শরহু মাআ’নিল আছার- ইমাম ত্বহাবী রহঃ

৬. হজ্বের অধ্যায়

হাদীস নং: ৪১৪৬
আন্তর্জাতিক নং: ৪১৪৮
৩২. শিশুদের হজ্জ
৪১৪৬-৪৮। ইউনুস ইব্‌ন আব্দুল আ'লা (রাহঃ) ….. ইব্‌ন আব্বাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, জনৈকা মহিলা নবী(ﷺ) কে শিশুর ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলেন যে, এরও কি হজ্জ (সহীহ) হবে, তিনি বললেন, 'হ্যাঁ, আর এজন্য তােমার ছওয়াব হবে।


ইউনুস (রাহঃ) ….. ইবরাহীম ইব্‌ন উকবা (রাহঃ) থেকে অনুরূপ রিওয়ায়াত করেছেন।


মুহাম্মাদ ইব্‌ন খুযায়মা (রাহঃ) ….. ইবরাহীম ইব্‌ন উকবা (রাহঃ) থেকে অনুরূপ রিওয়ায়াত করেছেন।

আবু জা'ফর তাহাবী (রাহঃ) বলেন, একদল আলিম এই মত গ্রহণ করেছেন যে, শিশু যখন প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পূর্বে হজ্জ পালন করে তবে এটা তার ইসলাম জনিত ফরয হজ্জের জন্য যথেষ্ট বলে বিবেচিত হবে। এবং বয়ঃপ্রাপ্ত (বালিগ) হওয়ার পর তার উপর পালন আবশ্যক হবে না। তাঁরা এ বিষয়ে এ হাদীস দ্বারা প্রমাণ পেশ করেছেন। পক্ষান্তরে অপরাপর আলিমগণ এ বিষয়ে যে তাঁদের বিরােধিতা করে বলেছেন, এই হজ্জ তার ইসলাম জনিত ফরয হজ্জের জন্য যথেষ্ট হবে না। বালিগ হওয়ার পর তার উপর পুনরায় হজ্জ পালন করা আবশ্যক। আমাদের মতে প্রথমােক্তদলের বিরুদ্ধে তাঁদের দলীল হল যে, এই হাদীসে রাসূলুল্লাহ(ﷺ) বলেছেন যে, নাবালিগ শিশু জন্যও হজ্জ রয়েছে এবং এ বিষয়ে সকলের ঐকমত্য রয়েছে যে, শিশুর হজ্জ সম্পর্কে কারাে মত বিরােধ নেই। যেমন তার জন্য সালাত রয়েছে সে সালাত পড়তে পারে কিন্তু এই সালাত তার উপর ফরয নয়। অনুরূপভাবে হজ্জও। সম্ভবত তার হজ্জ মকবুল হবে যদিও এই হজ্জ তার উপর ফরয নয়। এই হাদীস সেই সমস্ত লােকদের বিরুদ্ধে দলীল, যাদের ধারণা হল শিশুর জন্য হজ্জ নেই অর্থাৎ শিশু হজ্জ করতে পারে না। আর যে ব্যক্তি তার হজ্জের পক্ষে মত পােষণ করেন যে, তার জন্য হজ্জ রয়েছে। কিন্তু তা ফরয মনে করেন না। তিনি এই হাদীসের কিছুরই বিরােধিতা করেননি। বরং তিনি শুধু বিরােধীদের বিশ্লেষণের বিরােধিতা করেছেন।

এখানে ইব্‌ন আব্বাস (রাযিঃ) এই হাদীসটি রাসূলুল্লাহ(ﷺ) থেকে রিওয়ায়াত করেছেন। তারপর তিনি শিশুর হজ্জ দ্বারা ফরয না এমন হজ্জ সম্পর্কে বলেছেন যে, এই হজ্জ তার বালিগ হওয়ার পরে ইসলাম জনিত (ফরয) হজ্জের স্থলে যথেষ্ট হবে না।
بَابُ حَجِّ الصَّغِيرِ
4146 - حَدَّثَنَا يُونُسُ بْنُ عَبْدِ الْأَعْلَى , قَالَ: ثنا سُفْيَانُ بْنُ عُيَيْنَةَ , قَالَ: حَدَّثَنِي إِبْرَاهِيمُ بْنُ عُقْبَةَ , عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا أَنَّ امْرَأَةً سَأَلَتِ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ صَبِيٍّ هَلْ لِهَذَا مِنْ حَجٍّ؟ قَالَ: نَعَمْ , وَلَكَ أَجْرٌ "

4147 - حَدَّثَنَا يُونُسُ , قَالَ: أنا ابْنُ وَهْبٍ , أَنَّ مَالِكًا , حَدَّثَهُ عَنْ إِبْرَاهِيمَ بْنِ عُقْبَةَ , فَذَكَرَ بِإِسْنَادِهِ مِثْلَهُ.

4148 - حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ خُزَيْمَةَ , قَالَ: ثنا حَجَّاجٌ , قَالَ ثنا عَبْدُ الْعَزِيزِ بْنُ عَبْدِ اللهِ الْمَاجِشُونِ , عَنْ إِبْرَاهِيمَ بْنِ عُقْبَةَ , فَذَكَرَ بِإِسْنَادِهِ مِثْلَهُ قَالَ أَبُو جَعْفَرٍ: فَذَهَبَ قَوْمٌ إِلَى أَنَّ الصَّبِيَّ , إِذَا حَجَّ قَبْلَ بُلُوغِهِ , أَجْزَأَهُ ذَلِكَ مِنْ حَجَّةِ الْإِسْلَامِ , وَلَمْ يَكُنْ عَلَيْهِ أَنْ يَحُجَّ بَعْدَ ذَلِكَ بَعْدَ بُلُوغِهِ , وَاحْتَجُّوا فِي ذَلِكَ بِهَذَا الْحَدِيثِ. [ص:257] وَخَالَفَهُمْ فِي ذَلِكَ آخَرُونَ فَقَالُوا: لَا يُجْزِيهِ مِنْ حَجَّةِ الْإِسْلَامِ , وَعَلَيْهِ بَعْدَ بُلُوغِهِ حَجَّةٌ أُخْرَى. وَكَانَ مِنَ الْحُجَّةِ لَهُمْ عِنْدَنَا , عَلَى أَهْلِ الْمَقَالَةِ الْأُولَى , أَنَّ هَذَا الْحَدِيثَ إِنَّمَا فِيهِ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَخْبَرَ أَنَّ لِلصَّبِيِّ حَجًّا , وَهَذَا مِمَّا قَدْ أَجْمَعَ النَّاسُ جَمِيعًا عَلَيْهِ , وَلَمْ يَخْتَلِفُوا أَنَّ لِلصَّبِيِّ حَجًّا , كَمَا أَنَّ لَهُ صَلَاةً , وَلَيْسَتْ تِلْكَ الصَّلَاةُ بِفَرِيضَةٍ عَلَيْهِ. فَكَذَلِكَ أَيْضًا قَدْ يَجُوزُ أَنْ يَكُونَ لَهُ حَجٌّ , وَلَيْسَ ذَلِكَ الْحَجُّ بِفَرِيضَةٍ عَلَيْهِ , وَإِنَّمَا هَذَا الْحَدِيثُ حُجَّةٌ عَلَى مَنْ زَعَمَ أَنَّهُ لَا حَجَّ لِلصَّبِيِّ. فَأَمَّا مَنْ يَقُولُ: إِنَّ لَهُ حَجًّا , وَإِنَّهُ غَيْرُ فَرِيضَةٍ , فَلَمْ يُخَالِفْ شَيْئًا مِنْ هَذَا الْحَدِيثِ , وَإِنَّمَا خَالَفَ تَأْوِيلَ مُخَالَفَةٍ خَاصَّةٍ. وَهَذَا ابْنُ عَبَّاسِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا هُوَ الَّذِي رَوَى هَذَا الْحَدِيثَ عَنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثُمَّ قَدْ صَرَفَ هُوَ , حَجَّ الصَّبِيِّ إِلَى غَيْرِ الْفَرِيضَةِ , وَأَنَّهُ لَا يَجْزِيهِ بَعْدَ بُلُوغِهِ مِنْ حَجَّةِ الْإِسْلَامِ

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এখানে হাদীসটি সংক্ষিপ্ত আকারে আনা হয়েছে। অন্যান্য বর্ণনার আলোকে নিম্নে পূর্ণাঙ্গ হাদীস ও তার ব্যাখ্যা পেশ করা হলো।

হযরত ইবন ‘আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাওহা নামক স্থানে একটি কাফেলার সাক্ষাৎ পেলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কারা? তারা বলল, আমরা মুসলিম। তারপর তারা পাল্টা প্রশ্ন করল, আপনি কে? তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ। তখন এক মহিলা একটি শিশুকে তাঁর সামনে উঁচু করে ধরে জিজ্ঞেস করল, এর কি হজ্জ হয়? তিনি বললেন, হাঁ, আর ছাওয়াব তোমার –মুসলিম।(সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১৩৩৬; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ৯২৪; সুনানে নাসাঈ,হাদীছ নং ২৬৪৫)

হাদীসের ব্যাখ্যাঃ
'রাওহা' মদীনা মুনাওয়ারার নিকটবর্তী একটি স্থানের নাম। বিদায় হজ্জের সময় এখানে একটি কাফেলার সঙ্গে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের দেখা হয়। আবূ দাউদ শরীফের বর্ণনায় আছে, তিনি প্রথমে তাদেরকে সালাম দিলেন। তারপর তাদের পরিচয় জিজ্ঞেস করলেন। নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের অভ্যাস ছিল কোনও ব্যক্তি বা কোনও দলের সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে তিনি প্রথমে তাদের পরিচয় নিতেন। এ ক্ষেত্রেও তাই করলেন। তারা নিজেদের পরিচয় দিল এবং জানাল যে, তারা মুসলিম। কিন্তু তিনি কে তা তারা চিনতে পারেনি। হতে পারে এ সাক্ষাৎ হয়েছিল রাতের বেলা। তাই অন্ধকারে তাঁকে চিনতে পারেনি। এমনও হতে পারে যে, দিনের বেলায়ই সাক্ষাৎ হয়েছিল, কিন্তু এর আগে তারা তাঁকে কখনও দেখেনি। হয়তো নিজ এলাকায় বসেই তারা ইসলাম গ্রহণ করেছিল। মদীনা মুনাওয়ারায় এসে নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার সুযোগ হয়নি। যাহোক, তিনি নিজ পরিচয় দিয়ে বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ। তিনি নিজ নাম না বলে রাসূলুল্লাহ বললেন, কারণ এটাই তাঁর বড় পরিচয়।

কাফেলার লোকজন যখন তাঁকে চিনতে পারল তখন জনৈকা মহিলা, যার সঙ্গে তার শিশুপুত্র ছিল, সে তার শিশুপুত্রটিকে উঁচু করে ধরে জিজ্ঞেস করল, সে হজ্জ করলে তা হবে কি না। নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম জানালেন যে, তার হজ্জ হবে, তবে ছাওয়াব পাবে তার মা। মায়ের কথা বলেছেন এজন্য যে, সে তার মায়ের সঙ্গেই ছিল। সুতরাং পিতার সঙ্গে আসলে পিতাই ছাওয়াব পাবে। যদি পিতামাতা উভয়ের সঙ্গে আসে, তবে উভয়ই ছাওয়াবের অধিকারী হবে। অবশ্য এটা তখন, যখন শিশুটি এত ছোট হয় যে, হজ্জের কার্যাবলী কিছুই বোঝে না। ফলে সঙ্গে বাবা-মা যেই থাকে তাকেই তার সবকিছু করে দিতে হয়। এমনকি তার পক্ষে ইহরামও তাদেরকেই বাঁধতে হয়। তো শিশু যেহেতু নিজে নিজে হজ্জের কিছুই করতে পারে না, তার পক্ষ থেকে তার বাবা-মা তা করে দেয়, তাই হজ্জ শিশুর পক্ষ থেকে হলেও তা হয় যেহেতু বাবা-মায়ের সহযোগিতায়, তাই এর ছাওয়াব তাদের আমলনামায় লেখা হয়। কিন্তু সে যদি অত ছোট না হয়; বরং বুঝদার শিশু হয়, তবে নিজে ইহরাম বাঁধবে এবং নফল হজ্জ হিসেবে সে ছাওয়াবের অধিকারী হবে।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. কারও সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে তার নাম-পরিচয় জেনে নেওয়া চাই। কোনও কোনও হাদীছ দ্বারা জানা যায়, এটা পারস্পরিক মহব্বত বৃদ্ধির পক্ষে সহায়ক।

খ, কেউ নাম-পরিচয় জিজ্ঞেস করলে তা বলতে কুণ্ঠাবোধ করা উচিত নয়।

গ. সাক্ষাৎকালে অন্য কথাবার্তার আগে সালাম দেওয়া সুন্নত।

ঘ. কোথাও কোনও আলেমের সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে সে সাক্ষাৎকে আল্লাহ তা'আলার এক নি'আমত মনে করা এবং যতটুকু সম্ভব তার কাছ থেকে দীন সম্পর্কে জানার আগ্রহ প্রকাশ করা চাই।

ঙ. নাবালেগ শিশু কোনও নেককাজ করলে তাতে তার ছাওয়াব হয়। 'উলামায়ে কিরাম এ ব্যাপারে একমত যে, তার দ্বারা কোনও নাজায়েয কাজ হয়ে গেলে তাতে তার গুনাহ হয় না।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
ত্বহাবী শরীফ - হাদীস নং ৪১৪৬ | মুসলিম বাংলা