আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ

৫১- কুরআনের তাফসীর অধ্যায়

হাদীস নং: ৪৬০৭
আন্তর্জাতিক নং: ৪৯৬৭
সূরা কাফিরুন
বলা হয় لَكُمْ دِيْنُكُمْ তোমাদের দ্বীন তোমাদের, অর্থাৎ কুফর। আর وَلِيَ دِيْنِ আমাদের দ্বীন মানে ইসলাম। এখানে دِيْنِيْ বলা হয়নি। পূর্বের আয়াতগুলো نون অক্ষরের উপর যেহেতু শেষ করা হয়েছে, তাই পূর্বের আয়াতগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্য রক্ষা করার জন্য ي কে حذف করে এ আয়াতটিকেও نون অক্ষরের ওপর সমাপ্ত করা হয়েছে। যেমন অন্য স্থানে আল্লাহ্ তাআলা ي কে حذف করে يَهْدِيْنِ এবং يَشْفِيْنِ ব্যবহার করেছেন। (মুজাহিদ ব্যতীত) অপরাপর মুফাসসির বলেছেন, لَآ أَعْبُدُ مَا تَعْبُدُوْنَ - এর মর্মার্থ হচ্ছেঃ তোমরা বর্তমানে যার ‘ইবাদাত কর, আমি তার ‘ইবাদাত করি না এবং অবশিষ্ট জীবনেও আমি তোমাদের এ আহবানে সাড়া দেব না। وَلَآ أَنْتُمْ عَابِدُوْنَ مَآ أَعْبُدُ এবং তোমরাও তাঁর ‘ইবাদাতকারী নও- ‘যাঁর ‘ইবাদাত আমি করি।’ তারা ঐ সমস্ত লোক, যাদের ব্যাপারে আল্লাহ্ তাআলা অন্যত্র ইরশাদ করেছেনঃ ‘‘তোমার প্রতিপালকের নিকট হতে তোমার প্রতি যা নাযিল হয়েছে তা তাদের অনেকের ধর্মদ্রোহিতা ও অবিশ্বাসই বর্ধিত করবে।’’

সূরা নসর
৪৬০৭। হাসান ইবনে রাবী (রাহঃ) ......... আয়েশা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, إِذَا جَاءَ نَصْرُ اللَّهِ وَالْفَتْحُ সূরা নাযিল হবার পর রাসূল (ﷺ) যখনই নামায আদায় করেছেন তখনই তিনি নামাযের পর নিম্নোক্ত দু'আটি পাঠ করেছেনঃسُبْحَانَكَ رَبَّنَا وَبِحَمْدِكَ، اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي “হে আল্লাহ! তুমি পবিত্র, তুমিই আমার রব। সকল প্রশংসা তোমারই জন্য নির্ধারিত। হে আল্লাহ! তুমি আমাকে ক্ষমা কর”।
سورة قل يا أيها الكافرون يقال: {لكم دينكم} [المائدة: 3]: «الكفر»، {ولي دين} [الكافرون: 6]: «الإسلام، ولم يقل ديني، لأن الآيات بالنون، فحذفت الياء»، كما قال: {يهدين} [الكهف: 24] و {يشفين} [الشعراء: 80] وقال غيره: {لا أعبد ما تعبدون} [الكافرون: 2]: «الآن، ولا أجيبكم فيما بقي من عمري»، {ولا أنتم عابدون ما أعبد} [الكافرون: 3]: وهم الذين قال: {وليزيدن كثيرا منهم ما أنزل إليك من ربك طغيانا وكفرا} [المائدة: 64]

سورة إذا جاء نصر الله
4967 - حَدَّثَنَا الحَسَنُ بْنُ الرَّبِيعِ، حَدَّثَنَا أَبُو الأَحْوَصِ، عَنِ الأَعْمَشِ، عَنْ أَبِي الضُّحَى، عَنْ مَسْرُوقٍ، عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا، قَالَتْ: مَا صَلَّى النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَلاَةً بَعْدَ أَنْ نَزَلَتْ عَلَيْهِ: {إِذَا جَاءَ نَصْرُ اللَّهِ وَالفَتْحُ} [النصر: 1] إِلَّا يَقُولُ فِيهَا: «سُبْحَانَكَ رَبَّنَا وَبِحَمْدِكَ اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي»

হাদীসের ব্যাখ্যা:

سبحانك এর অর্থ- হে আল্লাহ আমি আপনার পবিত্রতা ঘোষণা করছি। আপনি সকল দোষত্রুটি থেকে মুক্ত ও পবিত্র।
وبحمدك এর অর্থ- এবং আমি আপনার প্রশংসা আদায়ে রত হচ্ছি। আপনি যে কেবল দোষত্রুটি থেকে মুক্ত তাই নয়, সেইসঙ্গে যতরকম ভালো ভালো গুণ আছে তাও সব আপনার মধ্যে পরিপূর্ণরূপে আছে।
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের তাওবা ও ক্ষমা প্রার্থনা দ্বারা কী বোঝানো উদ্দেশ্য তা ইতঃপূর্বে বলা হয়েছে। সারকথা তিনি সর্বপ্রকার গুনাহ থেকে মা'সূম ছিলেন। সমস্ত নবী-রাসূলই মা'সূম। তা সত্ত্বেও বেশি বেশি তাওবা-ইস্তিগফার করতেন এ কারণে যে, মাসূম ও নিষ্পাপ হওয়াটা তাঁর প্রতি আল্লাহ তা'আলার এক বিরাট রহমত। এর শোকর আদায়ের জন্য তিনি বেশি বেশি 'ইবাদত-বন্দেগী করতেন। কিন্তু আল্লাহ তা'আলার যথাযথ শোকর আদায় কার পক্ষে সম্ভব? তিনি যে আল্লাহপ্রদত্ত নি'আমতের যথাযথ শোকর আদায় করতে পারছেন না, এ অনুভূতি ছিল তাঁর মধ্যে অতি প্রবল। এ না পারাকে তিনি নিজ ত্রুটিরূপে গণ্য করতেন। আর সে কারণেই এত বেশি তাওবা-ইস্তিগফার করতেন। তাছাড়া তিনি ছিলেন অত্যন্ত বিনয়ী। আল্লাহ তা'আলার সামনে তাঁর 'আবদিয়াত ও দাসত্বের অনুভূতি ছিল অতি প্রবল। এবং তা এতই উচ্চপর্যায়ের, যেখানে পৌছা আর কারও পক্ষে সম্ভব নয়। তিনি সেই অবস্থান থেকে নিজ বন্দেগীর কর্তব্য এবং আল্লাহর রাবূবিয়াতের হকের বিপরীতে নিজ ‘ইবাদত-বন্দেগীকে ত্রুটিপূর্ণ মনে করতেন। তিনি বলতেন, হে আল্লাহ! আমরা তোমার যথার্থ ‘ইবাদত করতে পারলাম না। তিনি এ কমতিকে নিজের এক অপরাধরূপে গণ্য করতেন বলেই বেশি বেশি তাওবা-ইস্তিগফার করতেন। প্রকৃতপক্ষে এটা কোনও অপরাধ ছিল না, এটা ছিল তাঁর উচ্চপর্যায়ের তাওয়াযু ও বিনয়ের বহিঃপ্রকাশ।
এ হাদীছে আল্লাহ তা'আলার হাম্দ ও তাসবীহ এবং তাঁর কাছে তাওবা ও ইস্তিগফার করার বিভিন্ন বাক্য বর্ণিত হয়েছে। এ বিভিন্নতা এ কারণে যে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সবগুলোই পড়তেন। একেকবার একেকটি পড়তেন। আমরাও এর যে-কোনওটি পড়তে পারি।
এ হাদীছে বলা হয়েছে, তিনি রুকূ'-সিজদায় যে তাসবীহ বেশি বেশি পড়তেন তা হচ্ছেঃ- سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ رَبَّنَا وَبِحَمْدِكَ،اَللّٰهُمَّ اغْفِرْلِيْ বা এরই কাছাকাছি কোনও বাক্য, যেমনটা এ হাদীছের বিভিন্ন বর্ণনায় এসেছে। তাহলে আমরা কেন রুকূ'তে পড়ি سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيمِ আর সিজদায় পড়ি سُبْحَانَ رَبِّيَ الأَعْلَى ?
এর উত্তর হচ্ছে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম জীবনের অধিকাংশ সময় রুকূ'তে سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيمِ আর সিজদায় سُبْحَانَ رَبِّيَ الأَعْلَى –ই পড়েছেন। তিনি জীবনের বেশিরভাগ সময় যা পড়েছেন, ফকীহগণ সেটাকেই সুন্নতরূপে গ্রহণ করেছেন। তবে কেউ যদি এ হাদীছে বর্ণিত দু'আ পড়ে, তাতেও নামাযের কোনও ক্ষতি হবে না।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

এ হাদীছেরও শিক্ষা হচ্ছে বার্ধক্য এসে গেলে অথবা তার আগেই মৃত্যুর কোনও আলামত বোঝা গেলে যথাসম্ভব বেশি বেশি ইবাদত-বন্দেগীতে লিপ্ত হয়ে আখিরাতের প্রস্তুতি গ্রহণ করা।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)