আল মুওয়াত্তা - ইমাম মালিক রহঃ
৬০. মযলুমের বদদোয়া
হাদীস নং: ১৮৮৮
১. মযলুমের বদ দোয়া হইতে বাচিয়া থাকা প্রসঙ্গে
রেওয়ায়ত ১. আসলাম (রাহঃ) হইতে বর্ণিত, উমর ইবনে খাত্তাব (রাযিঃ) স্বীয় আযাদকৃত গোলাম, যাহাকে হুনী বলা হইত, সরকারী চারণভূমিতে (রক্ষক) নিযুক্ত করিলেন এবং বলিলেন, হে হুনী! জনসাধারণের দিক হইতে স্বীয় বাহু সংকুচিত কর (তাহাদের উপর যুলুম করিও না), মযলুমের (অত্যাচারিতের) বদ দোয়াকে ভয় কর। কেননা মযলুমের দোয়া কবুল হয়। যাহাদের নিকট সূরাইম (অল্প সংখ্যক উট) এবং গুণাইম (অল্প সংখ্যক ছাগল) আছে তাহাদেরকে উহা (সরকারী চারণভূমিতে) চরাইতে বাধা দিও না। (উসমান) ইবনে আফফান (রাযিঃ) ও (আব্দুর রহমান) ইবনে আউফ (রাযিঃ)-এর জানোয়ারের প্রতি রেওয়ায়ত করিবে না। কেননা তাঁহাদের জানোয়ার ধ্বংস হইয়া গেলে তাহাদের বিশেষ ক্ষতি হইবে না, তখন তাহারা মদীনায় নিজেদের বাগানে এবং ক্ষেত-খামারে চলিয়া যাইবে। কিন্তু কয়েকটি উট ও ছাগলওয়ালা (এই পশুসম্পদ) ধ্বংস হইয়া গেলে তাহারা তাহাদের সন্তানাদি লইয়া আমার নিকট আসিবে এবং ‘হে আমীরুল মু’মিনীন’ বলিয়া ডাক দিবে, তখন কি আমি তাহদেরকে (কিছু না দিয়া এমনিই) ছাড়িয়া দিব? পানি ও ঘাস দেওয়া স্বর্ণ ও রৌপ্য দেওয়ার তুলনায় আমার কাছে খুবই সহজ। আল্লাহর কসম! যাহারা মনে করিবে যে, আমি তাহাদের উপর যুলুম করিয়াছি, অথচ এই শহর এই পানি তাহাদেরই, ইহারই জন্য তাহারা অন্ধকার যুগে যুদ্ধ করিয়াছে এবং পরে ইসলাম গ্রহণ করিয়াছে। সেই পবিত্ৰ সত্তার কসম, যাহার হাতে আমার প্রাণ রহিয়াছে, যদি সাদ্কার এই উটগুলি না হইত যাহার উপর আমি মুজাহিদীনকে সওয়ার করাই, তাহা হইলে তাহাদের যমীন হইতে আমি এক বিঘতও গ্রহণ করিতাম না।
باب مَا يُتَّقَى مِنْ دَعْوَةِ الْمَظْلُومِ
حَدَّثَنِي عَنْ مَالِك عَنْ زَيْدِ بْنِ أَسْلَمَ عَنْ أَبِيهِ أَنَّ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ اسْتَعْمَلَ مَوْلًى لَهُ يُدْعَى هُنَيًّا عَلَى الْحِمَى فَقَالَ يَا هُنَيُّ اضْمُمْ جَنَاحَكَ عَنْ النَّاسِ وَاتَّقِ دَعْوَةَ الْمَظْلُومِ فَإِنَّ دَعْوَةَ الْمَظْلُومِ مُجَابَةٌ وَأَدْخِلْ رَبَّ الصُّرَيْمَةِ وَرَبَّ الْغُنَيْمَةِ وَإِيَّايَ وَنَعَمَ ابْنِ عَفَّانَ وَابْنِ عَوْفٍ فَإِنَّهُمَا إِنْ تَهْلِكْ مَاشِيَتُهُمَا يَرْجِعَانِ إِلَى الْمَدِينَةِ إِلَى زَرْعٍ وَنَخْلٍ وَإِنَّ رَبَّ الصُّرَيْمَةِ وَالْغُنَيْمَةِ إِنْ تَهْلِكْ مَاشِيَتُهُ يَأْتِنِي بِبَنِيهِ فَيَقُولُ يَا أَمِيرَ الْمُؤْمِنِينَ يَا أَمِيرَ الْمُؤْمِنِينَ أَفَتَارِكُهُمْ أَنَا لَا أَبَا لَكَ فَالْمَاءُ وَالْكَلَأُ أَيْسَرُ عَلَيَّ مِنْ الذَّهَبِ وَالْوَرِقِ وَايْمُ اللَّهِ إِنَّهُمْ لَيَرَوْنَ أَنِّي قَدْ ظَلَمْتُهُمْ إِنَّهَا لَبِلَادُهُمْ وَمِيَاهُهُمْ قَاتَلُوا عَلَيْهَا فِي الْجَاهِلِيَّةِ وَأَسْلَمُوا عَلَيْهَا فِي الْإِسْلَامِ وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَوْلَا الْمَالُ الَّذِي أَحْمِلُ عَلَيْهِ فِي سَبِيلِ اللَّهِ مَا حَمَيْتُ عَلَيْهِمْ مِنْ بِلَادِهِمْ شِبْرًا
হাদীসের ব্যাখ্যা:
জুলুম পরিহার ও মজলূমের বদদুআ থেকে বাঁচার হুকুম
ইরশাদ হয়েছেঃ-
'আর মাজলূমদের দুআকে (অর্থাৎ বদদুআকে) ভয় করবে, কেননা মযলুমের দোয়া কবুল হয়।'
উপদেশটি দেওয়া হয়েছে ব্যাপক শব্দে। অর্থাৎ সর্বপ্রকার জুলুমই পরিহার করে চলবে। কারও প্রতি নয়। কেননা তুমি যার প্রতিই জুলুম কর না কেন, সেই তো মাজলূম হবে। আর মাজলূম ব্যক্তি যদি আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ জানায় এবং জালেমের বিরুদ্ধে তাঁর কাছে দু'আ করে, তবে তা অবশ্যই কবূল হয়।
মজলুম ব্যক্তি যেমনই হোক না কেন, তার বদদুআ কবূল হয়-ই। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনঃ-
دعوة المظلوم مستجابة وإن كان فاجرا ففجوره على نفسه
'মজলূমের দুআ অবশ্যই কবুল হয়, যদিও সে পাপিষ্ঠ হয়। তার পাপাচারের দায় তার নিজের।' (মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ৮৭৮০। মুসনাদ আবূ দাউদ ওয়ালিসী, হাদীছ নং ২৪৫০)
কেউ প্রশ্ন করতে পারে, আমরা তো অনেক সময় দেখি মজলূম ব্যক্তি বদদু‘আ করছে অথচ জালেমের কিছুই হচ্ছে না?
এর উত্তর এই যে, বান্দা দু'আ করে তার নিজ বুঝ অনুযায়ী আর আল্লাহ তা'আলা তা কবূল করেন নিজ শান অনুযায়ী। সুতরাং বান্দার কল্যাণার্থে কখনও তিনি বান্দা যা চায় তাই দিয়ে দেন, কখনও তা না দিয়ে অন্যকিছু দেন, হয়তো তার থেকে কোনও বিপদ দূর করেন অথবা তা আখিরাতের জন্য সঞ্চিত রাখেন। বান্দা আখিরাতে সেই সঞ্চিত দু'আর প্রতিদান দেখে এই বলে আক্ষেপ করবে যে, আহা, দুনিয়ায় যদি আমার কোনও দু‘আই কবূল না হত।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. মজলূমের বদদু'আ অবশ্যই কবুল হয়। তাই প্রত্যেকের সতর্ক থাকা উচিত, যাতে তার পক্ষ থেকে কারও প্রতি কোনওভাবেই জুলুম না হয়ে যায়।
ইরশাদ হয়েছেঃ-
'আর মাজলূমদের দুআকে (অর্থাৎ বদদুআকে) ভয় করবে, কেননা মযলুমের দোয়া কবুল হয়।'
উপদেশটি দেওয়া হয়েছে ব্যাপক শব্দে। অর্থাৎ সর্বপ্রকার জুলুমই পরিহার করে চলবে। কারও প্রতি নয়। কেননা তুমি যার প্রতিই জুলুম কর না কেন, সেই তো মাজলূম হবে। আর মাজলূম ব্যক্তি যদি আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ জানায় এবং জালেমের বিরুদ্ধে তাঁর কাছে দু'আ করে, তবে তা অবশ্যই কবূল হয়।
মজলুম ব্যক্তি যেমনই হোক না কেন, তার বদদুআ কবূল হয়-ই। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনঃ-
دعوة المظلوم مستجابة وإن كان فاجرا ففجوره على نفسه
'মজলূমের দুআ অবশ্যই কবুল হয়, যদিও সে পাপিষ্ঠ হয়। তার পাপাচারের দায় তার নিজের।' (মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ৮৭৮০। মুসনাদ আবূ দাউদ ওয়ালিসী, হাদীছ নং ২৪৫০)
কেউ প্রশ্ন করতে পারে, আমরা তো অনেক সময় দেখি মজলূম ব্যক্তি বদদু‘আ করছে অথচ জালেমের কিছুই হচ্ছে না?
এর উত্তর এই যে, বান্দা দু'আ করে তার নিজ বুঝ অনুযায়ী আর আল্লাহ তা'আলা তা কবূল করেন নিজ শান অনুযায়ী। সুতরাং বান্দার কল্যাণার্থে কখনও তিনি বান্দা যা চায় তাই দিয়ে দেন, কখনও তা না দিয়ে অন্যকিছু দেন, হয়তো তার থেকে কোনও বিপদ দূর করেন অথবা তা আখিরাতের জন্য সঞ্চিত রাখেন। বান্দা আখিরাতে সেই সঞ্চিত দু'আর প্রতিদান দেখে এই বলে আক্ষেপ করবে যে, আহা, দুনিয়ায় যদি আমার কোনও দু‘আই কবূল না হত।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. মজলূমের বদদু'আ অবশ্যই কবুল হয়। তাই প্রত্যেকের সতর্ক থাকা উচিত, যাতে তার পক্ষ থেকে কারও প্রতি কোনওভাবেই জুলুম না হয়ে যায়।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)


বর্ণনাকারী: