শরহু মাআ’নিল আছার- ইমাম ত্বহাবী রহঃ

২. নামাযের অধ্যায়

হাদীস নং: ১৪১৭
রূকু ও ‍সিজ্দায় কি বলতে হয়?
১৪১৭। ফাহাদ ইব্‌ন সুলায়মান (রাহঃ).... হুযায়ফা (রাযিঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) নিজ রুকূতে “সুবহানা রাব্বিআল আযীম" তিনবার এবং সিজদাতে “সুবহান রাব্বিআল আ'লা" তিনবার পড়তেন।

ব্যাখ্যা
এটাও সেই কথার প্রমাণ বহন করছে, যা আমরা উল্লেখ করেছি যে, তিনি অবহিত করছেন যে, রুকূ ও সিজদাতে নির্দিষ্ট দু'আ পড়া বাঞ্ছনীয়। অপরাপর আলিমগণ বলেন, রুকূতে আল্লাহ্ তা'আলার ‘তা'যীম' মাহাত্ম্য-এর উপর কোন কিছুকে অতিরিক্ত করবে না এবং সিজদাতে দু'আ বেশী করে করবে। তাঁরা এ বিষয়ে আলী (রাযিঃ) ও ইবন আব্বাস (রাযিঃ)-এর হাদীস দুইটি দ্বারা প্রমাণ পেশ করেছেন, যা আমরা-অনুচ্ছেদের শুরুতে উল্লেখ করেছি।

এ বিষয়ে তাঁদের বিরুদ্ধে প্রমাণ হল : তাঁরা নবী (ﷺ) এর বক্তব্য : “রুকূতে আল্লাহর মাহাত্ম্য' বর্ণনা কর” এটাকে প্রথমোক্ত হাদীসসমূহে বর্ণনাকৃত তাঁর আমলের‌ জন্য 'নাসিখ' (রহিতকারী) সাব্যস্ত করেছেন। সুতরাং সম্ভাবনা থাকছে যে, তিনি রুকূতে মাহাত্ম্য বর্ণনা করার নির্দেশ তাঁর উপর فَسَبِّحْ بِاسْمِ رَبِّكَ الْعَظِيمِ আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পূর্বে প্রদান করেছিলেন এবং তাঁদেরকে সিজদাতে পছন্দনীয় দু'আতে সাধ্যমত চেষ্টা করার নির্দেশ তার উপর سَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الْأَعْلَى আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পূর্বে প্রদান করেছিলেন। যখন তাঁর উপর এ আয়াত অবতীর্ণ হয় তখন তিনি তাঁদেরকে সিজদাতে শুধু সেই বিষয়ের নির্দেশ দিয়েছিলেন, যা উকবা (রাযিঃ)-এর হাদীসে ব্যক্ত হয়েছে এবং এর উপর তারা অতিরিক্ত করতেন না। সুতরাং এটা তাঁর পূর্ববর্তী হুকুমের জন্য 'নাসিখ' (রহিতকারী) হিসাবে বিবেচিত হবে। যেমনিভাবে فَسَبِّحْ بِاسْمِ رَبِّكَ الْعَظِيمِ আয়াত অবতীর্ণ হওয়ায় তাঁর নির্দেশে পূর্ববর্তী হুকুমকে রহিত করে দিয়েছে।

কেউ যদি প্রশ্ন করে যে, সেই বিষয়টি (যা প্রথমোক্ত রিওয়ায়াতে উল্লেখ রয়েছে) নবী (ﷺ) -এর ওফাত নিকটবর্তী কালের। কারণ, ইবন আব্বাস (রাযিঃ)-এর হাদীসে এসেছে যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) (দরজার) পর্দা উন্মুক্ত করেছেন, তখন লোকেরা (সাহাবীগণ) আবু বাকর (রাযিঃ)-এর পিছনে কাতারবন্দী ছিলেন।

তাঁকে উত্তরে বলা হবে : এই হাদীসে কি একথা ব্যক্ত হয়েছে যে, ওটা সেই সালাত ছিল, যার পরে রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর ওফাত হয়ে গিয়েছে বা সেটা সেই অসুস্থতা ছিল, যাতে তিনি ইন্তিকাল করেছেন। হাদীসে এ সম্পর্কে কোন কিছু উল্লেখ নেই। হতে পারে এটা সেই সালাত ছিল, যার পরে তিনি ওফাত পেয়েছেন বা তা অন্য কোন সালাত ছিল, যার পরে তিনি সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন। যদি এটা সেই সালাত হয়, যার পরে তিনি ওফাত পেয়েছেন, তাহলে সম্ভবত সেই সালাতের পরে তাঁর ইন্তিকালের পূর্বে : سَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الْأَعْلَى আয়াত তাঁর উপর অবতীর্ণ হয়েছে। আর যদি এটা পূর্ববর্তী সালাত হয়, তাহলে যেমনটি আমরা উল্লেখ করেছি তা পরবর্তী আয়াত দ্বারা (তানবীহ নির্দিষ্ট) হওয়া অধিকতর উপযোগী।
আর এটাই হল রিওয়ায়াতসমূহের সঠিক মর্ম নির্ধারণের দিক থেকে এ বিষয়ের বর্ণনা ও বিশ্লেষণ।

সংশ্লিষ্ট বিষয়ের যুক্তিভিত্তিক প্রমাণ ও বিশ্লেষণ

বস্তুত আমরা লক্ষ্য করছি, সালাতের কতগুলো স্থানে আল্লাহর যিকির রয়েছে। তা থেকে কিছু হল, সালাতে প্রবেশ করার জন্য তাকবীর (আল্লাহু আকবার) বলা। অনুরূপভাবে রুকু-সিজদা ও বসা থেকে উঠার জন্য তাকবীর বলা হয়। এটা তাকবীর ('আল্লাহ্ আকবার' বলা) তাকবীর হিসাবে বিবেচিত। লোকেরা এর উপর অবহিত হয়েছে এবং তা শিখে নিয়েছে। সুতরাং তাদের জন্য এটা ছেড়ে অন্য বাক্য গ্রহণ করা সমীচীন নয়। অনুরূপভাবে বৈঠকে যে লোকেরা 'তাশাহহুদ' পড়ে, তারা এ সম্পর্কে জ্ঞাত হয়েছে এবং তা শিখে নিয়েছে। তাদের জন্য এস্থলে অন্য যিকর গ্রহণ করার অনুমতি নেই। কারণ, কোন ব্যক্তি যদি 'আল্লাহু আকবার'-এর স্থলে 'আল্লাহু আযামু' বা 'আল্লাহু আজাল্লু' বলে তাহলে সে এ ব্যাপারে গোনাহগার প্রমাণিত হবে।

অনুরূপভাবে কোন ব্যক্তি যদি রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) ও সাহাবীগণ থেকে বর্ণিত 'তাশাহহুদ' ব্যতীত হাদীস বিরোধী অন্য শব্দমালা পড়ে, তাহলে সে এ বিষয়ে গোনাহগার বিবেচিত হবে। শেষ তাশাহহুদ থেকে অবসর হওয়ার পর তার জন্য পছন্দনীয় দু'আ পড়া জায়িয আছে। ইবন মাসউদ (রাযিঃ) কর্তৃক নবী (ﷺ) থেকে বর্ণিত হাদীস মুতাবিক তাকে বলা হবে : “তারপর যা ইচ্ছা সে পড়বে।” সুতরাং প্রত্যেক যিকর-এর মধ্যে নির্দিষ্ট শব্দের অনুসরণ রয়েছে। এর থেকে নিজের পছন্দনীয় বাক্যের দিকে অতিক্রম করতে পারবে না, (শুধু এ বিষয়ে যা অবহিত হওয়া গিয়েছে, তা ব্যতীত)। যদিও তা তার সমর্থক হউক না কেন।
অতএব যখন এ বিষয়ে ঐকমত রয়েছে যে, রুকু ও সিজদাতে যিকর রয়েছে, কিন্তু এ বিষয়ে ঐকমত্য নেই যে, তার জন্য তাতে ইচ্ছাকৃত যে কোন যিকর জায়েজ কি-না। তাই যুক্তির দাবি হল রাব্বানা ওয়া লাকাল হামদসহ অপরাপর যিকর-এর অনুরূপ হবে। ওটা নির্দিষ্ট বাক্য হবে । কারো জন্য যেমনিভাবে সালাতের অপরাপর যিকরসমূহের অন্য বাক্যের দিকে অতিক্রম করা জায়িয নেই, তেমনিভাবে এখানেও অন্য বাক্যের দিকে অতিক্রম করা জায়িয নেই। তার জন্য অন্য বাক্যের দিকে অতিক্রম করা একমাত্র সেখানেই জায়িয হবে যেখানে রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) অনুমতি প্রদান করেছেন।
এতে সেই সমস্ত আলিমের অভিমত সাব্যস্ত হলো, যারা তাতে নির্দিষ্ট যিকর নির্ধারণ করেছেন এবং যারা উকবা (রাযিঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীসের মর্ম গ্রহণ করেছেন, যাতে রুকু ও সিজদার বাক্যগুলো নির্দিষ্ট করে দেয়ার বিবরণ রয়েছে। আর এটাই হল, ইমাম আবু হানীফা (রাহঃ), ইমাম আবু ইউসুফ (রাহঃ) ও ইমাম মুহাম্মাদ (রাহঃ)-এর অভিমত।

যদি কোন প্রশ্নকারী প্রশ্ন উত্থাপন করে যে, তাশাহহুদ'-এর পরে সালাত আদায়কারীর জন্য নিজের পছন্দনীয় বাক্য বলার অনুমতি কোথায় দেয়া হয়েছে ?

তাকে (উত্তরে) বলা হবে: ইবন মাসউদ (রাযিঃ)-এর হাদীসে এর উল্লেখ রয়েছে :
1417 - حَدَّثَنَا فَهْدُ بْنُ سُلَيْمَانَ، قَالَ: ثنا سُحَيْمٌ الْحَرَّانِيُّ، قَالَ: ثنا حَفْصُ بْنُ غِيَاثٍ، عَنْ مُجَالِدٍ، عَنِ الشَّعْبِيِّ، عَنْ صِلَةَ، عَنْ حُذَيْفَةَ، قَالَ: " كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ فِي رُكُوعِهِ: «سُبْحَانَ رَبِّي الْعَظِيمِ» ثَلَاثًا وَفِي سُجُودِهِ: «سُبْحَانَ رَبِّي الْأَعْلَى ثَلَاثًا» فَهَذَا أَيْضًا قَدْ دَلَّ عَلَى مَا ذَكَرْنَا مِنْ وُقُوفِهِ عَلَى دُعَاءٍ بِعَيْنِهِ فِي الرُّكُوعِ وَالسُّجُودِ. وَقَالَ آخَرُونَ: أَمَّا الرُّكُوعُ , فَلَا يُزَادُ فِيهِ عَلَى تَعْظِيمِ الرَّبِّ عَزَّ وَجَلَّ , وَأَمَّا السُّجُودُ , فَيَجْتَهِدُ فِيهِ فِي الدُّعَاءِ. وَاحْتَجُّوا فِي ذَلِكَ بِحَدِيثَيْ عَلِيٍّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ وَابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا اللَّذَيْنِ ذَكَرْنَاهُمَا فِي الْفَصْلِ الْأَوَّلِ. فَكَانَ مِنَ الْحُجَّةِ عَلَيْهِمْ فِي ذَلِكَ أَنَّهُمْ قَدْ جَعَلُوا قَوْلَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ «أَمَّا الرُّكُوعُ فَعَظِّمُوا فِيهِ الرَّبَّ» نَاسِخًا لِمَا تَقَدَّمَ مِنْ أَفْعَالِهِ قَبْلَ ذَلِكَ فِي الْأَحَادِيثِ الْأُوَلِ. فَيُحْتَمَلُ أَنْ يَكُونَ أَمَرَهُمْ بِالتَّعْظِيمِ فِي الرُّكُوعِ قَبْلَ أَنْ يَنْزِلَ عَلَيْهِ {فَسَبِّحْ بِاسْمِ رَبِّكَ الْعَظِيمِ} [الواقعة: 74] وَيُجْهِدُهُمْ بِالدُّعَاءِ فِي السُّجُودِ بِمَا أَحَبُّوا قَبْلَ أَنْ يَنْزِلَ عَلَيْهِ {سَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الْأَعْلَى} [الأعلى: 1] فَلَمَّا نَزَلَ ذَلِكَ عَلَيْهِ أَمَرَهُمْ بِأَنْ يَنْتَهُوا إِلَيْهِ فِي سُجُودِهِمْ [ص:236] عَلَى مَا فِي حَدِيثِ عُقْبَةَ , وَلَا يَزِيدُونَ عَلَيْهِ فَصَارَ ذَلِكَ نَاسِخًا لِمَا قَدْ تَقَدَّمَ مِنْهُ قَبْلَ ذَلِكَ , كَمَا كَانَ الَّذِي أَمَرَهُمْ بِهِ فِي الرُّكُوعِ عِنْدَ نُزُولِ {فَسَبِّحْ بِاسْمِ رَبِّكَ الْعَظِيمِ} [الواقعة: 74] نَاسِخًا لِمَا قَدْ كَانَ مِنْهُ قَبْلَ ذَلِكَ فَإِنْ قَالَ قَائِلٌ: إِنَّمَا كَانَ ذَلِكَ مِنَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِقُرْبِ وَفَاتِهِ , لِأَنَّ فِي حَدِيثِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا كَشَفَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ السِّتَارَةَ وَالنَّاسُ صُفُوفٌ خَلْفَ أَبِي بَكْرٍ. قِيلَ لَهُ: فَهَلْ فِي هَذَا الْحَدِيثِ أَنَّ تِلْكَ الصَّلَاةُ الَّتِي تُوُفِّيَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِعَقِبِهَا أَوْ أَنَّ تِلْكَ الْمِرْضَةَ , هِيَ مِرْضَتُهُ الَّتِي تُوُفِّيَ فِيهَا؟ لَيْسَ فِي الْحَدِيثِ مِنْ هَذَا شَيْءٌ. وَقَدْ يَجُوزُ أَنْ يَكُونَ هِيَ الصَّلَاةَ الَّتِي تُوُفِّيَ بِعَقِبِهَا وَيَجُوزُ أَنْ تَكُونَ صَلَاةً غَيْرَهَا قَدْ صَحَّ بَعْدَهَا. فَإِنْ كَانَتْ تِلْكَ هِيَ الصَّلَاةَ الَّتِي تُوُفِّيَ بَعْدَهَا , فَقَدْ يَجُوزُ أَنْ يَكُونَ {سَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الْأَعْلَى} [الأعلى: 1] أُنْزِلَتْ عَلَيْهِ بَعْدَ ذَلِكَ قَبْلَ وَفَاتِهِ. وَإِنْ كَانَتْ تِلْكَ الصَّلَاةُ مُتَقَدِّمَةً لِذَلِكَ , فَهِيَ أَحْرَى أَنْ يَجُوزَ أَنْ يَكُونَ بَعْدَهَا مَا ذَكَرْنَا. فَهَذَا وَجْهُ هَذَا الْبَابِ مِنْ طَرِيقِ تَصْحِيحِ مَعَانِي الْآثَارِ. وَأَمَّا وَجْهُ ذَلِكَ مِنْ طَرِيقِ النَّظَرِ , فَإِنَّا قَدْ رَأَيْنَا مَوَاضِعَ فِي الصَّلَاةِ فِيهَا ذِكْرٌ. فَمِنْ ذَلِكَ التَّكْبِيرُ لِلدُّخُولِ فِي الصَّلَاةِ , وَمِنْ ذَلِكَ التَّكْبِيرُ لِلرُّكُوعِ وَالسُّجُودِ وَالْقِيَامِ مِنَ الْقُعُودِ. فَكَانَ ذَلِكَ التَّكْبِيرُ تَكْبِيرًا قَدْ وُقِفَ الْعِبَادُ عَلَيْهِ وَعُلِّمُوهُ , وَلَمْ يُجْعَلْ لَهُمْ أَنْ يُجَاوِزُوهُ إِلَى غَيْرِهِ. وَمِنْ ذَلِكَ مَا يَشْهَدُونَ بِهِ فِي الْقُعُودِ , فَقَدْ عُلِّمُوهُ , وَوُقِفُوا عَلَيْهِ , وَلَمْ يُجْعَلْ لَهُمْ أَنْ يَأْتُوا مَكَانَهُ بِذِكْرٍ غَيْرِهِ لِأَنَّ رَجُلًا لَوْ قَالَ: مَكَانَ قَوْلِهِ اللهُ أَكْبَرُ اللهُ أَعْظَمُ أَوِ اللهُ أَجَلُّ كَانَ فِي ذَلِكَ مُسِيئًا. وَلَوْ تَشَهَّدَ رَجُلٌ بِلَفْظٍ يُخَالِفُ لَفْظَ التَّشَهُّدِ الَّذِي جَاءَتْ بِهِ الْآثَارُ عَنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَصْحَابِهِ , كَانَ فِي ذَلِكَ مُسِيئًا , وَكَانَ بَعْدَ فَرَاغِهِ مِنَ التَّشَهُّدِ الْأَخِيرِ قَدْ أُبِيحَ لَهُ مِنَ الدُّعَاءِ مَا أَحَبَّ فَقِيلَ لَهُ فِيمَا رَوَى ابْنُ مَسْعُودٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ «ثُمَّ لِيَخْتَرْ مِنَ الدُّعَاءِ مَا أَحَبَّ» فَكَانَ قَدْ وُقِفَ فِي كُلِّ ذِكْرٍ عَلَى ذِكْرٍ بِعَيْنِهِ وَلَمْ يُجْعَلْ مُجَاوَزَتُهُ إِلَى مَا أَحَبَّ إِلَّا مَا قَدْ وُقِفَ عَلَيْهِ مِنْ ذَلِكَ , وَإِنِ اسْتَوَى ذَلِكَ فِي الْمَعْنَى فَلَمَّا كَانَ فِي الرُّكُوعِ وَالسُّجُودِ قَدْ أُجْمِعَ عَلَى أَنَّ فِيهِمَا ذِكْرًا , وَلَمْ يُجْمَعْ عَلَى أَنَّهُ أُبِيحَ لَهُ فِيهِمَا كُلُّ الذِّكْرِ , كَانَ النَّظَرُ عَلَى ذَلِكَ أَنْ يَكُونَ ذَلِكَ الذِّكْرُ كَسَائِرِ الذِّكْرِ فِي صَلَاتِهِ , مِنْ تَكْبِيرِهِ وَتَشَهُّدِهِ , وَقَوْلِهِ: «سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ» وَقَوْلِ الْمَأْمُومِ «رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ» فَيَكُونُ ذَلِكَ قَوْلًا خَاصًّا لَا يَنْبَغِي لِأَحَدٍ مُجَاوَزَتُهُ إِلَى غَيْرِهِ , كَمَا لَا يَنْبَغِي لَهُ فِي سَائِرِ الذِّكْرِ الَّذِي فِي الصَّلَاةِ وَلَا يَكُونُ لَهُ مُجَاوَزَتُهُ ذَلِكَ إِلَى غَيْرِهِ إِلَّا بِتَوْقِيفٍ مِنَ الرَّسُولِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى ذَلِكَ. فَثَبَتَ بِذَلِكَ قَوْلُ الَّذِينَ وَقَّتُوا فِي ذَلِكَ ذِكْرًا خَاصًّا وَهُمُ الَّذِينَ ذَهَبُوا إِلَى حَدِيثِ عُقْبَةَ , عَلَى مَا فُصِّلَ فِيهِ مِنَ الْقَوْلِ فِي الرُّكُوعِ وَالسُّجُودِ. وَهَذَا قَوْلُ أَبِي حَنِيفَةَ , وَأَبِي يُوسُفَ , وَمُحَمَّدٍ , رَحِمَهُمُ اللهُ تَعَالَى فَإِنْ قَالَ قَائِلٌ: وَأَيْنَ جُعِلَ لِلْمُصَلِّي أَنْ يَقُولَ بَعْدَ التَّشَهُّدِ مَا أَحَبَّ؟ . قِيلَ لَهُ فِي حَدِيثِ ابْنِ مَسْعُودٍ

হাদীসের ব্যাখ্যা:

হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, রুকুর তাসবীহ হলো سُبْحَانَ رَبِّيَ العَظِيمِ এবং সিজদার তাসবীহ হলো سُبْحَانَ رَبِّيَ الْأَعْلَى বলা। এ তাসবীহ ছাড়াও রসূলুল্লাহ স. মাঝে-মধ্যে বিভিন্ন তাসবীহ পড়েছেন মর্মে হাদীসে প্রমাণ পাওয়া যায়। তবে তাঁর সার্বক্ষণিক আমল ছিলো এটাই। অতএব, রসূলুল্লাহ স. এবং সাহাবায়ে কিরামের আমলের অনুসরণে আমরা এটাই আঁকড়ে ধরবো।

أَخْبَرَنَا مُحَمَّدُ بْنُ رَافِعٍ قَالَ حَدَّثَنَا عَبْدُ الله بْنُ إِبْرَاهِيمَ بْنِ عُمَرَ بْنِ كَيْسَانَ قَالَ حَدَّثَنِي أَبِي عَنْ وَهْبِ بْنِ مَانُوسٍ قَالَ سَمِعْتُ سَعِيدَ بْنَ جُبَيْرٍ قَالَ سَمِعْتُ أَنَسَ بْنَ مَالِكٍ يَقُولُ مَا رَأَيْتُ أَحَدًا أَشْبَهَ صَلاَةً بِصَلاَةِ رَسُولِ الله صلى الله عليه وسلم مِنْ هَذَا الْفَتَى يَعْنِي عُمَرَ بْنَ عَبْدِ الْعَزِيزِ فَحَزَرْنَا فِي رُكُوعِهِ عَشْرَ تَسْبِيحَاتٍ وَفِي سُجُودِهِ عَشْرَ تَسْبِيحَاتٍ. ‏(رواه النسائى فى عَدَدِ التَّسْبِيحِ فِي السُّجُودِ-۱/۱۲٧)

হযরত আনাস রা. বলেন, আমি এই যুবক অর্থাৎ উমার বিন আব্দুল আজীজ-এর চেয়ে রসূলুল্লাহ স.-এর নামাযের সাথে অধিক সাদৃশ্যপূর্ণ নামায আদায়কারী আর কাউকে দেখিনি। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর আমরা তাঁর রুকুতে এবং সিজদাতে তাসবীহ পাঠের পরিমাণ দশবার হবে বলে অনুমান করেছি। (নাসাঈ: ১১৩৮)

এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, রসূলুল্লাহ স. রুকু-সিজদায় দশবার তাসবীহ পড়তেন। মুসল্লীদেরকে এ আমলের প্রতি উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করতে হবে। তারা দীর্ঘ নামাযে আগ্রহী হলে এবং তাদের মধ্যে অসুস্থ, দুর্বল বা ব্যসত্ম মানুষ না থাকলে ইমাম এ আমল করতে পারেন। কিন্তু মুক্তাদীদের জন্য কষ্টকর হলে রুকু-সিজদার তাসবীহ আরো কম পড়বে। হযরত আব্দুল্লাহ বিন মুবারক এবং ইসহাক বিন ইবরাহীম (রাহওয়াইহ) ইমামের জন্য পাঁচবার তাসবীহ পাঠ করাকে মুস্তাহাব বলেছেন যেন মুক্তাদীদের তিনবারের কম না হয়। (তিরমিযী-২৬১)

حَدَّثَنَا فَهْدُ بْنُ سُلَيْمَانَ، قَالَ: ثنا سُحَيْمٌ الْحَرَّانِيُّ، قَالَ: ثنا حَفْصُ بْنُ غِيَاثٍ، عَنْ مُجَالِدٍ، عَنِ الشَّعْبِيِّ، عَنْ صِلَةَ، عَنْ حُذَيْفَةَ، قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ فِي رُكُوعِهِ: سُبْحَانَ رَبِّي الْعَظِيمِ ثَلَاثًا وَفِي سُجُودِهِ: سُبْحَانَ رَبِّي الْأَعْلَى ثَلَاثًا.

হযরত হুজাইফা রা. বলেন, রসূলুল্লাহ স. রুকুতে তিনবার سُبْحَانَ رَبِّي الْعَظِيمِ এবং সিজদায় তিনবার سُبْحَانَ رَبِّي الْأَعْلَى বলতেন। (ত্বহাবী শরীফ: খ--১, পৃষ্ঠা-১৬৯, হাদীস নং-১৪১৭)

এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, রসূল স. রুকু-সিজদায় তিনবার তাসবীহ পাঠ করতেন। সুতরাং সকল মুসল্লীকেই সতর্ক থাকতে হবে যে, কারো রুকু-সিজদার তাসবীহ যেন তিনবারের কম না হয়। এটাই হানাফী মাযহাবের মত। (শামী: ১/৪৯৪)

এ ব্যাপারে আল্লামা ইবনে আব্দিল বার রহ. বলেন,

وَقَالَ سُفْيَانُ الثَّوْرِيُّ وَأَبو حَنِيفَةَ وَالشَّافِعِيُّ وَالْأَوْزَاعِيُّ وَأَبو ثَوْرٍ وَأَحْمَدُ بْنُ حَنْبَلٍ وَإِسْحَاقُ يَقُولُ الْمصَلِّي فِي رُكُوعِهِ سبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيمِ ثَلَاثًا وَفِي السُّجُودِ سُبْحَانَ رَبِّيَ الْأَعْلَى ثَلَاثًا وَهُوَ أَقَلُّ التَّمَامِ وَالْكَمَالِ فِي ذَلِكَ وَقَالَ الثَّوْرِيُّ أَحَبُّ إِلَيَّ أَنْ يَقُولَهَا الْإِمَامُ خَمْسًا فِي الرُّكُوعِ وَالسُّجُودِ حَتَّى يُدْرِكَ الَّذِي خَلْفَهُ ثَلَاثَ تَسْبِيحَاتٍ وَحُجَّتُهُمْ حَدِيثُ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ

হযরত সুফিয়ান ছাওরী, ইমাম আবু হানিফা, শাফেঈ, আওঝাঈ, আবু ছাওর, আহমাদ বিন হাম্বল এবং ইসহাক বিন রাহওয়াইহ রহ. বলেন, মুসল্লী রুকুতে তিনবার سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيمِ এবং সিজদায় তিনবার سُبْحَانَ رَبِّيَ الْأَعْلَى পড়বে। আর এটা হলো পূর্ণতার সর্বনি্ম পরিমাণ। হযরত সুফিয়ান ছাওরী রহ. বলেন, আমার নিকট পছন্দনীয় এই যে, ইমাম সাহেব পাঁচবার তাসবীহ পাঠ করবে যেন মুক্তাদীগণ তিনবার পাঠ করতে পারে। এ সকল ইমামগণের দলীল হলো উকবা বিন আমের রা.-এর হাদীস। (আল ইসিত্মযকার: ১/৪৩২)
.
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান