আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ

৫৪- তালাক - ডিভোর্স অধ্যায়

হাদীস নং:
আন্তর্জাতিক নং: ৫২৭১
২২৭৯. বাধ্য হয়ে, মাতাল ও পাগল অবস্থায় তালাক দেওয়া এবং এতদুভয়ের বিধান সম্বন্ধে। ভুলবশতঃ তালাক দেওয়া এবং শিরক্ ইত্যাদি সম্বন্ধে। (এসব নিয়তের উপর নির্ভরশীল)। কেননা নবী (ﷺ) বলেছেনঃ প্রতিটি কাজ নিয়ত অনুসারে বিবেচিত হয়। প্রত্যেকে তা-ই পায়, যার সে নিয়ত করে।
শা’বী (রাহঃ) পাঠ করেনঃ لاَ تُؤَاخِذْنَا إِنْ نَسِينَا أَوْ أَخْطَأْنَا (হে আমাদের প্রতিপালক) আমরা যদি ভুল ভ্রান্তি বশতঃ কোন কাজ করে ফেলি, তবে সে জন্য আপনি আমাদেরকে পাকড়াও করবেন না। ওয়াসওয়াসা সম্পন্ন ব্যক্তির স্বীকারোক্তিতে যা দুরস্ত হয় না। স্বীয় যিনার কথা স্বীকারকারী জনৈক ব্যক্তিকে নবী (ﷺ) বলেছিলেনঃ তুমি কি পাগল হয়েছ ?
‘আলী (রাযিঃ) বলেন, হামযা (রাযিঃ) আমার দু’টি উটনীর পার্শ্বদেশ ফেঁড়ে ফেললে, নবী (ﷺ) হামযাকে তিরস্কার করতে থাকেন। হঠাৎ দেখা গেল নেশায় হামযার চক্ষুযুগল রক্তিম হয়ে গেছে।[১] এরপর হামযা বললেন, তোমরা তো আমার বাবার গোলাম বৈ নও। তখন নবী (ﷺ) বুঝতে পারলেন, তিনি নেশাগ্রস্থ হয়েছেন। তিনি সেখান থেকে বেরিয়ে এলেন আমরাও তাঁর সাথে বেরিয়ে এলাম।
‘উসমান (রাযিঃ) বলেনঃ পাগল ও নেশাগ্রস্থ ব্যক্তির তালাক প্রযোজ্য হয় না।
ইবনে ‘আব্বাস (রাযিঃ) বলেন, নেশাগ্রস্ত এবং চাপে বাধ্য হয়ে তালাক প্রদানকারীর তালাক কার্যকর হয় না। ‘উকবা ইবনে ‘আমের (রাযিঃ) বলেন, ওয়াসওয়াসা সম্পন্ন (সন্দেহের বাতিকগ্রস্থ) ব্যক্তির তালাক কার্যকর হয় না।
‘আতা (রাহঃ) বলেনঃ তালাক শর্তযুক্ত করে তালাক দিলে শর্ত পাওয়ার পরই তালাক হবে।
না‘ফি (রাহঃ) জিজ্ঞাসা করলেন, ঘর থেকে বের হওয়ার শর্তে স্বীয় স্ত্রীকে জনৈক ব্যক্তি তিন তালাক দিল- (এর হুকুম কি?)। ইবনে ‘উমর (রাযিঃ) বললেনঃ যদি সে মহিলা ঘর থেকে বের হয়, তাহলে সে তিন তালাকপ্রাপ্তা হবে। আর যদি বের না হয়, তাহলে কিছুই হবে না।
যুহরী (রাহঃ) বলেন, যে ব্যক্তি বললঃ যদি আমি এরূপ না করি, তবে আমার স্ত্রীর প্রতি তিন তালাক প্রযোজ্য হবে। তার সম্বন্ধে যুহরী (রাহঃ) বলেন, উক্ত ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করা হবে, শপথকালে তার ইচ্ছা কি ছিল ? যদি সে ইচ্ছাকৃত সময়সীমা নির্ধারণ করে থাকে এবং শপথকালে তার এ ধরনের নিয়ত থাকে তাহলে এ বিষয়কে তার দীন ও আমানতের উপর ন্যস্ত করা হবে।
ইবরাহীম (রাহঃ) বলেন, যদি সে বলে, “তোমাকে আমার কোন প্রয়োজন নেই’’; তবে তার নিয়ত অনুসারে কাজ হবে। আর প্রত্যেক সম্প্রদায়ের লোক তাদের নিজস্ব ভাষায় তালাক দিতে পারে।
কাতাদা (রাহঃ) বলেনঃ যদি কেউ বলে তুমি গর্ভবতী হলে, তোমার প্রতি তিন তালাক। তাহলে সে প্রত্যেক তুহরে স্ত্রীর সাথে একবার সঙ্গম করবে। যখন গর্ভ প্রকাশ পাবে, তৎক্ষণাৎ সে স্বামী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে।
হাসান (রাহঃ) বলেন, যদি কেউ বলে, “তুমি তোমার পরিবারের কাছে চলে যাও’’ তবে তার নিয়ত অনুযায়ী কাজ হবে।
ইবনে ‘আব্বাস (রাযিঃ) বলেনঃ প্রয়োজনের তাগিদে তালাক দেওয়া যায়। আর দাসমুক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে থাকলেই করা যায়।
যুহরী (রাহঃ) বলেন, যদি কেউ বলেঃ তুমি আমার স্ত্রী নও, তবে তালাক হওয়া বা না হওয়া নিয়তের উপর নির্ভর করবে। যদি সে তালাকের নিয়ত করে থাকে, তবে তাই হবে।
‘আলী (রাযিঃ) (উমর (রাযিঃ) কে সম্বোধন করে) বলেনঃ আপনি কি অবগত নন যে, তিন ধরনের লোক থেকে কসম তুলে নেয়া হয়েছে। এক, পাগল ব্যক্তি যতক্ষণ না সে হুশ ফিরে পায়; দুই, শিশু যতক্ষণ না সে বালেগ হয়, তিন, ঘুমন্ত ব্যক্তি, যতক্ষণ না সে জাগ্রত হয়।
‘আলী (রাযিঃ) (আরও) বলেনঃ পাগল লোক ব্যতীত অন্য সকলের তালাক কার্যকর হয়।
৪৮৯৩। আবুল ইয়ামান (রাহঃ) ......... আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আসলাম গোত্রের এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর কাছে এল, তখন তিনি মসজিদে ছিলেন। লোকটি তাকে ডেকে বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! হতভাগ্য ব্যভিচার করেছে। সে একথা দিয়ে নিজেকে বোঝাতে চাইল। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। তিনি যে দিক ফিরলেন সে সেদিকে গিয়ে আবার বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! হতভাগ্য যিনা করেছে। তিনি মুখ ফিরিয়ে নিলেন। এরপর সেও সে দিকে গেল যে দিকে তিনি মুখ ফিরালেন এবং পুনরায় সে কথা বলল। তিনি চতুর্থবার মুখ ফিরিয়ে নিলে সেও সেদিকে গেল।
যখন সে নিজের সম্পর্কে চারবার সাক্ষী দিল, তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাকে ডেকে বললেনঃ তুমি কি পাগল হয়েছ? সে বলল, না। নবী (ﷺ) বললেনঃ তাকে নিয়ে যাও এবং রজম কর। (পাথর মেরে হত্যা কর) লোকটি ছিল বিবাহিত।
যুহরী (রাহঃ) বলেন, জাবির ইবনে ‘আব্দুল্লাহ আনসারী (রাযিঃ) থেকে যিনি শুনেছেন, তিনি আমাকে বলেছেনঃ রজমকারীদের মধ্যে আমিও একজন ছিলাম। আমরা মদীনার মুসল্লায় (ঈদগাহে) তাকে রজম করলাম। পাথর যখন তাকে অতিষ্ঠ করে তুললো, সে তখন পালিয়ে গেল। হাররা নামক স্থানে আমরা তাকে ধরলাম এবং রজম করলাম। অবশেষে সে মারা গেল।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন