শরহু মাআ’নিল আছার- ইমাম ত্বহাবী রহঃ

১৮. আদালত-বিচার-সাক্ষ্য-শুনানির বিধান

হাদীস নং: ৬১৪১
আন্তর্জাতিক নং: ৬১৪২
কোন ব্যক্তির নিকট অন্য কোন ব্যক্তির জন্য সাক্ষ্য থাকলে তাকে জানানাে কি তার ওপর ওয়াজিব; এবং স্বেচ্ছায় সাক্ষ্য প্রদান করলে হাকিম কি তা গ্রহণ করবেন ।
৬১৪১-৪২। ফাহদ ..... নু’মান ইব্ন বাশীর নবী (ﷺ) হতে বর্ণনা করেন তিনি বলেন, উত্তম লােক হলাে, আমার ক্বারনের লােক। তারপর তারা, যারা তাদের নিকটবর্তী, তারপর তারা, যারা তাদের নিকটবর্তী। তারপর এমন সমস্ত লােকের আগমন ঘটবে, যাদের সাক্ষ্য তাদের হলফের পূর্বে সংঘটিত হবে এবং তাদের হলফ তাদের সাক্ষ্যের পূর্বে সংঘটিত হবে।

ফাহদ ..... আবু বকর ইব‌্ন আইয়্যাশ আসিম হতে বর্ণনা করেন, অতঃপর তিনি তার সনদে অনুরূপ বর্ণনা করেন। অবশ্য তিনি ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ আর একবার অতিরিক্ত বর্ণনা করেন। তারপর বলেন ثُمَّ يَأْتِي قَوْمٌ এসব রিওয়ায়াত দ্বারা প্রথম মতের প্রবক্তাদের জন্য যারা দলীল পেশ করেন, তাদের বিরুদ্ধে আমাদের দলীল হলাে, এসব شهادة (সাক্ষ্য) দ্বারা الشَّهَادَةَ عَلَى الْحُقُوقِ (অধিকারসমূহের ওপর সাক্ষ্য) উদ্দেশ্য নয়। এর উদ্দেশ্য হলাে الشَّهَادَةُ فِي الْأَيْمَانِ (হলফের ওপর সাক্ষ্য) ইবরাহীম নাখঈ (রাহঃ) হতে এমন রিওয়ায়াত বর্ণিত যা এ কথা প্রমাণ করে:
6141 - حَدَّثَنَا فَهْدٌ قَالَ: ثنا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ قَالَ: ثنا حُسَيْنُ بْنُ عَلِيٍّ الْجُعْفِيُّ عَنْ زَائِدَةَ عَنْ عَاصِمٍ عَنْ خَيْثَمَةَ عَنِ النُّعْمَانِ بْنِ بَشِيرٍ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «خَيْرُ النَّاسِ قَرْنِي ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ ثُمَّ يَخْلُفُ قَوْمٌ تَسْبِقُ شَهَادَاتُهُمْ أَيْمَانَهُمْ وَأَيْمَانُهُمْ شَهَادَاتِهِمْ»

6142 - حَدَّثَنَا فَهْدٌ، قَالَ: ثنا أَبُو غَسَّانَ، قَالَ: ثنا أَبُو بَكْرِ بْنُ عَيَّاشٍ، عَنْ عَاصِمٍ، فَذَكَرَ بِإِسْنَادِهِ مِثْلَهُ وَزَادَ ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ مَرَّةً أُخْرَى ثُمَّ يَأْتِي قَوْمٌ فَكَانَ مِنْ حُجَّتِنَا عَلَى الَّذِينَ احْتَجُّوا بِهَذِهِ الْآثَارِ لِأَهْلِ الْمَقَالَةِ الْأُولَى أَنَّ هَذِهِ الشَّهَادَةَ لَمْ يُرِدْ بِهَا الشَّهَادَةَ عَلَى الْحُقُوقِ وَإِنَّمَا أُرِيدَ بِهَا الشَّهَادَةُ فِي الْأَيْمَانِ وَقَدْ رُوِيَ مَا يَدُلُّ عَلَى ذَلِكَ عَنْ إِبْرَاهِيمَ النَّخَعِيِّ

হাদীসের ব্যাখ্যা:

প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- (সর্বোত্তম হল আমার যুগের মানুষ)। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগ বলতে তাঁর নবুওয়াতপ্রাপ্তি থেকে যে তারিখে সর্বশেষ সাহাবী ইন্তিকাল করেছেন, সেই পর্যন্ত সময়কালকে বোঝায়। সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে সবশেষে ইন্তিকাল করেছেন হযরত আবুত তুফায়ল আমের ইবন ওয়াছিলা রাযি। তিনি ১১০ হিজরী সনে ইন্তিকাল করেন। তারপর ইরশাদ করেন-
ثم الذين يلونهم (তারপর যারা তাদের পরবর্তী যুগে আসবে)। অর্থাৎ তাবি'ঈদের যুগ। যারা ঈমানের সঙ্গে কোনও সাহাবীকে দেখেছেন। এই যুগ আনুমানিক হিজরী ১৫০ সন পর্যন্ত। ইমাম আবূ হানীফা রহ. হিজরী ১৫০ সনে ইন্তিকাল করেছেন। বিশুদ্ধমত অনুযায়ী তিনি একজন তাবিঈ ছিলেন।

ثم الذين يلونهم (তারপর যারা তাদের পরবর্তী যুগে আসবে)। এ যুগ ছিল আনুমানিক ২২০ সন পর্যন্ত। এটা তাবে-তাবি'ঈনের যুগ। যারা তাবি‘ঈদের দেখেছেন। এর পর থেকেই দীনের মধ্যে নানা ফিতনা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।

প্রকাশ থাকে যে, কোনও একটি যুগের মানুষকে শ্রেষ্ঠ বলার অর্থ এ নয় যে, সে যুগের প্রত্যেকেই পরবর্তী যুগের সকলের চেয়ে উৎকৃষ্ট। এটা বলা হয়েছে সাধারণ অবস্থার বিচারে। সুতরাং এর মধ্যে ব্যতিক্রম পাওয়া যেতেই পারে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবীদের যুগের মানুষকে শ্রেষ্ঠতম মানুষ বলা হয়েছে। তার মানে এ নয় যে, সাহাবীগণ আগের নবী-রাসূলগণের চেয়েও শ্রেষ্ঠ ছিলেন। হাঁ, তাঁরা আগের যুগের সাধারণ মুমিনদের চেয়ে অবশ্যই উৎকৃষ্ট ছিলেন। এমনিভাবে তাবে-তাবি'ঈদের মধ্যে অনেকে এমন ছিলেন, যারা ঈমান, ইলম, আমল ও আখলাকের দিক থেকে তাবিঈদের যুগের অনেকের তুলনায় অগ্রগামী ছিলেন। তবে সামগ্রিক দৃষ্টিতে অবশ্যই তাবি'ঈগণ তাবে-তাবি'ঈদের তুলনায় উত্তম ছিলেন। এমনিভাবে আরও পরে জন্ম নেওয়া এমন অনেকেই আছেন, যারা ইবাদত-বন্দেগী, দীনের খেদমত, জিহাদ প্রভৃতি দিক থেকে ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছেন। বহু পরের হওয়া সত্ত্বেও তারা পূর্ববর্তী অনেককে টপকে গিয়েছেন। এটা এ যুগেও সম্ভব। তাই পরবর্তীকালীন হওয়ায় হতাশার কোনও কারণ নেই। নিজ ঈমান ও আমলে যত্নবান থাকলে পূর্ববর্তীকালীন আল্লাহওয়ালাদের কাতারে শামিল হওয়ার সুযোগ রয়েছে। আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকেও তাওফীক দান করুন।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. প্রথম তিন কালের মুসলিমগণ শ্রেষ্ঠ। তাদের মর্যাদা স্বীকার করতে হবে। তাদের ভালো ভালো কাজকে আদর্শরূপে গ্রহণ করতে হবে। তাদের দ্বারা ত্রুটি-বিচ্যুতি হয়ে গেলে তার সমালোচনা হতে বিরত থাকতে হবে।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান