আল মুওয়াত্তা - ইমাম মালিক রহঃ

৫৪. ঘরে প্রবেশের অনুমতি গ্রহণ বিষয়ক অধ্যায়

হাদীস নং: ১৭৯৭
১. ঘরে প্রবেশ করার অনুমতি প্রসঙ্গ
রেওয়ায়ত ৩. রবীয়া ইবনে আব্দুর রহমান (রাহঃ) এবং আরো অনেক আলিম হইতে বর্ণিত, আবু মুসা আশ’আরী (রাযিঃ) উমর ইবনে খাত্তাব (রাযিঃ)-এর ঘরে প্রবেশ করার জন্য তিনবার অনুমতি প্রার্থনা করিলেন। তিনবারেও অনুমতি না পাইয়া তিনি ফিরিয়া গেলেন। উমর ইবনে খাত্তাব (রাযিঃ) তাহাকে (আবু মুসাকে) ডাকিয়া আনিবার জন্য তাহার পিছনে মানুষ প্রেরণ করিলেন। অতঃপর তিনি আসার পর উমর (রাযিঃ) জিজ্ঞাসা করিলেন, তুমি ঘরে প্রবেশ করিলে না কেন? আবু মুসা (রাযিঃ) বলিলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর নিকট শ্রবণ করিয়াছি, তিনি বলিয়াছেন, তিনবার অনুমতি চাহিতে হয়। অনুমতি দিলে প্রবেশ কর, অন্যথায় ফিরিয়া যাও।

অতঃপর উমর ইবনে খাত্তাব (রাযিঃ) বলিলেন, তুমি ছাড়া এই হাদীস আর কেহ শ্রবণ করিয়াছে কি? যে শ্ৰবণ করিয়াছে তাহাকে লইয়া আস। যদি তুমি তাহা না কর, তবে আমি তোমাকে শাস্তি দিব। অবশেষে আবু মুসা বাহির হইয়া আসিলেন যে, মসজিদে অনেক লোক বসা আছে। ইহারা সকলেই আনসারগণের এক মজলিসে বসিয়াছিল। সেখানে যাইয়া (আবু মুসা আশ’আরী) বলিলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিকট শ্রবণ করিয়াছি, তিনি বলিয়াছেন যে, (ঘরে প্রবেশ করার জন্য) তিনবার অনুমতি চাহিতে হয়। অনুমতি পাইলে প্রবেশ করিবে অন্যথায় ফিরিয়া যাইবে।

আমি উমর ইবনে খাত্তাব (রাযিঃ)-এর নিকট এই হাদীস বর্ণনা করার পর তিনি বলিলেন, এই হাদীস অপর কেহ শ্রবণ করিলে তাহাকে লইয়া আস নতুবা আমি তোমাকে শাস্তি দিব। অতএব তোমাদের মধ্যে যদি কেহ এই হাদীস শ্রবণ করিয়া থাক, তবে (মেহেরবাণী করিয়া) আমার সঙ্গে আস। (উপস্থিত) সকলেই আবু সাঈদ খুদরী (রাযিঃ)-কে বলিল, তুমি যাও। আবু সাঈদ খুদরী (রাযিঃ) তাঁহাদের মধ্যে বয়সে সকলের ছোট ছিলেন। অতঃপর আবু সাঈদ (রাযিঃ) আবু মুসা (রাযিঃ)-এর সঙ্গে উমর ইবনে খাত্তাব (রাযিঃ)-এর নিকট আসিয়া উক্ত হাদীস বর্ণনা করিলেন। অতঃপর উমর (রাযিঃ) আবু মুসা আশ’আরীকে বলিলেন, আমি তোমাকে মিথ্যাবাদী বলিয়া মনে করি নাই। তবে আমার ভয় ছিল যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলয়হি ওয়া সাল্লামের হাদীসের সাথে কেহ অন্য কোন কথা সংযোজন করিবে।*
باب الْاسْتِئْذَانِ
وَحَدَّثَنِي مَالِك عَنْ رَبِيعَةَ بْنِ أَبِي عَبْدِ الرَّحْمَنِ عَنْ غَيْرِ وَاحِدٍ مِنْ عُلَمَائِهِمْ أَنَّ أَبَا مُوسَى الْأَشْعَرِيَّ جَاءَ يَسْتَأْذِنُ عَلَى عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ فَاسْتَأْذَنَ ثَلَاثًا ثُمَّ رَجَعَ فَأَرْسَلَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ فِي أَثَرِهِ فَقَالَ مَا لَكَ لَمْ تَدْخُلْ فَقَالَ أَبُو مُوسَى سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ الْاسْتِئْذَانُ ثَلَاثٌ فَإِنْ أُذِنَ لَكَ فَادْخُلْ وَإِلَّا فَارْجِعْ فَقَالَ عُمَرُ وَمَنْ يَعْلَمُ هَذَا لَئِنْ لَمْ تَأْتِنِي بِمَنْ يَعْلَمُ ذَلِكَ لَأَفْعَلَنَّ بِكَ كَذَا وَكَذَا فَخَرَجَ أَبُو مُوسَى حَتَّى جَاءَ مَجْلِسًا فِي الْمَسْجِدِ يُقَالُ لَهُ مَجْلِسُ الْأَنْصَارِ فَقَالَ إِنِّي أَخْبَرْتُ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ أَنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ الْاسْتِئْذَانُ ثَلَاثٌ فَإِنْ أُذِنَ لَكَ فَادْخُلْ وَإِلَّا فَارْجِعْ فَقَالَ لَئِنْ لَمْ تَأْتِنِي بِمَنْ يَعْلَمُ هَذَا لَأَفْعَلَنَّ بِكَ كَذَا وَكَذَا فَإِنْ كَانَ سَمِعَ ذَلِكَ أَحَدٌ مِنْكُمْ فَلْيَقُمْ مَعِي فَقَالُوا لِأَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ قُمْ مَعَهُ وَكَانَ أَبُو سَعِيدٍ أَصْغَرَهُمْ فَقَامَ مَعَهُ فَأَخْبَرَ بِذَلِكَ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ فَقَالَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ لِأَبِي مُوسَى أَمَا إِنِّي لَمْ أَتَّهِمْكَ وَلَكِنْ خَشِيتُ أَنْ يَتَقَوَّلَ النَّاسُ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ

হাদীসের ব্যাখ্যা:

বস্তুত এটা ছিল হযরত উমর ফারুক রাযি.-এর দূরদর্শীতা ও হাদীছ বিষয়ে তাঁর কঠোর সতর্কতা। হযরত আবূ মূসা রাযি.-এর বিশ্বস্ততায় তাঁর কোনও সন্দেহ ছিল না। কিন্তু হাদীছ যেহেতু শরী'আতের দলীল, তাই এর বর্ণনায় যাতে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হয় সেটাই ছিল তাঁর লক্ষ্যবস্তু। তাঁর আমলে তিনি ছিলেন সমগ্র উম্মতের অভিভাবক। তাই উম্মতের দীন ও দুনিয়া উভয় বিষয়ে তাঁর সতর্ক অবস্থান বাঞ্ছনীয় ছিল। বিশেষত এ শরী'আত যেহেতু সর্বশেষ শরী'আত, তাই কিয়ামত পর্যন্ত এর সুরক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণ করা উম্মতের উলামা ও শাসকবর্গের অপরিহার্য কর্তব্য ছিল। সাহাবায়ে কেরাম থেকে শুরু করে পরবর্তী শত শত বছর উম্মতের দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গ এ কর্তব্য যথাযথভাবে পালন করে এসেছে। ফলে আজ এ আখেরী শরী'আত ও এর উৎস কুরআন-সুন্নাহ যথাযথভাবে সংরক্ষিত আছে।

যাহোক অনুমতি চাওয়ার সর্বোচ্চ সীমা হল তিনবার। তিনবারের পর আর অনুমতি চাওয়া সঙ্গত নয়। এটা পীড়াপীড়ির মধ্যে পড়ে। কাউকে পীড়াপীড়ি করে কষ্ট দেওয়া উচিত না। অনুমতি চাইলে যে অনুমতি দিতেই হবে এর কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। মানুষের নানারকম ওজর থাকতে পারে। হয়তো এমন সময় অনুমতি চাওয়া হয়েছে, যখন অনুমতি দেওয়াটা সম্ভব নয়। তা দিতে গেলে বিশেষ কষ্ট বা পেরেশানি হবে। সাক্ষাৎপ্রার্থীর উচিত মানুষের কষ্ট-ক্লেশ বা ওজর-অজুহাতকে সম্মান দেওয়া এবং অনুমতি না পাওয়াকে সহজভাবে গ্রহণ করা। হাঁ, সাক্ষাৎপ্রার্থীর প্রয়োজনও বিশেষ জরুরি হতে পারে। তাই যথাসম্ভব অনুমতি দেওয়া বাঞ্ছনীয়। কঠিন ওজর না থাকলে তাকে ফিরিয়ে দেওয়া সঙ্গত নয়।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. কারও সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চাইলে আগে অনুমতি নেওয়া জরুরি।

খ. অনুমতি চাওয়ার সর্বোচ্চ সীমা তিনবার। তৃতীয়বারেও অনুমতি পাওয়া না গেলে ফিরে যেতে হবে। চতুর্থ বার অনুমতি চাওয়া বিধিসম্মত নয়।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
rabi
বর্ণনাকারী:
মুওয়াত্তা মালিক - হাদীস নং ১৭৯৭ | মুসলিম বাংলা