আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ
৭- নামাযের অধ্যায়
৪৩১। আব্দুল্লাহ ইবনে ইউসুফ (রাহঃ) .... আবু কাতাদা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করলে সে যেন বসার পূর্বে দু’রাকআত নামায আদায় করে নেয়।
হাদীসের ব্যাখ্যাঃ
এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, নামায বা যে কোন কাজে মাসজিদে প্রবেশ করলে বসার পূর্বে তাহিয়্যাতুল মাসজিদের দু’রাকাত নামায পড়া রসূল স.-এর নির্দেশ। অবশ্য এ নির্দেশটি ফরয-ওয়াজিব নয় বরং মুস্তাহাব। আর দৈনন্দিন ১২ রাকাত ছুন্নাতে মুআক্কাদার তালিকায়ও রসূল স. এ নামাযের নাম উল্লেখ করেননি। (তিরমিযী: ৪১৫) আর দৈনন্দিন আবশ্যকীয় নামাযের তালিকায়ও রসূল স. এ নামাযের নাম উল্লেখ করেননি। (বুখারী-৪৪) তাই এ সবকিছু সামনে রেখে ইমামগণ এটাকে মুস্তাহাব নির্দেশ হিসেবে গণ্য করেছেন। ইমাম তিরমিযী রহ. বলেন, وَالعَمَلُ عَلَى هَذَا الحَدِيثِ عِنْدَ أَصْحَابِنَا: اسْتَحَبُّوا إِذَا دَخَلَ الرَّجُلُ المَسْجِدَ أَنْ لَا يَجْلِسَ حَتَّى يُصَلِّيَ رَكْعَتَيْنِ إِلَّا أَنْ يَكُونَ لَهُ عُذْرٌ এ হাদীসের উপর আমাদের সাথীদের আমল রয়েছে। কোন ব্যক্তি মাসজিদে প্রবেশ করলে বসার পূর্বে তার উপর দু’রাকাত নামায আদায় করাকে তারা মুস্তাহাব মনে করেন। তবে ওযর থাকলে ভিন্ন কথা। (তিরমিযী-৩১৬) ইমাম তিরমিযী রহ.-এর উক্তি থেকেও প্রমাণিত হয় যে, এটা মুস্তাহাব। সাথে সাথে সাহাবায়ে কিরাম এবং তাবিঈদের আমল থেকেও পরিস্কার হয়ে যায় যে, এটা আবশ্যকীয় নামায নয়। এ বিষয়ের প্রমাণ তুলে ধরতে সাহাবায়ে কিরাম এবং তাবিঈদের আমল সংক্রান্ত কিছু বর্ণনা নিম্নে পেশ করা হলো: حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ مَهْدِيٍّ، عَنْ مُعَاوِيَةَ يَعْنِي ابْنَ صَالِحٍ، عَنْ أَبِي الزَّاهِرِيَّةِ، قَالَ: كُنْتُ جَالِسًا مَعَ عَبْدِ اللهِ بْنِ بُسْرٍ يَوْمَ الْجُمُعَةِ، فَجَاءَ رَجُلٌ يَتَخَطَّى رِقَابَ النَّاسِ وَرَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَخْطُبُ، فَقَالَ: اجْلِسْ فَقَدْ آذَيْتَ، وَآنَيْتَ. অনুবাদ : হযরত আবু যাহরিয়া রহ. বলেন, জুমআর দিনে আমি হযরত আব্দুল্লাহ বিন বুসর রা.-এর নিকট বসা ছিলাম। তিনি বললেন, রসূল স. খুৎবারত অবস্থায় এক লোক মানুষের গর্দান ডিঙ্গিয়ে সামনে অগ্রসর হচ্ছিলো। তখন রসূলুল্লাহ স. তাকে বললেন: তুমি বসে পড়ো। তুমি মানুষকে কষ্ট দিচ্ছো এবং বিলম্ব করে ফেলেছো। (মুসনাদে আহমাদ: ১৭৬৯৭, আবু দাউদ: ১১১৮, নাসাঈ: ১৪০২, ত্বহাবী: খ--১, পৃষ্ঠা-২৫১, হাদীস নং-২১৫৬) হাদীসটির স্তর: সহীহ। শায়খ শুআইব আরনাউত রহ. বলেন, إسناده صحيح على شرط مسلم. “হাদীসটির সনদ মুসলিমের শর্তে সহীহ”। (মুসনাদে আহমাদ: ১৭৬৯৭ নং হাদীসের আলোচনায়) হাকেম এবং ইমাম জাহাবী রহ.ও এ হাদীসের ব্যাপারে অনুরূপ মনত্মব্য করেছেন। (মুসতাদরাকে হাকেম: ১০৬১) এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, তাহিয়্যাতুল মাসজিদের নামায পড়া জরুরী নয়। অন্যথায় রসূল স. আগত লোকটিকে বসতে না বলে আগে দু’রাকাত নামায পড়তে বলতেন। حَدَّثَنَا عَبْدُ الْعَزِيزِ بْنُ مُحَمَّدٍ الدَّرَاوَرْدِيُّ، عَنْ زَيْدِ بْنِ أَسْلَمَ، قَالَ: كَانَ أَصْحَابُ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم يَدْخُلُونَ الْمَسْجِدَ، ثُمَّ يَخْرُجُونَ وَلاَ يُصَلُّونَ، قَالَ: وَرَأَيْت ابْنَ عُمَرَ يَفْعَلُهُ. অনুবাদ : হযরত যায়েদ বিন আসলাম রহ. বলেন, রসূলুল্লাহ স.-এর সাহাবাগণ মাসজিদে প্রবেশ করতেন, অতঃপর বের হয়ে আসতেন। অথচ কোন নামায আদায় করতেন না। তিনি বলেন, আমি হযরত ইবনে উমার রা.কে এমন করতে দেখেছি। (ইবনে আবী শাইবা: ৩৪৪৭) হাদীসটির স্তর: সহীহ মাউকূফ। হাদীসটির সকল রাবীই বুখারী-মুসলিমের রাবী। حَدَّثَنَا وَكِيعٌ، عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ سَعِيدِ بْنِ أَبِي هِنْدٍ، عَنْ نَافِعٍ؛ أَنَّ ابْنَ عُمَرَ كَانَ يَمُرُّ فِي الْمَسْجِدِ، وَلاَ يُصَلِّي فِيهِ. অনুবাদ : হযরত নাফে’ রহ. বলেন, হযরত ইবনে উমার রা. মাসজিদের ভেতর দিয়ে অতিক্রম করতেন অথচ সেখানে নামায পড়তেন না। (ইবনে আবী শাইবা-৩৪৪৮) হাদীসটির স্তর : সহীহ, মাউকূফ। হাদীসটির সকল রাবীই বুখারী-মুসলিমের রাবী। حَدَّثَنَا مَرْوَانُ بْنُ مُعَاوِيَةَ، عَنِ ابْنِ عَوْنٍ، قَالَ: مَرَرْتُ مَعَ الشَّعْبِيِّ فِي مَسْجِدِ الْكُوفَةِ، فَقُلْتُ لَهُ: أَلاَّ تُصَلِّي ؟ قَالَ: إذنْ وَرَبِّي لاَ نَزَالُ نُصَلِّي. অনুবাদ : হযরত আব্দুলস্নাহ বিন আওন রহ. বলেন, আমি ইমাম শা’বী রহ.-এর সাথে কুফার মাসজিদের ভেতর দিয়ে অতিক্রম করলাম। আমি তাঁকে বললাম, আপনি নামায পড়বেন না? তিনি বললেন, রবের কসম, তাহলে তো আমি সর্বদা নামাযই পড়তে থাকবো। (ইবনে আবী শাইবা-৩৪৪৯) হাদীসটির স্তর: সহীহ, মাউকূফ। হাদীসটির সকল রাবীই বুখারী-মুসলিমের রাবী। সাহাবায়ে কিরাম এবং তাবিঈগণের উপরিউক্ত আমল ও মনত্মব্য থেকে প্রমাণিত হয় যে, তাহিয়্যাতুল মাসজিদের নামায পড়া জরুরী নয়। অনুরূপ আমল হযরত সালেম এবং সুআইদ বিন গাফালা রহ. থেকেও বর্ণিত রয়েছে। (ইবনে আবী শাইবা-৩৪৫০ ও ৩৪৫১)

তাহকীক:
তাহকীক নিষ্প্রয়োজন