُّعُ أَفْضَلُ

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছে বলা হয়েছে, দুই প্রতিবেশীর বাড়ির মাঝখানে যদি একটি প্রাচীর থাকে এবং সেটির মালিক তাদের একজন হয় আর সেই প্রাচীরে অন্য প্রতিবেশী নিজ ঘরের আড়কাঠ লাগাতে চায়, তবে মালিকের তাতে বাধা দেওয়া উচিত নয়। প্রতিবেশী হিসেবে এতটুকু ছাড় তাকে দেওয়া উচিত। একজনের প্রাচীরে অন্যজন আড়কাঠ তো তখনই লাগাতে চায়, যখন নিজের প্রাচীর তৈরির মত সামর্থ্য না থাকে। এ অবস্থায় তাকে যদি নিজ প্রাচীরে আড়কাঠ লাগাতে বাধা দেওয়া হয়, তবে তার পক্ষে ঘর তৈরিই কঠিন হয়ে যাবে। এতটা নিকট প্রতিবেশীকে এরকম সংকটে ফেলা ইসলামী ভ্রাতৃত্বের পরিপন্থী। তাই নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরূপ করতে নিষেধ করেছেন।

অবশ্য মালিকের নিজ মালিকানাধীন বস্তুতে অন্যের হস্তক্ষেপে বাধা দেওয়ার তো অধিকার থাকেই। আর বাধা দেওয়া অবস্থায় সেটি ব্যবহার করাও উচিত নয়। কেননা অন্যের মালিকানাধীন বস্তু তার অসম্মতিতে ব্যবহার করা জায়েয নয়। কিন্তু এটা হচ্ছে আইনের কথা। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উম্মতকে আইনের ঊর্ধ্বে উঠে আখলাক ও মহানুভবতার উপর চলতে উৎসাহিত করেছেন। এক মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই। মহানুভবতা প্রদর্শনই ভ্রাতৃত্বের দাবি। সে দাবি অনুযায়ী নিজ প্রাচীর নিকটতম প্রতিবেশীকে তার ঠেকা অবস্থায় ব্যবহার করতে দেওয়াই উচিত, বাধা দেওয়া মোটেই বাঞ্ছনীয় নয়। সে কথাই এ হাদীছে বলা হয়েছে।

হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. যখন এ হাদীছটি বর্ণনা করছিলেন, তখন তিনি মদীনা মুনাউওয়ারার ভারপ্রাপ্ত শাসক। শ্রোতাদের কাছে হয়তো হাদীছটি নতুন মনে হচ্ছিল। একজনের প্রাচীর আরেকজন ব্যবহার করবে আর তাতে বাধা দেওয়া যাবে না, এ বিষয়টা তাদের কাছে হয়তো অদ্ভুত লাগছিল। তাদের হাবভাব দেখে হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. বুঝতে পারছিলেন তারা বুঝি তাঁর বর্ণনা গ্রহণ করছে না। তাই এই ধমক দিলেন যে, কী ব্যাপার, আমি যে তোমাদেরকে মুখ ফিরিয়ে নিতে দেখছি? তারপর বললেন- والله لأرمين بها بين أكتافكم (আল্লাহর কসম! আমি এটা তোমাদের দুই কাঁধের মাঝখানে নিক্ষেপ করব)। দুই কাঁধের মাঝখানে নিক্ষেপ করার কথাটি একটি বাগ্ধারা। এর দ্বারা বোঝানো উদ্দেশ্য- এটি আমি তোমাদের মধ্যে অবশ্যই প্রকাশ করব। কাউকে সজাগ ও সচেতন করার জন্য তার দুই কাঁধের মাঝখানে আঘাত করা হয়। সুতরাং হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. এ কথা বলে তাদেরকে সজাগ করতে চেয়েছেন যে, আমি তো তোমাদেরকে হাদীছ শোনাচ্ছি। এটা আমার নিজের কথা নয়। কাজেই তোমাদের উচিত খুশিমনে গ্রহণ করে নেওয়া।

ইমাম খাত্তাবী রহ. বাক্যটির অর্থ করেছেন- তোমরা যদি এ নির্দেশ খুশিমনে গ্রহণ না কর ও সন্তুষ্টচিত্তে এর উপর আমল না কর, তবে আমি তোমাদেরকে এটা মানতে বাধ্য করব এবং আড়কাঠ দেয়ালের পরিবর্তে তোমাদের কাঁধের উপর লাগিয়ে দেব। এটা ছিল তাঁর পক্ষ থেকে একটি ধমক।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. এ হাদীছ দ্বারা প্রতিবেশীর প্রতি মহত্ত্ব প্রদর্শনের শিক্ষা পাওয়া যায়।

খ. প্রতিবেশীর সংকট ও অভাব-অনটন অবস্থায় সচ্ছল প্রতিবেশীর উচিত তার প্রতি সহযোগিতার মনোভাব রাখা।

গ. প্রত্যেক মুমিনের উচিত হাদীছের শিক্ষা খুশিমনে গ্রহণ করা।

ঘ. দীনের কোনও শিক্ষাগ্রহণে কেউ দ্বিধাভাব প্রকাশ করলে নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি প্রয়োজনে তাকে ধমক দিতে পারে এবং তাকে তা মানতে বাধ্য করতে পারে।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন