আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ
৫১- কুরআনের তাফসীর অধ্যায়
৪৩৪২। আবু ওয়ালিদ (রাহঃ) ......... হযরত বারা ইবনে আযিব (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, নিশ্চয়ই রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, কবরে মুসলমান ব্যক্তিকে যখন প্রশ্ন করা হবে, তখন সে সাক্ষ্য দিবে, “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াআন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ” আল্লাহর বাণীতে এর প্রতিই ইঙ্গিত করা হয়েছে। বাণীটি হল এইঃ يُثَبِّتُ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا بِالْقَوْلِ الثَّابِتِ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَفِي الآخِرَةِ
হাদীসের ব্যাখ্যাঃ
এখানে হাদীছটি সংক্ষিপ্তভাবে বর্ণিত হয়েছে। কবরে মুসলিম ব্যক্তিকে প্রশ্ন করা হলে সে কী উত্তর দেবে, কেবল ততটুকুরই উল্লেখ এ বর্ণনায় আছে। কী প্রশ্ন করা হবে, কে প্রশ্ন করবে, উত্তরের ফলাফল কী হবে তার উল্লেখ নেই। অন্যান্য বর্ণনায় বিস্তারিতভাবে তার উল্লেখ আছে। যেমন আবূ দাউদ শরীফের এক বর্ণনায় আছে ويأتيه ملكان فيجلسانه، فيقولان له: من ربك؟ فيقول: ربي الله، فيقولان له: ما دينك؟ فيقول: ديني الإسلام، فيقولان له: ما هذا الرجل الذي بعث فيكم؟ قال: فيقول: هو رسول الله صلى الله عليه وسلم، فيقولان: وما يدريك؟ فيقول: قرأت كتاب الله، فآمنت به وصدقت، زاد في حديث جرير : فذلك قول الله عز وجل يثبت الله الذين آمنوا [إبراهيم: ٢٧] "الآية ثم اتفقا قال: "فينادي مناد من السماء: أن قد صدق عبدي، فأفرشوه من الجنة، وافتحوا له بابا إلى الجنة، وألبسوه من الجنة ‘তার কাছে দু'জন ফিরিশতা আসবে। তারা তাকে বসাবে। তারপর তাকে জিজ্ঞেস করবে, তোমার রব্ব কে? সে বলবে, আমার রব্ব আল্লাহ। তারপর তারা তাকে জিজ্ঞেস করবে, তোমার দীন কী? সে বলবে, আমার দীন ইসলাম। তারপর তারা তাকে জিজ্ঞেস করবে, ওই ব্যক্তি কে, যাকে তোমাদের কাছে পাঠানো হয়েছিল? সে বলবে, তিনি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তারপর তারা তাকে জিজ্ঞেস করবে, তুমি তা কিভাবে জান? সে বলবে, আমি আল্লাহর কিতাব পড়েছি এবং তাঁর প্রতি ঈমান এনেছি ও তাঁকে সত্য বলে বিশ্বাস করেছি। এটাই আল্লাহ তা'আলার এ বাণীর মর্ম যে يُثَبِّتُ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا بِالْقَوْلِ الثَّابِتِ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَفِي الْآخِرَةِ (যারা ঈমান এনেছে আল্লাহ তাদেরকে এ সুদৃঢ় কথার উপর স্থিতি দান করেন দুনিয়ার জীবনেও এবং আখিরাতেও – সূরা ইবরাহীম : ২৭)। তারপর আসমান থেকে এক ঘোষণাকারী ঘোষণা করবে যে, আমার বান্দা সত্য বলেছে। তোমরা তাকে জান্নাতের বিছানা বিছিয়ে দাও, তার জন্য জান্নাতের দিকে একটি দুয়ার খুলে দাও এবং তাকে জান্নাতের পোশাক পরিয়ে দাও। একাধিক বর্ণনায় এ ফিরিশতাদ্বয়ের নাম বলা হয়েছে মুনকার ও নাকীর। হাদীছে যে আয়াতটি উল্লেখ করা হয়েছে তা দ্বারা বোঝা যায়, যারা সুদৃঢ় কথা অর্থাৎ কালেমায়ে তায়্যিবার উপর ঈমান আনবে, আল্লাহ তা'আলা তাদেরকে দুনিয়ায়ও দীনের উপর মজবুত রাখবেন অর্থাৎ প্রকৃত ঈমানদার কোনও পরিস্থিতিতেই বিভ্রান্তির শিকার হবে না। বিপথগামিতার কোনও ডাকে তারা সাড়া দেবে না। এমনিভাবে কবর ও হাশর তথা আখিরাতের প্রতিটি ঘাঁটিতে আল্লাহ তা'আলা তাদেরকে অবিচল রাখবেন। কবরের প্রশ্ন ও হাশরের ময়দানের বিভীষিকাময় পরিস্থিতি, কোনও অবস্থায়ই তারা দিশেহারা হবে না। আল্লাহ তা'আলা প্রতিটি ক্ষেত্রে তাদেরকে সাহায্য করবেন। কবর আখিরাতের প্রথম ঘাঁটি। এখানে যে ব্যক্তি মুনকার নাকীরের প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারবে, কবর তার জন্য জান্নাতের টুকরায় পরিণত হবে। এখানে যে শান্তি পেয়ে যাবে, পরবর্তী সকল ঘাঁটি তার জন্য আসান হয়ে যাবে। বিভিন্ন হাদীছ দ্বারা তা বোঝা যায়। আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে ওই সৌভাগ্যবানদের মধ্যে শামিল রাখুন। হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ ক. কবরের সাওয়াল-জাওয়াব সত্য। এতে বিশ্বাস রাখা জরুরি। খ. কবরে মুনকার-নাকীরের প্রশ্নের যাতে সঠিক উত্তর দেওয়া যায়, সে লক্ষ্যে আমাদের কর্তব্য কালেমায়ে তায়্যিবার প্রতি অবিচল ঈমান রাখা এবং এর দাবি অনুযায়ী শরী'আত মোতাবেক জীবনযাপন করা। আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে তাওফীক দিন।

তাহকীক:
তাহকীক নিষ্প্রয়োজন