শরহু মাআ’নিল আছার- ইমাম ত্বহাবী রহঃ

২. নামাযের অধ্যায়

হাদীস নং: ১৪০৮
আন্তর্জাতিক নং: ১৪১০
রূকু ও ‍সিজ্দায় কি বলতে হয়?
১৪০৮-১৪১০। রবী'উল মুয়াযযিন (রাহঃ).... আয়েশা (রাযিঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, এক রাতে আমি নবী (ﷺ)কে খুঁজে পাইনি। (আমার বিছানায় পাইনি), ভাবলাম হয়ত তিনি তাঁর দাসীর কাছে চলে গেছেন। আমি তাঁকে হাত দ্বারা খুঁজলাম। তখন আমার হাত তাঁর পায়ের অগ্রভাগে গিয়ে পড়ল; তখন তিনি সিজ্দা করছিলেন আর বলছিলেন : اللهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِرِضَاكَ مِنْ سَخَطِكَ , وَأَعُوذُ بِعَفْوِكَ مِنْ عِقَابِكَ , وَأَعُوذُ بِكَ مِنْكَ لَا أُحْصِي ثَنَاءً عَلَيْكَ أَنْتَ كَمَا أَثْنَيْتَ عَلَى نَفْسِكَ

“হে আল্লাহ্! আমি তোমার অসন্তুষ্টি থেকে সন্তুষ্টির আশ্রয় চাচ্ছি; তোমার শাস্তি থেকে পানাহ , ক্ষমা ও অনুগ্রহের আশ্রয় চাচ্ছি; তোমার (ক্রোধ) থেকে তোমাররই আশ্রয়ে আসছি। আমি তোমার প্রশংসা করতে সক্ষম নই, তোমার সে শান, যা তুমি নিজেই বর্ণনা করেছ"।

ইউনুস ইবন আব্দিল আ'লা (রাহঃ)...... মুহাম্মাদ ইবন ইবরাহীম ইবন হারিস আততায়মী (রাহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, আয়েশা (রাযিঃ) বলেছেন। তারপর তিনি অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।

হুসাইন ইবন নসর (রাহঃ).... উরওয়া (রাহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, আয়েশা (রাযিঃ) বলেছেন। তারপর তিনি অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তবে তিনি : لَا أُحْصِي ثَنَاءً عَلَيْكَ বাক্য উল্লেখ করেন নি। অবশ্য তিনি এটা অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন : أُثْنِي عَلَيْكَ لَا أَبْلُغُ كَمَا فِيكَ
"আমি তোমার প্রশংসা করছি কিন্তু তোমার পূর্ণতা পর্যন্ত পৌঁছতে পারি না”।
1408 - حَدَّثَنَا رَبِيعٌ الْمُؤَذِّنُ، قَالَ: ثنا أَسَدٌ، قَالَ: ثنا الْفَرَجُ بْنُ فَضَالَةَ، عَنْ يَحْيَى بْنِ سَعِيدٍ، عَنْ عَمْرَةَ، عَنْ عَائِشَةَ، رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ: فَقَدْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ذَاتَ لَيْلَةٍ , فَظَنَنْتُ أَنَّهُ أَتَى جَارِيَتَهُ , فَالْتَمَسْتُهُ بِيَدِي فَوَقَعَتْ يَدِي عَلَى صُدُورِ قَدَمَيْهِ , وَهُوَ سَاجِدٌ يَقُولُ: «اللهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِرِضَاكَ مِنْ سَخَطِكَ , وَأَعُوذُ بِعَفْوِكَ مِنْ عِقَابِكَ , وَأَعُوذُ بِكَ مِنْكَ لَا أُحْصِي ثَنَاءً عَلَيْكَ أَنْتَ كَمَا أَثْنَيْتَ عَلَى نَفْسِكَ»

1409 - حَدَّثَنَا يُونُسُ بْنُ عَبْدِ الْأَعْلَى، قَالَ: أَخْبَرَنَا ابْنُ وَهْبٍ، أَنَّ مَالِكًا، حَدَّثَهُ , عَنْ يَحْيَى بْنِ سَعِيدٍ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ إِبْرَاهِيمَ بْنِ الْحَارِثِ التَّيْمِيِّ، أَنَّ عَائِشَةَ، رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ , ثُمَّ ذَكَرَ مِثْلَهُ

1410 - حَدَّثَنَا حُسَيْنُ بْنُ نَصْرٍ، قَالَ: ثنا ابْنُ أَبِي مَرْيَمَ، قَالَ: أَخْبَرَنَا يَحْيَى بْنُ أَيُّوبَ، قَالَ: حَدَّثَنِي عُمَارَةُ بْنُ غَزِيَّةَ، قَالَ: سَمِعْتُ أَبَا النَّضْرِ، يَقُولُ: سَمِعْتُ عُرْوَةَ، يَقُولُ: قَالَتْ عَائِشَةُ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا , فَذَكَرَ مِثْلَهُ إِلَّا أَنَّهُ لَمْ يَذْكُرْ قَوْلَهُ «لَا أُحْصِي ثَنَاءً عَلَيْكَ وَزَادَ» أُثْنِي عَلَيْكَ لَا أَبْلُغُ كَمَا فِيكَ "

হাদীসের ব্যাখ্যা:

হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, রুকুর তাসবীহ হলো سُبْحَانَ رَبِّيَ العَظِيمِ এবং সিজদার তাসবীহ হলো سُبْحَانَ رَبِّيَ الْأَعْلَى বলা। এ তাসবীহ ছাড়াও রসূলুল্লাহ স. মাঝে-মধ্যে বিভিন্ন তাসবীহ পড়েছেন মর্মে হাদীসে প্রমাণ পাওয়া যায়, যেমন উপরের হাদীসে বর্নিত হয়েছে। তবে তাঁর সার্বক্ষণিক আমল ছিলো এটাই। অতএব, রসূলুল্লাহ স. এবং সাহাবায়ে কিরামের আমলের অনুসরণে আমরা এটাই আঁকড়ে ধরবো।

أَخْبَرَنَا مُحَمَّدُ بْنُ رَافِعٍ قَالَ حَدَّثَنَا عَبْدُ الله بْنُ إِبْرَاهِيمَ بْنِ عُمَرَ بْنِ كَيْسَانَ قَالَ حَدَّثَنِي أَبِي عَنْ وَهْبِ بْنِ مَانُوسٍ قَالَ سَمِعْتُ سَعِيدَ بْنَ جُبَيْرٍ قَالَ سَمِعْتُ أَنَسَ بْنَ مَالِكٍ يَقُولُ مَا رَأَيْتُ أَحَدًا أَشْبَهَ صَلاَةً بِصَلاَةِ رَسُولِ الله صلى الله عليه وسلم مِنْ هَذَا الْفَتَى يَعْنِي عُمَرَ بْنَ عَبْدِ الْعَزِيزِ فَحَزَرْنَا فِي رُكُوعِهِ عَشْرَ تَسْبِيحَاتٍ وَفِي سُجُودِهِ عَشْرَ تَسْبِيحَاتٍ. ‏(رواه النسائى فى عَدَدِ التَّسْبِيحِ فِي السُّجُودِ-۱/۱۲٧)

হযরত আনাস রা. বলেন, আমি এই যুবক অর্থাৎ উমার বিন আব্দুল আজীজ-এর চেয়ে রসূলুল্লাহ স.-এর নামাযের সাথে অধিক সাদৃশ্যপূর্ণ নামায আদায়কারী আর কাউকে দেখিনি। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর আমরা তাঁর রুকুতে এবং সিজদাতে তাসবীহ পাঠের পরিমাণ দশবার হবে বলে অনুমান করেছি। (নাসাঈ: ১১৩৮)

এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, রসূলুল্লাহ স. রুকু-সিজদায় দশবার তাসবীহ পড়তেন। মুসল্লীদেরকে এ আমলের প্রতি উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করতে হবে। তারা দীর্ঘ নামাযে আগ্রহী হলে এবং তাদের মধ্যে অসুস্থ, দুর্বল বা ব্যসত্ম মানুষ না থাকলে ইমাম এ আমল করতে পারেন। কিন্তু মুক্তাদীদের জন্য কষ্টকর হলে রুকু-সিজদার তাসবীহ আরো কম পড়বে। হযরত আব্দুল্লাহ বিন মুবারক এবং ইসহাক বিন ইবরাহীম (রাহওয়াইহ) ইমামের জন্য পাঁচবার তাসবীহ পাঠ করাকে মুস্তাহাব বলেছেন যেন মুক্তাদীদের তিনবারের কম না হয়। (তিরমিযী-২৬১)
حَدَّثَنَا فَهْدُ بْنُ سُلَيْمَانَ، قَالَ: ثنا سُحَيْمٌ الْحَرَّانِيُّ، قَالَ: ثنا حَفْصُ بْنُ غِيَاثٍ، عَنْ مُجَالِدٍ، عَنِ الشَّعْبِيِّ، عَنْ صِلَةَ، عَنْ حُذَيْفَةَ، قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ فِي رُكُوعِهِ: سُبْحَانَ رَبِّي الْعَظِيمِ ثَلَاثًا وَفِي سُجُودِهِ: سُبْحَانَ رَبِّي الْأَعْلَى ثَلَاثًا.

হযরত হুজাইফা রা. বলেন, রসূলুল্লাহ স. রুকুতে তিনবার سُبْحَانَ رَبِّي الْعَظِيمِ এবং সিজদায় তিনবার سُبْحَانَ رَبِّي الْأَعْلَى বলতেন। (ত্বহাবী শরীফ: খ--১, পৃষ্ঠা-১৬৯, হাদীস নং-১৪১৭)

এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, রসূল স. রুকু-সিজদায় তিনবার তাসবীহ পাঠ করতেন। সুতরাং সকল মুসল্লীকেই সতর্ক থাকতে হবে যে, কারো রুকু-সিজদার তাসবীহ যেন তিনবারের কম না হয়। এটাই হানাফী মাযহাবের মত। (শামী: ১/৪৯৪)

এ ব্যাপারে আল্লামা ইবনে আব্দিল বার রহ. বলেন,
وَقَالَ سُفْيَانُ الثَّوْرِيُّ وَأَبو حَنِيفَةَ وَالشَّافِعِيُّ وَالْأَوْزَاعِيُّ وَأَبو ثَوْرٍ وَأَحْمَدُ بْنُ حَنْبَلٍ وَإِسْحَاقُ يَقُولُ الْمصَلِّي فِي رُكُوعِهِ سبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيمِ ثَلَاثًا وَفِي السُّجُودِ سُبْحَانَ رَبِّيَ الْأَعْلَى ثَلَاثًا وَهُوَ أَقَلُّ التَّمَامِ وَالْكَمَالِ فِي ذَلِكَ وَقَالَ الثَّوْرِيُّ أَحَبُّ إِلَيَّ أَنْ يَقُولَهَا الْإِمَامُ خَمْسًا فِي الرُّكُوعِ وَالسُّجُودِ حَتَّى يُدْرِكَ الَّذِي خَلْفَهُ ثَلَاثَ تَسْبِيحَاتٍ وَحُجَّتُهُمْ حَدِيثُ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ
হযরত সুফিয়ান ছাওরী, ইমাম আবু হানিফা, শাফেঈ, আওঝাঈ, আবু ছাওর, আহমাদ বিন হাম্বল এবং ইসহাক বিন রাহওয়াইহ রহ. বলেন, মুসল্লী রুকুতে তিনবার سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيمِ এবং সিজদায় তিনবার سُبْحَانَ رَبِّيَ الْأَعْلَى পড়বে। আর এটা হলো পূর্ণতার সর্বনি্ম পরিমাণ। হযরত সুফিয়ান ছাওরী রহ. বলেন, আমার নিকট পছন্দনীয় এই যে, ইমাম সাহেব পাঁচবার তাসবীহ পাঠ করবে যেন মুক্তাদীগণ তিনবার পাঠ করতে পারে। এ সকল ইমামগণের দলীল হলো উকবা বিন আমের রা.-এর হাদীস। (আল ইসিত্মযকার: ১/৪৩২)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
ত্বহাবী শরীফ - হাদীস নং ১৪০৮ | মুসলিম বাংলা