আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ
৭- নামাযের অধ্যায়
হাদীস নং:
আন্তর্জাতিক নং: ৪৬০
৩১৫। মসজিদের জন্য খাদিম।
ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) (এ আয়াত) আমার গর্ভে যা আছে তা একান্ত আপনার জন্য উৎসর্গ করলাম’ (৩ : ৩৫)। এর ব্যাখ্যায় বলেনঃ মসজিদের খিদমতের জন্য উৎসর্গ করলাম।
ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) (এ আয়াত) আমার গর্ভে যা আছে তা একান্ত আপনার জন্য উৎসর্গ করলাম’ (৩ : ৩৫)। এর ব্যাখ্যায় বলেনঃ মসজিদের খিদমতের জন্য উৎসর্গ করলাম।
৪৪৬। আহমদ ইবনে ওয়াকীদ (রাহঃ) ..... আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, একজন পুরুষ অথবা বলেছেন একজন মহিলা মসজিদ ঝাড়ু দিতেন। [রাবী সাবিত (রাহঃ) বলেন] আমার মনে হয় তিনি বলেছেন একজন মহিলা। তারপর তিনি নবী (ﷺ) এর হাদীস বর্ণনা করে বলেন, নবী (ﷺ) তার কবরে জানাযার নামায আদায় করেছেন।
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছে মসজিদের এক ঝাড়ুদার সম্পর্কে জানানো হয়েছে যে, তার মৃত্যু হয়ে গেলে সাহাবায়ে কেরাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে না জানিয়ে নিজেরাই তার দাফন–কাফন সম্পন্ন করেন। পরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তা জানতে পেরে তার কবরের কাছে চলে যান এবং তার জন্য দুআ করেন।
সে ঝাড়ুদার পুরুষ ছিল না মহিলা, সে ব্যাপারে হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে পর্যায়ক্রমে যারা বর্ণনা করেছেন, তাদের কোনও একজনের সন্দেহ ছিল। তাই বলেছেন, এক কালো মহিলা বা এক যুবক। তার সন্দেহ ছিল কেবল সে পুরুষ না মহিলা এ বিষয়ে, গায়ের রং সম্পর্কে নয়। কাজেই মহিলাটি সম্পর্কে যখন বলা হয়েছে সে কালো, তখন বোঝা যায় যুকবটিও কালোই হবে। বুখারী শরীফের এক বর্ণনায় স্পষ্টই আছে أن رجلا أسود أو امرأة سوداء كان يقم المسجد এক কালো পুরুষ বা এক কালো মহিলা মসজিদ ঝাড়ু দিত...।”
মূলত নারী ছিল না পুরুষ, সে সন্দেহ হয়েছিল কেবল বর্ণনাকারী ছাবিত রহ. এর। অন্যদের বর্ণনায় এ সন্দেহ পাওয়া যায় না। অন্যদের বর্ণনায় নির্দিষ্ট করেই বলা হয়েছে তিনি ছিলেন একজন মহিলা। বায়হাকী শরীফের বর্ণনায় তার নাম বলা হয়েছে উম্মু মিহজান রাযি. । কোনও কোনও বর্ণনায় তার নাম বলা হয়েছে মিহজানা রাযি. । সম্ভবত মিহজানা তার মূল নাম এবং উম্মু মিহজান তার কুনয়াহ্ (উপনাম)।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবায়ে কেরামের খোঁজখবর রাখতেন। টানা কয়েকদিন কাউকে না দেখলে জিজ্ঞেস করতেন, তাকে কেন দেখা যাচ্ছে না? উম্মু মিহজান রাযি.–এর ক্ষেত্রেও তাই হল। যখন একাধারে কয়েকদিন তাকে দেখা যাচ্ছে না, তখন তার সম্পর্কে খোঁজ নিলেন। যখন জানতে পারলেন তার মৃত্যু হয়ে গেছে, তখন বললেন, তোমরা আমাকে জানালে না কেন? বর্ণনাকারী বলেন, সম্ভবত তারা তার বিষয়টাকে তুচ্ছ মনে করেছিল। অর্থাৎ তিনি একজন গরীব ও সাধারণ নারী। তার মৃত্যু এমনকিছু গুরুত্বপূর্ণ নয় যে, তার জানাযা পড়ানোর জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কষ্ট দেওয়া হবে। সাহাবায়ে কেরাম প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রাণের চেয়েও বেশি ভালোবাসতেন। তারা তাঁর আরামের দিকে লক্ষ রাখতেন। বিশেষ প্রয়োজন না হলে তাঁকে কোথাও ডাকতেন না বা যাওয়ার অনুরোধ করতেন না। যেমন অপর এক সাহাবীর রাতের বেলা ইন্তিকাল হলে তারা তাঁকে ডাকেননি; নিজেরাই তাঁর দাফন–কাফন সম্পন্ন করেছেন।
যদিও তারা এক সাধারণ নারী হওয়ায় তাকে বিশেষ গুরুত্ব দেননি, কিন্তু নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে সে নারী গুরুত্বহীন ছিলেন না। তিনি গরীব ও সাধারণ মুমিনকে বিশেষ মর্যাদার দৃষ্টিতেই দেখতেন। সুতরাং উম্মুল মিহজানকেও সে মর্যাদা তিনি দান করলেন। তিনি চলে গেলেন তার কবরের কাছে এবং সেখানে তার জন্য দুআ করলেন। তারপর ইরশাদ করলেন إن هذه القبور مملوءة ظلمة على أهلها، وإن الله تعالى ينورها لهم بصلاتي عليهم (এ কবরগুলো তার বাসিন্দাদের নিয়ে অন্ধকারে পরিপূর্ণ থাকে। আল্লাহ তাআলা আমার দু'আর বরকতে তাদের জন্য তা আলোকিত করে দেন)। কবর যেহেতু সবদিক থেকে আবদ্ধ, তাই তার ভেতর সূর্যের আলো পৌঁছার তো কোনও উপায় নেই। তাই বাহ্যিক আলোয় তা আলোকিত থাকবে না এই–ই স্বাভাবিক। সেখানে আলোর ব্যবস্থা হতে পারে কেবল নেক আমল দ্বারা কিংবা আল্লাহ তাআলার কাছে গ্রহণযোগ্য সুপারিশের দ্বারা। সেকথাই প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন যে, আল্লাহ তাআলা কবরকে আলোকিত করেন আমার দু'আর দ্বারা। তাই তো তিনি প্রিয় সাহাবিয়ার অন্ধকার কবরকে আলোকিত করার লক্ষ্যে সেখানে ছুটে যান এবং তার জন্য দুআ করেন। দূর থেকে দুআ করলেও আলো হত বৈকি, কিন্তু কাছে যাওয়ার দ্বারা তাকে যে মর্যাদা ও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে তা তো হত না। বোঝা যাচ্ছে জীবিত ও মৃত উভয় অবস্থায় যে–কোনও মুসলিম নর–নারীকে মর্যাদা ও গুরুত্ব দেওয়া বাঞ্ছনীয়। তাঁর এ আমল দ্বারা সে শিক্ষাও পাওয়া যাচ্ছে।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. গায়ের রং কালো হওয়ায় কিংবা গরীব ও সাধারণ লোক হওয়ায় কোনও মুসলিমকে অবহেলা করতে নেই।
খ. নিজ সঙ্গী–সাথী, ভক্ত–অনুরক্ত এবং নিজের সম্পর্কিত যে–কোনও লোকেরই খোঁজ খবর রাখা চাই। বেশি দিন দেখা না গেলে সে কোথায় কী হালে আছে, তা সন্ধান করা প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নত।
গ. কবরস্থানে যাওয়া ও কবরবাসীদের জন্য দুআ করাও একটি সুন্নত আমল।
ঘ. কবর এক অন্ধকার ঘর। ঈমান ও আমলে সালিহার দ্বারা তাতে আলোর ব্যবস্থা হয়।
ঙ. জীবিত ব্যক্তির দুআ মৃত ব্যক্তির উপকারে আসে। দুআ দ্বারা কবরের অন্ধকারও দূর হয়।
সে ঝাড়ুদার পুরুষ ছিল না মহিলা, সে ব্যাপারে হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে পর্যায়ক্রমে যারা বর্ণনা করেছেন, তাদের কোনও একজনের সন্দেহ ছিল। তাই বলেছেন, এক কালো মহিলা বা এক যুবক। তার সন্দেহ ছিল কেবল সে পুরুষ না মহিলা এ বিষয়ে, গায়ের রং সম্পর্কে নয়। কাজেই মহিলাটি সম্পর্কে যখন বলা হয়েছে সে কালো, তখন বোঝা যায় যুকবটিও কালোই হবে। বুখারী শরীফের এক বর্ণনায় স্পষ্টই আছে أن رجلا أسود أو امرأة سوداء كان يقم المسجد এক কালো পুরুষ বা এক কালো মহিলা মসজিদ ঝাড়ু দিত...।”
মূলত নারী ছিল না পুরুষ, সে সন্দেহ হয়েছিল কেবল বর্ণনাকারী ছাবিত রহ. এর। অন্যদের বর্ণনায় এ সন্দেহ পাওয়া যায় না। অন্যদের বর্ণনায় নির্দিষ্ট করেই বলা হয়েছে তিনি ছিলেন একজন মহিলা। বায়হাকী শরীফের বর্ণনায় তার নাম বলা হয়েছে উম্মু মিহজান রাযি. । কোনও কোনও বর্ণনায় তার নাম বলা হয়েছে মিহজানা রাযি. । সম্ভবত মিহজানা তার মূল নাম এবং উম্মু মিহজান তার কুনয়াহ্ (উপনাম)।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবায়ে কেরামের খোঁজখবর রাখতেন। টানা কয়েকদিন কাউকে না দেখলে জিজ্ঞেস করতেন, তাকে কেন দেখা যাচ্ছে না? উম্মু মিহজান রাযি.–এর ক্ষেত্রেও তাই হল। যখন একাধারে কয়েকদিন তাকে দেখা যাচ্ছে না, তখন তার সম্পর্কে খোঁজ নিলেন। যখন জানতে পারলেন তার মৃত্যু হয়ে গেছে, তখন বললেন, তোমরা আমাকে জানালে না কেন? বর্ণনাকারী বলেন, সম্ভবত তারা তার বিষয়টাকে তুচ্ছ মনে করেছিল। অর্থাৎ তিনি একজন গরীব ও সাধারণ নারী। তার মৃত্যু এমনকিছু গুরুত্বপূর্ণ নয় যে, তার জানাযা পড়ানোর জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কষ্ট দেওয়া হবে। সাহাবায়ে কেরাম প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রাণের চেয়েও বেশি ভালোবাসতেন। তারা তাঁর আরামের দিকে লক্ষ রাখতেন। বিশেষ প্রয়োজন না হলে তাঁকে কোথাও ডাকতেন না বা যাওয়ার অনুরোধ করতেন না। যেমন অপর এক সাহাবীর রাতের বেলা ইন্তিকাল হলে তারা তাঁকে ডাকেননি; নিজেরাই তাঁর দাফন–কাফন সম্পন্ন করেছেন।
যদিও তারা এক সাধারণ নারী হওয়ায় তাকে বিশেষ গুরুত্ব দেননি, কিন্তু নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে সে নারী গুরুত্বহীন ছিলেন না। তিনি গরীব ও সাধারণ মুমিনকে বিশেষ মর্যাদার দৃষ্টিতেই দেখতেন। সুতরাং উম্মুল মিহজানকেও সে মর্যাদা তিনি দান করলেন। তিনি চলে গেলেন তার কবরের কাছে এবং সেখানে তার জন্য দুআ করলেন। তারপর ইরশাদ করলেন إن هذه القبور مملوءة ظلمة على أهلها، وإن الله تعالى ينورها لهم بصلاتي عليهم (এ কবরগুলো তার বাসিন্দাদের নিয়ে অন্ধকারে পরিপূর্ণ থাকে। আল্লাহ তাআলা আমার দু'আর বরকতে তাদের জন্য তা আলোকিত করে দেন)। কবর যেহেতু সবদিক থেকে আবদ্ধ, তাই তার ভেতর সূর্যের আলো পৌঁছার তো কোনও উপায় নেই। তাই বাহ্যিক আলোয় তা আলোকিত থাকবে না এই–ই স্বাভাবিক। সেখানে আলোর ব্যবস্থা হতে পারে কেবল নেক আমল দ্বারা কিংবা আল্লাহ তাআলার কাছে গ্রহণযোগ্য সুপারিশের দ্বারা। সেকথাই প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন যে, আল্লাহ তাআলা কবরকে আলোকিত করেন আমার দু'আর দ্বারা। তাই তো তিনি প্রিয় সাহাবিয়ার অন্ধকার কবরকে আলোকিত করার লক্ষ্যে সেখানে ছুটে যান এবং তার জন্য দুআ করেন। দূর থেকে দুআ করলেও আলো হত বৈকি, কিন্তু কাছে যাওয়ার দ্বারা তাকে যে মর্যাদা ও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে তা তো হত না। বোঝা যাচ্ছে জীবিত ও মৃত উভয় অবস্থায় যে–কোনও মুসলিম নর–নারীকে মর্যাদা ও গুরুত্ব দেওয়া বাঞ্ছনীয়। তাঁর এ আমল দ্বারা সে শিক্ষাও পাওয়া যাচ্ছে।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. গায়ের রং কালো হওয়ায় কিংবা গরীব ও সাধারণ লোক হওয়ায় কোনও মুসলিমকে অবহেলা করতে নেই।
খ. নিজ সঙ্গী–সাথী, ভক্ত–অনুরক্ত এবং নিজের সম্পর্কিত যে–কোনও লোকেরই খোঁজ খবর রাখা চাই। বেশি দিন দেখা না গেলে সে কোথায় কী হালে আছে, তা সন্ধান করা প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নত।
গ. কবরস্থানে যাওয়া ও কবরবাসীদের জন্য দুআ করাও একটি সুন্নত আমল।
ঘ. কবর এক অন্ধকার ঘর। ঈমান ও আমলে সালিহার দ্বারা তাতে আলোর ব্যবস্থা হয়।
ঙ. জীবিত ব্যক্তির দুআ মৃত ব্যক্তির উপকারে আসে। দুআ দ্বারা কবরের অন্ধকারও দূর হয়।
