শরহু মাআ’নিল আছার- ইমাম ত্বহাবী রহঃ

২৩. অছিয়াত ও উত্তরাধিকার সম্পত্তির অধ্যায়

হাদীস নং: ৭৪৩৯
আন্তর্জাতিক নং: ৭৪৪০
কোন ব্যক্তি যদি তার নিকট-আত্মীয়কে তার সম্পদের এক-তৃতীয়াংশ অসীয়ত করে কিংবা তাদের মধ্য হতে অমুকের আত্মীয়ের জন্যে অসীয়ত করে
৭৪৩৯-৪০। ইউনুস (রাহঃ) …. আবু হুরায়রা (রাযিঃ) হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, যখন রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) -এর উপর অত্র আয়াত وَأَنْذِرْ عَشِيرَتَكَ الْأَقْرَبِينَ অবতীর্ণ হয়, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, “হে কুরায়শ সম্প্রদায়! তােমরা তােমাদের নিজেদেরকে আল্লাহ্ তা'আলা থেকে খরিদ করে নাও। আমি তােমাদের জন্যে আল্লাহ তা'আলার হুযূরে কোন কিছুই করতে পারব না। হে বনু আব্দ মানাফ! তােমরা তােমাদেরকে আল্লাহ্ তা'আলা থেকে খরিদ করে নাও। আমি আল্লাহ্ তা'আলার হুযূরে তােমাদের জন্যে কিছুই করতে পারব না। হে আব্বাস ইবন আব্দুল মুত্তালিব! আমি আল্লাহ্ তা'আলার হুযূরে আপনার জন্যে কিছুই করতে পারব না। হে সাফিয়্যা! রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর ফুফু, আমি আল্লাহ্ তা'আলার হুযূরে আপনার জন্যে কিছুই করতে পারব না। হে ফাতিমা বিন্‌ত মুহাম্মাদ (রাযিঃ)! আমি আল্লাহ্ তা'আলার হুযূরে তােমার জন্যে কিছুই করতে পারব না।

ইউনুস (রাহঃ)...... আবু হুরায়রা (রাযিঃ) হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন। অতঃপর তিনি অনুরূপ বর্ণনা উল্লেখ করেন, তবে তিনি বলেন, ইয়া সাফিয়া! ইয়া ফাতিমা!

এ হাদীসেও বুঝা যায় যে, যখন আল্লাহ তা'আলা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) -কে হুকুম দিলেন তিনি যেন তার নিকট আত্মীয়বর্গকে ভীতি প্রদর্শন করেন, তখন তিনি কুরায়শের গােত্রগুলােকে ডাকলেন। তাদের মধ্যে এমন সব লােক ছিলেন যারা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর দ্বিতীয়তম পিতার সাথে মিলিত হন। আবার এমন সব লােক ছিলেন যারা তৃতীয়তম পিতার সাথে কিংবা চতুর্থতম পিতার সাথে কিংবা পঞ্চমতম পিতার সাথে কিংবা ষষ্ঠতম পিতার সাথে মিলিত কিংবা আরাে উর্ধ্বতন পিতাদের সাথে মিলিত হন; বরং যাকে কুরায়শ বংশ শামিল করেছিল তারা সকলেই সম্বােধনের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। এ হাদীসের দ্বারা এ অভিমত অবলম্বনকারীদের অভিমতটি বাতিল বলে গণ্য হয় এবং অন্য অভিমতগুলাের যে কোন একটি শুদ্ধ বলে প্রতিষ্ঠিত হয়। অতঃপর আমরা রক্তের সম্পর্কের দিক দিয়ে নিকটতমকে দূরতমের উপর অগ্রাধিকার প্রদানকারীর অভিমতটি নিয়ে পর্যালােচনা করে দেখতে পেলাম যে, রাসূলুল্লাহ্ যখন তাঁর নিকট আত্মীয়ের অংশ বন্টন করেন, বনু হাশিম ও বনু আল-মুত্তালিবের সকলকে শামিল করেন।

অথচ বনু হাশিমের মধ্যে কেউ কেউ কারাে কারাে চেয়ে তার কাছে অধিক নিকটবর্তী । আবার বনু আল-মুত্তালিবের মধ্যেও কেউ কেউ কারাে কারাে চেয়ে তার কাছে অধিক নিকটবর্তী। কিন্তু তিনি যখন অধিক নিকটবর্তীকে অধিক দূরবর্তীর উপর অগ্রাধিকার দেননি, বরং তাদের সকলকে আত্মীয় হিসেবে গণ্য করেছেন; তাঁর আত্মীয়ের জন্য আল্লাহ্ তা'আলা যা নির্ধারণ করেছেন তার থেকে যারা নিকটবর্তী আত্মীয়, তারা দূরবর্তী আত্মীয়ের তুলনায় বেশী হকদার হয় না, অনুরূপভাবে অসীয়তের ক্ষেত্রে অমুকের আত্মীয়ের সম্পর্কে নিকটবর্তী হওয়ায় দূরবর্তী থেকে বেশী হকদার নয়, বরং অন্যান্য সকল আত্মীয়ের ন্যায় দূরবর্তী আত্মীয়রাও হকদার হবেন।

এটা একটি দলীল। অন্য একটি দলীল হল : আবু তালহা (রাযিঃ)-কে যখন রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) আদেশ করলেন : তিনি যেন তার দরিদ্র আত্মীয়ের জন্যে তার বাগানটাকে প্রদান করেন, তখন তিনি হাসসান (রাযিঃ) ও উবাই (রাযিঃ)-কে তা দান করেন। অথচ তিনি ও উবাই (রাযিঃ) তার সপ্তম পিতার কাছে মিলিত হন। আর তিনি ও হাসসান (রাযিঃ) তার তৃতীয় পিতার কাছে মিলিত হয়। কেননা হাসসান (রাযিঃ) হলেন : হাসসান ইবন সাবিত ইবন আল-মুনযির ইবন হারাম। আবু তালহা (রাযিঃ) হলেন যায়দ ইবন সাহল ইবন আল-আসওয়াদ ইবন হারাম। আবু তালহা (রাযিঃ) এ ব্যাপারে তার নিকটবর্তিতার জন্য অন্যের চেয়ে বেশী হকদার মনে করেননি। হাসসান (রাযিঃ)-কে তার দূরবর্তিতার জন্যে উবাই (রাযিঃ) হতে অগ্রাধিকার দেননি। তাদের মধ্যে কাউকে নিকটবর্তিতার জন্য অন্যের চেয়ে বেশী হকদার মনে করেননি। এ আলােচনার প্রেক্ষিতে অত্র মতামতটির ত্রুটি বিচ্যুতি প্রমাণিত হয়।

অতঃপর আমরা আবু হানীফা (রাহঃ)-এর মতামত চিন্তা করে দেখলাম যে, যখন রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) আত্মীয়দের অংশ বন্টন করেন, তখন তিনি বনু হাশিমের সকল সদস্যকে দান করেন। তাদের মধ্যে এমন লোকও ছিলেন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সাথে যাদের রক্ত সম্পর্ক রয়েছে ও তারা মাহরাম, আবার তারাও ছিলেন যারা মাহরাম নন। তাদের সাথে তিনি বন্ আল-মুত্তালিবের সকল সদস্যকেও দান করেছিলেন। তাদের মধ্যে এরূপ লােকও ছিলেন যারা মাহরাম নন। অনুরূপভাবে আবু তালহা (রাযিঃ)-ও উবাই (রাযিঃ) এবং হাসসান (রাযিঃ)-কে দান করেন। তাদেরকে তিনি আত্মীয় হিসেবে দান করেন। তবে তারা মাহরাম না হওয়ায় তাদেরকে তিনি আত্মীয় থেকে বহির্ভূত মনে করেননি। আমাদের উপরােক্ত আলােচনার মাধ্যমে আবু হানীফা (রাহঃ)-এর মতামতটি বাতিল বলে প্রমাণিত হয় ।

অতঃপর আমরা আবু ইউসুফ (রাহঃ) ও মুহাম্মাদ (রাহঃ)-এর মতামত চিন্তা করে দেখলাম যে, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) আত্মীয়ের অংশ বন্ হাশিম ও বন্ আল-মুত্তালিবের সদস্যদেরকে দান করেন। কিন্তু হিজরতের সময় হতে কোন পিতার সাথে তিনি ও তাদের কোন একজন সদস্য মিলিত হননি। তবে তিনি ও তারা জাহিলিয়াতের যুগের পিতাদের মাধ্যমে মিলিত হয়েছিলেন। অনুরূপভাবে আবু তালহা (রাযিঃ) এবং উবাই (রাযিঃ) ও হাসসান (রাযিঃ) ইসলামী পিতার মাধ্যমে মিলিত হননি; বরং জাহিলিয়াতের কোন এক পিতার মাধ্যমে মিলিত হয়েছিলেন। এতে তাদের আত্মীয়দের জন্যে নির্ধারিত অংশের হকদার হওয়ার ব্যাপারে কোনরূপ অন্তরায় সৃষ্টি হয়নি। অনুরূপভাবে অসীয়তকারীর আত্মীয়তা তার আত্মীয়দেরকে এ অসীয়ত থেকে বিরত রাখে না। যদি না তাদেরকে হিজরতের সময় হতে কোন পিতা মিলিত না করে।
উপরােক্ত আলােচনায় আবু ইউসুফ (রাহঃ) ও মুহাম্মাদ (রাহঃ)-এর মতামত বাতিল বলে প্রমাণিত হয় এবং অন্য অভিমতটি শুদ্ধ বলে প্রমাণিত হয়। অতএব প্রমাণিত হল যে, অসীয়ত রয়েছে এমন প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য, যে তার পৈতৃক ও মাতৃক বংশ পরিচয় সম্বন্ধে অবগত। অসীয়তকারী ও যে আত্মীয়ের জন্যে অসীয়ত করা হয়, তারা জাহিলিয়াতের যুগের কিংবা ইসলামী যুগের একই পিতামহের মাধ্যমে একত্রিত হয়। তারা আত্মীয়তার কারণে কোন এক অবস্থায় ওয়ারিসের হকদার হয়। তাদের থেকে মানুষের ক্ষেত্রে আত্মীয়ের জন্যে কৃত অসীয়তকারী ও
পিতা কিংবা তাদের মধ্যে অসীয়ত বাস্তবায়নের জন্যে সাক্ষ্য প্রতিষ্ঠিত হয়। এ অভিমতটি আমাদের কাছে দুইটি মতবাদের মধ্যে অধিকতর শুদ্ধ বলে প্রমাণিত।
40 - 7439 - حَدَّثَنَا يُونُسُ، قَالَ: ثنا سَلَامَةُ بْنُ رَوْحٍ، قَالَ: ثنا عُقَيْلٌ، قَالَ: حَدَّثَنِي الزُّهْرِيُّ، قَالَ: قَالَ سَعِيدٌ وَأَبُو سَلَمَةَ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ: أَنَّ أَبَا هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حِينَ أُنْزِلَ عَلَيْهِ {وَأَنْذِرْ عَشِيرَتَكَ الْأَقْرَبِينَ} [الشعراء: 214] : «يَا مَعْشَرَ قُرَيْشٍ , اشْتَرُوا أَنْفُسَكُمْ مِنَ اللهِ , لَا أُغْنِي عَنْكُمْ مِنَ اللهِ شَيْئًا , يَا بَنِي عَبْدِ مَنَافٍ , اشْتَرُوا أَنْفُسَكُمْ مِنَ اللهِ , لَا أُغْنِي عَنْكُمْ مِنَ اللهِ شَيْئًا , يَا عَبَّاسُ بْنُ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ , لَا أُغْنِي عَنْكَ مِنَ اللهِ شَيْئًا , يَا صَفِيَّةُ عَمَّةَ رَسُولِ اللهِ , لَا أُغْنِي عَنْكِ مِنَ اللهِ شَيْئًا , يَا فَاطِمَةُ بِنْتَ مُحَمَّدٍ , لَا أُغْنِي عَنْكِ مِنَ اللهِ شَيْئًا»
حَدَّثَنَا يُونُسُ، قَالَ: أنا ابْنُ وَهْبٍ، قَالَ أَخْبَرَنِي يُونُسُ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، قَالَ: أَخْبَرَنِي سَعِيدٌ، وَأَبُو سَلَمَةَ أَنَّ أَبَا هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثُمَّ ذَكَرَ مِثْلَهُ , غَيْرَ أَنَّهُ قَالَ يَا صَفِيَّةُ يَا فَاطِمَةُ فَفِي هَذَا الْحَدِيثِ أَيْضًا أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَمَّا أَمَرَهُ اللهُ تَعَالَى أَنْ يُنْذِرَ عَشِيرَتَهُ الْأَقْرَبِينَ , دَعَا عَشَائِرَ قُرَيْشٍ , وَفِيهِمْ مَنْ يَلْقَاهُ عِنْدَ أَبِيهِ الثَّانِي , وَفِيهِمْ مَنْ يَلْقَاهُ عِنْدَ أَبِيهِ الثَّالِثِ , وَفِيهِمْ مَنْ يَلْقَاهُ عِنْدَ أَبِيهِ الرَّابِعِ , وَفِيهِمْ مَنْ يَلْقَاهُ عِنْدَ أَبِيهِ الْخَامِسِ , وَفِيهِمْ مَنْ يَلْقَاهُ , عِنْدَ أَبِيهِ السَّادِسِ , وَفِيهِمْ مَنْ يَلْقَاهُ عِنْدَ آبَائِهِ الَّذِينَ فَوْقَ ذَلِكَ , إِلَّا أَنَّهُ مِمَّنْ قَدْ جَمَعَتْهُ وَإِيَّاهُ قُرَيْشٌ. فَبَطَلَ بِذَلِكَ قَوْلُ أَهْلِ هَذِهِ الْمَقَالَةِ , وَثَبَتَ إِحْدَى الْمَقَالَاتِ الْأُخَرِ. وَنَظَرْنَا فِي قَوْلِ مَنْ قَدَّمَ مَنْ قَرُبَ رَحِمُهُ , عَلَى مَنْ هُوَ أَبْعَدُ رَحِمًا مِنْهُ. فَوَجَدْنَا رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَمَّا قَسَمَ سَهْمَ ذَوِي الْقُرْبَى , عَمَّ بِهِ بَنِي هَاشِمٍ , وَبَنِي الْمُطَّلِبِ , وَبَعْضُ بَنِي هَاشِمٍ أَقْرَبُ إِلَيْهِ مِنْ بَعْضٍ , وَبَعْضُ بَنِي الْمُطَّلِبِ أَيْضًا أَقْرَبُ إِلَيْهِ مِنْ بَعْضٍ. [ص:389] فَلَمَّا لَمْ يُقَدِّمْ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ ذَلِكَ , مَنْ قَرُبَ رَحِمُهُ مِنْهُ , عَلَى مَنْ هُوَ أَبْعَدُ إِلَيْهِ رَحِمًا مِنْهُ , وَجَعَلَهُمْ كُلَّهُمْ قَرَابَةً لَهُ , لَا يَسْتَحِقُّونَ مَا جَعَلَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ لِقَرَابَتِهِ. فَكَذَلِكَ مَنْ بَعُدَتْ رَحِمُهُ فِي الْوَصِيَّةِ لِقَرَابَةِ فُلَانٍ , لَا يَسْتَحِقُّ بِقُرْبِ رَحِمِهِ مِنْهُ شَيْئًا , مِمَّا جَعَلَ لِقَرَابَتِهِ إِلَّا كَمَا يَسْتَحِقُّ سَائِرَ قَرَابَتِهِ , مِمَّنْ رَحِمُهُ مِنْهُ أَبْعَدُ مِنْ رَحِمِهِ , فَهَذِهِ حُجَّةٌ. وَحُجَّةٌ أُخْرَى أَنَّ أَبَا طَلْحَةَ , لَمَّا أَمَرَهُ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ يَجْعَلَ أَرْضَهُ فِي فُقَرَاءِ الْقَرَابَةِ , جَعَلَهَا لِحَسَّانَ , وَلِأُبَيِّ. وَإِنَّمَا يَلْتَقِي هُوَ وَأُبَيُّ عِنْدَ أَبِيهِ السَّابِعِ , وَيَلْتَقِي هُوَ وَحَسَّانُ , عِنْدَ أَبِيهِ الثَّالِثِ. وَلِأَنَّ حَسَّانَ بْنِ ثَابِتِ بْنِ الْمُنْذِرِ بْنِ حَرَامٍ. وَأَبُو طَلْحَةَ زَيْدُ بْنُ سَهْلِ بْنِ الْأَسْوَدِ بْنِ حَرَامٍ. فَلَمْ يُقَدِّمْ أَبُو طَلْحَةَ فِي ذَلِكَ حَسَّانًا ; لِقُرْبِ رَحِمِهِ مِنْهُ , عَلَى أُبَيٍّ ; لِبُعْدِ رَحِمِهِ مِنْهُ وَلَمْ يَرَوْا أَحَدًا مِنْهُمَا مُسْتَحِقًّا لِقَرَابَتِهِ مِنْهُ فِي ذَلِكَ مِنْهُ , إِلَّا كَمَا يَسْتَحِقُّ مِنْهُ الْآخَرُ. فَثَبَتَ بِذَلِكَ فَسَادُ هَذَا الْقَوْلِ. ثُمَّ رَجَعْنَا إِلَى مَا ذَهَبَ إِلَيْهِ أَبُو حَنِيفَةَ , رَحِمَهُ اللهُ , فَرَأَيْنَا رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَمَّا قَسَمَ سَهْمَ ذَوِي الْقُرْبَى , أَعْطَى بَنِي هَاشِمٍ جَمِيعًا , وَفِيهِمْ مَنْ رَحِمُهُ مِنْهُ , رَحِمٌ مُحَرَّمَةٌ , وَفِيهِمْ مِنْهُ , مَنْ رَحِمُهُ مِنْهُ غَيْرُ مُحَرَّمَةٍ. وَأَعْطَى بَنِي الْمُطَّلِبِ مَعَهُمْ , وَأَرْحَامُهُمْ جَمِيعًا مِنْهُ , غَيْرُ مُحَرَّمَةٍ. وَكَذَلِكَ أَبُو طَلْحَةَ أَعْطَى أُبَيًّا وَحَسَّانًا , مَا أَعْطَاهُمَا , عَلَى أَنَّهُمَا قَرَابَةٌ , وَلَمْ يُخْرِجْهُمَا مِنْ قَرَابَتِهِ , ارْتِفَاعُ الْحُرْمَةِ مِنْ رَحِمِهِمَا مِنْهُ. فَبَطَلَ بِذَلِكَ أَيْضًا , مَا ذَهَبَ إِلَيْهِ أَبُو حَنِيفَةَ رَحِمَهُ اللهُ. ثُمَّ رَجَعْنَا إِلَى مَا ذَهَبَ إِلَيْهِ , أَبُو يُوسُفَ , وَمُحَمَّدٌ رَحِمَهُمَا اللهُ , فَرَأَيْنَا رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَعْطَى سَهْمَ ذَوِي الْقُرْبَى , بَنِي هَاشِمٍ , وَبَنِي الْمُطَّلِبِ , وَلَا يَجْتَمِعُ هُوَ , وَوَاحِدٌ مِنْهُمْ إِلَى أَبٍ , مُنْذُ كَانَتِ الْهِجْرَةُ. وَإِنَّمَا يَجْتَمِعُ هُوَ وَهُمْ , عِنْدَ آبَاءٍ كَانُوا فِي الْجَاهِلِيَّةِ. وَكَذَلِكَ أَبُو طَلْحَةَ وَأُبَيُّ , وَحَسَّانُ , لَا يَجْتَمِعُونَ عِنْدَ أَبٍ إِسْلَامِيٍّ , وَإِنَّمَا يَجْتَمِعُونَ عِنْدَ أَبٍ كَانَ فِي الْجَاهِلِيَّةِ , وَلَمْ يَمْنَعْهُمْ ذَلِكَ أَنْ يَكُونُوا قَرَابَةً لَهُ , يَسْتَحِقُّونَ مَا جُعِلَ لِلْقَرَابَةِ. فَكَذَلِكَ قَرَابَةُ الْمُوصِي ; لِقَرَابَتِهِ لَا يَمْنَعُهُمْ مِنْ تِلْكَ الْوَصِيَّةِ إِلَّا أَنْ لَا يَجْمَعَهُمْ وَإِيَّاهُ أَبٌ , مُنْذُ كَانَتِ الْهِجْرَةُ. فَبَطَلَ بِذَلِكَ قَوْلُ أَبِي يُوسُفَ , وَمُحَمَّدٌ رَحِمَهُمَا اللهُ , وَثَبَتَ الْقَوْلُ الْآخَرُ. [ص:390] فَثَبَتَ أَنَّ الْوَصِيَّةَ بِذَلِكَ: لِكُلٍّ مَنْ تَوَقَّفَ عَلَى نَسَبِهِ أَبًا غَيْرَ أَبٍ وَأُمًّا غَيْرَ أُمٍّ , حَتَّى يَلْتَقِيَ هُوَ وَالْمُوصِي لِقَرَابَتِهِ إِلَى جَدٍّ وَاحِدٍ , فِي الْجَاهِلِيَّةِ , أَوْ فِي الْإِسْلَامِ , بَعْدَ أَنْ يَكُونَ أُولَئِكَ لِلْآبَاءِ , يَسْتَحِقُّ بِالْقَرَابَةِ هُمُ الْمَوَارِيثُ , فِي حَالٍ , وَيَقُومُ بِالْإِنْسَانِ مِنْهُمُ الشَّهَادَاتُ , عَلَى سِيَاقِهِ مَا بَيْنَ الْمُوصِي لِقَرَابَتِهِ وَبَيْنَهُمْ , مِنَ الْآبَاءِ وَمِنَ الْأُمَّهَاتِ , فَهَذَا الْقَوْلُ , هُوَ أَصَحُّ الْقَوْلَيْنِ , عِنْدَنَا

হাদীসের ব্যাখ্যা:

আল্লাহ তাআলার বাণী - {وَأَنْذِرْ عَشِيرَتَكَ الْأَقْرَبِينَ} ‘তোমার নিকটাত্মীয়স্বজনকে সতর্ক কর’
عَشِيرَة অর্থ জ্ঞাতিগোষ্ঠী। الْأَقْرَبِينَ অর্থ নিকটবর্তী। এ আয়াতে জ্ঞাতিগোষ্ঠীর মধ্যে যারা নিকটবর্তী, তাদেরকে সতর্ক করার হুকুম দেওয়া হয়েছে। বুঝানো উদ্দেশ্য তারা যে ভ্রান্ত ধর্মের অনুসরণ করে নিজেদেরকে জাহান্নামের শাস্তির উপযুক্ত করে ফেলছে, এ ব্যাপারে যেন তাদেরকে সাবধান করা হয় এবং সত্য-সঠিক দীন ইসলামের দিকে ডাকা হয়। সর্বপ্রথম এ আয়াত নাযিলের মাধ্যমেই নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দাওয়াত ও তাবলীগের হুকুম দেওয়া হয়েছে।

লক্ষণীয়, দাওয়াত ও তাবলীগের সর্বপ্রথম হুকুমে নিকটতম আত্মীয়-স্বজনকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। তাদের থেকেই দাওয়াতী কার্যক্রমের সূচনা করতে বলা হয়েছে। এর এক কারণ তো এই যে, দীন-দুনিয়ার সকল ব্যাপারেই অন্যদের তুলনায় আত্মীয়-স্বজন ও নিকটতম লোকজন অগ্রাধিকার রাখে। এ কারণেই দেখা যায় জাহান্নাম থেকে বাঁচানোর মেহনতে পরিবারবর্গকে প্রথম স্থান দেওয়া হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে-

يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا قُوا أَنْفُسَكُمْ وَأَهْلِيكُمْ نَارًا

'হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদেরকে ও নিজেদের পরিবারবর্গকে জাহান্নাম থেকে বাঁচাও।১০১

তাছাড়া দাওয়াতী কার্যক্রমে নিকটবর্তী আত্মীয়-স্বজনকে অগ্রাধিকার দেওয়া হলে তাতে সাড়া পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি, যেহেতু দাওয়াতদাতা তথা নবীর নবুওয়াতপূর্ব জীবনের বিশ্বস্ততা ও সত্যবাদিতা সম্পর্কে তারা ওয়াকিফহাল থাকে। ফলে তাদের পক্ষে এ বিশ্বাস রাখা সহজ যে, তিনি যা বলবেন সত্যই বলবেন। এতে করে তুলনামূলক অল্প মেহনতেই সত্যদীনের একদল অনুসারী গড়ে উঠতে পারে, যারা দাওয়াতী কার্যক্রমে তাঁর পূর্ণ সহযোগিতা দান করবে এবং নিজেরাও সত্যদীনের প্রচার-প্রসারে সক্রিয় ভূমিকা রাখবে।

দাওয়াতী কার্যক্রমের সূচনা নিকটাত্মীয়দের থেকে করা হলে তার একটা ফায়দা এইও যে, তারা দাওয়াত গ্রহণ না করলেও অন্ততপক্ষে শত্রুতা ও বিরোধিতায় অতটা কঠোর ও নির্মম হবে না, যেমনটা দূরবর্তী ও অনাত্মীয়দের দিক থেকে হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ কথা সত্য যে, মক্কার কাফের ও মুশরিকগণ নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দাওয়াতী কাজের কঠোর বিরোধিতা করেছিল, কিন্তু তারপরও তাদের সে বিরোধিতা তায়েফের লোকজন যেমনটা করেছিল অতটা নির্মম ছিল না। এমনিভাবে এ কথাও সত্য যে, তাঁর সর্বাপেক্ষা নিকটবর্তী গোত্র বনূ হাশিম শুরু থেকেই তাঁর প্রতি নমনীয় আচরণ করেছিল; বরং আবূ লাহাবের মত বিচ্ছিন্ন কিছু লোক ছাড়া এ গোত্রের অধিকাংশ লোক ইসলাম গ্রহণ না করলেও প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে তাঁর সহযোগিতাও করেছিল। একপর্যায়ে তো তাঁর চাচা হামযা রাযি. ইসলাম গ্রহণ করে নেন এবং তাঁর ইসলামগ্রহণ অন্যদের মধ্যে যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করে।

যাহোক আল্লাহ তাআলার এ নির্দেশ মোতাবেক নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিকটতম লোকদের থেকে দাওয়াতী কার্যক্রম শুরু করে দেন। তিনি সাফা পাহাড়ে উঠে কুরায়শ গোত্রকে ডাক দেন। সর্বপ্রথম ডাক দেন বিস্তৃত পরিসরের কা'ব ইবন লুআঈ গোত্রকে। তারপর তাদের তুলনায় কিছুটা সংক্ষিপ্ত পরিসরের বনূ মুররাকে। তারপর বনূ আব্দে মানাফকে। তারপর বনু হাশিমকে। সবশেষে বনূ আব্দুল মুত্তালিবকে। এভাবে ক্রমান্বয়ে নিকটবর্তী গোত্রের দিকে নেমে আসতে থাকেন। প্রতি গোত্রকেই জাহান্নামের আযাব সম্পর্কে সতর্ক করেন। তাদেরকে সে আযাব থেকে আত্মরক্ষার ব্যবস্থা করতে বলেন। গোত্রসমূহকে আহ্বান জানানোর পর পৃথকভাবে একেক ব্যক্তির নাম ধরেও সতর্ক করতে থাকেন। এ ক্ষেত্রেও ক্রমান্বয়ে বিশেষ থেকে বিশেষতম ব্যক্তিতে নেমে আসেন। সতর্ক করেন চাচা আব্বাস রাযি.-কে। তারপর ফুফু সাফিয়্যা রাযি.-কে। সবশেষে কন্যা ফাতিমা যাহরা রাযি.-কে।

হাদীসে আছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছিলেন, তোমরা বল তো আমি যদি তোমাদের বলি এ উপত্যকায় শত্রুদল অবস্থান করছে, তারা তোমাদের উপর হামলা চালাবে ও সবকিছু লুট করবে, তবে কি তোমরা আমার কথা বিশ্বাস করবে? তারা বলল, হাঁ, আমরা আমাদের অতীত অভিজ্ঞতায় সত্যবাদীরূপেই পেয়েছি। তখন তিনি বললেন, আমি আসন্ন কঠিন শাস্তি সম্পর্কে তোমাদের সতর্ক করছি। এ কথা শুনে আবূ লাহাব বলে উঠল, তুমি ধ্বংস হও, আমাদেরকে এজন্যই একত্র করেছ? এরই পরিপ্রেক্ষিতে সূরা লাহাব নাযিল হয়।১০২

হাদীসে আছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছিলেন— (আমি তোমাদেরকে আল্লাহর আযাব থেকে কিছুমাত্র বাঁচানোর ক্ষমতা রাখি না)। অর্থাৎ তোমরা আমার আত্মীয় বটে,কিন্তু জেনে রেখ, আত্মীয়তার উপর নির্ভর করে জাহান্নামের শাস্তি থেকে বাঁচা যাবে না। তোমরা যদি ঈমান না আন, তবে আমি আল্লাহর আযাব থেকে তোমাদের বাচাতে পারব না। তা থেকে বাচা যাবে কেবলই ঈমান দ্বারা। সুতরাং তোমরা যদি জাহান্নাম থেকে বাচতে চাও, তবে ঈমান আনয়ন কর। শিরক ও কুফর ছেড়ে আল্লাহ তাআলার আনুগত্য কর। দেব-দেবীর পূজা ছেড়ে কেবল তাঁরই ইবাদত-বন্দেগী কর।

হাদীসে আছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছিলেন- غَيْرَ أَنَّ لَكُمْ رَحِمًا سَأَبُلُّهَا بِبَلَالِهَا (অবশ্য তোমাদের সঙ্গে আত্মীয়তা আছে। আমি তার আর্দ্রতা দ্বারা তোমাদেরকে সিঞ্চিত করব)। بَلَال অর্থ আর্দ্রতা, পানি। এ বাক্যে আত্মীয়তা ছিন্ন করাকে উত্তাপের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে এবং আত্মীয়তা রক্ষাকে উত্তাপ প্রশমিত করার সঙ্গে। উত্তাপ প্রশমিত করা হয় পানি দ্বারা। সুতরাং এ বাক্যে পানির মাধ্যমে উত্তাপ প্রশমিত করার দ্বারা আত্মীয়তা রক্ষা করা ও আত্মীয়কে সাহায্য-সহযোগিতা করা বুঝানো উদ্দেশ্য। মর্ম হচ্ছে, আত্মীয়তা জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষায় কোনও কাজে আসবে না বটে, তবে দুনিয়ায় আত্মীয়তার হক আছে, এর দায় আছে। সুতরাং আমি আত্মীয়তার হক আদায়ার্থে তোমাদের সাহায্য-সহযোগিতা করে যাব।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. ইসলামী দাওয়াতের কার্যক্রম নিকটাত্মীয়দের থেকে শুরু করা উচিত।

খ. আখেরাতের মুক্তি বংশীয় পরিচয়ে নয়; বরং ঈমানের ভিত্তিতেই লাভ হবে।

গ. কোনও আত্মীয় অমুসলিম হলেও তার আত্মীয়তার হক সম্পূর্ণ বাতিল হয়ে যায় না। কাজেই তার বিপদ-আপদে খোঁজখবর রাখা চাই ।

ঘ. প্রত্যেকের জন্য সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আখেরাতের নাজাতের ফিকির করা।

১০১. সূরা তাহরীম (৬৬), আয়াত ৬

১০২. সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৪৭৭০; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ২৮০১; সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং ৬৫৫০; বায়হাকী, আস্ সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১৩১০৬
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
ত্বহাবী শরীফ - হাদীস নং ৭৪৩৯ | মুসলিম বাংলা