আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ

৫১- কুরআনের তাফসীর অধ্যায়

হাদীস নং:
আন্তর্জাতিক নং: ৪৮২৮
২৫২২.আল্লাহর বাণীঃ فلما رأوه عارضا مستقبل أوديتهم قالوا هذا عارض ممطرنا بل هو ما استعجلتم به ريح فيها عذاب أليم "এরপর যখন তাদের উপত্যকার দিকে মেঘ আসতে দেখল তখন তারা বলতে লাগল, এ তো মেঘ, আমাদের বৃষ্টি দান করবে (হুদ বলল) এ তো তা, যা তোমরা ত্বরান্বিত করতে চেয়েছ, এতে রয়েছে এ ঝড়- মর্মন্তুদ শাস্তি বহনকারী।" (৪৬ঃ ২৪) ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) বলেছেন, عارض অর্থ মেঘ।
৪৪৭০। আহমদ ইবনে ঈসা (রাহঃ) ......... নবী (ﷺ) এর সহধর্মিণী আয়েশা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূল (ﷺ) কে এমনভাবে কখনো হাসতে দেখিনি, যাতে তাঁর কন্ঠনালীর আলজিভ দেখা যায়। তিনি মুচকি হাসতেন। যখনই তিনি মেঘ অথবা ঝঞ্ঝা বায়ু দেখতেন, তখনই তাঁর চেহারায় তা ফুটে উঠত। আয়েশা (রাযিঃ) জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! মানুষ যখন মেঘ দেখে, তখন বৃষ্টির আশায় আনন্দিত হয়। কিন্তু আপনি যখন মেঘ দেখেন, তখন আমি আপনার চেহারায় আতংকের ছাপ দেখতে পাই। তিনি বললেন, হে আয়েশা! এতে যে আযাব নেই, এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত নই। বাতাসের দ্বারাই তো এক কওমকে আযাব দেয়া হয়েছে। সে কওম তো আযাব দেখে বলেছিল, এ তো আমাদের বৃষ্টি দান করবে।

হাদীসের ব্যাখ্যা:

হাসি তিন রকম হয়ে থাকে। এক হল মুচকি হাসি। এ হাসিতে মুখ খোলে না ও দাঁত দেখা যায় না। কেবল ঠোঁট প্রসারিত হয় ও চেহারা উদ্ভাসিত হয়। আরবীতে একে تَبسم ও اِبتِسَامُ বলে। যে হাসিতে মুখ খুলে যায় ও দাঁত দেখা যায় কিন্তু শব্দ হয় না, তাকে ضحك বলে। আর যদি শব্দও হয়, তবে তাকে বলা হয় قهقهَةٌ অর্থাৎ অট্টহাসি।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনও অট্টহাসি দিতেন না। অধিকাংশ সময় তাঁর হাসি হতো মুচকি হাসি। যেমনটা এ হাদীছে বলা হয়েছে। কখনও কখনও তিনি মুখ খুলেও হাসি দিতেন। তখন তাঁর সামনের দাঁতসমূহ দেখা যেত।

مُسْتَجْمعًا শব্দটির উৎপত্তি اِسْتِجمَاعٌ থেকে। এর অর্থ একত্র করা, জড়ো করা, পরিপূর্ণরূপে সম্পাদন করা। এর দ্বারা বোঝানো উদ্দেশ্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর হাসিতে ঠোঁট, দাঁত, মুখগহ্বর ইত্যাদি হাসির অঙ্গসমূহের পরিপূর্ণ ব্যবহার করতেন না। অর্থাৎ সবগুলো অঙ্গের ব্যবহার দ্বারা পূর্ণাঙ্গ হাসি তিনি দিতেন না। অধিকাংশ সময় কেবল ঠোঁটের সাহায্যে মুচকি হাসি দিতেন।

এর দ্বারা বোঝানো উদ্দেশ্য হাসির ক্ষেত্রেও তিনি পরিমিত স্বভাবের ছিলেন। হাসির বিপুল বিস্তার ও অট্টহাসি দিয়ে তিনি নিজ ভাবগাম্ভীর্য নষ্ট করতেন না। যত বড় আনন্দের বিষয়ই হোক না কেন, তাতে তাঁর শান্ত সমাহিত ভাব ক্ষুণ্ণ হতে পারত না। সে আনন্দের প্রকাশে তিনি মুচকি হাসি দিয়েই ক্ষান্ত থাকতেন। বড়জোর সামনের দাঁত দেখা যেত। এর বেশি নয়। অর্থাৎ কখনওই শব্দ করে হাসতেন না।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

গাম্ভীর্য ও ধীর-শান্ত প্রকৃতি রক্ষা করা সর্বাবস্থায় কাম্য ও প্রশংসনীয়। এমনকি হাসি ও আনন্দ প্রকাশের ক্ষেত্রেও।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন