শরহু মাআ’নিল আছার- ইমাম ত্বহাবী রহঃ

২. নামাযের অধ্যায়

হাদীস নং: ২৩৫১
আন্তর্জাতিক নং: ২৩৫২
রুগ্ন ব্যক্তির পিছনে সুস্থ ব্যক্তির সালাত।
২৩৫১-২৩৫২। আবু বাকর (রাহঃ) ও মুহাম্মাদ ইবন খুযায়মা (রাহঃ) আব্দুল্লাহ ইব্‌ন উমর (রাযিঃ) থেকে বর্ণনা করেন
যে, তিনি এক দিন রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিকট ছিলেন, তখন তিনি সাহাবীগণের এক দলের সাথে অবস্থান করছিলেন। তিনি তাদেরকে বললেন, তােমরা কি অবহিত নও যে, আমি তােমাদের নিকট আল্লাহর রাসূল হিসাবে প্রেরিত হয়েছি ? তারা বললেন, হ্যাঁ আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি নিশ্চয় আপনি আল্লাহর রাসূল। তিনি বললেন, তােমরা কি এ বিষয়ে অবহিত নও যে, আল্লাহ তা'আলা অবশ্য তাঁর কিতাবে (কুরআনে) অবতীর্ণ করেছেন, নিশ্চয় যে ব্যক্তি আমার আনুগত্য করল অবশ্যই সে আল্লাহর আনুগত্য করল ? তারা বললেন, হ্যাঁ অমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি, অবশ্যই যে ব্যক্তি আপনার আনুগত্য করবে সে আল্লাহর আনুগত্য করল। তিনি বললেন, আমার আনুগত্য করা আল্লাহর আনুগত্যেরই নামান্তর। আর তােমাদের ইমামের আনুগত্য করা হলাে আমার আনুগত্য করার নামান্তর। (অতএব তারা (ইমাম) যদি বসে বসে সালাত আদায় করে তাহলে তােমরা সকলে বসে বসে সালাত আদায় করবে।
আবু জাফর (তাহাবী র) বলেনঃ একদল আলিম এ মত গ্রহণ করে বলেছেন, কেউ যদি এক দল
(মুকতাদী) নিয়ে উযরের কারণে বসে বসে সালাত আদায় করে, তাহলে তাদের দাঁড়ানাের শক্তি থাকা সত্ত্বেও তার পিছনে সকলে বসে বসে সালাত আদায় করবে।
পক্ষান্তরে এ বিষয়ে অপরাপর আলিমগণ তাদের বিরােধিতা করে বলেছেনঃ বরং তার পিছনে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করবে। (কারণ) তাদের ইমামের ক্ষেত্রে দাঁড়ানাে (আবশ্যিক) হওয়া রহিত হলেও তাদের জন্য রহিত হবে না।
এ বিষয়ে তারা নিম্নোক্ত হাদীসকে দলীল রূপে পেশ করেন ?
2351 - حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرَةَ، قَالَ: ثنا عَبْدُ اللهِ بْنُ حُمْرَانَ ح

2352 - وَحَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ خُزَيْمَةَ، قَالَ: ثنا عَبْدُ اللهِ بْنُ رَجَاءٍ، قَالَا: ثنا عُقْبَةُ بْنُ أَبِي الصَّهْبَاءِ الْبَاهِلِيُّ، قَالَ: سَمِعْتُ سَالِمًا، يَقُولُ: حَدَّثَنِي عَبْدُ اللهِ بْنُ عُمَرَ، رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا أَنَّهُ كَانَ يَوْمًا مِنَ الْأَيَّامِ عِنْدَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ فِي نَفَرٍ مِنْ أَصْحَابِهِ , فَقَالَ لَهُمْ: «أَلَسْتُمْ تَعْلَمُونَ أَنِّي رَسُولُ اللهِ إِلَيْكُمْ؟» فَقَالُوا: بَلَى , نَشْهَدُ أَنَّكَ رَسُولُ اللهِ. قَالَ: «أَفْلَسْتُمْ تَعْلَمُونَ أَنَّ اللهَ قَدْ أَنْزَلَ فِي كِتَابِهِ أَنَّ مَنْ أَطَاعَنِي فَقَدْ أَطَاعَ اللهَ؟» قَالُوا: بَلَى , نَشْهَدُ أَنَّهُ مَنْ أَطَاعَكَ فَقَدْ أَطَاعَ اللهَ. قَالَ: «فَإِنَّ مِنْ طَاعَةِ اللهِ أَنْ تُطِيعُونِي , وَإِنَّ مِنْ طَاعَتِي أَنْ تُطِيعُوا أَئِمَّتَكُمْ , فَإِنْ صَلَّوْا قُعُودًا , فَصَلُّوا قُعُودًا أَجْمَعِينَ» قَالَ أَبُو جَعْفَرٍ: فَذَهَبَ قَوْمٌ إِلَى هَذَا , فَقَالُوا: مَنْ صَلَّى بِقَوْمٍ قَاعِدًا , مِنْ عِلَّةٍ , صَلَّوْا خَلْفَهُ قُعُودًا , وَإِنْ كَانُوا يُطِيقُونَ الْقِيَامَ. وَخَالَفَهُمْ فِي ذَلِكَ آخَرُونَ , فَقَالُوا: بَلْ يُصَلُّونَ خَلْفَهُ قِيَامًا , وَلَا يَسْقُطُ عَنْهُمْ فَرْضُ الْقِيَامِ , لِسُقُوطِهِ عَنْ إِمَامِهِمْ
وَاحْتَجُّوا فِي ذَلِكَ

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এখানে হাদীসটি সংক্ষিপ্ত আকারে আনা হয়েছে। অন্যান্য বর্ণনার আলোকে নিম্নে পূর্ণাঙ্গ হাদীস ও তার ব্যাখ্যা পেশ করা হলো।

হযরত আবু হুরায়রা রাযি. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আমার আনুগত্য করল, সে আল্লাহর আনুগত্য করল। আর যে ব্যক্তি আমার অবাধ্যতা করল, সে আল্লাহর অবাধ্যতা করল। যে ব্যক্তি আমীরের আনুগত্য করল, সে আমার আনুগত্য করল। আর যে ব্যক্তি আমীরের অবাধ্যতা করল, সে আমারই অবাধ্যতা করল।

এ হাদীছটিতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বপ্রথম তাঁর নিজের প্রতি উম্মতের আনুগত্য প্রদর্শনের গুরুত্ব তুলে ধরেন যে, যে ব্যক্তি আমার আনুগত্য করল, সে আল্লাহরই আনুগত্য করল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্য করার অর্থ তিনি যা করতে আদেশ করেন তা করা এবং যা করতে নিষেধ করেন তা করা হতে বিরত থাকা। তাঁর আনুগত্য করার দ্বারা আল্লাহ তা'আলার আনুগত্য হয় এ কারণে যে, তিনি যা-কিছু আদেশ-নিষেধ করেন তা আল্লাহর হুকুমেই করেন। কাজেই তাঁর আদেশ-নিষেধ মানার দ্বারা প্রকারান্তরে আল্লাহরই হুকুম পালন করা হয়। কথাটির এরকম ব্যাখ্যাও করা যায় যে, আল্লাহ তা'আলাই আমাদেরকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্য করার হুকুম দিয়েছেন। কাজেই যে ব্যক্তি তাঁর আনুগত্য করবে, প্রকৃতপক্ষে সে আল্লাহ তা'আলারই হুকুম মানবে। এভাবে তাঁর আনুগত্য করার দ্বারা আল্লাহ তা'আলারই আনুগত্য করা হয়।

অবাধ্যতার বিষয়টাও এরকমই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি আমার অবাধ্যতা করল, সে ব্যক্তি আল্লাহ তা'আলারই অবাধ্যতা করল। তাঁর অবাধ্যতা করার অর্থ তিনি যা করতে আদেশ করেছেন তা না করা এবং যা করতে নিষেধ করেছেন তাতে লিপ্ত হওয়া। এককথায় তাঁর আদেশ-নিষেধ পালন না করা। এরূপ যে করে, সে প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ তা'আলারই অবাধ্যতা করে।

তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমীর ও শাসকের আনুগত্য করার গুরুত্ব সম্পর্কে বলেন, যে ব্যক্তি আমীরের আনুগত্য করে, সে আমারই আনুগত্য করে। এর দ্বারা যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিয়োগকৃত আমীরকে বোঝানো হয়েছে, তেমনি পরবর্তীকালে যারা আমীর ও শাসকরূপে দায়িত্ব পালন করে, তাদেরকেও বোঝানো উদ্দেশ্য। কেননা শরী'আতসম্মতভাবে শাসনকার্য পরিচালনা করলে তারাও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিয়োগ করা আমীরেরই পর্যায়ভুক্ত। তাই তার আনুগত্য করাও জরুরি। মোটকথা আমীর বা শাসক যদি বৈধ হয়, তবে তার আনুগত্য করার দ্বারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামেরই আনুগত্য করা হয়, যেহেতু তিনি তার আনুগত্য করার হুকুম দিয়েছেন। এমনিভাবে যদি কেউ আমীরের আনুগত্য না করে, তবে সে যেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামেরই আনুগত্য করা হতে বিরত থাকল, যেহেতু সে তার আনুগত্য না করার দ্বারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামেরই হুকুম অমান্য করেছে।

হাদীছটিতে আমীর ও শাসকের আনুগত্য করার প্রতি এতটা জোর দেওয়া হয়েছে এ কারণে যে, তার আনুগত্য করার দ্বারা উম্মতের ঐক্য ও সংহতি সুরক্ষিত থাকে। অন্যথায় উম্মতের মধ্যে বিভক্তি ও আত্মকলহের সৃষ্টি হয়, যা দীনের হাজারও ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায় এবং উম্মতের অস্তিত্বও হুমকির মধ্যে পড়ে যায়। তাই শাসক জালেম হলেও যতক্ষণ পর্যন্ত তাকে বরখাস্ত করার শরী'আতসম্মত কারণ না পাওয়া যাবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তার আনুগত্য করা জরুরি।

হাদীছটির সারমর্ম দাঁড়াল, আল্লাহর অনুগত বান্দা হওয়ার জন্য তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্য করা এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুগত উম্মত হওয়ার জন্য আমীর ও শাসকের আনুগত্য করা অপরিহার্য। অর্থাৎ এ তিনও পর্যায়ের আনুগত্য পরস্পর অবিচ্ছেদ্য। এর এক আনুগত্য পরিহার করে অন্য আনুগত্যের দাবি করার কোনও সুযোগ নেই। কেউ আমীরের বৈধ হুকুম অমান্য করে যদি বলে আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্য করে থাকি, তবে তার সে কথা গ্রহণযোগ্য নয়। এমনিভাবে কেউ যদি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদেশ-নিষেধ তথা তাঁর হাদীছ ও সুন্নাহ অগ্রাহ্য করে আল্লাহ তা'আলার আনুগত্য করার দাবি করে, তবে সে দাবিও সম্পূর্ণ অসত্য ও অবান্তর।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. আল্লাহ তা'আলার প্রতি অনুগত থাকার জন্য তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্য করা তথা তাঁর সুন্নাহ মেনে চলা জরুরি।

খ. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি আনুগত্য প্রকাশের একটা দিক হল আমীর ও শাসকের আনুগত্য করা ও তাদের অবাধ্যতা না করা।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান