শরহু মাআ’নিল আছার- ইমাম ত্বহাবী রহঃ

৫. রোযার অধ্যায়

হাদীস নং: ৩৪০৩
সিয়াম অবস্থায় বমি করা প্রসঙ্গে
৩৪০৩। আহমদ ইব্ন দাউদ (রাহঃ) ..... আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেছেনঃ কারাে সিয়ামকালে অনিচ্ছাকৃত বমি হলে তাকে কাযা করতে হবে না। কিন্তু কেউ যদি
ইচ্ছাকৃত বমি করে তবে সে কাযা করবে।

সিয়ামরত ব্যক্তির অনিচ্ছাকৃত বমি হলে অথবা ইচ্ছাকৃত বমি করলে (এর) বিধান কিরূপ হবে এই হাদীস
(তা) ব্যক্ত করে দিয়েছে। আর আমাদের জন্য উত্তম পন্থা হলো, হাদীসসমূহের এমন মর্ম গ্রহণ করা যাতে
হাদীসসমূহের (পারস্পরিক) ঐক্য ও বিস্তদ্ধতা বিদ্যমান থাকে। এরূপ মর্ম গ্রহণ না করা, যাতে হাদীসসমূহের (পারস্পরিক) বিরােধিতা ও অসঙ্গতি প্রমাণিত হয়। (অর্থাৎ পরস্পর বিরােধী হাদীসসমূহকে স্ব-স্ব -স্থানে প্রয়ােগ করা) । অতএব প্রথমােক্ত দুই হাদীসের মর্ম তা-ই হবে যা আমরা বর্ণনা করেছি। যাতে উক্ত দুই হাদীসের মর্ম এই হাদীসের মর্মের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ না হয়। আর এটি হলো এই অনুচ্ছেদের হাদীসসূহের সঠিক মর্ম।

পক্ষান্তরে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের যুক্তিভিত্তিক বিশ্লেষণ: আমরা লক্ষ্য করেছি যে, কতক আলিমের মতে বমি 'হাদাস' বা উযূ ভঙ্গকারী এবং অপর কতক আলিমের মতে 'হাদাস নয় বা উযূ ভঙ্গকারী নয়। আমরা আরো লক্ষ্য করেছি যে, রক্ত বের হওয়ার বিষয়টিও অনুরূপ । সমস্ত আলিমদের ঐকমত্য যে, সিয়ামরত ব্যক্তি যদি শিঙ্গা লাগায় তাহলে এর দ্বারা সিয়াম ভঙ্গ হবে না। অনুরূপভাবে তার কোন রােগের কারণে যদি শরীরের কোন স্থান থেকে রক্ত প্রবাহিত হয় (সিয়াম ভঙ্গ হবে না) ।

সুতরাং তার শরীর থেকে রক্ত বের হওয়া এবং উল্লিখিত রক্ত বের করা (সিয়াম ভঙ্গ না হওয়ার ব্যাপারে) উভয়টি সমান যা আমরা উলেখ করেছি। অনুরূপভাবে তাহারাতের (পবিত্রতার) ব্যাপারে উভয়টি সমান ও
অভিন্ন। কারো অনিচ্ছাকৃত বমি সিয়ামকে ভঙ্গ করবে না। অনুরূপভাবে যুক্তির চাহিদা মতে কেউ ইচ্ছাকৃত বমি করলে এতে সিয়াম ভঙ্গ হবে না। সুতরাং যখন যুক্তির আলােকে ইচ্ছাকৃত বমি সিয়ামকে ভঙ্গ করে না, তাহলে কারাে অনিচ্ছাকৃত বমির অনুরূপ বিধান হওয়া অধিক সমীচীন। যুক্তির নিরিখে এটিও এই অনুচ্ছেদের সঠিক মীমাংসা। কিন্তু রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) থেকে বর্ণিত বিষয়ের অনুসরণ করা শ্রেয়। আর এটি ইমাম আবু হানীফা (রাহঃ), ইমাম আবু ইউসুফ (রাহঃ), ইমাম মুহাম্মাদ (রাহঃ) সহ অধিকাংশ আলিমের অভিমত।
সংশ্লিষ্ট বিষয়টি পূর্ববর্তী একদল 'আলিম থেকে বর্ণিত আছে:
3403 - مَا قَدْ حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ دَاوُدَ قَالَ: ثنا مُسَدَّدٌ قَالَ: ثنا عِيسَى بْنُ يُونُسَ عَنْ هِشَامِ بْنِ حَسَّانَ عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ سِيرِينَ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مِنْ ذَرَعَهُ الْقَيْءُ وَهُوَ صَائِمٌ فَلَيْسَ عَلَيْهِ قَضَاءٌ وَمَنِ اسْتَقَاءَ فَلْيَقْضِ» فَبَيَّنَ هَذَا الْحَدِيثُ كَيْفَ حُكْمُ الصَّائِمِ إِذَا ذَرَعَهُ الْقَيْءُ أَوِ اسْتَقَاءَ وَأَوْلَى الْأَشْيَاءِ بِنَا أَنْ تُحْمَلَ الْآثَارُ عَلَى مَا فِيهِ اتِّفَاقُهَا وَتَصْحِيحُهَا لَا عَلَى مَا فِيهِ تَنَافِيهَا وَتَضَادُّهَا فَيَكُونُ مَعْنَى الْحَدِيثَيْنِ الْأَوَّلَيْنِ عَلَى مَا وَصَفْنَا حَتَّى لَا يُضَادَّ مَعْنَاهُمَا مَعْنَى هَذَا الْحَدِيثِ فَهَذَا حُكْمُ هَذَا الْبَابِ مِنْ طَرِيقِ تَصْحِيحِ مَعَانِي الْآثَارِ وَأَمَّا حُكْمُهُ مِنْ طَرِيقِ النَّظَرِ فَإِنَّا رَأَيْنَا الْقَيْءَ حَدَثًا فِي قَوْلِ بَعْضِ النَّاسِ وَغَيْرَ حَدَثٍ فِي قَوْلِ الْآخَرِينَ وَرَأَيْنَا خُرُوجَ الدَّمِ كَذَلِكَ وَكُلٌّ قَدْ أَجْمَعَ أَنَّ الصَّائِمَ إِذَا فَصَدَ عِرْقًا أَنَّهُ لَا يَكُونُ بِذَلِكَ مُفْطِرًا وَكَذَلِكَ لَوْ كَانَتْ بِهِ عِلَّةٌ فَانْفَجَرَتْ عَلَيْهِ دَمًا مِنْ مَوْضِعٍ مِنْ بَدَنِهِ فَكَانَ خُرُوجُ الدَّمِ مِنْ حَيْثُ ذَكَرْنَا مِنْ بَدَنِهِ وَاسْتِخْرَاجُهُ إِيَّاهُ سَوَاءً فِيمَا ذَكَرْنَا وَكَذَلِكَ هُمَا فِي الطَّهَارَةِ. وَكَانَ خُرُوجُ الْقَيْءِ مِنْ غَيْرِ اسْتِخْرَاجٍ مِنْ صَاحِبِهِ إِيَّاهُ لَا يَنْقُضُ الصَّوْمَ فَالنَّظَرُ عَلَى مَا ذَكَرْنَا أَنْ يَكُونَ خُرُوجُهُ بِاسْتِخْرَاجِ صَاحِبِهِ إِيَّاهُ كَذَلِكَ لَا يَنْقُضُ الصَّوْمَ فَلَمَّا كَانَ الْقَيْءُ لَا يُفْطِرُهُ فِي النَّظَرِ كَانَ مَا ذَرَعَهُ مِنَ الْقَيْءِ أَحْرَى أَنْ يَكُونَ كَذَلِكَ. فَهَذَا حُكْمُ هَذَا الْبَابِ أَيْضًا مِنْ طَرِيقِ النَّظَرِ وَلَكِنَّ اتِّبَاعَ مَا رُوِيَ عَنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَوْلَى وَهَذَا قَوْلُ أَبِي حَنِيفَةَ وَأَبِي يُوسُفَ وَمُحَمَّدٍ رَحِمَهُمُ اللهُ تَعَالَى وَعَامَّةِ الْعُلَمَاءِ
وَقَدْ رُوِيَ ذَلِكَ عَنْ جَمَاعَةٍ مِنَ الْمُتَقَدِّمِينَ

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, অনিচ্ছায় মুখ ভরে বমি হলে রোযা ভাঙ্গবে না। ইচ্ছেকৃত বমি করলে মুখ ভরে হলে ভেঙ্গে যাবে। মুখ ভরে না হলে ভাঙ্গবে না। ইচ্ছেকৃত হল মুখে আঙ্গুল দিয়ে এভাবে কোন পদ্ধতিতে ইচ্ছেকৃত মুখ ভরে বমি করলে রোযা ভেঙ্গে যাবে। অনিচ্ছায় হলে বা ইচ্ছেকৃতি মুখ ভরে না হলে রোযা ভাঙ্গবে না।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান