আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ

৬০- পানীয় দ্রব্যাদীর অধ্যায়

হাদীস নং: ৫২১১
আন্তর্জাতিক নং: ৫৬১৩
২৯৬৩. পানি মিশ্রিত দুধ পান করা
৫২১১। ‘আব্দুল্লাহ ইবনে মুহাম্মাদ (রাহঃ) ......... জাবির ইবনে ‘আব্দুল্লাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আনসারদের এক ব্যক্তির নিকট গেলেন। তার সঙ্গে ছিলেন তাঁর এক সাহাবী। তখন রাসূল (ﷺ) আনসারীকে বললেনঃ তোমার নিকট যদি মশকে রক্ষিত গত রাতের পানি থাকে, তাহলে আমাদের পান করাও, আর না থাকলে আমরা সামনে গিয়ে পান করব। রাবী বলেন লোকটি তখন তার বাগানে পানি দিচ্ছিল। বর্ণনাকারী বলেন, লোকটি উত্তর করল, ইয়া রাসুলাল্লাহ আমার কাছে গত রাতের পানি আছে। আপনি ঝুপড়ীতে চলুন। বর্ণনাকারী বলেনঃ এরপর লোকটি তাদের দু’জনকে নিয়ে গেল এবং একটি পেয়ালায় পানি নিয়ে তাতে তার একটি বকরির দুধ দোহন করল। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তা পান করলেন, তারপর তাঁর সঙ্গে আগন্তুক লোকটিও পান করলেন।
باب شَوْبِ اللَّبَنِ بِالْمَاءِ
5613 - حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مُحَمَّدٍ، حَدَّثَنَا أَبُو عَامِرٍ، حَدَّثَنَا فُلَيْحُ بْنُ سُلَيْمَانَ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ الحَارِثِ، عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ دَخَلَ عَلَى رَجُلٍ مِنَ الأَنْصَارِ وَمَعَهُ صَاحِبٌ لَهُ، فَقَالَ لَهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنْ كَانَ عِنْدَكَ مَاءٌ بَاتَ هَذِهِ اللَّيْلَةَ فِي شَنَّةٍ وَإِلَّا كَرَعْنَا» قَالَ: وَالرَّجُلُ يُحَوِّلُ المَاءَ فِي حَائِطِهِ، قَالَ: فَقَالَ الرَّجُلُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، عِنْدِي مَاءٌ بَائِتٌ، فَانْطَلِقْ إِلَى العَرِيشِ، قَالَ: فَانْطَلَقَ بِهِمَا، فَسَكَبَ فِي قَدَحٍ، ثُمَّ حَلَبَ عَلَيْهِ مِنْ دَاجِنٍ لَهُ، قَالَ: فَشَرِبَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، ثُمَّ شَرِبَ الرَّجُلُ الَّذِي جَاءَ مَعَهُ

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এখানে হাদীছটি সংক্ষেপে উল্লেখ করা হয়েছে। বিস্তারিত বর্ণনা দ্বারা জানা যায় প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক আনসারীর কাছে গেলেন। সঙ্গে ছিলেন হযরত আবূ বকর রাযি.। সেই সাহাবী তখন তাঁর খেজুর বাগানে পানির সেচ দিচ্ছিলেন। তিনি নালা দিয়ে পানি এক স্থান থেকে আরেক স্থানে নিচ্ছিলেন।

হাদীছটিতে আছে- دَخَلَ عَلَى رَجُلٍ مِنَ الْأَنْصَارِ অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক আনসারী ব্যক্তির কাছে প্রবেশ করলেন। তার মানে তিনি সেই আনসারী সাহাবীর বাগানে প্রবেশ করলেন। তাঁর তখন ঠাণ্ডা পানি পান করার ইচ্ছা ছিল। সময়টা ছিল প্রচণ্ড গরমের। তিনি সাহাবীকে বললেন, তোমার ঘরে মশকে রাতের বাসি পানি থাকলে আমাদের পান করাও। রাতের বাসি পানি চাইলেন এ কারণে যে, রাতে গরম কম থাকায় মশকে ভরা পানি ঠাণ্ডা হয়ে যায়। সাহাবী বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার কাছে রাতের বাসি পানি আছে। আমার সঙ্গে মাচায় চলুন। তাঁরা দু'জন তাঁর সঙ্গে মাচায় গেলেন। আনসারী ব্যক্তি একটা পেয়ালায় পানি ঢাললেন। তারপর তাতে ছাগলের দুধ দোওয়ালেন। তিনি সেই দুধ তাঁদের পান করতে দিলেন। প্রথমে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পান করলেন, তারপর হযরত আবু বকর রাযি.।

ওই সাহাবী দুধে ঠাণ্ডা পানি মিশিয়েছিলেন দোওয়ানো দুধ ঠাণ্ডা করার জন্য। দুধ যখন দোওয়ানো হয়, তখন তা বেশ উষ্ণ থাকে। গরমের সময় সে দুধ তৃপ্তিকর হয় না। কিছুটা ঠাণ্ডা পানি মিশিয়ে নিলে তৃপ্তির সঙ্গে পান করা যায়। তবে এভাবে পানি মেশানো মেহমানকে আপ্যায়িত করার জন্য তো ঠিক আছে। বিক্রির বেলায় তা কিছুতেই জায়েয নয়।

এ হাদীছ দ্বারা বোঝা গেল পিপাসা নিবারণ বা ক্ষুধা নিবারণের জন্য স্বেচ্ছায় কোনও প্রিয়জনের বাড়ি যাওয়া যেতে পারে। যদি জানা থাকে সে ব্যক্তি অসন্তুষ্ট হবে না, তবে সঙ্গে অতিরিক্ত লোকও নেওয়া যেতে পারে।

উল্লেখ্য, ঠাণ্ডা পানি অনেক বড় নি'আমত। এটা বিশেষভাবে বোঝা যায় গরমের সময়। দুপুরের খরতাপে যখন তৃষ্ণায় গলা শুকিয়ে যায়, তখন দেহমন জুড়ানোর জন্য এক গ্লাস ঠাণ্ডা পানির বিকল্প আর কী হতে পারে? এরূপ অবস্থায় ঠাণ্ডা পানি পান করলে তার সজীবতায় শরীরের প্রতিটি পশম সিক্ত হয়ে ওঠে। হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী রহ. হাকীমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভী রহ.-কে বলতেন, মিঞা মৌলভী আশরাফ আলী! ঠাণ্ডা পানি খুব পান করবে। তাতে প্রতিটি পশম থেকে আল্লাহ তা'আলার শোকরের অনুভূতি হয়। হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. বর্ণিত এক হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
أول ما يحاسب به العبد يوم القيامة أن يقال له ألم أصحّ لك جسمك وأروك من الماء البارد
‘কিয়ামতের দিন বান্দার সর্বপ্রথম যে জিনিসের হিসাব নেওয়া হবে তা এই যে, তাকে বলা হবে, আমি কি তোমার শরীর সুস্থ রাখিনি? তোমাকে ঠাণ্ডা পানি দ্বারা সজীবতা দান করিনি?’ (তাবারানী, আল মু'জামুল আওসাত: ৬২; মুসনাদুল বাযযার: ৯৪০৮; হাকিম, আল মুস্তাদরাক : ৭২০৩; ফাওয়াইদু তাম্মাম: ২১৭; বায়হাকী, শুআবুল ঈমান: ৪২৮৭)

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. চামড়ার মশক বা অন্য যে-কোনও পাত্র ব্যবহার করা জায়েয।

খ. তৃষ্ণা বা ক্ষুধা নিবারণের জন্য কোনও প্রিয়জনের বাড়িতে যাওয়া দোষের নয়।

গ. ঠাণ্ডা পানি অনেক বড় নি'আমত।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)