শরহু মাআ’নিল আছার- ইমাম ত্বহাবী রহঃ

২. নামাযের অধ্যায়

হাদীস নং: ২১২৮
আন্তর্জাতিক নং: ২১২৯
মুফাসসালে (সূরা আন-নাজম-৫৩, ইনশিকাক-৮৪ ও আলাক-৯৬,) সিজদা আছে কি না?
২১২৮-২১২৯। ফাহাদ (রাহঃ) ..... আব্দুর রহামন ইবন ইয়াযিদ (রাহঃ) সূত্রে বর্ণনা করেন যে, তিনি উল্লেখ করেছেন, ইবন মাসউদ (রাযিঃ) সূরা হা-মীমের প্রথম আয়াতে সিজদা করতেন।

১৯৭৭. সালিহ (রাহঃ) ..... ইবন উমর (রাযিঃ) সূত্রে অনুরূপ বর্ণনা করছেন।
অতএব সূরা হা-মীমে সিজদা আছে বলে সবাই একমত। তবে সিজদার স্থান নিয়ে মতভেদ আছে। বস্তুত ইতিপূর্বে অন্য যেসব সূরায় সিজ্দার কথা উল্লেখ করলাম। সেগুলোর সিজদার স্থান সম্পর্কে কোন মতভেদ নেই । সেগুলোর সবগুলোতে সিজদার স্থল হলো খবর বা সংবাদের স্থল (নির্দেশ) (আমল)-এর স্থল নয়। আমরা দেখেছি আমার (নির্দেশ) সূচক বাক্যে অনেক জায়গায় সিজদার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন, يَا مَرْيَمُ اقْنُتِي لِرَبِّكَ وَاسْجُدِي এবং وَكُنْ مِنَ السَّاجِدِينَ সবাই একমত যে এরূপ কোন স্থলে সিজদা নেই।
অতএব যুক্তির বিষয় হলো, যেসব স্থানে সিজদা হবে কি হবে না এ নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে যেসব স্থানে আমরা লক্ষ্য করব যদি সেখানে সিজদার নির্দেশ সূচক বাক্য থাকে তবে সেটি হবে তা'লীম বা শিখানোর ব্যাপারে প্রযোজ্য ফলে তাতে সিজদা হবে না। আর যেসব স্থানে সিজদার খবর বা সংবাদ দেয়া হয়েছে সেগুলো তিলাওয়াতের সিজদার স্থান হিসাবে গণ্য হবে।
সূরা নাজ্মের বিতর্কিত স্থানটি হলো- فَاسْجُدُوا لِلَّهِ وَاعْبُدُوا আয়াত। কেউ বলেন, এটি সিজদার স্থান। কেউ বলেন, এটি সিজদার স্থান নয়। এখানে সিজদার নির্দেশ রয়েছে, সিজদার সংবাদ নয়। অতএব উপরোক্ত যুক্তির আলোকে এটি সিজদার স্থান নয়। অনুরূপভাবে সূরা আলাকের বিরোধপূর্ণ স্থানটি হলো كَلًّا لَا تُطِعْهُ وَاسْجُدْ وَاقْتَرِبْ আয়াত। বস্তুত এখানেও রয়েছে নির্দেশ, সংবাদ নয়। অতএব উপরোক্ত যুক্তির নিরিখে এটিও সিজদায়ে তিলাওয়াতের স্থান নয়। সূরা ইনশিকাকের বিতর্কিত স্থানটি হলো- فَمَا لَهُمْ لَا يُؤْمِنُونَ وَإِذَا قُرِئَ عَلَيْهِمُ الْقُرْآنُ لَا يَسْجُدُونَ আয়াত। এটি হচ্ছে, সিজদার সংবাদের স্থান, নির্দেশ নয়। অতএব যুক্তির আলোকে এখানে সিজদায়ে তিলাওয়াত হবে। প্রতিটি সিজ্দারই এ অবস্থা হবে। যদি সিজ্দার নির্দেশ থাকে তাহলে সিজদায়ে তিলাওয়াত হবে না। আর যদি সিজদার সংবাদ থাকে তাহলে সিজদায়ে তিলাওয়াত হবে। এ প্রসঙ্গে এটাই হলো যুক্তি। এর ভিত্তিতে সূরা হা-মীমে সিজদার স্থল সেটিই হবে, যেটি ইবন আব্বাস (রাযিঃ)-এর মত। কারণ তাতে রয়েছে সিজ্দার সংবাদ। আয়াতটি হলো- فَإِنِ اسْتَكْبَرُوا فَالَّذِينَ عِنْدَ رَبِّكَ يُسَبِّحُونَ لَهُ بِاللَّيْلِ وَالنَّهَارِ وَهُمْ لَا يَسْأَمُونَ আয়াত। বিরোধী পক্ষ যেটিকে সিজদার স্থান বলেছেন, সেটি নয়। কারণ, সিজদার নির্দেশের স্থানকে তাঁরা সিজদার স্থান নির্ধারণ করেছেন। সে আয়াতটি হলো وَاسْجُدُوا لِلَّهِ الَّذِي خَلَقَهُنَّ إِنْ كُنْتُمْ إِيَّاهُ تَعْبُدُونَ আয়াত । এটাতো নির্দেশের স্থান। আর অপর স্থানটি ছিলো সিজদার সংবাদের। আমরা ইতিপূর্বে উল্লেখ করেছি, যুক্তির আলোকে প্রমাণিত হয়, খবরের স্থানে সিজদা হয়, নির্দেশের স্থানে নয়।
অতএব সূরা হজ্জে একটি ব্যতীত অন্য কোন সিজ়দা হবে না। কারণ দ্বিতীয় বিতর্কিত স্থানটিতে যারা সিজদা হবে বলে উক্তি করেন, সে স্থানটি হলো নির্দেশসূচক সে আয়াত হলো ارْكَعُوا وَاسْجُدُوا وَاعْبُدُوا رَبَّكُمْ আয়াত । আমরা পূর্বে বর্ণনা করেছি, সিজদায়ে তিলাওয়াতের স্থান হলো সংবাদের জায়গা, নির্দেশের জায়গা নয়।
অতএব যদি যুক্তির ভিত্তিতে যেখানে সিজদায়ে তিলাওয়াতের কথা বলা হবে, সেখানে আমাদেরকে ভাবতে হবে যদি সেটি নির্দেশের স্থার্ন হয়, তাহলে সিজদায়ে তিলাওয়াত হবে না। আর যদি সংবাদের স্থান হয় সেখানে সিদায়ে তিলাওয়াত নির্ধারণ করব। তবে রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) থেকে যা কিছু প্রমাণিত হবে সেটির অনুসরণ করা উত্তম।
সূরা সা'দ-এর ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। একদল আলিম বলেন, তাতে সিজদায়ে তিলাওয়াত রয়েছে। আর আরেক দল আলিম বলেন, তাতে সিজদা নেই! আমাদের যুক্তির দাবি হলো, তাতে সিজদা হবে। কারণ, তাতে যেখানে সিজদার স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে সেখানে সিজ্দার সংবাদ রয়েছে, সিজ্দার নির্দেশ নয়। সে স্থানটি হলো নিম্নোক্ত আয়াত فَاسْتَغْفَرَ رَبَّهُ وَخَرَّ رَاكِعًا وَأَنَابَ এটি সিজদার খবর। সুতরাং যুক্তি মুতাবিক তার হুকুম হলো তার মত অন্যান্য খবরের হুকুমের দিকে প্রত্যাবর্তন করানো। অতএব তাতে সিজদা হবে যেমন অন্যান্য খবরের স্থানে সিজদা হয়। এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) থেকে হাদীস বর্ণিত আছে।
2128 - حَدَّثَنَا فَهْدٌ، قَالَ: ثنا أَبُو غَسَّانَ، قَالَ: ثنا زُهَيْرٌ، قَالَ: ثنا أَبُو إِسْحَاقَ، قَالَ: سَمِعْتُ عَبْدَ الرَّحْمَنِ بْنَ يَزِيدَ، يَذْكُرُ: «أَنَّ عَبْدَ اللهِ بْنَ مَسْعُودٍ، رَضِيَ اللهُ عَنْهُ كَانَ يَسْجُدُ فِي الْآيَةِ الْأُولَى مِنْ حم»

2129 - حَدَّثَنَا صَالِحٌ، قَالَ: ثنا سَعِيدٌ، قَالَ: ثنا هُشَيْمٌ، عَنْ رَجُلٍ، عَنْ نَافِعٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ، رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا مِثْلَهُ فَكَانَتْ هَذِهِ السَّجْدَةُ الَّتِي فِي حم مِمَّا قَدِ اتُّفِقَ عَلَيْهِ , وَاخْتُلِفَ فِي مَوْضِعِهَا. وَمَا ذَكَرْنَا قَبْلَ هَذَا مِنَ السُّجُودِ فِي السُّوَرِ الْأُخَرِ , فَقَدِ اتَّفَقُوا عَلَيْهَا وَعَلَى مَوَاضِعِهَا الَّتِي ذَكَرْنَاهَا , وَكَانَ مَوْضِعُ كُلِّ سَجْدَةٍ مِنْهَا , فَهُوَ مَوْضِعُ إِخْبَارٍ , وَلَيْسَ بِمَوْضِعِ أَمْرٍ، وَقَدْ رَأَيْنَا السُّجُودَ مَذْكُورًا فِي مَوَاضِعِ أَمْرٍ , مِنْهَا قَوْلُهُ تَعَالَى: {يَا مَرْيَمُ اقْنُتِي لِرَبِّكَ وَاسْجُدِي} [آل عمران: 43] وَمِنْهَا قَوْلُهُ: {وَكُنْ مِنَ السَّاجِدِينَ} [الحجر: 98] فَكُلٌّ قَدِ اتَّفَقَ أَنْ لَا سُجُودَ فِي شَيْءٍ مِنْ ذَلِكَ. فَالنَّظَرُ عَلَى ذَلِكَ , أَنْ يَكُونَ كُلُّ مَوْضِعٍ مِمَّا اخْتُلِفَ فِيهِ , هَلْ فِيهِ سُجُودٌ أَمْ لَا؟ أَنْ نَنْظُرَ فِيهِ , فَإِنْ كَانَ مَوْضِعَ أَمْرٍ , فَإِنَّمَا هُوَ تَعْلِيمٌ , فَلَا سُجُودَ فِيهِ. وَكُلُّ مَوْضِعٍ فِيهِ خَبَرٌ عَنِ السُّجُودِ , فَهُوَ مَوْضِعُ سُجُودِ التِّلَاوَةِ , فَكَانَ الْمَوْضِعُ الَّذِي اخْتُلِفَ فِيهِ , مِنْ سُورَةِ النَّجْمِ. فَقَالَ قَوْمٌ: هُوَ مَوْضِعُ سُجُودِ التِّلَاوَةِ , وَقَالَ آخَرُونَ: هُوَ لَيْسَ مَوْضِعَ سَجْدَةِ تِلَاوَةٍ , وَهُوَ قَوْلُهُ: {فَاسْجُدُوا لِلَّهِ وَاعْبُدُوا} [النجم: 62] فَذَلِكَ أَمْرٌ وَلَيْسَ بِخَبَرٍ. فَكَانَ النَّظَرُ عَلَى مَا ذَكَرْنَا أَنْ لَا يَكُونَ مَوْضِعَ سُجُودِ التِّلَاوَةِ , وَكَانَ الْمَوْضِعُ الَّذِي اخْتُلِفَ فِيهِ أَيْضًا مِنِ اقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ هُوَ قَوْلُهُ: {كَلًّا لَا تُطِعْهُ وَاسْجُدْ وَاقْتَرِبْ} [العلق: 19] فَذَلِكَ أَمْرٌ وَلَيْسَ بِخَبَرٍ. فَالنَّظَرُ عَلَى مَا ذَكَرْنَا أَنْ لَا يَكُونَ مَوْضِعَ سُجُودِ تِلَاوَةٍ. وَكَانَ الْمَوْضِعُ الَّذِي اخْتُلِفَ فِيهِ مِنْ إِذَا السَّمَاءُ انْشَقَّتْ هُوَ مَوْضِعَ سُجُودٍ أَوْ لَا هُوَ قَوْلُهُ {فَمَا لَهُمْ لَا يُؤْمِنُونَ وَإِذَا قُرِئَ عَلَيْهِمُ الْقُرْآنُ لَا يَسْجُدُونَ} [الانشقاق: 21] فَذَلِكَ مَوْضِعُ إِخْبَارٍ لَا مَوْضِعُ أَمْرٍ. [ص:361] فَالنَّظَرُ عَلَى مَا ذَكَرْنَا أَنْ يَكُونَ مَوْضِعَ سُجُودِ التِّلَاوَةِ , وَيَكُونَ كُلُّ شَيْءٍ مِنَ السُّجُودِ يُرَدُّ إِلَى مَا ذَكَرْنَا. فَمَا كَانَ مِنْهُ أَمْرًا رُدَّ إِلَى شَكْلِهِ مِمَّا ذَكَرْنَا فَلَمْ يَكُنْ فِيهِ سُجُودٌ , وَمَا كَانَ مِنْهُ خَبَرًا رُدَّ إِلَى شَكْلِهِ مِنَ الْأَخْبَارِ , فَكَانَ فِيهِ سُجُودٌ. فَهَذَا هُوَ النَّظَرُ فِي هَذَا الْبَابِ. فَكَانَ يَجِيءُ عَلَى ذَلِكَ أَنْ يَكُونَ مَوْضِعُ السُّجُودِ مِنْ حم هُوَ الْمَوْضِعَ الَّذِي ذَهَبَ إِلَيْهِ ابْنُ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ لِأَنَّهُ عِنْدَهُ خَبَرٌ , هُوَ قَوْلُهُ {فَإِنِ اسْتَكْبَرُوا فَالَّذِينَ عِنْدَ رَبِّكَ يُسَبِّحُونَ لَهُ بِاللَّيْلِ وَالنَّهَارِ وَهُمْ لَا يَسْأَمُونَ} [فصلت: 38] لَا كَمَا ذَهَبَ إِلَيْهِ مَنْ خَالَفَهُ , لِأَنَّ أُولَئِكَ جَعَلُوا السَّجْدَةَ عِنْدَ أَمْرٍ , وَهُوَ قَوْلُهُ: {وَاسْجُدُوا لِلَّهِ الَّذِي خَلَقَهُنَّ إِنْ كُنْتُمْ إِيَّاهُ تَعْبُدُونَ} [فصلت: 37] فَكَانَ ذَلِكَ مَوْضِعَ أَمْرٍ , وَكَانَ الْمَوْضِعُ الْآخَرُ , مَوْضِعَ خَبَرٍ , وَقَدْ ذَكَرْنَا أَنَّ النَّظَرَ يُوجِبُ أَنْ يَكُونَ السُّجُودُ فِي مَوَاضِعِ الْخَبَرِ , لَا فِي مَوَاضِعِ الْأَمْرِ. فَكَانَ يَجِيءُ عَلَى ذَلِكَ أَنْ لَا يَكُونَ فِي سُورَةِ الْحَجِّ غَيْرُ سَجْدَةٍ وَاحِدَةٍ , لِأَنَّ الثَّانِيَةَ الْمُخْتَلَفَ فِيهَا إِنَّمَا مَوْضِعُهَا فِي قَوْلِ مَنْ يَجْعَلُهَا سَجْدَةً , مَوْضِعَ أَمْرٍ وَهُوَ قَوْلُهُ {ارْكَعُوا وَاسْجُدُوا وَاعْبُدُوا رَبَّكُمْ} [الحج: 77] الْآيَةَ وَقَدْ بَيَّنَّا أَنَّ مَوَاضِعَ سُجُودِ التِّلَاوَةِ , هِيَ مَوَاضِعُ الْأَخْبَارِ , لَا مَوَاضِعُ الْأَمْرِ. فَلَوْ خُلِّينَا وَالنَّظَرَ , لَكَانَ الْقَوْلُ فِي سُجُودِ التِّلَاوَةِ أَنْ نَنْظُرَ , فَمَا كَانَ مِنْهُ مَوْضِعَ أَمْرٍ لَمْ نَجْعَلْ فِيهِ سُجُودًا , وَمَا كَانَ مِنْهُ مَوْضِعَ خَبَرٍ جَعَلْنَا فِيهِ سُجُودًا , وَلَكِنَّ اتِّبَاعَ مَا ثَبَتَ عَنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَوْلَى. وَقَدِ اخْتُلِفَ فِي سُورَةِ ص فَقَالَ قَوْمٌ: فِيهَا سَجْدَةٌ , وَقَالَ آخَرُونَ: لَيْسَ فِيهَا سَجْدَةٌ. فَكَانَ النَّظَرُ عِنْدَنَا فِي ذَلِكَ أَنْ يَكُونَ فِيهِ سَجْدَةٌ , لِأَنَّ الْمَوْضِعَ الَّذِي جَعَلَهُ مَنْ جَعَلَهُ فِيهَا سَجْدَةً , وَمَوْضِعُ السُّجُودِ هُوَ مَوْضِعُ خَبَرٍ , لَا مَوْضِعُ أَمْرٍ , وَهُوَ قَوْلُهُ {فَاسْتَغْفَرَ رَبَّهُ وَخَرَّ رَاكِعًا وَأَنَابَ} [ص: 24] فَذَلِكَ خَبَرٌ. فَالنَّظَرُ فِيهِ أَنْ يُرَدَّ حُكْمُهُ إِلَى حُكْمِ أَشْكَالِهِ مِنَ الْأَخْبَارِ , فَيَكُونَ فِيهِ سَجْدَةٌ كَمَا يَكُونُ فِيهَا. وَقَدْ رُوِيَ ذَلِكَ عَنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ