শরহু মাআ’নিল আছার- ইমাম ত্বহাবী রহঃ
২১. মাকরুহ বিষয়াদির বর্ণনা
হাদীস নং: ৬৯২১
আন্তর্জাতিক নং: ৬৯২২
মু'আনাকা বা কোলাকুলি করা প্রসঙ্গে
৬৯২১-২২। মুহাম্মাদ ইবন খায়মা (রাহঃ).... আনাস ইবন মালিক (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, সাহাবাগণ বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! আমরা কি সাক্ষাতের সময় একজন অপরজনের জন্য নত হতে পারব? তিনি বললেন, না। তারা বললেন, একে অপরের সঙ্গে কোলাকুলি করতে পারব? তিনি বললেন, না। বললেন, একে অপরের সঙ্গে হাত মিলাতে বা মুসাফাহা করতে পারব? বললেন, একে অপরের সঙ্গে মুসাফাহা বা করমর্দন কর।
আবু উমাইয়া (রাহঃ) ..... আনাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। অতঃপর তিনি অনুরূপ রিওয়ায়াত করেছেন। পর্যালোচনা : ইমাম আবু জাফর তাহাবী (রাহঃ) বলেন, এই হাদীসের ভিত্তিতে একদল আলিম মুআনাকা বা কোলাকুলিকে মাকরূহ মনে করেন। ইমাম আবু হানীফা (রাহঃ) ও ইমাম মুহাম্মাদ (রাহঃ)-ও তাঁদের অন্তর্ভুক্ত। পক্ষান্তরে অপরাপর আলিমগণ এ বিষয়ে তাদের বিরোধিতা করেছেন। তারা এতে কোন অসুবিধা মনে করেন না। এই অভিমত যারা পোষণ করেছেন তাদের মাঝে ইমাম আবু ইউসুফ (রাহঃ) অন্যতম। এ বিষয়ে তারা নিম্নোক্ত রিওয়ায়াতসমূহ দ্বারা প্রমাণ পেশ করেছেন :
আবু উমাইয়া (রাহঃ) ..... আনাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। অতঃপর তিনি অনুরূপ রিওয়ায়াত করেছেন। পর্যালোচনা : ইমাম আবু জাফর তাহাবী (রাহঃ) বলেন, এই হাদীসের ভিত্তিতে একদল আলিম মুআনাকা বা কোলাকুলিকে মাকরূহ মনে করেন। ইমাম আবু হানীফা (রাহঃ) ও ইমাম মুহাম্মাদ (রাহঃ)-ও তাঁদের অন্তর্ভুক্ত। পক্ষান্তরে অপরাপর আলিমগণ এ বিষয়ে তাদের বিরোধিতা করেছেন। তারা এতে কোন অসুবিধা মনে করেন না। এই অভিমত যারা পোষণ করেছেন তাদের মাঝে ইমাম আবু ইউসুফ (রাহঃ) অন্যতম। এ বিষয়ে তারা নিম্নোক্ত রিওয়ায়াতসমূহ দ্বারা প্রমাণ পেশ করেছেন :
بَابُ الْمُعَانَقَةِ
6921 - حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ خُزَيْمَةَ , قَالَ: ثنا حَجَّاجُ , قَالَ: ثنا حَمَّادُ بْنُ سَلَمَةَ , وَحَمَّادُ بْنُ زَيْدٍ , وَيَزِيدُ بْنُ زُرَيْعٍ , عَنْ حَنْظَلَةَ السَّدُوسِيِّ , عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ أَنَّهُمْ قَالُوا: يَا رَسُولَ اللهِ , أَيَنْحَنِي بَعْضُنَا لِبَعْضٍ , إِذَا الْتَقَيْنَا؟ . قَالَ: «لَا» ، قَالُوا , فَيُعَانِقُ بَعْضُنَا بَعْضًا؟ قَالَ: «لَا» . قَالُوا: أَفَيُصَافِحُ بَعْضُنَا لِبَعْضٍ؟ قَالَ: «تَصَافَحُوا»
6922 - حَدَّثَنَا أَبُو أُمَيَّةَ، قَالَ: ثنا سُلَيْمَانُ بْنُ حَرْبٍ، قَالَ: ثنا أَبُو هِلَالٍ، عَنْ حَنْظَلَةَ، عَنْ أَنَسٍ، قَالَ: قُلْنَا يَا رَسُولَ اللهِ , ثُمَّ ذَكَرَ مِثْلَهُ قَالَ أَبُو جَعْفَرٍ: فَذَهَبَ قَوْمٌ إِلَى هَذَا فَكَرِهُوا الْمُعَانَقَةَ , مِنْهُمْ أَبُو حَنِيفَةَ , وَمُحَمَّدٌ , رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِمَا. وَخَالَفَهُمْ فِي ذَلِكَ آخَرُونَ , فَلَمْ يَرَوْا بِهَا بَأْسًا , وَمِمَّنْ ذَهَبَ إِلَى ذَلِكَ , أَبُو يُوسُفَ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ. وَكَانَ مِمَّا احْتَجُّوا بِهِ فِي ذَلِكَ
6922 - حَدَّثَنَا أَبُو أُمَيَّةَ، قَالَ: ثنا سُلَيْمَانُ بْنُ حَرْبٍ، قَالَ: ثنا أَبُو هِلَالٍ، عَنْ حَنْظَلَةَ، عَنْ أَنَسٍ، قَالَ: قُلْنَا يَا رَسُولَ اللهِ , ثُمَّ ذَكَرَ مِثْلَهُ قَالَ أَبُو جَعْفَرٍ: فَذَهَبَ قَوْمٌ إِلَى هَذَا فَكَرِهُوا الْمُعَانَقَةَ , مِنْهُمْ أَبُو حَنِيفَةَ , وَمُحَمَّدٌ , رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِمَا. وَخَالَفَهُمْ فِي ذَلِكَ آخَرُونَ , فَلَمْ يَرَوْا بِهَا بَأْسًا , وَمِمَّنْ ذَهَبَ إِلَى ذَلِكَ , أَبُو يُوسُفَ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ. وَكَانَ مِمَّا احْتَجُّوا بِهِ فِي ذَلِكَ
হাদীসের ব্যাখ্যা:
কোনও মুসলিম ভাই বা বন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎকালে অভিবাদনস্বরূপ মাথা নোওয়ানো যাবে কি? কোনও কোনও জাতির মধ্যে এর রেওয়াজ আছে। তারা মাথা নুইয়ে একে অন্যকে অভিবাদন করে, যেমন হিন্দুরা নমস্কার করে থাকে। আগের দিনে মানুষ রাজা-বাদশাদের সামনে মাথা নুইয়ে শ্রদ্ধা জানাত। এক সাহাবী এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করলেন যে, এটা করা যাবে কি না। তিনি 'না' করে দিলেন। অর্থাৎ এটা করা যাবে না। কেননা এতে রুকূ'র ভঙ্গি হয়ে যায়। রুকু' করা একটি ইবাদত। এটা কেবল আল্লাহ তা'আলার জন্যই করা যায়। ইবাদতস্বরূপ যা আল্লাহ তা'আলার জন্য নির্ধারিত, কোনও মাখলুকের বেলায় তার প্রয়োগ জায়েয নেই। অনুরূপ সিজদা করাও সম্পূর্ণ হারাম।
কোনও ভাই বা বন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎকালে তাকে জড়িয়ে ধরা যাবে কি? এমনিভাবে তাকে হাদীছটিতে একই সাহাবীর দ্বিতীয় জিজ্ঞাসা ছিল জড়িয়ে ধরা ও চুম্বন করা সম্পর্কে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটাও নিষেধ করে দিলেন।
সাহাবী তৃতীয় পর্যায়ে প্রশ্ন করেন মুসাফাহা সম্পর্কে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহ আলায়হি ওয়াসাল্লাম এটা অনুমোদন করলেন। অর্থাৎ সাক্ষাৎকালে মুসাফাহা করা যাবে। এতে কোনও দোষ নেই।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. পরস্পর সাক্ষাৎকালে অভিবাদনস্বরূপ মাথা নোওয়ানো যাবে না।
খ. মুসাফাহা করা যাবে। এটা সুন্নত।
গ. কোনও কাজ করা যাবে কি যাবে না, এ বিষয়ে মনে খটকা থাকলে বিজ্ঞ ও মুত্তাকী আলেমের কাছে জিজ্ঞেস করে তা ভালোভাবে জেনে নেওয়া উচিত।
কোনও ভাই বা বন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎকালে তাকে জড়িয়ে ধরা যাবে কি? এমনিভাবে তাকে হাদীছটিতে একই সাহাবীর দ্বিতীয় জিজ্ঞাসা ছিল জড়িয়ে ধরা ও চুম্বন করা সম্পর্কে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটাও নিষেধ করে দিলেন।
সাহাবী তৃতীয় পর্যায়ে প্রশ্ন করেন মুসাফাহা সম্পর্কে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহ আলায়হি ওয়াসাল্লাম এটা অনুমোদন করলেন। অর্থাৎ সাক্ষাৎকালে মুসাফাহা করা যাবে। এতে কোনও দোষ নেই।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. পরস্পর সাক্ষাৎকালে অভিবাদনস্বরূপ মাথা নোওয়ানো যাবে না।
খ. মুসাফাহা করা যাবে। এটা সুন্নত।
গ. কোনও কাজ করা যাবে কি যাবে না, এ বিষয়ে মনে খটকা থাকলে বিজ্ঞ ও মুত্তাকী আলেমের কাছে জিজ্ঞেস করে তা ভালোভাবে জেনে নেওয়া উচিত।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
