শরহু মাআ’নিল আছার- ইমাম ত্বহাবী রহঃ

২. নামাযের অধ্যায়

হাদীস নং: ১৫১৫
সিজদায় যেতে প্রথমে উভয় হাত না উভয় হাঁটু রাখবে
১৫১৫। সালিহ্ ইবনে আব্দুর রহমান আবু হুরায়রা থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন ঃ রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন সিজদা করবে তখন যেন উটের ন্যায় না বসে। বরং (প্রথমে ) উভয় হাত রাখবে, তারপর উভয় হাঁটু।
এক সম্প্রদায় সংশয় প্রকাশ করে বলে যে, (হাদীসে ব্যক্ত) এ কথাটি অসম্ভব, যেহেতু রাসুলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেছেন, উটের ন্যায় বসবে না। আর উট নিজের উভয় হাতের উপরে বসে। তারপর বলেছেন, বরং উভয় হাঁটুর পূর্বে উভয় হাত রাখবে। বস্তুত এখানে উটের অনুরূপ করার নির্দেশ করা হয়েছে।
হাদীসের বক্তব্যটির বিশুদ্ধতা, বাস্তবতা প্রমাণ ও এর অসম্ভাব্যতা খণ্ডনের ব্যাপারে সংশয়কারীদের বিরুদ্ধে দলীল হচ্ছে যে, উটের উভয় হাঁটু তার উভয় হাতে বিদ্যমান। অপরাপর জন্তুর অবস্থাও তাই অনুরূপ। পক্ষান্তরে মানুষ এরূপ নয়। (অতএব হাদীসের অর্থ হচ্ছে) রাসুলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেছেন, তোমরা ( সিজদায় যাওয়ার সময়) উভয় হাঁটুর উপর বসবে না, যা উভয় পায়ে বিদ্যমান। যেমনিভাবে উট নিজের উভয় হাঁটুর উপর বসে, যা তার উভয় হাতে বিদ্যমান। বরং প্রথমত উভয় হাত রাখবে, যাতে উভয় হাঁটু বিদ্যমান নেই। তারপর উভয় হাঁটু রাখবে, উট যা করে সেইরূপ নয়।
একদল আলিম বলেছেন যে, সিজদায় যেতে উভয় হাঁটুর পূর্বে উভয় হাত রাখবে। তাঁরা বর্ণিত হাদীসগুলো দ্বারা দলীল পেশ করেন। পক্ষান্তরে অপর একদল আলিম এ ব্যাপারে তাদের বিরোধিতা করে বলেছেনঃ বরং উভয় হাতের পূর্বে নিজের উভয় হাঁটু রাখবে। আর তাঁরা এ ব্যাপারে নিম্নোক্ত হাদীসগুলো দ্বারা দলীল পেশ করেন।
1515 - حَدَّثَنَا صَالِحُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ قَالَ: ثنا سَعِيدُ بْنُ مَنْصُورٍ قَالَ: ثنا عَبْدُ الْعَزِيزِ بْنُ مُحَمَّدٍ قَالَ: حَدَّثَنِي مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ اللهِ بْنِ الْحَسَنِ عَنْ أَبِي الزِّنَادِ عَنِ الْأَعْرَجِ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ «إِذَا سَجَدَ أَحَدُكُمْ فَلَا يَبْرُكْ كَمَا يَبْرُكُ الْبَعِيرُ وَلَكِنْ يَضَعُ يَدَيْهِ ثُمَّ رُكْبَتَيْهِ» فَقَالَ قَوْمٌ: هَذَا الْكَلَامُ مُحَالٌ ; لِأَنَّهُ قَالَ: «لَا يَبْرُكْ كَمَا يَبْرُكُ الْبَعِيرُ» , وَالْبَعِيرُ إِنَّمَا يَبْرُكُ عَلَى يَدَيْهِ , ثُمَّ قَالَ: وَلَكِنْ يَضَعُ يَدَيْهِ قَبْلَ رُكْبَتَيْهِ فَأَمَرَهُ هَاهُنَا أَنْ يَصْنَعَ مَا يَصْنَعُ الْبَعِيرُ , وَنَهَاهُ فِي أَوَّلِ الْكَلَامِ أَنْ يَفْعَلَ مَا يَفْعَلُ الْبَعِيرُ. فَكَانَ مِنَ الْحُجَّةِ عَلَيْهِمْ فِي ذَلِكَ فِي تَثْبِيتِ هَذَا الْكَلَامِ وَتَصْحِيحِهِ وَنَفْيِ الْإِحَالَةِ مِنْهُ أَنَّ الْبَعِيرَ رُكْبَتَاهُ فِي يَدَيْهِ وَكَذَلِكَ فِي سَائِرِ الْبَهَائِمِ , وَبَنُو آدَمَ لَيْسُوا كَذَلِكَ , فَقَالَ: لَا يَبْرُكْ عَلَى رُكْبَتَيْهِ اللَّتَيْنِ فِي رِجْلَيْهِ , كَمَا يَبْرُكُ الْبَعِيرُ عَلَى رُكْبَتَيْهِ اللَّتَيْنِ فِي يَدَيْهِ , وَلَكِنْ يَبْدَأُ فَيَضَعُ أَوَّلًا يَدَيْهِ اللَّتَيْنِ لَيْسَ فِيهِمَا رُكْبَتَانِ ثُمَّ يَضَعُ رُكْبَتَيْهِ , فَيَكُونُ مَا يَفْعَلُ فِي ذَلِكَ بِخِلَافِ مَا يَفْعَلُ الْبَعِيرُ. فَذَهَبَ قَوْمٌ إِلَى أَنَّ الْيَدَيْنِ يُبْدَأُ بِوَضْعِهِمَا فِي السُّجُودِ قَبْلَ الرُّكْبَتَيْنِ. وَاحْتَجُّوا فِي ذَلِكَ بِهَذِهِ الْآثَارِ. وَخَالَفَهُمْ فِي ذَلِكَ آخَرُونَ , فَقَالُوا: بَلْ يَبْدَأُ بِوَضْعِ الرُّكْبَتَيْنِ قَبْلَ الْيَدَيْنِ وَاحْتَجُّوا فِي ذَلِكَ

হাদীসের ব্যাখ্যা:

রসূলুল্লাহ স.-এর আমল ছিলো সিজদায় যাওয়ার সময় আগে হাঁটু এবং পরে হাত রাখা। আর সিজদা থেকে উঠার সময় এর বিপরীত করা। ইমাম তিরমিযী রহ. এ হাদীসের আলোচনায় আরো মনত্মব্য করেছেন যে, অধিকাংশ উলামায়ে কিরামের আমলও এ হাদীস অনুযায়ী।
حَدَّثَنَا يَعْلَى عَنِ الأَعْمَشِ عَنْ إبْرَاهِيمَ عَنِ الأَسْوَدِ أَنَّ عُمَرَ كَانَ يَقَعُ عَلَى رُكْبَتَيْهِ
হযরত উমার রা. হাঁটুর উপর ভর করে (সিজদার জন্য) নীচু হতেন (ইবনে আবী শাইবা: ২৭১৯)
এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, হযরত উমার রা.-এর আমল ছিলো সিজদায় যাওয়ার সময় আগে হাঁটু রাখা।
حَدَّثَنَا ابْنُ فُضَيْلٍ، عَنْ مُغِيرَةَ، عَنْ إبْرَاهِيمَ؛ أَنَّهُ سُئِلَ عَنِ الرَّجُلِ يَضَعُ يَدَيْهِ قَبْلَ رُكْبَتَيْهِ ؟ فَكَرِهَ ذَلِكَ، وَقَالَ: هَلْ يَفْعَلُهُ إِلاَّ مَجْنُونٌ ؟!.
হযরত ইবরাহীম নাখাঈ রহ.কে এক ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলো যে, সিজদার সময় হাঁটুর আগে হাত রাখে। তিনি এটাকে অপছন্দ করলেন এবং বললেন: পাগল ছাড়া কেউ এমন করে? (ইবনে আবী শাইবা: ২৭২২)
উপরিউক্ত সকল হাদীস এবং সাহাবা ও তাবিঈগণের আমল থেকে প্রমাণিত হলো যে, সিজদায় যাওয়ার সময় আগে হাঁটু এবং পরে হাত রাখতে হয়। আর এটাই হানাফী মাযহাবের মত। (শামী: ১/৪৯৭)
উল্লিখিত পদ্ধতির বিপরীতে সিজদা করার সময় আগে হাত এবং পরে হাঁটু রাখা, আর উঠার সময় আগে হাঁটু এবং পরে হাত উঠানোর আমলও হাদীসে বর্ণিত আছে। তবে আমরা এ হাদীসকে আমলের জন্য বেশী উপযোগী মনে করি। কারণ ইমাম তিরমিযী রহ. এ হাদীসটিকে হাসান বলার সাথে সাথে এ হাদীসের উপর অধিকাংশ আহলে ইলম-এর আমল রয়েছে বলেও উলেস্নখ করেছেন। আমীরুল মুমিনীন হযরত উমার রা.-এর আমলও এটাই। ইবনে খুযাইমা রহ. হযরত সা’দ বিন আবী ওয়াক্কাস রা. থেকে এ বিষয়ক একটি হাদীস উল্লেখ করেছেন: كنا نضع اليدين قبل الركبتين فأمرنا بالركبتين قبل اليدين “আমরা হাঁটুর পূর্বে হাত রাখতাম। অতঃপর আমাদেরকে নির্দেশ দেয়া হলো হাতের পূর্বে হাঁটু রাখতে”। (সহীহ ইবনে খুযাইমা: ৬২৮) এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, সিজদায় যাওয়ার সময় আগে হাত রাখার হাদীসটি রহিত। অবশ্য সহীহ ইবনে খুযাইমার এ হাদীসটি সহীহ নয়। সিজদায় যাওয়ার সময় আগে হাত রাখার ব্যাপারে হযরত ওয়ায়েল বিন হুজর রা. থেকে বর্ণিত তিরমিযী-২৬৮ নং হাদীসটি মিশকাত শরীফের ৮৯৮ নাম্বারেও বর্ণিত হয়েছে। এরপর হযরত আবু হুরায়রা রা. অপর একটি হাদীসে এর বিপরীতে সিজদায় যাওয়ার সময় আগে হাত ও পরে হাটু রাখার আমল বর্ণনা করার পর মাসাবীহুছ্ছুন্নাহর লেখক ইমাম ইমাম খত্তাবী রহ.-এর বরাত দিয়ে বলেন যে, তিনি হাদীসটিকে রহিত বলেছেন। অর্থাৎ সিজদায় যাওয়ার সময় আগে হাত ও পরে হাটু রাখার আমল বহাল নয়; বরং রহিত।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান