আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ

৫১- কুরআনের তাফসীর অধ্যায়

হাদীস নং:
আন্তর্জাতিক নং: ৪৯৩৮
সূরা তাকবীর
انْكَدَرَتْ অর্থ বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়বে।
হাসান (রাহঃ) বলেন, سُجِّرَتْ অর্থ পানি নিঃশেষ হয়ে যাবে, এক বিন্দু পানিও অবশিষ্ট থাকবে না।
মুহাজিদ (রাহঃ) বলেন, الْمَسْجُوْرُ অর্থ কানায় কানায় পরিপূর্ণ।
মুজাহিদ ব্যতীত অন্যান্য মুফাসসির বলেছেন, سُجِرَتْ অর্থ একটি সমুদ্র আরেকটির সাথে মিলিত হয়ে এক সমুদ্রে পরিণত হবে। وَالْخُنَّسُ অর্থ নিজের গতিপথে পশ্চাদপসরণকারী। تَكْنِسُ মানে সূর্যের আলোতে অদৃশ্য হয়ে যায়, যেমন হরিণ গা ঢাকা দেয়। تَنَفَّسَ অর্থ যখন দিনের আলো উদ্ভাসিত হয়। الظَّنِيْنُ অর্থ অপবাদ দানকারী। الضَّنِيْنُ অর্থ বখিল, কৃপণ।
উমর (রাযিঃ) বলেছেন, وَإِذَا النُّفُوْسُ زُوِّجَتْ অর্থ প্রত্যেককে তার অনুরূপ চরিত্রের লোকের সাথে বেহেশত ও দোযখে জুড়ে দেয়া হবে। পরে এ কথার সমর্থনে তিনি احْشُرُواالَّذِيْنَ ظَلَمُوْا وَأَزْوَاجَهُمْ عَسْعَسَ (একত্র কর যালিম ও তাদের সহচরগণকে) ( সূরা সাফফাত-এর ২২ নং) আয়াতংশটি পাঠ করলেন। عَسْعَسَ অর্থ অবসান হয়েছে, পৃষ্ঠ প্রদর্শন করেছে।

সূরা ইনফিতার
রাবী ইবনে খুশাইম (রাহঃ) বলেন, فُجِّرَتْ অর্থ-প্রবাহিত হবে।
আ‘মাশ এবং আসিম (রাহঃ) فَعَدَلَكَ তাখফীফ-এর সাথে পড়তেন এবং হিজাযের অধিবাসী فَعَدَّلَكَ তাশদীদ-এর সাথে পড়তেন। অর্থ তিনি তোমাকে সুসামঞ্জস্যপূর্ণ বানিয়েছেন। যারা فَعَدَلَكَ তাখফীফ-এর সাথে পড়তেন, তারা বলেন, এর অর্থ হল, তিনি তোমাকে সুন্দর বা কুৎসিত, লম্বা বা বেঁটে যে আকৃতিতে ইচ্ছা সৃষ্টি করেছেন।

সূরা মুতাফফিফীন
মুজাহিদ (রাহঃ) বলেন, بَلْ رَانَ অর্থ গুনাহের জং অবশিষ্ট থাকা। ثُوِّبَ অর্থ প্রতিদান দেয়া হল।
মুজাহিদ ব্যতীত অপরাপর মুফাসসির বলেছেন, الْمُطَفِّفُ অর্থ ঐ ব্যক্তি যে অন্যকে মাপে পুরা দেয় না।

পরিচ্ছেদঃ আল্লাহর বাণীঃ يوم يقوم الناس لرب العالمين "যেদিন দাঁড়াবে সমস্ত মানুষ জগতসমূহের প্রতিপালকের সামনে।
৪৫৭৮। ইবরাহীম ইবনে মুনযির (রাহঃ) ......... আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। নবী (ﷺ) يَوْمَ يَقُومُ النَّاسُ لِرَبِّ الْعَالَمِينَ “যেদিন দাঁড়াবে সমস্ত মানুষ জগতসমূহের প্রতিপালকের সামনে” (৮৩ঃ ৬) এর ব্যাখ্যায় বলেছেন, সেদিন প্রত্যেকের কর্ণলতিকা পর্যন্ত ঘামে ডুবে যাবে।

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছে হাশরের ময়দানে সমস্ত মাখলূক হিসাব-নিকাশের জন্য যখন আল্লাহ তাআলার সামনে দাঁড়ানো থাকবে, তখন তার পরিস্থিতি কী ভয়াবহ হবে তার খানিকটা তুলে ধরা হয়েছে। এতে জানানো হয়েছে যে, সেদিন কেউ কেউ নিজ ঘামের মধ্যে কানের মাঝামাঝি পর্যন্ত ডুবে যাবে। এতটা ঘামের কারণ এক তো উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা।কঠিন উদ্বেগে প্রচণ্ড শীতের মধ্যেও মানুষ ঘেমে যায়। হিসাব-নিকাশের পর শেষ গতি জান্নাত হবে না জাহান্নাম, এরচে' বড় উদ্বেগ আর কিছুই হতে পারে না। ঘামে শরীরের সবটা পানি নিঃশেষ হয়ে যাওয়ার জন্য এই এক দুর্ভাবনাই যথেষ্ট। তারপর আবার সূর্য মাথার কাছাকাছি চলে আসবে। তদুপরি জাহান্নাম কাছে নিয়ে আসা হবে। হাশরের ময়দানে অবস্থানকালও হবে অনেক দীর্ঘ। কোনও কোনও বর্ণনানুযায়ী দুনিয়ার সময় হিসাবে পঞ্চাশ হাজার বছর। সুতরাং এমন অগ্নিউত্তাপে এত দীর্ঘকালব্যাপী অসংখ্য মানুষের দেহের ঘামে হাশরের ময়দান যদি সাগরেও পরিণত হয়ে যায়, তা অসম্ভব কিছু নয়।

প্রশ্ন হতে পারে, হাশরের ময়দান যদি ঘামের সাগরে পরিণত হয়, তবে তাতে তো সকলেরই সমান ডুবে যাওয়ার কথা, কেউ হাঁটু পর্যন্ত, আবার কেউ গলা পর্যন্ত ডুববে কেন?

এর উত্তর হলো, হতে পারে আল্লাহ তাআলা যার শাস্তি কম তার পায়ের নিচের মাটি উঁচু করে দেবেন বা অপেক্ষাকৃত উঁচু স্থানে তাকে দাঁড় করানো হবে। এমনও হতে পারে যে, প্রত্যেকের আমল অনুযায়ী তার ঘাম কেবল তার স্থানেই সীমাবদ্ধ থাকবে, সে সীমা অতিক্রম করবে না। হযরত মূসা আলাইহিস সালাম ও তাঁর কওমের জন্য পথ করে দিতে তো সাগরের পানিও দু'পাশে আটকে দেওয়া হয়েছিল। তেমনিভাবে যার যার ঘাম তার তার স্থানে আটকে রাখা সম্ভব হতেই পারে। প্রকৃতপক্ষে আখেরাতের সবকিছু দুনিয়ায় বসে পুরোপুরি বুঝে ফেলা সম্ভব নয়। আমাদের কাজ যতটুকু বলা হয়েছে অতটুকুতে বিশ্বাস রাখা।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

এ হাদীছ আমাদের সামনে হাশর-ময়দানের বিভীষিকা তুলে ধরেছে, যাতে আমরা সেদিনের কষ্ট হতে বাঁচার লক্ষ্যে আল্লাহ তাআলার আদেশ-নিষেধ পালনে আরও বেশি সচেষ্ট হই।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন