আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ

৫৩- বিবাহ-শাদী সম্পর্কিত অধ্যায়

হাদীস নং:
আন্তর্জাতিক নং: ৫১৭৮
২৭১৮. বকরীর পায়া খাওয়ানোর জন্যও যদি দাওয়াত করা হয়
৪৮০৪। ‘আবদান (রাহঃ) ......... আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, মহানবী (ﷺ) বলেছেন, আমাকে যদি কেউ পায়া খেতে দাওয়াত দেয় আমি তা কবুল করব এবং আমাকে যদি কেউ পায়া হাদীয়া দেয়, তবে আমি তা অবশ্যই গ্রহণ করব।

হাদীসের ব্যাখ্যা:

একদিন হযরত উম্মু হাকীম বিনত ওয়াদি' রাযি. জিজ্ঞেস করেছিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি কি হাদিয়া অপসন্দ করেন? এর উত্তরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হাদিয়া প্রত্যাখ্যান করা কতইনা মন্দ কাজ। তারপর তিনি আলোচ্য হাদীছটি ইরশাদ করেন। হাদীছটিতে বলা হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যদি ছাগলের খুর বা বাহুর মতো অতি সাধারণ জিনিস খাওয়ানোর জন্যও দাওয়াত করা হয়, তবে তিনি তা অবশ্যই কবুল করবেন। এমনিভাবে তাঁকে যদি এরূপ জিনিস হাদিয়াও দেওয়া হয়, তাও তিনি অবশ্যই গ্রহণ করবেন। كراع এর অর্থ খুর। অর্থাৎ গবাদি পশুর পায়ের একদম নিম্নাংশ। ذراع এর অর্থ বাহু। বোঝানো হচ্ছে, হাদিয়া বা দাওয়াতের খাদ্য যত সাধারণই হোক না কেন, তা অবশ্যই গ্রহণ করা চাই। তুচ্ছ বলে প্রত্যাখ্যান করা উচিত নয়।

এ হাদীছটি দ্বারা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উত্তম চরিত্র ও বিনয়ের পরিচয় মেলে। তিনি মানুষের আন্তরিকতাপূর্ণ কাজকর্মের খুবই মূল্যায়ন করতেন। হাদিয়ার বস্তু তুচ্ছ বলে অবজ্ঞা করতেন না। যে-কেউ তার বাড়িতে যাওয়ার জন্য দাওয়াত করত, তিনি তাতে সাড়া দিতেন, যদিও জানতে পারতেন সে দাওয়াতে অতি সাধারণ বস্তু খাওয়ানো হবে।

বস্তুত কাউকে দাওয়াত করাই হয় মহব্বতের কারণে। তাই দাওয়াত কবুল করলে দাওয়াতদাতা খুব খুশি হয়। এর দ্বারা উভয়পক্ষের মধ্যে মহব্বত গভীর হয়। তাই নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাওয়াত কবুল করতে উৎসাহ দিয়েছেন। এমনকি এক হাদীছে দাওয়াত কবুল করাকে মুসলিম ভাইয়ের হক সাব্যস্ত করেছেন।

এমনিভাবে হাদিয়ার লেনদেন দ্বারাও পারস্পরিক মেলবন্ধন মজবুত হয়। তাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও হাদিয়া গ্রহণ করতেন। কোনও মুমিন-মুসলিমের হাদিয়া যত তুচ্ছই হোক না কেন, প্রত্যাখ্যান করতেন না। আমাদেরকেও পরস্পরের মধ্যে হাদিয়া বিনিময় করতে উৎসাহ দিয়েছেন। তিনি ইরশাদ করেন-
تَهَادَوْا تَحَابُّوا
তোমরা পরস্পরে হাদিয়া বিনিময় করো। তাতে তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা সৃষ্টি হবে।(বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা: ১১৯৪৬; বুখারী, আল-আদাবুল মুফরাদ: ৫৯৪; মুসনাদে আবু ইয়া'লা: ৬১৪৮; তাবারানী, আল মু'জামুল আওসাত: ৭২৪০; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ: ১৬১২)

হাদিয়া প্রদানে যেহেতু ভালোবাসার ভূমিকা থাকে, তাই হাদিয়ার বস্তু তুচ্ছ হলেও তা প্রত্যাখ্যান করতে নিষেধ করা হয়েছে। এক হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
يَا نِسَاءَ الْمُسْلِمَاتِ ! لَا تَحْقِرَنَّ جَارَةٌ لِجَارَتِهَا وَلَوْ فِرْسِنَ شَاةٍ
হে মুসলিম নারীগণ! কোনও প্রতিবেশী যেন আপন প্রতিবেশিনীর জন্য তুচ্ছ মনে না করে (সামান্য হাদিয়াকেও), যদিও তা বকরীর খুর হয়।(সহীহ বুখারী: ২৫৬৬; সহীহ মুসলিম: ১০৩০; জামে তিরমিযী: ২১৩০; মুসনাদে আহমাদ: ৭৫৮১)

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. দাওয়াত কবুল করা সুন্নত। দাওয়াতে শরী'আতবিরোধী কোনও উপলক্ষ্য না থাকলে তা অবশ্যই গ্রহণ করা চাই।

খ. গরীব ব্যক্তির দাওয়াতকে হেলা করতে নেই।

গ. দাওয়াতে অতি সাধারণ খাবার খাওয়ানো হবে বলে জানা থাকলেও তাতে অনাগ্রহ দেখাতে নেই।

ঘ. হাদিয়া গ্রহণ করা সুন্নত।

ঙ. হাদিয়ার বস্তু তুচ্ছ হলেও তা প্রত্যাখ্যান করতে নেই।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন