আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ

৫৪- তালাক - ডিভোর্স অধ্যায়

হাদীস নং:
আন্তর্জাতিক নং: ৫২৬৯
২৭৭৭. বিবাহের পূর্বে তালাক নেই।
মহান আল্লাহর বাণীঃ হে মু’মিনগণ! তোমরা যখন কোন মু’মিন রমণীকে বিবাহ কর এবং সঙ্গমের পূর্বেই তালাক দাও, তখন তোমাদের জন্য তাদেরকে কোন ইদ্দত পালন করতে হবে না। সুতরাং তাদেরকে কিছু সম্মানী দিয়ে সৌজন্যের সাথে বিদায় দাও।
ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) বলেনঃ (এ আয়াতে) আল্লাহ্ তা‘আলা বিবাহের পরে তালাকের কথা উল্লেখ করেছেন। এ ব্যাপারে ‘আলী (রাযিঃ), সা‘ঈদ ইবনে মুসায়্যেব (রাহঃ), ‘উরওয়া ইবনে যুবাইর (রাহঃ), আবু বকর ইবনে আব্দুর রহমান, ‘উবাইদুল্লাহ্ ইবনে ‘আব্দুল্লাহ ইবনে ‘উতবা, আবান ইবনে ‘উসমান, ‘আলী ইবনে হুসাইন, শুরায়হ্, সা‘ঈদ ইবনে জুবাইর, কাসিম, সালিম, তাউস, হাসান, ইকরিমা, আতা, আমির ইবনে সা’দ, জাবির ইবনে যায়দ, নাফি‘ ইবনে জুবাইর, মুহাম্মাদ ইবনে কা‘ব, সুলাইমান ইবনে ইয়াসার, মুজাহিদ, কাসিম ইবনে ‘আব্দুর রহমান, ‘আমর ইবনে হারিম ও শা‘বী (রাহঃ) প্রমুখ থেকেও বর্ণিত আছে যে, বিবাহের পূর্বে তালাক বর্তায় না।

পরিচ্ছেদঃ ২৭৭৮. বিশেষ কারণে স্বীয় স্ত্রীকে যদি কেউ বোন বলে পরিচয় দেয়, তাতে কিছু হবে না।
নবী (ﷺ) বলেনঃ ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) (এক সময়) স্বীয় সহধর্মীণী সারাকে লক্ষ্য করে বলেছিলেন, এটি আমার বোন। আর তা ছিল দ্বীনী সম্পর্কের সূত্রে।

পরিচ্ছেদঃ ২২৭৯. বাধ্য হয়ে, মাতাল ও পাগল অবস্থায় তালাক দেওয়া এবং এতদুভয়ের বিধান সম্বন্ধে। ভুলবশতঃ তালাক দেওয়া এবং শিরক্ ইত্যাদি সম্বন্ধে। (এসব নিয়তের উপর নির্ভরশীল)। কেননা নবী (ﷺ) বলেছেনঃ প্রতিটি কাজ নিয়ত অনুসারে বিবেচিত হয়। প্রত্যেকে তা-ই পায়, যার সে নিয়ত করে।
শা’বী (রাহঃ) পাঠ করেনঃ لاَ تُؤَاخِذْنَا إِنْ نَسِينَا أَوْ أَخْطَأْنَا (হে আমাদের প্রতিপালক) আমরা যদি ভুল ভ্রান্তি বশতঃ কোন কাজ করে ফেলি, তবে সে জন্য আপনি আমাদেরকে পাকড়াও করবেন না। ওয়াসওয়াসা সম্পন্ন ব্যক্তির স্বীকারোক্তিতে যা দুরস্ত হয় না। স্বীয় যিনার কথা স্বীকারকারী জনৈক ব্যক্তিকে নবী (ﷺ) বলেছিলেনঃ তুমি কি পাগল হয়েছ ?
‘আলী (রাযিঃ) বলেন, হামযা (রাযিঃ) আমার দু’টি উটনীর পার্শ্বদেশ ফেঁড়ে ফেললে, নবী (ﷺ) হামযাকে তিরস্কার করতে থাকেন। হঠাৎ দেখা গেল নেশায় হামযার চক্ষুযুগল রক্তিম হয়ে গেছে।[১] এরপর হামযা বললেন, তোমরা তো আমার বাবার গোলাম বৈ নও। তখন নবী (ﷺ) বুঝতে পারলেন, তিনি নেশাগ্রস্থ হয়েছেন। তিনি সেখান থেকে বেরিয়ে এলেন আমরাও তাঁর সাথে বেরিয়ে এলাম।
‘উসমান (রাযিঃ) বলেনঃ পাগল ও নেশাগ্রস্থ ব্যক্তির তালাক প্রযোজ্য হয় না।
ইবনে ‘আব্বাস (রাযিঃ) বলেন, নেশাগ্রস্ত এবং চাপে বাধ্য হয়ে তালাক প্রদানকারীর তালাক কার্যকর হয় না। ‘উকবা ইবনে ‘আমের (রাযিঃ) বলেন, ওয়াসওয়াসা সম্পন্ন (সন্দেহের বাতিকগ্রস্থ) ব্যক্তির তালাক কার্যকর হয় না।
‘আতা (রাহঃ) বলেনঃ তালাক শর্তযুক্ত করে তালাক দিলে শর্ত পাওয়ার পরই তালাক হবে।
না‘ফি (রাহঃ) জিজ্ঞাসা করলেন, ঘর থেকে বের হওয়ার শর্তে স্বীয় স্ত্রীকে জনৈক ব্যক্তি তিন তালাক দিল- (এর হুকুম কি?)। ইবনে ‘উমর (রাযিঃ) বললেনঃ যদি সে মহিলা ঘর থেকে বের হয়, তাহলে সে তিন তালাকপ্রাপ্তা হবে। আর যদি বের না হয়, তাহলে কিছুই হবে না।
যুহরী (রাহঃ) বলেন, যে ব্যক্তি বললঃ যদি আমি এরূপ না করি, তবে আমার স্ত্রীর প্রতি তিন তালাক প্রযোজ্য হবে। তার সম্বন্ধে যুহরী (রাহঃ) বলেন, উক্ত ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করা হবে, শপথকালে তার ইচ্ছা কি ছিল ? যদি সে ইচ্ছাকৃত সময়সীমা নির্ধারণ করে থাকে এবং শপথকালে তার এ ধরনের নিয়ত থাকে তাহলে এ বিষয়কে তার দীন ও আমানতের উপর ন্যস্ত করা হবে।
ইবরাহীম (রাহঃ) বলেন, যদি সে বলে, “তোমাকে আমার কোন প্রয়োজন নেই’’; তবে তার নিয়ত অনুসারে কাজ হবে। আর প্রত্যেক সম্প্রদায়ের লোক তাদের নিজস্ব ভাষায় তালাক দিতে পারে।
কাতাদা (রাহঃ) বলেনঃ যদি কেউ বলে তুমি গর্ভবতী হলে, তোমার প্রতি তিন তালাক। তাহলে সে প্রত্যেক তুহরে স্ত্রীর সাথে একবার সঙ্গম করবে। যখন গর্ভ প্রকাশ পাবে, তৎক্ষণাৎ সে স্বামী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে।
হাসান (রাহঃ) বলেন, যদি কেউ বলে, “তুমি তোমার পরিবারের কাছে চলে যাও’’ তবে তার নিয়ত অনুযায়ী কাজ হবে।
ইবনে ‘আব্বাস (রাযিঃ) বলেনঃ প্রয়োজনের তাগিদে তালাক দেওয়া যায়। আর দাসমুক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে থাকলেই করা যায়।
যুহরী (রাহঃ) বলেন, যদি কেউ বলেঃ তুমি আমার স্ত্রী নও, তবে তালাক হওয়া বা না হওয়া নিয়তের উপর নির্ভর করবে। যদি সে তালাকের নিয়ত করে থাকে, তবে তাই হবে।
‘আলী (রাযিঃ) (উমর (রাযিঃ) কে সম্বোধন করে) বলেনঃ আপনি কি অবগত নন যে, তিন ধরনের লোক থেকে কসম তুলে নেয়া হয়েছে। এক, পাগল ব্যক্তি যতক্ষণ না সে হুশ ফিরে পায়; দুই, শিশু যতক্ষণ না সে বালেগ হয়, তিন, ঘুমন্ত ব্যক্তি, যতক্ষণ না সে জাগ্রত হয়।
‘আলী (রাযিঃ) (আরও) বলেনঃ পাগল লোক ব্যতীত অন্য সকলের তালাক কার্যকর হয়।

[১] এ সময় মদ পান করা হারাম হয়নি।
৪৮৯১। মুসলিম ইবনে ইবরাহীম (রাহঃ) ......... আবু হুরায়রা (রাযিঃ) সূত্রে নবী (ﷺ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ আল্লাহ আমার উম্মতের অন্তরে জাগ্রত ধারণাসমূহ ক্ষমা করে দিয়েছেন, যতক্ষণ না সে তা কার্যে পরিনত করে বা ব্যক্ত করে। কাতাদা (রাহঃ) বলেনঃ মনে মনে তালাক দিলে তাতে কিছুই হবে না।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন