শরহু মাআ’নিল আছার- ইমাম ত্বহাবী রহঃ

১০. শপথ ও মান্নতের অধ্যায়

হাদীস নং: ৪৭৩৮
অধ্যায়ঃ কসম ও মান্নত
১. কাফফারা প্রদান কালে প্রতিটি মিসকীনকে কি পরিমাণ খাদ্যদ্রব্য দেয়া হয়?
৪৭৩৮। ইবরাহীম ইবন মারযূক (রাহঃ) ...... আবু হুরাইরা (রাযিঃ) হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, “একদিন জনৈক ব্যক্তি আরয করেন, হে আল্লাহ্ রাসূল আমি রামাদান মাসে সিয়াম অবস্থায় আমার স্ত্রীর সাথে সঙ্গম করে ফেলেছি।” “রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) তাকে বললেন, “তুমি একটি গোলাম আযাদ করবে।" সে বলল, “হে আল্লাহর রাসূল! গোলাম আযাদ করার আমার সামর্থ্য নেই।" রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বললেন, “তাহলে একাধারে দুমাস সিয়াম পালন করবে।" সে বলল, “সিয়াম পালন করার শক্তিও আমার নেই, ইয়া রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) তিনি বললেন, “তাহলে ষাট মিসকীনকে তুমি আহার করাবে।” লোকটি বলল, “এটার ক্ষমতাও আমার নেই ইয়া রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)" বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) ১৫ (পনর) সা (১ সা = সাড়ে তিন সের) খেজুরসহ একটি থলে তার হাতে দিয়ে বললেন, “এগুলো নাও এবং সাদকা করে দাও।" লোকটি বলল, “আমার এবং আমার পরিবার থেকে অধিক দরিদ্র লোককে দান করব?” অর্থাৎ আমার এবং আমার পরিবার থেকে অধিক দীন-দরিদ্র আর নেই। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাকে বললেন, তাহলে তুমি ও তোমার পরিবার তা ভক্ষণ কর । আর এর পরিবর্তে একটি সাওম পালন কর ও আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর।
আবু জা'ফর আত-তাহাবী (রাহঃ) বলেনঃ একদল আলিম মত প্রকাশ করেন যে, কসমের কাফফারা আদায় কালে আহার করানোর পরিমাণ হল প্রতিটি মিসকীনকে এক মুদ (১ সা' এর ১ অংশ) আহার প্রদান করা। কেননা রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) লোকটিকে হুকুম দিয়েছিলেন, যা উল্লেখিত হাদীসে বর্ণিত রয়েছে, সে যেন ৬০ জন মিসকীনকে ১৫ সা' আহার প্রদান করে। তাহলে হিসাবে দেখা যায় প্রতিটি মিসকীনের অংশ পড়ে ১ মুদ খাদ্য। তারা বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) এর সাহাবীদের একটি দল কসমের কাফফারা আদায় কালে আমরা যা বলেছি সেই মতে কাজ করেছেন। এ সম্পর্কে তারা নিম্নবর্ণিত দলীলটি পেশ করেনঃ
كِتَابُ الْأَيْمَانِ وَالنُّذُورِ بَابُ الْمِقْدَارِ الَّذِي يُعْطَى كُلُّ مِسْكِينٍ مِنَ الطَّعَامِ وَالْكَفَّارَاتِ
4738 - حَدَّثَنَا إِبْرَاهِيمُ بْنُ مَرْزُوقٍ , قَالَ: ثنا أَبُو عَامِرٍ الْعَقَدِيُّ , قَالَ: ثنا هِشَامُ بْنُ سَعْدٍ , عَنِ الزُّهْرِيِّ , عَنْ أَبِي سَلَمَةَ , عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ " أَنَّ رَجُلًا قَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ , إِنِّي وَقَعْتُ بِأَهْلِي فِي رَمَضَانَ قَالَ لَهُ أَعْتِقْ رَقَبَةً قَالَ: مَا أَجِدُهَا يَا رَسُولَ اللهِ , قَالَ فَصُمْ شَهْرَيْنِ مُتَتَابِعَيْنِ قَالَ: مَا أَسْتَطِيعُ , قَالَ فَأَطْعِمْ سِتِّينَ مِسْكِينًا قَالَ: مَا أَجِدُهُ يَا رَسُولَ اللهِ قَالَ: فَأَتَى النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِمِكْتَلٍ فِيهِ قَدْرُ خَمْسَةَ عَشَرَ صَاعًا تَمْرًا , فَقَالَ خُذْهَا فَتَصَدَّقْ بِهِ قَالَ: أَعَلَى أَحْوَجَ مِنِّي وَأَهْلِ بَيْتِي؟ قَالَ فَكُلْهُ أَنْتَ وَأَهْلُ بَيْتِكَ , وَصُمْ يَوْمًا مَكَانَهُ , وَاسْتَغْفِرِ اللهَ " قَالَ أَبُو جَعْفَرٍ رَحِمَهُ اللهُ: فَذَهَبَ قَوْمٌ إِلَى أَنَّ الْإِطْعَامَ فِي كَفَّارَاتِ الْأَيْمَانِ إِنَّمَا هُوَ مُدٌّ لِكُلِّ مِسْكِينٍ , لِأَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَمَرَ الرَّجُلَ فِي الْحَدِيثِ الَّذِي ذَكَرْنَا , أَنْ يُطْعِمَ سِتِّينَ مِسْكِينًا , خَمْسَةَ عَشَرَ صَاعًا , فَالَّذِي يُصِيبُ كُلَّ مِسْكِينٍ مِنْهُمْ , مُدٌّ مُدٌّ قَالُوا: وَقَدْ ذَهَبَ جَمَاعَةٌ مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ , فِي كَفَّارَاتِ الْأَيْمَانِ إِلَى مَا قُلْنَا. فَذَكَرُوا فِي ذَلِكَ مَا

হাদীসের ব্যাখ্যা:

রমযানে রোযা রেখে দিনে স্ত্রী সহবাস করলে বীর্যপাত না হলেও স্বামী-স্ত্রী উভয়ের উপর কাযা ও কাফফারা ওয়াজিব হবে।

কাফফারা আদায়ের নিয়ম
একটি রোযার জন্য দুই মাস ধারাবাহিকভাবে রোযা রাখতে হবে। রোযা রাখতে সক্ষম না হলে ৬০ জন ফকির-মিসকীনকে দুই বেলা পেট ভরে খাওয়াতে হবে। অথবা প্রত্যেককে এর মূল্য দিয়ে দিতে হবে।
মনে রাখতে হবে, রোযা রাখতে সক্ষম হলে ফিদিয়া আদায় করলে তা আদায় হবে না।
-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৬০; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪১৩; আলবাহরুর রায়েক ২/২৭৭; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৩৯৪

কোনো কারণে ধারাবাহিকতা ছুটে গেলে পুনরায় নতুন করে রোযা রাখতে হবে। পেছনের রোযাগুলো কাফফারার রোযা হিসাবে ধর্তব্য হবে না। তবে মহিলাদের হায়েযের কারণে ধারাবাহিকতা নষ্ট হলে অসুবিধা নেই।

ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. বলেন, ‘যার উপর কাফফারা হিসাবে দুই মাস ধারাবাহিকভাবে রোযা রাখা জরুরি সে যদি মাঝে অসুস্থ হওয়ার কারণে রোযা রাখতে না পারে, তাহলে আবার নতুন করে রোযা রাখা শুরু করবে।’-আলমুহাল্লা ৪/৩৩১; মাবসূত, সারাখসী ৭/১৪; আলবাহরুর রায়েক ২/২৭৭; আলমুহীতুল বুরহানী ৫/১৯৬

#সংগৃহীত
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
ত্বহাবী শরীফ - হাদীস নং ৪৭৩৮ | মুসলিম বাংলা