আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ
৫২- কুরআনের ফাযাঈল অধ্যায়
হাদীস নং:
আন্তর্জাতিক নং: ৫০৫৬
২৬৪৪. কুরআন পাঠ করা অবস্থায় ক্রন্দন করা
৪৬৯১। কায়স ইবনে হাফস (রাহঃ) ......... আব্দুল্লাহ ইবনে মাস‘উদ (রাযিঃ) বর্ণনা করেন। রাসূল (ﷺ) আমাকে বললেন, আমার সামনে কুরআন পাঠ করো। আমি বললাম, আমি আপনার নিকট কুরআন পাঠ করব; অথচ আপনার ওপর কুরআন নাযিল হয়েছে। তিনি বললেন, আমি অন্যের তিলাওয়াত শুনতে পছন্দ করি।
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এখানে হাদীসটি সংক্ষিপ্ত আকারে আনা হয়েছে। অন্যান্য বর্ণনার আলোকে নিম্নে পূর্ণাঙ্গ হাদীস ও তার ব্যাখ্যা পেশ করা হলো।
وعن ابن مسعود – رضي الله عنه – قَالَ: قَالَ لِي النَّبيُّ – صلى الله عليه وسلم: «اقْرَأْ عليَّ القُرْآنَ» قلت: يَا رسول اللهِ، أقرأُ عَلَيْكَ، وَعَلَيْكَ أُنْزِلَ؟! قَالَ: «إِنِّي أُحِبُّ أَنْ أسْمَعَهُ مِنْ غَيرِي» فَقَرَأْتُ عَلَيْهِ سورةَ النِّسَاءِ، حَتَّى جِئْتُ إِلى هذِهِ الآية: {فَكَيْفَ إِذَا جِئْنَا مِنْ كُلِّ أُمَّةٍ بِشَهيدٍ وَجِئْنَا بِكَ عَلَى هؤُلاءِ شَهيدًا} [النساء: 41] قَالَ: «حَسْبُكَ الآنَ» فَالَتَفَتُّ إِلَيْهِ فإذا عَيْنَاهُ تَذْرِفَان.
অর্থ : হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, আমার সামনে কুরআন তিলাওয়াত করো। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি আপনার সামনে কুরআন তিলাওয়াত করব, অথচ কুরআন আপনার প্রতিই অবতীর্ণ হয়েছে? তিনি বললেন, আমি অন্যের মুখে তিলাওয়াত শুনতে ভালোবাসি। সুতরাং আমি তাঁর সামনে সূরা নিসা পড়লাম। যখন এ আয়াতে পৌছলাম–
{فكيف إذا جئنا من كل أمة بشهيد وجئنا بك على هؤلاء شهيدا} [النساء: 41]
(অর্থ) সুতরাং (তারা ভেবে দেখুক)– সেদিন (তাদের অবস্থা) কেমন হবে, যখন আমি প্রত্যেক উম্মত থেকে একজন সাক্ষী উপস্থিত করব এবং (হে নবী), আমি তোমাকে ওইসব লোকের বিরুদ্ধে সাক্ষীরূপে উপস্থিত করব? – সূরা নিসা ৪১
তিনি বললেন, বাস, এবার থামো। আমি তাঁর দিকে ফিরে তাকালাম। দেখলাম তাঁর দু'চোখ থেকে অশ্রু ঝরছে।
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্যের মুখে তিলাওয়াত শুনতে পসন্দ করতেন। এর কারণ অন্যের মুখে তিলাওয়াত শুনলে কুরআনের বাণী বোঝা ও তাতে চিন্তা-ফিকির করা সহজ হয়। যেহেতু তখন মন-মস্তিষ্ক কুরআনের বাণী ও মর্মের মধ্যেই নিবিষ্ট থাকে। পক্ষান্তরে নিজে যখন তিলাওয়াত করা হয়, তখন মনোযোগ থাকে শব্দাবলীর বিশুদ্ধ উচ্চারণ ও যথাযথ পাঠের প্রতি। তাছাড়া নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিলাওয়াত শ্রবণেও বিশেষভাবে অভ্যস্ত ছিলেন। হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম পাঠ করতেন আর তিনি শুনতেন। মানুষ যে বিষয়ে অভ্যস্ত থাকে, তার প্রতি আগ্রহ বেশি থাকে।
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিলাওয়াত করতে আদেশ করলে হযরত আব্দুল্লাহ ইবন মাস'উদ রাযি. তাঁর সামনে সূরা নিসা পাঠ করতে থাকেন। তিনি পাঠ করতে করতে সূরা নিসার ৪১ নং আয়াত পর্যন্ত পৌঁছান। তাতে ইরশাদ হয়েছে
{فكيف إذا جئنا من كل أمة بشهيد وجئنا بك على هؤلاء شهيدا} [النساء: 41]
'সুতরাং (তারা ভেবে দেখুক ) - সেদিন (তাদের অবস্থা) কেমন হবে, যখন আমি প্রত্যেক উম্মত থেকে একজন সাক্ষী উপস্থিত করব এবং (হে নবী), আমি তোমাকে ওইসব লোকের বিরুদ্ধে সাক্ষীরূপে উপস্থিত করব??
এ আয়াত পর্যন্ত পৌঁছলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ক্ষান্ত হতে বললেন। হযরত ইবন মাস'উদ রাযি. ক্ষান্ত হয়ে যখন তাঁর দিকে তাকালেন, দেখলেন তাঁর চোখ থেকে পানি পড়ছে।
এ আয়াত পাঠকালে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেন কাঁদছিলেন? ইবনুন নাহবী রহ. বলেন, তিনি কাঁদছিলেন এ কারণে যে, আল্লাহ তা'আলা যখন তাঁকে সাক্ষীরূপে উপস্থিত করবেন, তখন তাঁকে সাক্ষ্য তো দিতেই হবে। নিয়ম হল, সাক্ষীর সাক্ষ্য অনুযায়ী বিচারক ফয়সালা দিয়ে থাকেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন উম্মত সম্পর্কে সাক্ষ্য দেবেন, তখন আল্লাহ তা'আলা তো সে অনুসারেই ফয়সালা দেবেন। উম্মতের মধ্যে এমন তো কতই আছে, যারা শরী'আত অনুযায়ী আমল করেনি। তাদের সম্পর্কে যখন তিনি সাক্ষ্য দেবেন, তখন তাদের কী পরিণতি হবে? এ কথা ভেবেই তিনি কেঁদেছিলেন।
এ আয়াতে যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সাক্ষীরূপে হাজির করা হবে, প্রশ্ন হচ্ছে তাঁর সাক্ষ্য হবে কাদের সম্পর্কে? অর্থাৎ এর দ্বারা কাদের বোঝানো হয়েছে? উলামায়ে কেরামের মধ্যে কেউ কেউ বলেন, এর দ্বারা নবীগণকে বোঝানো হয়েছে। আয়াতটির অর্থ হল, আমি প্রত্যেক উম্মতের নবীকে হাজির করব এবং সেই নবী নিজ উম্মতের ভালোমন্দ কার্যকলাপ সম্পর্কে সাক্ষ্য দেবেন। এভাবে প্রত্যেক নবী নিজ নিজ উম্মত সম্পর্কে সাক্ষ্যদান করবেন। সবশেষে আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সমস্ত নবীর সত্যতার পক্ষে সাক্ষ্য দেবেন।
কেউ কেউ বলেন, এখানে মূলত উম্মতের মুমিনগণকে বোঝানো হয়েছে। তারা নবীগণের পক্ষে সাক্ষ্য দেবেন যে, তারা নিজ নিজ উম্মতের কাছে দাওয়াত পৌঁছিয়েছিলেন আর নবীগণ যে সাক্ষ্য দিয়েছেন তা সত্য। পরিশেষে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওই মুমিনদের পক্ষে সাক্ষ্য দেবেন যে, তারা সত্য সাক্ষ্যই দিয়েছে। নবীগণের পক্ষে এ উম্মতের মুমিনদের সাক্ষ্যদান সম্পর্কে সূরা বাকারায় ইরশাদ হয়েছে-
جَعَلْنَاكُمْ أُمَّةً وَسَطًا لِتَكُونُوا شُهَدَاءَ عَلَى النَّاسِ وَيَكُونَ الرَّسُولُ عَلَيْكُمْ شَهِيدًا (হে মুসলিমগণ!) এভাবেই আমি তোমাদেরকে এক মধ্যপন্থী উম্মত বানিয়েছি,যাতে তোমরা অন্যান্য লোক সম্পর্কে সাক্ষী হও এবং রাসূল হন তোমাদের পক্ষে সাক্ষী।
অপর এক আয়াতে ইরশাদ-
لِيَكُونَ الرَّسُولُ شَهِيدًا عَلَيْكُمْ وَتَكُونُوا شُهَدَاءَ عَلَى النَّاسِ 'যাতে এই রাসূল তোমাদের জন্য সাক্ষী হতে পারে আর তোমরা সাক্ষী হতে পার অন্যান্য মানুষের জন্য।
কারও মতে هَؤُلَاءِ এর দ্বারা এ উম্মতকে বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ অন্যান্য নবী যেমন নিজ নিজ উম্মত সম্পর্কে সাক্ষ্য দেবেন, তেমনি আমাদের নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও নিজ উম্মত সম্পর্কে সাক্ষ্যদান করবেন। যেমন কোনও কোনও বর্ণনায় আছে, একবার নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে এ আয়াত পাঠ করা হলে তিনি কেঁদে দেন এবং আরয করেন, হে আমার রব্ব, আমি যাদের মধ্যে আছি তাদের সম্পর্কে তো এটা সম্ভব, কিন্তু আমি যাদের দেখিনি তাদের সম্পর্কে কিভাবে সাক্ষ্য দেব? অপর এক বর্ণনা দ্বারা এর উত্তর পাওয়া যায়। তাতে আছে-
ليس من يوم إلا يعرض فيه على النبي صلى الله عليه وسلم أمته غدوة وعشية، فيعرفهم بسيماهم، ليشهد عليهم، يقول الله تبارك وتعالى: «فكيف إذا جئنا من كل أمة بشهيد وجئنا بك على هؤلاء شهيدا
"প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে তাঁর উম্মতকে পেশ করা হয়। তিনি তাদের আলামত দ্বারা তাদেরকে চিনে রাখেন, যাতে তাদের সম্পর্কে সাক্ষ্য দিতে পারেন। আল্লাহ তা'আলা বলছেন- ‘সুতরাং (তারা ভেবে দেখুক)— সেদিন (তাদের অবস্থা) কেমন হবে, যখন আমি প্রত্যেক উম্মত থেকে একজন সাক্ষী উপস্থিত করব এবং (হে নবী), আমি তোমাকে ওইসব লোকের বিরুদ্ধে সাক্ষীরূপে উপস্থিত করব? [সূরা নিসা : ৪১]
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. অন্যের মুখে কুরআন মাজীদের তিলাওয়াত শোনা সুন্নত।
খ. বেশি হাসাহাসি ভালো না। এর থেকে বিরত থাকা চাই।
গ. কুরআন মাজীদের তিলাওয়াত যেমন কান্না বা কান্নার ভাবের সঙ্গে হওয়া চাই, তেমনি কুরআন মাজীদের তিলাওয়াত শ্রবণকালেও এরকম ভাব থাকা উচিত।
وعن ابن مسعود – رضي الله عنه – قَالَ: قَالَ لِي النَّبيُّ – صلى الله عليه وسلم: «اقْرَأْ عليَّ القُرْآنَ» قلت: يَا رسول اللهِ، أقرأُ عَلَيْكَ، وَعَلَيْكَ أُنْزِلَ؟! قَالَ: «إِنِّي أُحِبُّ أَنْ أسْمَعَهُ مِنْ غَيرِي» فَقَرَأْتُ عَلَيْهِ سورةَ النِّسَاءِ، حَتَّى جِئْتُ إِلى هذِهِ الآية: {فَكَيْفَ إِذَا جِئْنَا مِنْ كُلِّ أُمَّةٍ بِشَهيدٍ وَجِئْنَا بِكَ عَلَى هؤُلاءِ شَهيدًا} [النساء: 41] قَالَ: «حَسْبُكَ الآنَ» فَالَتَفَتُّ إِلَيْهِ فإذا عَيْنَاهُ تَذْرِفَان.
অর্থ : হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, আমার সামনে কুরআন তিলাওয়াত করো। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি আপনার সামনে কুরআন তিলাওয়াত করব, অথচ কুরআন আপনার প্রতিই অবতীর্ণ হয়েছে? তিনি বললেন, আমি অন্যের মুখে তিলাওয়াত শুনতে ভালোবাসি। সুতরাং আমি তাঁর সামনে সূরা নিসা পড়লাম। যখন এ আয়াতে পৌছলাম–
{فكيف إذا جئنا من كل أمة بشهيد وجئنا بك على هؤلاء شهيدا} [النساء: 41]
(অর্থ) সুতরাং (তারা ভেবে দেখুক)– সেদিন (তাদের অবস্থা) কেমন হবে, যখন আমি প্রত্যেক উম্মত থেকে একজন সাক্ষী উপস্থিত করব এবং (হে নবী), আমি তোমাকে ওইসব লোকের বিরুদ্ধে সাক্ষীরূপে উপস্থিত করব? – সূরা নিসা ৪১
তিনি বললেন, বাস, এবার থামো। আমি তাঁর দিকে ফিরে তাকালাম। দেখলাম তাঁর দু'চোখ থেকে অশ্রু ঝরছে।
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্যের মুখে তিলাওয়াত শুনতে পসন্দ করতেন। এর কারণ অন্যের মুখে তিলাওয়াত শুনলে কুরআনের বাণী বোঝা ও তাতে চিন্তা-ফিকির করা সহজ হয়। যেহেতু তখন মন-মস্তিষ্ক কুরআনের বাণী ও মর্মের মধ্যেই নিবিষ্ট থাকে। পক্ষান্তরে নিজে যখন তিলাওয়াত করা হয়, তখন মনোযোগ থাকে শব্দাবলীর বিশুদ্ধ উচ্চারণ ও যথাযথ পাঠের প্রতি। তাছাড়া নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিলাওয়াত শ্রবণেও বিশেষভাবে অভ্যস্ত ছিলেন। হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম পাঠ করতেন আর তিনি শুনতেন। মানুষ যে বিষয়ে অভ্যস্ত থাকে, তার প্রতি আগ্রহ বেশি থাকে।
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিলাওয়াত করতে আদেশ করলে হযরত আব্দুল্লাহ ইবন মাস'উদ রাযি. তাঁর সামনে সূরা নিসা পাঠ করতে থাকেন। তিনি পাঠ করতে করতে সূরা নিসার ৪১ নং আয়াত পর্যন্ত পৌঁছান। তাতে ইরশাদ হয়েছে
{فكيف إذا جئنا من كل أمة بشهيد وجئنا بك على هؤلاء شهيدا} [النساء: 41]
'সুতরাং (তারা ভেবে দেখুক ) - সেদিন (তাদের অবস্থা) কেমন হবে, যখন আমি প্রত্যেক উম্মত থেকে একজন সাক্ষী উপস্থিত করব এবং (হে নবী), আমি তোমাকে ওইসব লোকের বিরুদ্ধে সাক্ষীরূপে উপস্থিত করব??
এ আয়াত পর্যন্ত পৌঁছলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ক্ষান্ত হতে বললেন। হযরত ইবন মাস'উদ রাযি. ক্ষান্ত হয়ে যখন তাঁর দিকে তাকালেন, দেখলেন তাঁর চোখ থেকে পানি পড়ছে।
এ আয়াত পাঠকালে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেন কাঁদছিলেন? ইবনুন নাহবী রহ. বলেন, তিনি কাঁদছিলেন এ কারণে যে, আল্লাহ তা'আলা যখন তাঁকে সাক্ষীরূপে উপস্থিত করবেন, তখন তাঁকে সাক্ষ্য তো দিতেই হবে। নিয়ম হল, সাক্ষীর সাক্ষ্য অনুযায়ী বিচারক ফয়সালা দিয়ে থাকেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন উম্মত সম্পর্কে সাক্ষ্য দেবেন, তখন আল্লাহ তা'আলা তো সে অনুসারেই ফয়সালা দেবেন। উম্মতের মধ্যে এমন তো কতই আছে, যারা শরী'আত অনুযায়ী আমল করেনি। তাদের সম্পর্কে যখন তিনি সাক্ষ্য দেবেন, তখন তাদের কী পরিণতি হবে? এ কথা ভেবেই তিনি কেঁদেছিলেন।
এ আয়াতে যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সাক্ষীরূপে হাজির করা হবে, প্রশ্ন হচ্ছে তাঁর সাক্ষ্য হবে কাদের সম্পর্কে? অর্থাৎ এর দ্বারা কাদের বোঝানো হয়েছে? উলামায়ে কেরামের মধ্যে কেউ কেউ বলেন, এর দ্বারা নবীগণকে বোঝানো হয়েছে। আয়াতটির অর্থ হল, আমি প্রত্যেক উম্মতের নবীকে হাজির করব এবং সেই নবী নিজ উম্মতের ভালোমন্দ কার্যকলাপ সম্পর্কে সাক্ষ্য দেবেন। এভাবে প্রত্যেক নবী নিজ নিজ উম্মত সম্পর্কে সাক্ষ্যদান করবেন। সবশেষে আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সমস্ত নবীর সত্যতার পক্ষে সাক্ষ্য দেবেন।
কেউ কেউ বলেন, এখানে মূলত উম্মতের মুমিনগণকে বোঝানো হয়েছে। তারা নবীগণের পক্ষে সাক্ষ্য দেবেন যে, তারা নিজ নিজ উম্মতের কাছে দাওয়াত পৌঁছিয়েছিলেন আর নবীগণ যে সাক্ষ্য দিয়েছেন তা সত্য। পরিশেষে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওই মুমিনদের পক্ষে সাক্ষ্য দেবেন যে, তারা সত্য সাক্ষ্যই দিয়েছে। নবীগণের পক্ষে এ উম্মতের মুমিনদের সাক্ষ্যদান সম্পর্কে সূরা বাকারায় ইরশাদ হয়েছে-
جَعَلْنَاكُمْ أُمَّةً وَسَطًا لِتَكُونُوا شُهَدَاءَ عَلَى النَّاسِ وَيَكُونَ الرَّسُولُ عَلَيْكُمْ شَهِيدًا (হে মুসলিমগণ!) এভাবেই আমি তোমাদেরকে এক মধ্যপন্থী উম্মত বানিয়েছি,যাতে তোমরা অন্যান্য লোক সম্পর্কে সাক্ষী হও এবং রাসূল হন তোমাদের পক্ষে সাক্ষী।
অপর এক আয়াতে ইরশাদ-
لِيَكُونَ الرَّسُولُ شَهِيدًا عَلَيْكُمْ وَتَكُونُوا شُهَدَاءَ عَلَى النَّاسِ 'যাতে এই রাসূল তোমাদের জন্য সাক্ষী হতে পারে আর তোমরা সাক্ষী হতে পার অন্যান্য মানুষের জন্য।
কারও মতে هَؤُلَاءِ এর দ্বারা এ উম্মতকে বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ অন্যান্য নবী যেমন নিজ নিজ উম্মত সম্পর্কে সাক্ষ্য দেবেন, তেমনি আমাদের নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও নিজ উম্মত সম্পর্কে সাক্ষ্যদান করবেন। যেমন কোনও কোনও বর্ণনায় আছে, একবার নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে এ আয়াত পাঠ করা হলে তিনি কেঁদে দেন এবং আরয করেন, হে আমার রব্ব, আমি যাদের মধ্যে আছি তাদের সম্পর্কে তো এটা সম্ভব, কিন্তু আমি যাদের দেখিনি তাদের সম্পর্কে কিভাবে সাক্ষ্য দেব? অপর এক বর্ণনা দ্বারা এর উত্তর পাওয়া যায়। তাতে আছে-
ليس من يوم إلا يعرض فيه على النبي صلى الله عليه وسلم أمته غدوة وعشية، فيعرفهم بسيماهم، ليشهد عليهم، يقول الله تبارك وتعالى: «فكيف إذا جئنا من كل أمة بشهيد وجئنا بك على هؤلاء شهيدا
"প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে তাঁর উম্মতকে পেশ করা হয়। তিনি তাদের আলামত দ্বারা তাদেরকে চিনে রাখেন, যাতে তাদের সম্পর্কে সাক্ষ্য দিতে পারেন। আল্লাহ তা'আলা বলছেন- ‘সুতরাং (তারা ভেবে দেখুক)— সেদিন (তাদের অবস্থা) কেমন হবে, যখন আমি প্রত্যেক উম্মত থেকে একজন সাক্ষী উপস্থিত করব এবং (হে নবী), আমি তোমাকে ওইসব লোকের বিরুদ্ধে সাক্ষীরূপে উপস্থিত করব? [সূরা নিসা : ৪১]
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. অন্যের মুখে কুরআন মাজীদের তিলাওয়াত শোনা সুন্নত।
খ. বেশি হাসাহাসি ভালো না। এর থেকে বিরত থাকা চাই।
গ. কুরআন মাজীদের তিলাওয়াত যেমন কান্না বা কান্নার ভাবের সঙ্গে হওয়া চাই, তেমনি কুরআন মাজীদের তিলাওয়াত শ্রবণকালেও এরকম ভাব থাকা উচিত।
