শরহু মাআ’নিল আছার- ইমাম ত্বহাবী রহঃ

৫. রোযার অধ্যায়

হাদীস নং: ৩১৮৯
৪. রামাযান মাসে ইচ্ছাকৃতভাবে স্ত্রীর সাথে সঙ্গম করার বিধান
৩১৮৯। আলী ইবন শায়বা (রাহঃ) ..... আয়েশা (রাযিঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, জনৈক ব্যক্তি নবী করীম (ﷺ) -এর কাছে এসে বলল, সে জ্বলে পুড়ে গেছে। তিনি তাকে তার ঘটনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। সে বলল, আমি রামাযানে আমার স্ত্রীর সাথে সহবাস করেছি। এরপর নবী করীম -এর কাছে, বড় এক থলে বা টুকরি, যাকে আরক’ বলা হয়, খেজুর এল। তিনি বললেন, দগ্ধ হয়ে যাওয়া ব্যক্তিটি কোথায় ? লােকটি দাঁড়াল। তিনি বললেন, এটি সাদকা করে দাও।
আবু জা’ফর তাহাবী (রাহঃ) বলেনঃ একদল আলিম মত গ্রহণ করেছেন যে, কোন ব্যক্তি যদি রামাযানে স্ত্রী সঙ্গম করে তাহলে তার উপর (কিছু) সাদাকা করে দেয়া জরুরী। সাদাকা ব্যতীত তার উপর কাফফার ওয়াজিব নয়। তারা এই বিষয়ে এই হাদীস দ্বারা প্রমাণ পেশ করেন। পক্ষান্তরে এই বিষয়ে অপরাপর আলিমগণ তাঁদের বিরােধিতা করেছেন। তাঁরা বলেছেনঃ বরং তার উপর গােলাম আযাদ করা বা এক নাগাড়ে দুই মাস সিয়াম পালন বা ষাট মিসকীনকে আহার করানাে ওয়াজিব। অর্থাৎ সে এর থেকে যে কোন একটি করতে পারে।
এ বিষয়ে তারা নিম্মােক্ত হাদীস দ্বারা দলীল পেশ করেন:
بَابُ الْحُكْمِ فِي مَنْ جَامَعَ أَهْلَهُ فِي رَمَضَانَ مُتَعَمِّدًا
3189 - حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ شَيْبَةَ , قَالَ: ثنا يَزِيدُ بْنُ هَارُونَ , قَالَ: أنا يَحْيَى بْنُ سَعِيدٍ , عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ الْقَاسِمِ , عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ جَعْفَرِ بْنِ الزُّبَيْرِ , عَنْ عَبَّادِ بْنِ عَبْدِ اللهِ بْنِ الزُّبَيْرِ , عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا " أَنَّ رَجُلًا أَتَى النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَذَكَرَ لَهُ أَنَّهُ احْتَرَقَ , فَسَأَلَهُ عَنْ أَمْرِهِ فَقَالَ: " وَقَعْتُ عَلَى امْرَأَتِي فِي رَمَضَانَ. فَأُتِيَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِمِكْتَلٍ يُدْعَى الْعَرْقَ , فِيهِ تَمْرٌ , فَقَالَ: أَيْنَ الْمُحْتَرِقُ؟ فَقَامَ الرَّجُلُ. فَقَالَ: تَصَدَّقْ بِهَذَا " قَالَ أَبُو جَعْفَرٍ: فَذَهَبَ قَوْمٌ إِلَى أَنَّ مَنْ وَقَعَ بِأَهْلِهِ فِي رَمَضَانَ , فَعَلَيْهِ أَنْ يَتَصَدَّقَ , فَلَا يَجِبُ عَلَيْهِ مِنَ الْكَفَّارَةِ غَيْرُ الصَّدَقَةِ. وَاحْتَجُّوا فِي ذَلِكَ بِهَذَا الْحَدِيثِ. وَخَالَفَهُمْ فِي ذَلِكَ آخَرُونَ , فَقَالُوا: بَلْ يَجِبُ عَلَيْهِ أَنْ يُعْتِقَ رَقَبَةً , أَوْ يَصُومَ شَهْرَيْنِ مُتَتَابِعَيْنِ , أَوْ يُطْعِمَ سِتِّينَ مِسْكِينًا أَيَّ ذَلِكَ مَا شَاءَ فَعَلَ
وَاحْتَجُّوا فِي ذَلِكَ

হাদীসের ব্যাখ্যা:

রমযানে রোযা রেখে দিনে স্ত্রী সহবাস করলে বীর্যপাত না হলেও স্বামী-স্ত্রী উভয়ের উপর কাযা ও কাফফারা ওয়াজিব হবে।

কাফফারা আদায়ের নিয়ম
একটি রোযার জন্য দুই মাস ধারাবাহিকভাবে রোযা রাখতে হবে। রোযা রাখতে সক্ষম না হলে ৬০ জন ফকির-মিসকীনকে দুই বেলা পেট ভরে খাওয়াতে হবে। অথবা প্রত্যেককে এর মূল্য দিয়ে দিতে হবে।
মনে রাখতে হবে, রোযা রাখতে সক্ষম হলে ফিদিয়া আদায় করলে তা আদায় হবে না।
-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৬০; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪১৩; আলবাহরুর রায়েক ২/২৭৭; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৩৯৪

কোনো কারণে ধারাবাহিকতা ছুটে গেলে পুনরায় নতুন করে রোযা রাখতে হবে। পেছনের রোযাগুলো কাফফারার রোযা হিসাবে ধর্তব্য হবে না। তবে মহিলাদের হায়েযের কারণে ধারাবাহিকতা নষ্ট হলে অসুবিধা নেই।

ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. বলেন, ‘যার উপর কাফফারা হিসাবে দুই মাস ধারাবাহিকভাবে রোযা রাখা জরুরি সে যদি মাঝে অসুস্থ হওয়ার কারণে রোযা রাখতে না পারে, তাহলে আবার নতুন করে রোযা রাখা শুরু করবে।’-আলমুহাল্লা ৪/৩৩১; মাবসূত, সারাখসী ৭/১৪; আলবাহরুর রায়েক ২/২৭৭; আলমুহীতুল বুরহানী ৫/১৯৬

#সংগৃহীত
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
ত্বহাবী শরীফ - হাদীস নং ৩১৮৯ | মুসলিম বাংলা