আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ

৫১- কুরআনের তাফসীর অধ্যায়

হাদীস নং:
আন্তর্জাতিক নং: ৪৭৪৫
সূরা মু’মিনুন

ইবনে উয়াইনা বলেন, سَبْعَ طَرَآئِقَ এর অর্থ সপ্তাকাশ। لَهَا سَابِقُوْنَ সৌভাগ্য তাদের ওপর অগ্রগামী। قُلُوْبُهُمْ وَجِلَةٌ তাদের অন্তর সব সময় ভীত ও সন্ত্রস্ত। ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) বলেন, هَيْهَاتَ هَيْهَاتَ বহুদূর, বহুদূর। فَاسْأَلْ الْعَادِّيْنَ ফিরিশতাদের জিজ্ঞেস করুন। لَنَاكِبُوْنَ তারা (সরল পথ থেকে) বিচ্যুত। كَالِحُوْنَ বীভৎস হয়ে যাবে। مِنْ سُلَالَةٍ সন্তান। نُّطْفَةُ নির্গত বীর্য। وَالْجِنَّةُ وَالْجُنُوْنُ এ দু’টি একই অর্থে ব্যবহৃত (অর্থাৎ উন্মাদ)। وَالْغُثَآءُ অর্থ ফেনা, যা পানির ওপরে ভাসে এবং তা কোন উপকারে আসে না।

সূরা নুর

مِنْ خِلَالِهٰ মেঘমালার মাঝ থেকে। سَنَا بَرْقِهِ বিদ্যুতের আলো। مُذْعِنِيْنَ বিনীত হওয়া। বিনীত হওয়া। বিনয়ী ব্যক্তিকে مُذْعِنٌ বলা হয়। أَشْتَاتًا (দলে দলে) شَتَاتٌ-شَتّٰى-وَشَتٌّ একই অর্থে ব্যবহৃত হয়। আব্দুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) বলেন, سُوْرَةٌ أَنْزَلْنَاهَا (এমন একটি সূরা) যার বর্ণনা ও ব্যাখ্যা আমি প্রদান করেছি। অন্য থেকে বর্ণিত, সূরার সমষ্টিকে কুরআন নাম দেয়া হয়েছে। সূরার নামকরণ করা হয়েছে একটি অপরটি থেকে বিচ্ছিন্ন বলে। তারপর যখন পরস্পরকে মিলানো হয়, তখন তাকে ‘কুরআন’ বলা হয়। সা‘দ ইবনে আয়ায সুমালী বলেন, الْمِشْكَاةُ হাবশী ভাষায় ‘তাক’। আল্লাহ্ তাআলার বাণীঃ إِنَّ عَلَيْنَا جَمْعَه وَقُرْاٰنَهُ এর এক অংশকে অন্য অংশের সাথে সংযোজিত করা। فَإِذَا قَرَأْنَاه فَاتَّبِعْ قُرْاٰنَه -তারপর যখন আমি তাকে একত্র করি ও সংযোজন করে দেই তখন তুমি অনুসরণ করবে সে কুরআনের অর্থাৎ যা একত্রিত করা হয়েছে। আল্লাহ্ তাআলা তোমাকে যে কাজের নির্দেশ দিয়েছেন, সে কাজ করবে এবং যে কাজ থেকে নিষেধ করেছেন, তা থেকে বিরত থাকবে। বলা হয়, لَيْسَ لِشِعْرِهٰ قُرْاٰنٌ অর্থাৎ (তার কাব্যে সামঞ্জস্য) নেই। আর কুরআনকে ফুরকান এজন্য নামকরণ করা হয়েছে যে, তা হক ও বাতিলের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি করে। আর বলা হয়, স্ত্রীলোকের জন্য مَا قَرَأَتْ بِسَلًا قَطُّ অর্থাৎ তার পেটে সন্তান আসেনি। আর বলেন, فَرَّضْنَا (তাশদীদ যুক্ত অবস্থায়) অর্থাৎ আমি তাতে বিভিন্ন ফরয নাযিল করেছি। আর যাঁরা فَرضْنَاهَا (তাশদীদবিহীন) পড়েন তারা এর অর্থ করেন, আমি তোমাদের এবং তোমাদের পরবর্তীদের উপর ফরয করেছি। মুজাহিদ (রাহঃ) বলেন, أَوِالطِّفْلِ الَّذِيْنَ لَمْ يَظْهَرُوْا এর অর্থ সে সব বালক যারা স্বল্প বয়সের কারণে বুঝে না।

পরিচ্ছেদঃ ২৪৬৬ আল্লাহ তাআলার বাণীঃ والذين يرمون أزواجهم ولم يكن لهم شهداء إلا أنفسهم فشهادة أحدهم أربع شهادات بالله إنه لمن الصادقين “এবং যারা নিজেদের স্ত্রীর প্রতি অপবাদ আরোপ করে, অথচ নিজেরা ব্যতীত তাদের কোন সাক্ষী নেই, তাদের প্রত্যেকের সাক্ষ এ হবে যে, সে আল্লাহর নামে চারবার শপথ করে বলবে যে, সে অবশ্যই সত্যবাদী”।
৪৩৯০। ইসহাক (রাহঃ) ......... সাহল ইবনে সা’দ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। উয়াইমির (রাযিঃ) আসিম ইবনে আদির নিকট আসলেন। তিনি আজলান গোত্রের সর্দার। উয়াইমির তাকে বললেন, তোমরা ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে কি বল, যে তার স্ত্রীর সাথে অন্য পুরুষ দেখতে পায়। সেকি তাকে হত্যা করবে? এরপর তো তোমরা তাকেই হত্যা করবে অথবা সে কি করবে? তুমি আমার তরফ থেকে এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নিকট জিজ্ঞাসা কর। তারপর আসিম নবী (ﷺ) এর নিকট এসে বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! ......।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এ ধরনের প্রশ্ন অপছন্দ করলেন। তারপর উয়াইমির (রাযিঃ) তাকে প্রশ্ন করলেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এ ধরনের প্রশ্ন না-পছন্দ করেছেন ও দূষণীয় মনে করেছেন। তখন উয়াইমির বললেন, আল্লাহর শপথ! আমি এ বিষয়টি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নিকট জিজ্ঞাসা না করা পর্যন্ত বিরত হবনা।
তারপর তিনি বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীর সাথে অন্য একটি পুরুষকে দেখতে পেলে, সেকি তাকে হত্যা করবে? তখন তো আপনারা তাকে (কিসাস স্বরূপ) হত্যা করে ফেলবেন। অথবা সে কি করবে? তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, তোমার ও তোমার স্ত্রী সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা কুরআন অবতীর্ণ করেছেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) স্বামী স্ত্রী দুজনকে ‘লিআন’ করার নির্দেশ দিলেন, যেভাবে আল্লাহ তাআলা তার কিতাবে উল্লেখ করেছেন।
তারপর উয়াইমির তার স্ত্রীর সাথে লিআন করলেন। এরপর বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! (এরপরও) যদি আমি তাকে রাখি তবে তার প্রতি আমি জালিম হব। তারপর তিনি তাকে তালাক দিয়ে দিলেন। অতএব, তাদের পরবর্তী লোকদের জন্য, যারা পরস্পর ‘লিআন’ করে, এটাই সুন্নতে পরিনত হল। এরপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, লক্ষ্য কর, যদি মহিলাটি একটি কালো ডাগর চক্ষু, বড় নিতম্ব ও বড় পা বিশিষ্ট সন্তান জন্ম দেয়, তবে আমি মনে করব, উয়াইমিরই তার সম্পর্কে সত্য বলেছে। এবং যদি সে লাল গিরগিটির মত একটি লাল বর্ণের সন্তান প্রসব করে তবে আমি মনে করব, উয়াইমির তার সম্পর্কে মিথ্যা বলেছে। এরপর সে এমন একটি সন্তান প্রসব করল, যার গুণাবলি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) উয়াইমির সত্যবাদী হওয়ার পক্ষে বলেছিলেন। তারপর সন্তানটিকে মায়ের দিকে সম্পৃক্ত করে পরিচয় দেওয়া হত।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন