শরহু মাআ’নিল আছার- ইমাম ত্বহাবী রহঃ

১১. শরীআত বিধিত দন্ডের অধ্যায়

হাদীস নং: ৫০৫১
৬. কোন মু'মিন কাফিরকে ইচ্ছাকৃত হত্যা করা প্রসঙ্গ
৫০৫১। সুলায়মান ইব্‌ন শু'আইব (রাহঃ) ….. মুহাম্মাদ ইব্‌ন মুনকাদির (রাহঃ) সূত্রে নবী(ﷺ) থেকে অনুরূপ রিওয়ায়াত করেছেন।

আমাদের মতে যুক্তি ও কিয়াসও এটা সমর্থন করে। আর তা এই যে, আমরা লক্ষ্য করছি, হারবী কাফিরের রক্ত হালাল, তার সম্পদও হালাল। পক্ষান্তরে যখন সে যিম্মী হয়ে যায় তখন তার রক্ত ও সম্পদ অনুরূপভাবে হারাম হয়ে যায়। যেমনিভাবে মুসলমানের রক্ত ও সম্পদ হারাম। আরাে আমরা লক্ষ্য করেছি যে, যে ব্যক্তি যিম্মী তথা চুক্তিবদ্ধ কোন লােকের এতটুকু সম্পদ চুরি করে, যাতে হাত কাটা হয়, তাহলে তার (এই চোরের) হাত অনুরূপভাবে কাটা হবে, যেভাবে মুসলমানের সম্পদে কাটা হয়। যখন যিম্মীর সম্পদের হুরমত বা নিষিদ্ধতা বিনষ্টে সেই শাস্তি প্রযােজ্য হয় যা মুসলমানের সম্পদের হুরমত বা নিষিদ্ধতা বিনষ্টে ওয়াজিব হয়ে থাকে। সুতরাং যুক্তির দাবি হলাে যে, যিম্মীর খুনের হুরমত বিনষ্টকারীরও সেই শাস্তি প্রযােজ্য হবে, যা মুসলমানের খুন প্রবাহিতকারীর জন্য হয়ে থাকে।

যদি কোন প্রশ্নকারী প্রশ্ন করে যে, সম্পদের হুরমত (নিষিদ্ধতা) বিনষ্টের শাস্তি এবং খুনের হুরমত বিনষ্টের শাস্তির মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। কারণ যখন কোন ক্রীতদাস তার মনিবের সম্পদ চুরি করে তখন তার হাত কাটা হয় না। পক্ষান্তরে সে যদি তার মনিবকে হত্যা করে তাহলে তাকে কিসাস হিসাবে হত্যা করা হয়। সুতরাং উভয়ের মাঝে পার্থক্য রয়েছে। তাই তােমরা এটাও অস্বীকার করতে পারবেনা যে, যিম্মীর সম্পদের হুরমত বিনষ্টে এবং তার রক্ত প্রবাহিত করার শাস্তিতে পার্থক্য বিদ্যমান।

তাকে উত্তরে বলা হবে যে, তােমার বক্তব্য তাে আমাদের মাযহাবেরই গুরুত্বকে বৃদ্ধি করে। কেননা তােমরা উল্লেখ করেছ, তাঁরা (ফকীহগণ) ঐকমত্য পােষণ করেছেন যে, মনিবের সম্পদ চুরি করাতে ক্রীতদাসের হাত কাটা হয় না। কিন্তু তাকে হত্যা করার অবস্থায় তাকে হত্যা করা হয়। অনুরূপভাবে মনিবের ক্রীতদাসদেরকে হত্যা করলে তখনও (কিসাসরূপে) হত্যা করা হয়। তাই এ বিষয়ে যা কিছু তােমরা উল্লেখ করেছে এ অনুযায়ী তারা সম্পদ সংক্রান্ত বিষয়ে সহজ এবং খুনের ব্যাপারে কঠোরতা অবলম্বন করেছে। তারা হত্যার ব্যাপারে শাস্তি ওয়াজিব সাব্যস্ত করেছে। পক্ষান্তরে চুরির ব্যাপারে তা ওয়াজিব সাব্যস্ত করে নাই। সুতরাং খুনের বিষয়ে কঠোরতা এবং সম্পদ তথা আর্থিক ব্যাপরে সহজতা সাব্যস্ত হলাে। অতঃপর আমরা লক্ষ্য করছি যে, যিম্মীর সম্পদ চুরি করলেও মুসলমাননের জন্য সেই শাস্তি প্রযােজ্য হয়; যা মুসলমানের সম্পদ চুরির ক্ষেত্রে হয়। তাই এটা অধিকতর সংগত যে, যিম্মীকে হত্যা করার অবস্থায় তাকে সেই শাস্তিই দেয়া হবে, যা মুসলমানকে হত্যা করলে দেয়া হয়।

তাঁরা (ফকীগগণ) ঐকমত্য পােষণ করেছেন যে, যদি কোন যিম্মী কোন যিম্মীকে হত্যা করে, অতঃপর হত্যাকারী ইসলাম গ্রহণ করে, তাহলে তাকে (হত্যাকারীকে) ওই যিম্মীর কিসাসরূপে হত্যা করা হবে, যাকে সে কুফরী অবস্থায় হত্যা করেছিল। আর তার ইসলাম গ্রহণ ওই শাস্তিকে বাতিল করবেনা।

যখন আমরা লক্ষ্য করছি যে, হত্যা পরবর্তী ইসলাম গ্রহণ কুফরী অবস্থায় সংঘটিত হত্যাকে বাতিল করেনা। এবং সমস্ত হদসমূহ এক ও অভিন্ন। হদ এরূপ অবস্থায় পাওয়া যায় না যে, তা শুরুতে ওয়াজিব নয়।

তুমি কি লক্ষ্য করছ না যে, যদি কেউ কাউকে হত্যা করে এবং নিহত ব্যক্তি মুরতাদ (ধর্মত্যাগী) হয় তাহলে এই হত্যাকারীর উপর কিছুই ওয়াজিব হবে না। আর যদি সে কোন মুসলিমকে যখম করে অতঃপর সে (আল্লাহর পানাহ) মুরতাদ হয়ে মরে যায় তাহলে এই যখমকারীকে হত্যা করা হবে না। সুতরাং তার অপরাধের পূর্বে মুরতাদ হওয়া এবং পরে মুরতাদ হওয়া উভয়টি (কিসাসরূপে) হত্যাকে বিলুপ্ত করার ব্যাপারে অভিন্ন।

তাই যুক্তির দাবি এটাই যে, অপরাধ করার পূর্বে এবং পরে হত্যাকারীর হুকুম অভিন্ন হবে। তাই যখন অপরাধের পরে এবং কিসাসের পুর্বে তার ইসলাম গ্রহণ তার থেকে কিসাসকে বিলুপ্ত করেনা, অনুরূপভাবে অপরাধের পূর্বেকার ইসলাম গ্রহণও তার থেকে কিসাসকে বিলুপ্ত করবে না। এটা ইমাম আবু হানীফা (রাহঃ), ইমাম আবু ইউসুফ (রাহঃ) ও ইমাম মুহাম্মাদ (রাহঃ)-এর অভিমত।
5051 - حَدَّثَنَا سُلَيْمَانُ بْنُ شُعَيْبٍ , قَالَ: ثنا يَحْيَى بْنُ سَلَّامٍ , عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ أَبِي حُمَيْدٍ الْمَدَنِيِّ , عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ الْمُنْكَدِرِ , عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِثْلَهُ وَالنَّظَرُ عِنْدَنَا شَاهِدٌ لِذَلِكَ أَيْضًا وَذَلِكَ أَنَّا رَأَيْنَا الْحَرْبِيَّ دَمَهُ حَلَالٌ وَمَالَهُ حَلَالٌ , فَإِذَا صَارَ ذِمِّيًّا حَرُمَ دَمُهُ وَمَالُهُ كَحُرْمَةِ دَمِ الْمُسْلِمِ وَمَالِ الْمُسْلِمِ. ثُمَّ رَأَيْنَا مَنْ سَرَقَ مِنْ مَالِ الذِّمِّيِّ مَا يَجِبُ فِيهِ الْقَطْعُ , قُطِعَ كَمَا يُقْطَعُ فِي مَالِ الْمُسْلِمِ. فَلَمَّا كَانَتِ الْعُقُوبَاتُ فِي انْتِهَاكِ الْمَالِ الَّذِي قَدْ حَرُمَ بِالذِّمَّةِ كَالْعُقُوبَاتِ فِي انْتِهَاكِ الْمَالِ الَّذِي حَرُمَ بِالْإِسْلَامِ كَانَ يَجِيءُ فِي النَّظَرِ أَيْضًا أَنْ تَكُونَ الْعُقُوبَةُ فِي الدَّمِ الَّذِي قَدْ حَرُمَ بِالذِّمَّةِ كَالْعُقُوبَةِ فِي الَّذِي قَدْ حَرُمَ بِالْإِسْلَامِ. فَإِنْ قَالَ قَائِلٌ: فَإِنَّا قَدْ رَأَيْنَا الْعُقُوبَاتِ الْوَاجِبَاتِ فِي انْتِهَاكِ حُرْمَةِ الْأَمْوَالِ قَدْ فَرَّقَ بَيْنَهُمَا وَبَيْنَ الْعُقُوبَاتِ الْوَاجِبَاتِ فِي انْتِهَاكِ حُرْمَةِ الدَّمِ , وَذَلِكَ أَنَّا رَأَيْنَا الْعَبْدَ يَسْرِقُ مِنْ مَالِ مَوْلَاهُ فَلَا يُقْطَعُ وَيَقْتُلُ مَوْلَاهُ فَيُقْتَلُ , فَفَرَّقَ بَيْنَ ذَلِكَ فَمَا تُنْكِرُونَ أَيْضًا أَنْ يَكُونَ قَدْ فَرَّقَ بَيْنَ مَا يَجِبُ فِي انْتِهَاكِ مَالِ الذِّمِّيِّ وَدَمِهِ؟ قِيلَ لَهُ: هَذَا الَّذِي ذَكَرْتُ قَدْ زَادَ مَا ذَهَبْنَا إِلَيْهِ تَوْكِيدًا لِأَنَّكَ ذَكَرْتَ أَنَّهُمْ أَجْمَعُوا أَنَّ الْعَبْدَ لَا يُقْطَعُ فِي مَالِ مَوْلَاهُ وَأَنَّهُ يُقْتَلُ بِمَوْلَاهُ وَبِعَبِيدِ مَوْلَاهُ. فَمَا وَصَفْتُ مِنْ ذَلِكَ كَمَا ذَكَرْتُ فَقَدْ خَفَّفُوا أَمْرَ الْمَالِ وَوَكَّدُوا أَمْرَ الدَّمِ فَأَوْجَبُوا الْعُقُوبَةَ فِي الدَّمِ حَيْثُ لَمْ يُوجِبُوهَا بِالْمَالِ. فَلَمَّا ثَبَتَ تَوْكِيدُ أَمْرِ الدَّمِ وَتَخْفِيفُ أَمْرِ الْمَالِ ثُمَّ رَأَيْنَا مَالَ الذِّمِّيِّ يَجِبُ فِي انْتِهَاكِهِ عَلَى الْمُسْلِمِ مِنَ الْعُقُوبَةِ [ص:196] كَمَا يَجِبُ عَلَيْهِ فِي انْتِهَاكِ مَالِ الْمُسْلِمِ كَانَ دَمُهُ أَحْرَى أَنْ يَكُونَ عَلَيْهِ فِي انْتِهَاكِ حُرْمَتِهِ مِنَ الْعُقُوبَةِ مَا يَكُونُ عَلَيْهِ فِي انْتِهَاكِ حُرْمَةِ دَمِ الْمُسْلِمِ. وَقَدْ أَجْمَعُوا أَنَّ ذِمِّيًّا لَوْ قَتَلَ ذِمِّيًّا ثُمَّ أَسْلَمَ الْقَاتِلُ أَنَّهُ يُقْتَلُ بِالذِّمِّيِّ الَّذِي قَتَلَهُ فِي حَالِ كُفْرِهِ وَلَا يُبْطِلُ ذَلِكَ إِسْلَامُهُ. فَلَمَّا رَأَيْنَا الْإِسْلَامَ الطَّارِئَ عَلَى الْقَتْلِ لَا يُبْطِلُ الْقَتْلَ الَّذِي كَانَ فِي حَالِ الْكُفْرِ وَكَانَتِ الْحُدُودُ تَمَامُهَا أَحَدُهَا وَلَا يُوجَدُ عَلَى حَالٍ - لَا يَجِبُ فِي الْبَدْءِ مَعَ تِلْكَ الْحَالِ. أَلَا تَرَى أَنَّ رَجُلًا لَوْ قَتَلَ رَجُلًا وَالْمَقْتُولُ مُرْتَدٌّ أَنَّهُ لَا يَجِبُ عَلَيْهِ شَيْءٌ وَأَنَّهُ لَوْ جَرَحَهُ وَهُوَ مُسْلِمٌ ثُمَّ ارْتَدَّ - عِيَاذًا بِاللهِ - فَمَاتَ لَمْ يُقْتَلْ. فَصَارَتْ رِدَّتُهُ الَّتِي تَقَدَّمَتِ الْجِنَايَةَ وَالَّتِي طَرَأَتْ عَلَيْهَا فِي دَرْءِ الْقَتْلِ - سَوَاءً. فَكَانَ كَذَلِكَ فِي النَّظَرِ أَنْ يَكُونَ الْقَاتِلُ قَبْلَ جِنَايَتِهِ وَبَعْدَ جِنَايَتِهِ سَوَاءً. وَلَمَّا كَانَ إِسْلَامُهُ بَعْدَ جِنَايَتِهِ قَبْلَ أَنْ يُقْتَلَ بِهَا لَا يَدْفَعُ عَنْهُ الْقَوَدَ كَانَ كَذَلِكَ إِسْلَامُهُ الْمُتَقَدِّمُ لِجِنَايَتِهِ لَا يَدْفَعُ عَنْهُ الْقَوَدَ. وَهَذَا قَوْلُ أَبِي حَنِيفَةَ وَأَبِي يُوسُفَ وَمُحَمَّدٍ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِمْ أَجْمَعِينَ. وَقَدْ
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
ত্বহাবী শরীফ - হাদীস নং ৫০৫১ | মুসলিম বাংলা