আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ

৫১- কুরআনের তাফসীর অধ্যায়

হাদীস নং:
আন্তর্জাতিক নং: ৪৭১২
২৪৩৭। আল্লাহ তাআলার বাণী, ذرية من حملنا مع نوح إنه كان عبدا شكورا “যাদেরকে আমি নূহের সাথে নৌকায় আরোহণ করিয়েছিলাম, এরা হচ্ছে তাদের বংশধর। তারা ছিল পরম কৃতজ্ঞ বান্দা”।
৪৩৫৭। মুহাম্মাদ ইবনে মুকাতিল (রাহঃ) ......... হযরত আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, একদা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সামনে গোশত আনা হল এবং তাকে সামনের রান পরিবেশন করা হল। তিনি এটা পছন্দ করতেন। তিনি তার থেকে কামড় দিয়ে খেলেন। এরপর বললেন, আমি হব কিয়ামতের দিন মানবকূলের সরদার। তোমাদের কি জানা আছে তা কেন? কিয়ামতের দিন পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকল মানুষ এমন এক ময়দানে সমবেত হবে, যেখানে একজন আহবানকারীর আহবান সকলে শুনতে পাবে। এবং সকলেই একসঙ্গে দৃষ্টিগোচর হবে। সূর্য নিকটে এসে যাবে। মানুষ এমনি কষ্ট ক্লেশের সম্মুখীন হবে যা অসহনীয় ও অসহ্যকর হয়ে পড়বে। তখন লোকেরা বলবে, তোমরা কি বিপদের সম্মুখীন হয়েছ তা কি দেখতে পাচ্ছনা? তোমরা কি এমন কাউকে খুঁজে বের করবেনা যিনি তোমাদের রবের কাছে তোমাদের জন্য সুপারিশকারি হবেন?
কেউ কেউ অন্যদের বলবে যে, আদমের কাছে চল। তখন সকলে তার কাছে এসে তাকে বলবে, আপনি আবুল বাশার।১ আল্লাহ তাআলা আপনাকে স্বীয় (কুদরতী) হাত দ্বারা সৃষ্টি করেছেন, এবং তার রুহ আপনার মধ্যে ফুঁকে দিয়েছেন, এবং ফিরিশতাদের নির্দেশ দিলে তারা আপনাকে সিজদা করেন। আপনি আপনার রবের কাছে আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। আপনি কি দেখছেন না যে, আমরা কিসের মধ্যে আছি? আপনি কি দেখছেন না যে আমরা কি অবস্থায় পৌঁছেছি? তখন আদম (আলাইহিস সালাম) বলবেন, আজ আমার রব এত রাগান্বিত হয়েছেন যার আগে কোনদিন এরূপ রাগান্বিত হন নি আর পরেও এরূপ রাগান্বিত হবেন না। তিনি আমাকে একটি বৃক্ষের কাছে যেতে নিষেধ করেছিলেন, কিন্তু আমি অমান্য করেছি। নাফসী, নাফসী, নাফসী (আমি নিজেই সুপারিশ প্রার্থী ), তোমরা অন্যের কাছে যাও। তোমরা নূহ (আলাইহিস সালাম) এর কাছে যাও।
তখন সকলে নূহ (আলাইহিস সালাম) এর কাছে এসে বলবে, হে নূহ (আলাইহিস সালাম)! নিশ্চয়ই আপনি পৃথিবীর মানুষের প্রতি প্রথম রাসুল।২ আর আল্লাহ তাআলা আপনাকে পরম কৃতজ্ঞ বান্দা হিসেবে অভিহিত করেছেন। সুতরাং আপনি আপনার রবের কাছে আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। আপনি কি দেখছেন না যে আমরা কিসের মধ্যে আছি? তিনি বলবেন, আজ আমার রব এত রাগান্বিত হয়েছেন যার আগে কোনদিন এরূপ রাগান্বিত হননি আর পরেও এরূপ রাগান্বিত হবেন না। আমার একটি গ্রহণীয় দু'আ ছিল যা আমি আমার কওমের ব্যপারে করে ফেলেছি। (এখন) নাফসী, নাফসী, নাফসী। তোমরা অন্যের কাছে যাও। যাও তোমরা ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) এর কাছে।
তখন তারা ইবরাহীম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর কাছে এসে বলবে, হে ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম)! আপনি আল্লাহর নবী এবং পৃথিবীর মানুষের মধ্যে আপনি আল্লাহর বন্ধু।৩ আপনি আপনার রবের কাছে আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। আপনি কি দেখতে পাচ্ছেন না যে আমরা কিসের মধ্যে আছি? তিনি তাদের বলবেন, আমার রব আজ ভীষণ রাগান্বিত, যার আগে কোনদিন এরূপ রাগান্বিত হননি আর পরেও এরূপ রাগান্বিত হবেন না। আর আমিতো তিনটি মিথ্যা বলে ফেলেছিলাম। রাবি আবু হাইয়ান তার বর্ণনায় এগুলোর উল্লেখ করেছেন। (এখন) নাফসী, নাফসী, নাফসী। তোমরা অন্যের কাছে যাও- যাও তোমরা মুসা (আলাইহিস সালাম) এর কাছে।
তারা মুসার কাছে এসে বলবে, হে মুসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! আপনি আল্লাহর রাসুল। আল্লাহ আপনাকে রিসালাত এর সম্মান দান করেন এবং আপনার সাথে কথা বলে সমগ্র মানব জাতির উপর মর্যাদা দান করেছেন। আপনি আপনার রবের কাছে আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। আপনি কি দেখতে পাচ্ছেন না আমরা কিসের মধ্যে আছি? তিনি বলবেন, আজ আমার রব ভীষণ রাগান্বিত আছেন, এরূপ রাগান্বিত পূর্বেও হননি এবং পরেও এরূপ রাগান্বিত হবেন না। আর আমিতো এক ব্যক্তিকে হত্যা করে ফেলেছিলাম। যাকে হত্যা করার জন্য আমাকে নির্দেশ দেওয়া হয়নি। (এখন) নাফসী, নাফসী, নাফসী। তোমরা অন্যের কাছে যাও -যাও ঈসা (আলাইহিস সালাম) -এর কাছে।
তখন তারা ঈসা (আলাইহিস সালাম) কাছে এসে বলবে, হে ঈসা (আলাইহিস সালাম)! আপনি আল্লাহর রাসুল এবং কালেমা৪, যা তিনি মারইয়াম (আলাইহিস সালাম) এর উপর ঢেলে দিয়েছিলেন। আপনি রূহ‘৫। আপনি দোলনায় থেকে মানুষের সাথে কথা বলেছেন। আজ আপনি আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। আপনি কি দেখছেন না, যে আমরা কিসের মধ্যে আছি? তখন ঈসা (আলাইহিস সালাম) বলবেন, আজ আমার রব এত রাগান্বিত যে, এর পূর্বে এরূপ রাগান্বিত হননি এবং এর পরেও এরূপ রাগান্বিত হবেন না। তিনি নিজের কোন গুনাহের কথা বলবেন না। নাফসী, নাফসী, নাফসী। তোমরা অন্যের কাছে যাও -যাও মুহাম্মাদ (ﷺ) এর কাছে। তারা মুহাম্মাদ (ﷺ) এর কাছে এসে বলবে, হে মুহাম্মাদ! আপনি আল্লাহর রাসুল শেষ নবী। আল্লাহ তাআলা আপনার আগের, পরের সকল গুনাহ মাফ করে দিয়েছেন। আপনি আমাদের জন্য আপনার রবের কাছে সুপারিশ করুন। আপনি কি দেখছেন না আমরা কিসের মধ্যে আছি?
তখন আমি আরশের নীচে এসে আমার রবের সামনে সিজদা দিয়ে পড়ব। তারপর আল্লাহ তাআলা তার প্রশংসা এবং গুণগানের এমন সুন্দর পদ্ধতি আমার সামনে খুলে দিবেন, যা এর পূর্বে অন্য কারও জন্য খুলেন নি। এরপর বলা হবে, হে মুহাম্মাদ! তোমার মাথা উঠাও। তুমি যা চাও, তোমাকে দেওয়া হবে। তুমি সুপারিশ কর, তোমার সুপারিশ কবুল করা হবে। এরপর আমি আমার মাথা উঠিয়ে বলব, “হে আমার রব! আমার উম্মত! হে আমার রব! আমার উম্মত! হে আমার রব! আমার উম্মত! তখন বলা হবে, হে মুহাম্মাদ! আপনার উম্মতের মধ্যে যাদের কোন হিসাব-নিকাশ হবে না, তাদেরকে জান্নাতের দরজাসমূহের ডান পাশের দরজা দিয়ে প্রবেশ করিয়ে দিন। এ দরজা ছাড়া অন্যদের সাথে অন্য দরজায় ও তাদের প্রবেশের অধিকার থাকবে। তারপর তিনি বলবেন, যার হাতে আমার প্রান, সে সত্তার শপথ! বেহেশতের এক দরজার দুই পাশের মধ্যবর্তী প্রশস্ততা যেমন মক্কা ও হামীরের মধ্যবর্তী দূরত্ব, অথবা মক্কা ও বসরার মাঝখানের দূরত্ব।


১.‘আবুল বাশার’' অর্থ মানব জাতির পিতা ।

২.যেহেতু তিনি শরীয়তের হুকুম-আহকামের প্রথম নবী অথবা সমস্ত পৃথিবী প্রলয়ংকরী বন্যায় প্লাবিত হয়ে যাওয়ার পর পৃথিবীর সর্বপ্রথম নবী নূহ্ (আ) বিধায় তাকে ‘প্রথম নবী' বলা হয়। তাঁর কওমকে ডুবিয়ে দেয়ার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে।

৩.‘খলীলুল্লাহ' উপাধি একমাত্র আপনার ।

8.‘কালেমা’-এর দ্বারা বোঝানো হয়েছে, كن শব্দ। যেহেতু এ শব্দটি বলার সাথে সাথে ঈসা (আ) আল্লাহর কুদরতে মাতৃগর্ভে আসেন। তাই তাকে ‘তার কালেমা' (আল্লাহর কালেমা) বলা হয় ।

৫.'রূহ' দ্বারা ফিরিশতাদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা মর্যাদাসম্পন্ন ফিরিশতা জিবরাঈল (আ)-কে বোঝানো হয়েছে, যেহেতু তিনি এসে মারইয়ামকে তাঁর পুত্রের সুসংবাদ দিয়েছিলেন, তাই বলা হয় 'তার রূহ' ।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন
সহীহ বুখারী - হাদীস নং ৪৩৫৭ | মুসলিম বাংলা