আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ

৫৬- পানাহার সংক্রান্ত অধ্যায়

হাদীস নং:
আন্তর্জাতিক নং: ৫৩৮৫
২৮৪২. নরম রুটি আহার করা এবং টেবিল ও (চামড়ার) দস্তরখানে আহার করা।
৪৯৯৩। মুহাম্মাদ ইবনে সিনান (রাহঃ) ......... কাতাদা (রাহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমরা আনাস (রাযিঃ)- এর কাছে ছিলাম। তার সঙ্গে তার বাবুর্চিও ছিল। তিনি বললেনঃ নবী করীম (ﷺ) ইন্‌তিকালের পূর্ব পর্যন্ত পাতলা নরম রুটি এবং ভুনা বকরীর গোশত খাননি; এমনকি তিনি এ অবস্থায়ই আল্লাহর সঙ্গে মিলিত হন।

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এখানে হাদীসটি সংক্ষিপ্ত আকারে আনা হয়েছে। অন্যান্য বর্ণনার আলোকে নিম্নে পূর্ণাঙ্গ হাদীস ও তার ব্যাখ্যা পেশ করা হলো।

عن أنس – رضي الله عنه – قَالَ: لَمْ يَأكُلِ النَّبيُّ – صلى الله عليه وسلم – عَلَى خِوَانٍ حَتَّى مَاتَ، وَمَا أكَلَ خُبْزًا مُرَقَّقًا حَتَّى مَاتَ وَلاَ رَأى شَاةً سَمِيطًا بعَيْنِهِ قَطُّ

হযরত আনাস রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওফাতের পূর্ব পর্যন্ত কখনও টেবিলের উপর খাননি এবং তিনি কখনও পাতলা মিহি রুটিও খাননি এবং তিনি নিজ চোখে কখনও আস্ত ভুনা ছাগল দেখেননি।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনও টেবিলের উপর খাননি। তিনি নিচে দস্তরখানের উপর খানা রেখে খেতেন। বিনয়ের ভঙ্গিতে বসতেন। খাবার আল্লাহ তা'আলার দান। তা বিনয়ের সঙ্গেই খাওয়া উচিত। টেবিলের উপর খাবার রেখে খেলে খাওয়ার সময় মাথা নোওয়াতে হয় না। ফলে খাওয়ার ভঙ্গি বিনয়ের হয় না। তাই এভাবে খাওয়া পসন্দনীয় নয়, যদিও জায়েয আছে। খাওয়ার এ পদ্ধতি মূলত অমুসলিমদের থেকেই এসেছে। তাই যথাসম্ভব এটা বর্জন করা উত্তম। নিচে বসেই খাবার খাওয়া সুন্নত। অবশ্য ওজরের কথা ভিন্ন।

(তিনি কখনও পাতলা মিহি রুটিও খাননি)। মোটা খাবার ও মোটা পোশাকই তাঁর পসন্দ ছিল। তিনি সাদামাটা জীবনে অভ্যস্ত ছিলেন। সর্বদা বিলাসিতা পরিহার করে চলতেন। তাই জীবনে কখনও পাতলা ও মিহি রুটি তিনি খাননি। যবের রুটি খেতেন এবং তাও আচালা, যেমনটা হাদীছে এসেছে।

(তিনি নিজ চোখে কখনও আস্ত ভুনা ছাগল দেখেননি)। سميط বলা হয় এমন ভুনা পশুকে, যা যবাই করার পর গরম পানি দিয়ে পশম দূর করা হয়, তারপর চামড়াসহ ভুনা করা হয়। সাধারণত অল্পবয়সী পশুর ক্ষেত্রে এমন করা হয়। আয়েশী কিসিমের লোক এরকম বিলাসিতা করে থাকে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিলাসিতা পসন্দ করতেন না। তাই তাঁর দস্তরখানে কখনও এরকম আস্ত ভুনা ছাগল রাখা হতো না। এ কারণেই ওফাত পর্যন্ত তিনি নিজ চোখে আস্ত ভুনা ছাগল দেখেননি অর্থাৎ খাননি।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

পানাহারে বিলাসিতা এড়িয়ে চলা উচিত। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন এতে অভ্যস্ত ছিলেন না, তখন তাঁর আশেক-প্রেমিকদের জন্যও এটা শোভা পায় না।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন