শরহু মাআ’নিল আছার- ইমাম ত্বহাবী রহঃ

২. নামাযের অধ্যায়

হাদীস নং: ৮৮১
আযান শুনে যা বলা মুস্তহাব।
৭৮১। মুহাম্মাদ ইবন খুযায়মা (রাহঃ)..... মুহাম্মাদ ইবন আমর লায়সী (রাহঃ) তাঁর পিতা-পিতামহ থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, একবার আমরা মু'আবিয়া (রাযিঃ)-এর নিকট ছিলাম এবং মুআনি আযান দিল। মু'আবিয়া (রাযিঃ) বললেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ কে বলতে শুনেছি: “যখন তোমরা মুয়াযযিনকে (আযান দিতে) শুনবে তখন তার বাক্যের অনুরূপ, অথবা বলেছেন, যেরূপ সে বলবে তোমরাও তা বলবে"।

ইমাম তাহাবীর অভিমত

ইমাম আবু জা'ফর তাহাবী (রাহঃ) বলেনঃ একদল আলিম এই সমস্ত হাদীসের মর্ম গ্রহণ করেছেন এবং
তাঁরা বলেছেন আযান শ্রবণকারীর জন্য উচিত সেও অনুরূপ বলবে, যেভাবে মুয়াযযিন বলে, যতক্ষণ না আযান শেষ করে।

পক্ষান্তরে এ বিষয়ে অপরাপর আলিমগণ তাদের বিরোধিতা করে বলেছেন, তার জন্য حَيَّ عَلَى الصَّلَاةِ - حَيَّ عَلَى الْفَلَاحِ বলার কোন অর্থ নেই। যেহেতু মুয়াযযিন তা এজন্য বলে যে, সে ওই (বাকা) দ্বারা লোকদেরকে সালাত এবং সফলতার দিকে আহবান করে। এবং শ্রবণকারী তো এই বাকাগুলো লোকদেরকে আহবান করার নিমিত্ত বলে না, বরং সে যিকর হিসাবে তা বলে, আর এটা যিকরের শব্দের অন্তর্ভুক্ত নয়। সুতরাং তার জন্য এর স্থলে সেই সমস্ত শব্দাবলী নির্ধারণ করা শ্রেয়, যা নবী করীম (ﷺ) থেকে অপরাপর হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। এবং তা হচ্ছে: لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللهِ

এ বিষয়ে তাদের দলীল হল, সম্ভবত তাঁর উক্তি, “মুয়াযযিনের অনুরূপ তোমরা বল, যতক্ষণ না সে চুপ হয়ে যায়”-এর মর্ম হচ্ছে, তার অনুরূপ বল, যা সে আযানের শুরুতে তাকবীর الله اكبر এবং শাহাদত أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ বলেছে। অবশেষে সে চুপ হয়ে যায়। তার অনুরূপ বলার দ্বারা তাকবীর এবং শাহাদত-ই বুঝানো হয়েছে। আবু হুরায়রা (রাযিঃ)-এর হাদীসে এ উদ্দেশ্যের কথাই স্পষ্টভাবে বিবৃত হয়েছেঃ
881 - حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ خُزَيْمَةَ، قَالَ: ثنا مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ اللهِ الْأَنْصَارِيُّ، قَالَ: حَدَّثَنِي مُحَمَّدُ بْنُ عَمْرٍو اللَّيْثِيُّ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ جَدِّهِ، قَالَ: كُنَّا عِنْدَ مُعَاوِيَةَ فَأَذَّنَ الْمُؤَذِّنُ فَقَالَ مُعَاوِيَةُ سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «إِذَا سَمِعْتُمُ الْمُؤَذِّنَ يُؤَذِّنُ فَقُولُوا مِثْلَ مَقَالَتِهِ أَوْ كَمَا قَالَ» قَالَ أَبُو جَعْفَرٍ: فَذَهَبَ قَوْمٌ إِلَى هَذِهِ الْآثَارِ فَقَالُوا: يَنْبَغِي لِمَنْ سَمِعَ الْأَذَانَ أَنْ يَقُولَ كَمَا يَقُولُ الْمُؤَذِّنُ , حَتَّى يَفْرُغَ مِنْ أَذَانِهِ. وَخَالَفَهُمْ فِي ذَلِكَ آخَرُونَ فَقَالُوا لَيْسَ لِقَوْلِهِ حَيَّ عَلَى الصَّلَاةِ , حَيَّ عَلَى الْفَلَاحِ مَعْنًى , لِأَنَّ ذَلِكَ إِنَّمَا يَقُولُ الْمُؤَذِّنُ لِيَدْعُوَ بِهِ النَّاسَ إِلَى الصَّلَاةِ وَإِلَى الْفَلَاحِ. وَالسَّامِعُ لَا يَقُولُ مَا يَقُولُ مِنْ ذَلِكَ عَلَى جِهَةِ دُعَاءِ النَّاسِ إِلَى ذَلِكَ إِنَّمَا يَقُولُهُ عَلَى جِهَةِ الذِّكْرِ , وَلَيْسَ هَذَا مِنَ الذِّكْرِ. فَيَنْبَغِي لَهُ أَنْ يَجْعَلَ مَكَانَ ذَلِكَ , مَا قَدْ رُوِيَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي الْآثَارِ الْأُخَرِ وَهُوَ لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللهِ. فَكَانَ مِنَ الْحُجَّةِ لَهُمْ فِي ذَلِكَ أَنَّهُ قَدْ يَجُوزُ أَنْ يَكُونَ قَوْلُهُ «فَقُولُوا مِثْلَ مَا يَقُولُ» حَتَّى يَسْكُتَ , أَيْ فَقُولُوا مِثْلَ مَا ابْتَدَأَ بِهِ الْأَذَانَ مِنَ التَّكْبِيرِ وَالشَّهَادَةِ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ , وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ حَتَّى يَسْكُتَ. فَيَكُونُ التَّكْبِيرُ وَالشَّهَادَةُ هُمَا الْمَقْصُودُ إِلَيْهِمَا بِقَوْلِهِ «مِثْلَ مَا يَقُولُ» وَقَدْ قَصَدَ إِلَى ذَلِكَ فِي حَدِيثِ أَبِي هُرَيْرَةَ

হাদীসের ব্যাখ্যা:

হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, মুআজ্জিন আযানের মধ্যে যে সকল শব্দ বলে থাকে আযানের জবাবেও সে সকল শব্দ বলে জবাব দেয়া সুন্নাত। অবশ্য মুসলিম শরীফের ৭৩৬ নং হাদীসে বর্ণিত আছে যে, হযরত উমার রা. থেকে বর্ণিত আছে যে, মুআজ্জিন যখন حَيَّ عَلَى الصَّلَاةِ এবং حَىَّ عَلى الْفَلَاحِ বলেছেন তার জবাবে তিনি لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِالله বলেছেন। সুতরাং এ হাদীসে বর্ণিত শব্দ দ্বারাও আযানের জবাব দেয়া যেতে পারে। আবার পূর্ববর্ণিত হাদীস এবং ঐ অর্থে বর্ণিত আবু দাউদ: ৫২৪ নং হাদীস অনুযায়ী حَيَّ عَلَى الصَّلَاةِ এবং حَىَّ عَلى الْفَلَاحِ এর জবাবে উক্ত শব্দ দুটিও ব্যবহার করা যেতে পারে। মুসতাদরাকে হাকেম-২০০৪, আদ-দুআ লিততবারানী-৪৫৮ এবং ইবনুছ্‌ছুন্নী সংকলিত আমালুল ইয়াওমি ওয়াল্লাইলা কিতাবের-৯৮ নং হাদীসে স্পষ্টভাবে বর্ণিত আছে যে, মুআজ্জিন حَيَّ عَلَى الصَّلَاةِ এবং حَىَّ عَلى الْفَلَاحِ বললে তার জবাবে তোমরা حَيَّ عَلَى الصَّلَاةِ এবং حَىَّ عَلى الْفَلَاحِ বলবে। এসকল হাদীস থেকে যে দুই প্রকার জবাব প্রমাণিত হয় হানাফী মাযহাবেও সে আমল গ্রহণ করা হয়েছে। (শামী: ১/৩৯৭)
এ হাদীসের আলোকে আরো বলা যেতে পারে যে, মুআজ্জিন যখন الصَّلَاةُ خَيْرٌ مِنَ النَّوْمِ বলবে তখন শ্রোতারাও অনুরূপ বলবে। অবশ্য বিজ্ঞ উলামায়ে কিরাম এ ক্ষেত্রে ভিন্ন জবাবের কথাও বলেছেন। ইমাম নববী রহ. বলেন قَالَ سَامِعُهُ صَدَقْتَ وَبَرَرْتَ অর্থাৎ মুআজ্জিন যখন خَيْرٌ مِنَ النَّوْمِ الصَّلَاةُ বলবে তখন শ্রোতা صَدَقْتَ وَبَرَرْتَ বলবে। (আল্ মিনহাজ-৪/৮৮, দারম্ন এহইয়াইত তুরাস, বৈরম্নত থেকে প্রকাশিত) خَيْرٌ مِنَ النَّوْمِ الصَّلَاةُ এর জবাবে صَدَقْتَ وَبَرَرْتَ বলাই হানাফী মাযহাবের মত। (শামী: ১/৩৯৭)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
ত্বহাবী শরীফ - হাদীস নং ৮৮১ | মুসলিম বাংলা