আল মুওয়াত্তা-ইমাম মুহাম্মাদ রহঃ

২- নামাযের অধ্যায়

হাদীস নং: ৮৭
নামাযের ওয়াক্ত সমূহ
৮৭। আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। আব্দুল্লাহ ইবনে রাফে (রাযিঃ) তার কাছে নামাযের ওয়াক্ত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন। আবু হুরায়রা (রাযিঃ) বলেন, আমি তোমাকে এ সম্পর্কে অবহিত করবো। তোমার ছায়া তোমার সমান হলে পর তুমি যুহরের নামায পড়ো। তোমার ছায়া তোমার দ্বিগুণ হলে তখন আসরের নামায পড়ো। সূর্য ডুবে গেলে মাগরিবের নামায পড়ো। এক-তৃতীয়াংশ রাতের মধ্যে এশার নামায পড়ো। তুমি যদি (নামাযের পূর্বে) অর্ধরাত পর্যন্ত ঘুমাও, তবে হয়তো তোমার চক্ষুদ্বয় ঘুমাতে পারবে না। ভোরের অন্ধকারের মধ্যে ফজরের নামায পড়ো।**
ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে হাসান শায়বানী (রাহঃ) বলেন, আসরের নামাযের ওয়াক্ত সম্পর্কে ইমাম আবু হানীফার অভিমতও তাই (তার মতে, ছায়া দ্বিগুণ হওয়ার পর আসরের নামাযের ওয়াক্ত শুরু হয়) এবং ফজরের নামায অন্ধকার দূরীভূত করে পড়তে হবে।
কিন্তু আসরের ওয়াক্ত সম্পর্কে আমাদের মত ছায়া যখন এক মিছালের অধিক হয়ে যাবে, অর্থাৎ সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে যাওয়ার ঠিক পূর্ব মুহূর্তে কোন জিনিসের ছায়া যতোটুকু থাকে—তা বাদে উক্ত বস্তুর ছায়া তার সম-পরিমাণ হয়ে যাওয়ার পর আসরের ওয়াক্ত শুরু হয়। আর ইমাম আবু হানীফা (রাহঃ)-এর মতে, দ্বিগুণ না হওয়া পর্যন্ত আসরের ওয়াক্ত শুরু হয় না (এই শেষোক্ত মতের উপর হানাফী মাযহাবের ফতোয়া)।

* পূর্ব দিগন্তে সুবহে সাদেক উদয় হওয়ার সাথে সাথে ফজরের নামাযের ওয়াক্ত শুরু হয় এবং সূর্যোদয় শুরু হওয়ার সাথে সাথে তা শেষ হয়ে যায়। সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়ার সাথে সাথে যুহরের নামাযের ওয়াক্ত শুরু হয় এবং কোন বস্তুর ছায়া দ্বিগুণ (মূল ছায়া বা) হওয়ার সাথে সাথে তা শেষ হয়ে যায় এবং আসরের ওয়াক্ত শুরু হয়ে যায়। কিন্তু অন্যান্য মাযহাবমতে কোন বস্তুর ছায়া তার সম-পরিমাণ হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে যুহরের ওয়াক্ত শেষ হয়ে যায় এবং আসরের ওয়াক্ত শুরু হয়। সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত আসরের নামাযের ওয়াক্ত অবশিষ্ট থাকে। সূর্যাস্তের সাথে সাথে মাগরিবের ওয়াক্ত শুরু হয় এবং শাফাক অদৃশ্য হওয়া পর্যন্ত তা অবশিষ্ট থাকে। ইমাম শাফিঈ এবং অধিকাংশ আলেমের মতে, সূর্যাস্তের পর পশ্চিম দিগন্তে যে লাল আভা দেখা যায় তাকে শাফাক বলে। ইমাম আবু হানীফার প্রসিদ্ধ যতে লাল আভা দূরীভূত হওয়ার পর যে শুদ্রতা উদিত হয় তাকে শাফাক বলে । এশার নামাযের ওয়াক্ত শাফাক অন্তর্হিত হওয়ার পর থেকে সঠিক মত অনুযায়ী সুবহে সাদেকের পূর্ব পর্যন্ত অবশিষ্ট থাকে।

মুস্তাহাব ওয়াক্ত
শাফিঈ মাযহাবমতে প্রত্যেক ওয়াক্তের নামাযে জলদি করা অর্থাৎ ওয়াক্তের প্রথমভাগে নামায আদায় করা মুস্তাহাব। কিন্তু হানাফী মাযহাবে ঋতুর পরিবর্তনের সাথে সাথে কোন কোন নামায ওয়াক্তের প্রথমভাবে পড়া মুস্তাহাব এবং কোন কোন নামায একটু বিলম্বে পড়া মুস্তাহাব। যেমন গ্রীষ্মকালে যুহরের নামায বিলম্বে পড়ার নির্দেশ রয়েছে। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেনঃ

أبردوا بالظهر فإن شدة الحر من فيح جهنم

“তোমরা যুহরের নামায ঠাণ্ডা করে আদায় করো। কেননা গরমের তীব্রতা দোযখের নিঃশ্বাস বিশেষ"।
কিন্তু শীতকালে এই নামায প্রথম ওয়াক্তে আদায় করা মুস্তাহাব। আসরের নামায সূর্যালোক ঝলসে যাওয়ার পূর্বে আদায় করা মুস্তাহাব। সূর্যালোক ঝলসে যাওয়ার সাথে সাথে আসরের মাকরূহ (অপছন্দীয়) ওয়াক্ত শুরু হয়। সকল ইমামের মতে, যে কোন ঋতুতে মাগরিবের নামায প্রথম ওয়াক্তে আদায় করা মুস্তাহাব। অতএব সূর্য গোলক ডুবে যাওয়ার সাথে সাথে মাগরিবের নামায আদায় করা উচিৎ। কেননা এই নামাযের ওয়াক্ত খুবই সংকীর্ণ।
রাতের এক-তৃতীয়াংশ সময় পর্যন্ত এশার নামায বিলম্ব করা মুস্তাহাব। অর্ধেক রাত অতিবাহিত হওয়ার পর থেকে সুবহে সাদেক পর্যন্ত এশার নামায বিলম্ব মাকরূহ। বেতের নামাযের ওয়াক্ত এশার নামাযের পরপরই শুরু হয় এবং সুবহে সাদেকের পূর্বে পর্যন্ত অবশিষ্ট থাকে। কিন্তু শেষ রাতে বেতের পড়া মুস্তাহাব। তবে যে ব্যক্তি শেষ রাতে জাগতে পারবে না বলে আশংকা করে সে শোয়ার পূর্বেই বেতের পড়বে।
ইমাম আবু হানীফা ও সাহেবাইনের মতে রাতের অন্ধকার দূরীভূত করে ফজরের নামায পড়া মুস্তাহাব। কেননা রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেনঃ

أسفروا في الفجر فانه أعظم الأجر

“তোমরা ফজরের নামায আলোকিত করে পড়ো। কেননা এর মধ্যেই অধিক পুরস্কার রয়েছে।”
ইমাম আবু হানীফার দুই সাথী ইমাম মুহাম্মাদ ও ইমাম আবু ইউসুফকে ফিকহবিদদের পরিভাষায় 'সাহেবাইন' বলা হয়।
কিন্তু ইমাম শাফিঈ ও অপরাপর ইমামের মতে অন্ধকার বাকি থাকতেই ফজরের নামায পড়া মুস্তাহাব। তারা নিজেদের মতের সমর্থনে হযরত আয়েশা (রাযিঃ) বর্ণিত হাদীস গ্রহণ করেছেন। তাতে বলা হয়েছে, “রাসূলুল্লাহ ﷺ অন্ধকার থাকতেই ফজরের নামায পড়তেন”।

জুমুআর নামাযের ওয়াক্ত
হানাফী ও শাফিঈ মাযহাবের মত অনুযায়ী যুহরের নামাযের ওয়াক্তই জুমুআর নামাযের ওয়াক্ত । মালিকী মাযহাবমতে, যুহরের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার পর থেকে মাগরিবের নামাযের এতোটা পূর্ব পর্যন্ত জুমুআর ওয়াক্ত থাকে যাতে সূর্যাস্তের পূর্বেই খোতবা এবং নামায শেষ করা যায়। হাম্বলী মাযহাবমতে, সকালের সূর্য কিছুটা উপরে উঠার পর থেকে আসরের পূর্ব পর্যন্ত জুমুআর ওয়াক্ত বাকি থাকে। তবে পশ্চিমাকাশে সূর্য ঢলে যাওয়ার পূর্বে তাদের মতে জুমুআর নামায পড়া কেবল জায়েয, কিন্তু পশ্চিম আকাশে সূর্য ঢলে পড়ার পর জুমুআর নামায পড়া ওয়াজিব এবং মুস্তাহাব।

মাকরূহ ও নিষিদ্ধ ওয়াক্ত
ফজরের নামাযের পর থেকে সূর্য উদিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এবং আসরের ফরয নামাযের পর থেকে সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত কোন অ-ফরয নামায পড়া মাকরূহ। তবে কারো ফরয নামাযের কাযা থাকলে সে তা এ সময় পড়তে পারে, বরং পড়বে। সূর্য উঠার সময়, ঠিক দ্বিপ্রহরে এবং সূর্য অস্ত যাওয়ার সময় যে কোন নামায পড়া নিষিদ্ধ (অনুবাদক)।
بَابُ: وُقُوتِ الصَّلاةِ
قَالَ مُحَمَّدُ بْنُ الْحَسَنِ , أَخْبَرَنَا مَالِكُ بْنُ أَنَسٍ، عَنْ يَزِيدَ بْنِ زِيَادٍ مَوْلَى بَنِي هَاشِمٍ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ رَافِعٍ مَوْلَى أُمِّ سَلَمَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا زَوْجِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّهُ سَأَلَهُ عَنْ وَقْتِ الصَّلاةِ، فَقَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ: «أَنَا أُخْبِرُكَ، صَلِّ الظُّهْرَ إِذَا كَانَ ظِلُّكَ مِثْلَكَ، وَالْعَصْرَ إِذَا كَانَ ظِلُّكَ مِثلَيْكَ، وَالْمَغْرِبَ إِذَا غَرَبَتِ الشَّمْسُ، وَالْعِشَاءَ مَا بَيْنَكَ وَبَيْنَ ثُلُثِ اللَّيْلِ، فَإِنْ نِمْتَ إِلَى نِصْفِ اللَّيْلِ فَلا نَامَتْ عَيْنَاكَ، وَصَلِّ الصُّبْحَ بِغَلَسٍ» .
قَالَ مُحَمَّدٌ: هَذَا قَوْلُ أَبِي حَنِيفَةَ رَحِمَهُ اللَّهُ فِي وَقْتِ الْعَصْرِ، وَكَانَ يَرَى الإِسْفَارَ فِي الْفَجْرِ، وَأَمَّا فِي قَوْلِنَا، فَإِنَّا نَقُولُ: إِذَا زَادَ الظِّلُّ عَلَى الْمِثْلِ فَصَارَ مِثْلَ الشَّيْءِ وَزِيَادَةً مِنْ حِينِ زَالَتِ الشَّمْسُ، فَقَدْ دَخَلَ وَقْتُ الْعَصْرِ.
وَأَمَّا أَبُو حَنِيفَةَ فَإِنَّهُ قَالَ: لا يَدْخُلُ وَقْتُ الْعَصْرِ حَتَّى يَصِيرَ الظِّلُّ مِثلَيْهِ
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
আল মুওয়াত্তা-ইমাম মুহাম্মাদ রহঃ - হাদীস নং ৮৭ | মুসলিম বাংলা