শরহু মাআ’নিল আছার- ইমাম ত্বহাবী রহঃ

১. পবিত্রতা অর্জনের অধ্যায়

হাদীস নং: ৪২৩
আগুনে পাকানো খাদ্যে ওযু ওয়াজীব হয় কিনা ?
৪২৩.ইব্‌ন আবী দাউদ (রা.) .... আনাস ইব্‌ন মালিক (রা.) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেনঃ আমি, আবু তালহা (রা.) ও আবু আইয়্যূব আনসারী (রা.) আগুনে পাকানো খাদ্য আহার করি। আমি উযূ করার জন্য দাঁড়ালে তাঁরা উভয়ে আমাকে বললেন তুমি কি পবিত্র বস্তু থেকে উযূ করছ? তুমি তো দেখছি এ ব্যাপারে ইরাকীদের অনুরূপ কাজ করছ।
ইমাম তাহাবীর বিশ্লেষণ ও মূল্যায়ণ
বস্তুত এই আবু তালহা (রা.) ও আবু আইয়্যুব (রা.) যারা আগুনে পাকানো বস্তু আহারের পর সালাত আদায় করেছেন; কিন্তু উযূ করেননি। অথচ তাঁরা উভয়ে রাসূলুল্লাহ্ থেকে রিওয়ায়াত করেছেন যে, তিনি এতে উযূ করার নির্দেশ দিয়েছেন, যা আমরা এই অনুচ্ছেদে তাঁদের বরাতে রিওয়ায়াত করে এসেছি। সুতরাং এটা আমাদের মতে নবী থেকে এ বিষয়ে তারা উভয়ে (প্রথমে) যে হাদীস রিওয়ায়াত করেছেন, তা তাঁদের উভয়ের নিকট রহিত হয়ে যাওয়াটা সাব্যস্ত করে। আর এটা হচ্ছে হাদীসের বর্ণনাগত দিক দিয়ে এই অনুচ্ছেদের সঠিক উপস্থাপন ও বিশ্লেষণ।
যুক্তিভিত্তিক দলীল
যুক্তির নিরিখে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের বিশ্লেষণ নিম্নরূপ: আমরা লক্ষ্য করছি যে, আগুনে স্পর্শ করা বস্তু আহার করলে উযূ বিনষ্ট হয় কি না, এ ব্যাপারে মতবিরোধ রয়েছে এবং এ বিষয়ে ঐকমত্য রয়েছে যে, আগুন স্পর্শ করার পূর্বে এগুলো আহার করলে উযূ বিনষ্ট হয় না। আমরা গভীরভাবে লক্ষ্য করার প্রয়াস পাব যে, আগুনের এরূপ কোন বিশেষ বিধান আছে কি না, যখন তা কোন বস্তুকে স্পর্শ করে তখন সেই বিধান ওই সৃষ্ট বস্তুর দিকে স্থানন্তরিত হয়ে যায়? আমরা লক্ষ্য করছি যে, খাঁটি পানি পবিত্র, যা দিয়ে একাধিক ফরয আদায় করা হয়ে থাকে। তারপর আমরা লক্ষ্য করেছি যে, যখন তা গরম করা হয় এবং তা সেই সমস্ত বস্তুর অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়, যাকে আগুন স্পর্শ করেছে, তখনও এর তাহারাতের সেই বিধানই প্রযোজ্য, যা তাকে আগুন স্পর্শ করার পূর্বে ছিল। আগুন এতে এরূপ কোন বিধান সৃষ্টি করেনি, যা এখন প্রথম বিধানের পরিপন্থী বিধানের দিকে স্থানান্তরিত হবে। অবস্থা যখন এরূপ যা আমরা বর্ণনা করেছি, তখন যুক্তির দাবি হচ্ছে পবিত্র খাদ্য যা আগুন স্পর্শের পূর্বে ভক্ষণের দ্বারা উযূ বিনষ্ট হয় না; তাহলে তাকে আগুন স্পর্শ করার দ্বারাও এর বিধান পরিবর্তন করবে না। আগুনে স্পর্শ করার (পাকানোর) পরেও এর সেই বিধানই প্রযোজ্য হবে যা এর পূর্বে ছিল। বস্তুত এটা আমরা কিয়াস এবং যুক্তির নিরিখে বর্ণনা করেছি। আর এটা ইমাম আবু হানীফা (র.), ইমাম আবু ইউসুফ (র.) ও মুহাম্মাদ ইব্‌নুল হাসান (র.)-এর অভিমত।
কিছু সংখ্যক আলিম উট এবং বকরীর গোশতের মাঝে পার্থক্য করেছেন। তাঁরা উটের গোশ্ট আহার করার দ্বারা উযূকে ওয়াজিব সাব্যস্ত করেছেন এবং বকরীর গোশ্ত আহার করার দ্বারা উযূকে ওয়াজিব সাব্যস্ত করেননি ।
423 - حَدَّثَنَا ابْنُ أَبِي دَاوُدَ، قَالَ: ثنا ابْنُ أَبِي مَرْيَمَ، أنا يَحْيَى بْنُ أَيُّوبَ، قَالَ: حَدَّثَنِي إِسْمَاعِيلُ بْنُ رَافِعٍ، وَمُحَمَّدُ بْنُ النِّيلِ , عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ زَيْدٍ الْأَنْصَارِيِّ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: " أَكَلَتْ أَنَا وَأَبُو طَلْحَةَ , وَأَبُو أَيُّوبَ الْأَنْصَارِيُّ طَعَامًا قَدْ مَسَّتْهُ النَّارُ , فَقُمْتُ لَأَنْ أَتَوَضَّأَ , فَقَالَا لِي: «أَتَتَوَضَّأُ مِنَ الطَّيِّبَاتِ؟ لَقَدْ جِئْتُ بِهَا عِرَاقِيَّةً» فَهَذَا أَبُو طَلْحَةَ وَأَبُو أَيُّوبَ , قَدْ صَلَّيَا بَعْدَ أَكْلِهِمَا مِمَّا غَيَّرَتِ النَّارُ , وَلَمْ يَتَوَضَّآ، وَقَدْ رَوَيَا عَنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ أَمَرَ بِالْوُضُوءِ مِنْ ذَلِكَ فِيمَا قَدْ رَوَيْنَا عَنْهُمَا فِي هَذَا الْبَابِ. فَهَذَا لَا يَكُونُ، عِنْدَنَا، إِلَّا وَقَدْ ثَبَتَ نَسْخُ مَا قَدْ رَوَيَا عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ ذَلِكَ عِنْدَهُمَا. فَهَذَا وَجْهُ هَذَا الْبَابِ مِنْ طَرِيقِ الْآثَارِ. وَأَمَّا وَجْهُهُ مِنْ طَرِيقِ النَّظَرِ , فَإِنَّا قَدْ رَأَيْنَا هَذِهِ الْأَشْيَاءَ الَّتِي قَدِ اخْتُلِفَ فِي أَكْلِهَا أَنَّهُ يَنْقُضُ الْوُضُوءَ أَمْ لَا إِذَا مَسَّتْهَا النَّارُ؟ وَقَدْ أُجْمِعَ أَنَّ أَكْلَهَا قَبْلَ مُمَاسَّةِ النَّارِ إِيَّاهَا لَا يَنْقُضُ الْوُضُوءَ فَأَرَدْنَا أَنْ نَنْظُرَ , هَلْ لِلنَّارِ حُكْمٌ يَجِبُ فِي الْأَشْيَاءِ إِذَا مَسَّتْهَا فَيَنْتَقِلُ بِهِ حُكْمُهَا إِلَيْهَا فَرَأَيْنَا الْمَاءَ الْقَرَاحَ طَاهِرًا تُؤَدَّى بِهِ الْفُرُوضُ. ثُمَّ رَأَيْنَاهُ إِذَا سُخِّنَ فَصَارَ مِمَّا قَدْ مَسَّتْهُ النَّارُ أَنَّ حُكْمَهُ فِي طَهَارَتِهِ عَلَى مَا كَانَ عَلَيْهِ قَبْلَ مُمَاسَّتِهِ النَّارَ إِيَّاهُ , وَأَنَّ النَّارَ لَمْ تُحْدِثْ فِيهِ حُكْمًا يَنْتَقِلُ بِهِ حُكْمُهُ إِلَى غَيْرِ مَا كَانَ عَلَيْهِ فِي الْبَدْءِ. فَلَمَّا كَانَ مَا وَصَفْنَا كَذَلِكَ , كَانَ فِي النَّظَرِ أَنَّ الطَّعَامَ الطَّاهِرَ الَّذِي لَا يَكُونُ أَكْلُهُ قَبْلَ أَنْ تَمَسَّهُ النَّارُ , حَدَثًا إِذَا مَسَّتْهُ النَّارُ لَا تَنْقُلُهُ عَنْ حَالِهِ , وَلَا تُغَيِّرُ حُكْمَهُ , وَيَكُونُ حُكْمُهُ بَعْدَ مَسِيسِ النَّارِ إِيَّاهُ , كَحُكْمِهِ قَبْلَ ذَلِكَ قِيَاسًا وَنَظَرًا , عَلَى مَا بَيَّنَّا. وَهُوَ قَوْلُ أَبِي حَنِيفَةَ , وَأَبِي يُوسُفَ , وَمُحَمَّدِ بْنِ الْحَسَنِ , رَحِمَهُمُ اللهُ تَعَالَى. وَقَدْ فَرَّقَ قَوْمٌ بَيْنَ لُحُومِ الْغَنَمِ وَلُحُومِ الْإِبِلِ. فَأَوْجَبُوا فِي أَكْلِ لُحُومِ الْإِبِلِ الْوُضُوءَ , وَلَمْ يُوجِبُوا ذَلِكَ فِي أَكْلِ لُحُومِ الْغَنَمِ. وَاحْتَجُّوا فِي ذَلِكَ

হাদীসের ব্যাখ্যা:

আগুনে পাকানো খাদ্য খেলে অযু নষ্ট হয় না। আর এটাই হানাফী মাযহাবের মত। (আল-মাবসূত লিসসারাখসী: ১/৭৯)
আরো প্রমাণিত হয় যে, আগুনে পাকানো খাদ্য খেলে অযু নষ্ট হওয়া সম্পর্কে যে সকল হাদীস বর্ণিত আছে তা হযরত জাবের রা. কর্তৃক বর্ণিত হাদীস (নাসাঈ: ১৮৫,সুনানে আবু দাউদ: ১৯২) ও ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বকরীর রানের (পাকানো) গোশ্‌ত খেয়ে সলাত আদায় করলেন কিন্তু উযূ করেননি। (সহীহ : বুখারী ২০৭, মুসলিম ৩৫৪) হাদীস দ্বারা রহিত হয়ে গেছে।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
ত্বহাবী শরীফ - হাদীস নং ৪২৩ | মুসলিম বাংলা