শরহু মাআ’নিল আছার- ইমাম ত্বহাবী রহঃ

২. নামাযের অধ্যায়

হাদীস নং: ১৭৩৯
বিতর প্রসঙ্গ
১৭৩৯। ফাহাদ (রাহঃ) .... আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকেব বর্ণনা করেন যে, তিনি এটি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর উক্তি রূপে না বলে নিজে বলেছেন, তোমরা তিন রাক’আতে বিতর আদায় কর না,যাতে তোমরা মাগরিবের সদৃশ করে ফেল, বরং তোমরা পাঁচ অথবা সাত অথবা নয় অথবা এগার রাক’আতে বিতর আদায় কর।এর উত্তরে বলা যায় এখানে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এককভাবে বিতর আদায় করাকে অপছন্দ করেছেন,যাতে এর সাথে নফল বিদ্যমান থাকে। যা আমরা ইতিপূর্বে ইব্ন আব্বাস (রাযিঃ) এবং আয়িশা (রাযিঃ) থেকে বর্ণনা করে এসেছি। অতএব তা হবে বিতর পূর্ব নফল। আর এতে এককভাবে বিতর আদায় কে অপছন্দ করা হয়েছে।এখানে এক রাক’আতে বিতর হওয়া নাকচ করা হয়েছে। আবার এখানে আমাদের পূর্ব বর্ণিত আবু আইয়্যুব (রাযিঃ) এর হাদীসের বিষয়বস্তুরও সম্ভাবনা থাকতে পারে। অর্থাৎ বিতর এর সংখ্যা সংক্রান্ত ইখ্তিয়ারের কথা বুঝানো হতে পারে। তবে এতে এক রাক’আতে বিতর আদায়ের বৈধতার উল্লেখ নেই।
অতএব রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে আমাদের এ সমস্ত হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে, বিতর এক রাক’আতের অধিক। আর যে সমস্ত হাদীসে বিতর এক রাক’আত হিসাবে বর্ণিত হয়েছে তার ব্যাখা-বিশ্লেষণ তা-ই হবে যা আমরা এ অধ্যায়ের যথাস্থানে বর্ণনা করেছি।
তাহাবী (রাহঃ) এর যুক্তিভিত্তিক দলীল
তারপর আমরা এটিকে (বিতর তিন রাক’আত) যুক্তির নিরিখে প্রমাণ অন্বেষণের ইচ্ছা পোষণ করছি।বস্তুত বিতরের অবস্থা দুটির যে কোন একটি হতে পারে ঃ হয় তা ফরয় হবে নয়ত সুন্নত। যদি তা ফরয় হয়,তাহলে আমরা ফরয সমূহের তিন অবস্থা দেখতে পাই,কিছু ফরয় দু’রাকআত বিশিষ্ট,কিছু চার রাক’আত বিশিষ্ট আর কিছু আছে তিন রাক’আত বিশিষ্ট,আর সমস্ত আলিমদের ঐকমত্য রয়েছে যে,বিতর দু’রাক’আত এবং চার রাক’আত বিশিষ্ট হতে পারে না। এতে প্রমাণিত হলো যে,বিতর তিন রাক’আত-ই হবে।এ বিশ্লেষণ তখনই হবে যখন বিতর কে ফরয় হিসাবে মেনে নেয়া হবে।
পক্ষান্তরে যদি বিতর সুন্নত হয়,তাহলে আমরা দেখতে পাই যে,প্রত্যেক সুন্নতেরই দৃষ্টান্ত ফরযের মধ্যেও বিদ্যমাণ রয়েছে।কিছু সালাত নফল আর কিছু ফরয়। অনুরূপ অবস্থা সাদকারও। নফল সাদাকার মূল রয়েছে , ফরযের মধ্যে। আর সেটি হচ্ছে যাকাত। এমনিভাবে (নফল)সিয়াম,ফরযের মধ্যে এর মূল বিদ্যমাণ রয়েছে, সেটি হচ্ছে রামাদান মাসের সিয়াম এবং কাফ্ফারাসমূহের সিয়াম,যা আল্লাহ তাআলা ওয়াজিব করেছেন। অনুরূপ অবস্থা উমরার যা নফল হিসাবে আদায় করা হয়। তবে উমরা ওয়াজিব হওয়ার ব্যাপারে মতবিরোধ রয়েছে,ইনশাআল্লাহ যথাস্থনে এটি বর্ণনা।অনুরূপভাবে নফল গোলাম আযাদ করা, ফরযের মধ্যে এর মূল রয়েছে,সেটি হচ্ছে যিহারের কাফ্ফারা এবং অন্যান্য কাফ্ফারা,যা আল্লাহ তাআলা কুরআন শরীফে ফরয করেছেন।
বস্তুত উল্লিখিত এ সমস্ত নফল ইবাদত যার প্রতিটির জন্য ফরযের মধ্যে মূল বিদ্যমান রয়েছে। আমরা এরূপ কোন নফলের অস্তিত্ব দেখতে পাই না যার মূল ফরযের মধ্যে বিদ্যমান নেই। তবে হ্যাঁ এরূপ কিছু বস্তু আমরা দেখতে পাই, যা ফরয, কিন্ত এর জন্য নফল সাব্যস্ত করা বৈধ নয়। যেমন জানাযার সালাত। এটি তো ফরয,এর জন্য নফল সাব্যস্ত করা বৈধ নয় এবং কারো জন্য কোন মৃতের উপর দু’বার জানাযার সালাত আদায় করা। এবং দ্বিতীয়টি নফল সাব্যস্ত করা জায়েয নয়। অতএব প্রমাণিত হলো যে,কোন কোন ফরয এরূপ হয় যার অনুরূপ নফল সাব্যস্ত করা জায়েয নয়। আর আমরা এরূপ কোন নফলের অস্তিত্ব খুজে পাইনি যার দৃষ্টান্ত ফরযের মধ্যে বিদ্যমান নেই,যার থেকে এটা নেয়া হয়েছে।
অতএব বিতর যদি নফল হয় তাহলে এর জন্য অবশ্যই ফরযের মধ্যে দৃষ্টান্ত বিদ্যমান থাকতে হবে। আর আমরা ফরযের মধ্যে এর দৃষ্টান্ত তিন রাক’আতকে (মাগরিব) পাই। এতে প্রমানিত হলো যে, বিতর তিন রাক’আত।
বস্তুত এটি-ই হচ্ছে যুক্তিভিত্তিক বিশ্লেষণ। আর এটি-ই আবু হানীফা (রাহঃ), আবু ইউসুফ (রাহঃ) ও মুহাম্মাদ (রাহঃ) -এর উক্তি ও অভিমত।
সংশ্লিষ্ট বিষয়ে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর সাহাবীগণ থেকে নিম্মোক্ত রিওয়ায়াত সমূহ বর্ণিত আছে ঃ
1739 - حَدَّثَنَا فَهْدٌ، قَالَ: ثنا عَبْدُ اللهِ بْنُ يُوسُفَ، قَالَ: ثنا بَكْرُ بْنُ مُضَرَ، عَنْ جَعْفَرِ بْنِ رَبِيعَةَ، حَدَّثَهُ , عَنْ عِرَاكِ بْنِ مَالِكٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، رَضِيَ اللهُ عَنْهُ , وَلَمْ يَرْفَعْهُ , قَالَ: «لَا تُوتِرُوا بِثَلَاثِ رَكَعَاتٍ تَشَبَّهُوا بِالْمَغْرِبِ , وَلَكِنْ أَوْتِرُوا بِخَمْسٍ أَوْ بِسَبْعٍ أَوْ بِتِسْعٍ أَوْ بِإِحْدَى عَشْرَةَ» فَقَدْ يُحْتَمَلُ أَنْ يَكُونَ كَرِهَ إِفْرَادَ الْوِتْرِ حَتَّى يَكُونَ مَعَهُ شَفْعٌ عَلَى مَا قَدْ رَوَيْنَا قَبْلَ هَذَا عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ وَعَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمْ فَيَكُونُ ذَلِكَ تَطَوُّعًا قَبْلَ الْوِتْرِ وَفِي ذَلِكَ نَفْيُ الْوَاحِدَةِ أَنْ تَكُونَ وِتْرًا. وَيُحْتَمَلُ أَنْ يَكُونَ عَلَى مَعْنَى مَا ذَكَرْنَا مِنْ حَدِيثِ أَبِي أَيُّوبَ فِي التَّخْيِيرِ إِلَّا أَنَّهُ لَيْسَ فِيهِ إِبَاحَةُ الْوِتْرِ بِالْوَاحِدَةِ. فَقَدْ ثَبَتَ بِهَذِهِ الْآثَارِ الَّتِي رَوَيْنَاهَا , عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّ الْوِتْرَ أَكْثَرُ مِنْ رَكْعَةٍ , وَلَمْ يُرْوَ فِي الرَّكْعَةِ شَيْءٌ وَتَأْوِيلُهُ يَحْتَمِلُ مَا قَدْ شَرَحْنَاهُ وَبَيَّنَّاهُ فِي مَوْضِعِهِ مِنْ هَذَا الْبَابِ ثُمَّ أَرَدْنَا أَنْ نَلْتَمِسَ ذَلِكَ مِنْ طَرِيقِ النَّظَرِ فَوَجَدْنَا الْوِتْرَ لَا يَخْلُو مِنْ أَحَدِ وَجْهَيْنِ , إِمَّا أَنْ يَكُونَ فَرْضًا أَوْ سُنَّةً , فَإِنْ كَانَ فَرْضًا فَإِنَّا لَمْ نَرَ شَيْئًا مِنَ الْفَرَائِضِ إِلَّا عَلَى ثَلَاثَةِ أَوْجُهٍ , فَمِنْهُ مَا هُوَ رَكْعَتَانِ , وَمِنْهُ مَا هُوَ أَرْبَعٌ وَمِنْهُ مَا هُوَ ثَلَاثٌ , وَكُلٌّ قَدْ أَجْمَعَ أَنَّ الْوِتْرَ لَا تَكُونُ اثْنَتَيْنِ وَلَا أَرْبَعًا. فَثَبَتَ بِذَلِكَ أَنَّهُ ثَلَاثٌ. [ص:293] هَذَا إِذَا كَانَ فَرْضًا , وَأَمَّا إِذَا كَانَ سُنَّةً , فَإِنَّا لَمْ نَجِدْ شَيْئًا مِنَ السُّنَنِ إِلَّا وَلَهُ مِثْلٌ فِي الْفَرْضِ. مِنْ ذَلِكَ الصَّلَاةُ مِنْهَا تَطَوُّعٌ , وَمِنْهَا فَرْضٌ. وَمِنْ ذَلِكَ: الصَّدَقَاتُ , لَهَا أَصْلٌ فِي الْفَرْضِ , وَهُوَ الزَّكَاةُ. وَمِنْ ذَلِكَ: الصِّيَامُ , وَلَهُ أَصْلٌ فِي الْفَرْضِ , وَهُوَ صِيَامُ شَهْرِ رَمَضَانَ وَمَا أَوْجَبَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ فِي الْكَفَّارَاتِ. وَمِنْ ذَلِكَ الْحَجُّ , يُتَطَوَّعُ بِهِ , وَلَهُ أَصْلٌ فِي الْفَرْضِ , وَهُوَ حَجَّةُ الْإِسْلَامِ. وَمِنْ ذَلِكَ الْعُمْرَةُ , يُتَطَوَّعُ بِهَا , وَوُجُوبُهَا فِيهِ اخْتِلَافٌ سَنُبَيِّنُهُ فِي مَوْضِعِهِ إِنْ شَاءَ اللهُ تَعَالَى. وَمِنْ ذَلِكَ الْعَتَاقُ , لَهُ أَصْلٌ فِي الْفَرْضِ , وَهُوَ مَا فَرَضَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ فِي الْكِتَابِ مِنَ الْكَفَّارَاتِ وَالظِّهَارِ. فَكَانَتْ هَذِهِ الْأَشْيَاءُ كُلُّهَا يُتَطَوَّعُ بِهَا , وَلَهَا أُصُولٌ فِي الْفَرْضِ , فَلَمْ نَرَ شَيْئًا يُتَطَوَّعُ بِهِ , إِلَّا وَلَهُ أَصْلٌ فِي الْفَرْضِ. وَقَدْ رَأَيْنَا أَشْيَاءَ هِيَ فَرْضٌ وَلَا يَجُوزُ أَنْ يُتَطَوَّعَ بِهَا. مِنْهَا الصَّلَاةُ عَلَى الْجِنَازَةِ وَهِيَ فَرْضٌ وَلَا يَجُوزُ أَنْ يُتَطَوَّعَ بِهَا وَلَا يَجُوزُ لِأَحَدٍ أَنْ يُصَلِّيَ عَلَى مَيِّتٍ مَرَّتَيْنِ يَتَطَوَّعُ بِالْآخِرَةِ مِنْهُمَا. فَكَانَ الْفَرْضُ قَدْ يَكُونُ فِي شَيْءٍ وَلَا يَجُوزُ أَنْ يُتَطَوَّعَ بِمِثْلِهِ. وَلَمْ نَرَ شَيْئًا يُتَطَوَّعُ بِهِ إِلَّا وَلَهُ مِثْلٌ فِي الْفَرْضِ , مِنْهُ أُخِذَ , وَكَانَ الْوِتْرُ يُتَطَوَّعُ بِهِ , فَلَمْ يَجُزْ أَنْ يَكُونَ كَذَلِكَ إِلَّا وَلَهُ مِثْلٌ فِي الْفَرْضِ , وَالْفَرْضُ لَمْ نَجِدْ فِيهِ وِتْرًا إِلَّا ثَلَاثًا. فَثَبَتَ بِذَلِكَ أَنَّ الْوِتْرَ ثَلَاثٌ. هَذَا هُوَ النَّظَرُ وَهُوَ قَوْلُ أَبِي حَنِيفَةَ , وَأَبِي يُوسُفَ , وَمُحَمَّدٍ , رَحِمَهُمُ اللهُ تَعَالَى. وَقَدْ رُوِيَ فِي ذَلِكَ عَنْ أَصْحَابِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
ত্বহাবী শরীফ - হাদীস নং ১৭৩৯ | মুসলিম বাংলা