আল মুওয়াত্তা - ইমাম মালিক রহঃ
৪৯. রাসূলুল্লাহ ﷺ এর হুলিয়া মুবারক
হাদীস নং: ১৭৩৭
১০. পানাহার সম্বন্ধীয় বিবিধ বর্ণনা
রেওয়ায়ত ৩২. আবু নঈম ওয়াহব ইবনে কাইসান (রাহঃ) জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রাযিঃ) হইতে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি সাল্লামের নিকট খাবার আনয়ন করা হইল। তাহার সহিত তাহার পালক ছেলে উমর ইবনে আবী সালামাও ছিলেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁহাকে বলিলেন, বিসমিল্লাহ বলিয়া তোমার সামনের দিক হইতে খাও।
جَامِعِ مَا جَاءَ فِي الطَّعَامِ وَالشَّرَابِ
وَحَدَّثَنِي عَنْ مَالِك عَنْ أَبِي نُعَيْمٍ وَهْبِ بْنِ كَيْسَانَ قَالَ أُتِيَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِطَعَامٍ وَمَعَهُ رَبِيبُهُ عُمَرُ بْنُ أَبِي سَلَمَةَ فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَمِّ اللَّهَ وَكُلْ مِمَّا يَلِيكَ
হাদীসের ব্যাখ্যা:
পানাহারের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা
পানাহারের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা সুন্নত। পূর্ণ বাক্যটি বললে ভালো। শুধু বিসমিল্লাহ বললেও সুন্নত আদায় হয়ে যায়। যদি শুরুতে বিসমিল্লাহ বলতে মনে না থাকে, তবে মাঝখানে যখন স্মরণ হয় তখন বলা চাই-- بسم الله أوله وآخره । এ প্রসঙ্গে হযরত উমাইয়া ইবন মাখশী রাযি. থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি একদিন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে বসা ছিলেন। তখন এক ব্যক্তি খাবার খাচ্ছিল। সে শুরুতে বিসমিল্লাহ বলেনি। যখন খাবারের মাত্র এক লোকমা অবশিষ্ট থাকে, তখন তার বিসমিল্লাহ না বলার কথা মনে পড়ে। অমনি বলে ওঠে بسم الله أوله وآخره এবং এই বলে শেষ লোকমাটি মুখে দেয়। তা দেখে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হেসে দেন। তারপর বলেন ما زال الشيطان يأكل معه، فلما ذكر اسم الله عز وجل استقاء ما في بطنه “এতক্ষণ শয়তান তার সঙ্গে খেয়ে যাচ্ছিল। যেই না সে আল্লাহর নাম নিল, অমনি সে তার পেটে যা ছিল সব বমি করে ফেলে দিল।
বোঝা গেল বিসমিল্লাহ না বললে শয়তান পানাহারে শরীক হয়ে যায়। হযরত হুযায়ফা রাযি. থেকে বর্ণিত আছে, একবার আমরা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে খানা খাওয়ায় উপস্থিত ছিলাম। এ অবস্থায় একটি বালিকা খাদ্যে হাত দিতে গেলে তিনি তার হাত ধরে ফেললেন। তারপর এক বেদুঈন এসে হাত দিতে গেলে তিনি তারও হাত ধরে ফেললেন। তারপর বললেন إن الشيطان يستحل الطعام أن لا يذكر اسم الله عليه، وإنه جاء بهذه الجارية ليستحل بها فأخذت بيدها، فجاء بهذا الأعرابي ليستحل به فأخذت بيده، والذي نفسي بيده، إن يده في يدي مع يديهما 'আল্লাহর নাম নেওয়া না হলে শয়তান খাবারে ঢুকে পড়ে। সে এই বালিকাটির সঙ্গে এসে খাবারে শরীক হতে চেয়েছিল। তাই আমি তার হাত ধরে ফেললাম। তারপর সে এই বেদুঈনের সঙ্গে এসে খাবারে শরীক হতে চাইল। তাই আমি তারও হাত ধরে ফেললাম। সেই আল্লাহর কসম, যার হাতে আমার প্রাণ! এদের দুজনের হাতের সঙ্গে তার হাতও আমার হাতের মধ্যে আছে।
বিসমিল্লাহ বলার দ্বারা যেমন শয়তানকে তাড়ানো হয়, তেমনি এর দ্বারা আল্লাহ তাআলার নিআমতের একরকম মূল্যায়ন ও শোকরও আদায় করা হয়। আল্লাহ তাআলাই মাখলুকের রিযিকদাতা। খাদ্যদ্রব্যের উৎপাদন ও সংগ্রহে মানুষের যতই চেষ্টা থাকুক না কেন, তার প্রকৃত দাতা আল্লাহ তাআলাই। তাই যে-কোনও খাবার বা পানীয় মুখে নেওয়ার আগে বিসমিল্লাহ বলা চাই। এর দ্বারা যেন আল্লাহ তাআলাকে লক্ষ্য করে বলা হয় যে, হে আল্লাহ! এ খাবার ও পানীয় তোমারই দান। তাই আমি তোমার নামেই খাওয়া শুরু করছি। তুমি এতে বরকত দিও এবং একে আমার জন্য উপকারী করো।
বিসমিল্লাহ বলার দ্বারা খাওয়ার কাজটি ছাওয়াবের কাজে পরিণত হয়ে যায়, কেবল দুনিয়ারী কাজ থাকে না।
নিজের সম্মুখ থেকে খাওয়া
অর্থাৎ কয়েকজন মিলে এক পাত্রে খেতে বসলে প্রত্যেকে যার যার সম্মুখ থেকে খাবে, একজন আরেকজনের সম্মুখ থেকে নয়। হাদীসে আছে উমর ইবন আবূ সালামা রাযি. অল্পবয়সের বালক ছিলেন। খাওয়ার আদব-কায়দা জানা ছিল না। তাই একবার এখান থেকে, একবার ওখান থেকে পসন্দ মত নিয়ে নিচ্ছিলেন। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শিক্ষা দিলেন, খোকা, নিজের সামনে থেকে খাও।
সম্মিলিত খাবারের পাত্রে এখানে-ওখানে হাত দিলে তা দেখতে যেমন খারাপ দেখা যায়, তেমনি তা লোভেরও পরিচায়ক। এটা অন্যের পক্ষেও অরুচিকর। অবশ্য একই পাত্রে বিভিন্নরকম খাবার থাকলে ভিন্ন কথা। তখন রুচিমত বিভিন্ন স্থান থেকে খাওয়া যাবে।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছ দ্বারা শিক্ষা পাওয়া যায় যে, ছেলেমেয়েকে ছোটবেলা থেকেই ইসলামী আদব-কায়দা শিক্ষা দেওয়া চাই।
খ. খাওয়ার আগে বিসমিল্লাহ বলা সুন্নত।
গ. শুরুতে বিসমিল্লাহ বলতে ভুলে গেলে মাঝখানে যখন স্মরণ হয় তখন بسم الله أوله وآخره বলে নেওয়া চাই।
ঘ. কয়েকজন এক পাত্রে খেতে বসলে প্রত্যেকের উচিত নিজের নিজের কাছ থেকে খাওয়া।
ঙ. কাউকে কোনও ভুলচুক করতে দেখলে তা সংশোধন করে দেওয়া চাই, এমনকি খাবারের সময়ও।
পানাহারের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা সুন্নত। পূর্ণ বাক্যটি বললে ভালো। শুধু বিসমিল্লাহ বললেও সুন্নত আদায় হয়ে যায়। যদি শুরুতে বিসমিল্লাহ বলতে মনে না থাকে, তবে মাঝখানে যখন স্মরণ হয় তখন বলা চাই-- بسم الله أوله وآخره । এ প্রসঙ্গে হযরত উমাইয়া ইবন মাখশী রাযি. থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি একদিন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে বসা ছিলেন। তখন এক ব্যক্তি খাবার খাচ্ছিল। সে শুরুতে বিসমিল্লাহ বলেনি। যখন খাবারের মাত্র এক লোকমা অবশিষ্ট থাকে, তখন তার বিসমিল্লাহ না বলার কথা মনে পড়ে। অমনি বলে ওঠে بسم الله أوله وآخره এবং এই বলে শেষ লোকমাটি মুখে দেয়। তা দেখে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হেসে দেন। তারপর বলেন ما زال الشيطان يأكل معه، فلما ذكر اسم الله عز وجل استقاء ما في بطنه “এতক্ষণ শয়তান তার সঙ্গে খেয়ে যাচ্ছিল। যেই না সে আল্লাহর নাম নিল, অমনি সে তার পেটে যা ছিল সব বমি করে ফেলে দিল।
বোঝা গেল বিসমিল্লাহ না বললে শয়তান পানাহারে শরীক হয়ে যায়। হযরত হুযায়ফা রাযি. থেকে বর্ণিত আছে, একবার আমরা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে খানা খাওয়ায় উপস্থিত ছিলাম। এ অবস্থায় একটি বালিকা খাদ্যে হাত দিতে গেলে তিনি তার হাত ধরে ফেললেন। তারপর এক বেদুঈন এসে হাত দিতে গেলে তিনি তারও হাত ধরে ফেললেন। তারপর বললেন إن الشيطان يستحل الطعام أن لا يذكر اسم الله عليه، وإنه جاء بهذه الجارية ليستحل بها فأخذت بيدها، فجاء بهذا الأعرابي ليستحل به فأخذت بيده، والذي نفسي بيده، إن يده في يدي مع يديهما 'আল্লাহর নাম নেওয়া না হলে শয়তান খাবারে ঢুকে পড়ে। সে এই বালিকাটির সঙ্গে এসে খাবারে শরীক হতে চেয়েছিল। তাই আমি তার হাত ধরে ফেললাম। তারপর সে এই বেদুঈনের সঙ্গে এসে খাবারে শরীক হতে চাইল। তাই আমি তারও হাত ধরে ফেললাম। সেই আল্লাহর কসম, যার হাতে আমার প্রাণ! এদের দুজনের হাতের সঙ্গে তার হাতও আমার হাতের মধ্যে আছে।
বিসমিল্লাহ বলার দ্বারা যেমন শয়তানকে তাড়ানো হয়, তেমনি এর দ্বারা আল্লাহ তাআলার নিআমতের একরকম মূল্যায়ন ও শোকরও আদায় করা হয়। আল্লাহ তাআলাই মাখলুকের রিযিকদাতা। খাদ্যদ্রব্যের উৎপাদন ও সংগ্রহে মানুষের যতই চেষ্টা থাকুক না কেন, তার প্রকৃত দাতা আল্লাহ তাআলাই। তাই যে-কোনও খাবার বা পানীয় মুখে নেওয়ার আগে বিসমিল্লাহ বলা চাই। এর দ্বারা যেন আল্লাহ তাআলাকে লক্ষ্য করে বলা হয় যে, হে আল্লাহ! এ খাবার ও পানীয় তোমারই দান। তাই আমি তোমার নামেই খাওয়া শুরু করছি। তুমি এতে বরকত দিও এবং একে আমার জন্য উপকারী করো।
বিসমিল্লাহ বলার দ্বারা খাওয়ার কাজটি ছাওয়াবের কাজে পরিণত হয়ে যায়, কেবল দুনিয়ারী কাজ থাকে না।
নিজের সম্মুখ থেকে খাওয়া
অর্থাৎ কয়েকজন মিলে এক পাত্রে খেতে বসলে প্রত্যেকে যার যার সম্মুখ থেকে খাবে, একজন আরেকজনের সম্মুখ থেকে নয়। হাদীসে আছে উমর ইবন আবূ সালামা রাযি. অল্পবয়সের বালক ছিলেন। খাওয়ার আদব-কায়দা জানা ছিল না। তাই একবার এখান থেকে, একবার ওখান থেকে পসন্দ মত নিয়ে নিচ্ছিলেন। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শিক্ষা দিলেন, খোকা, নিজের সামনে থেকে খাও।
সম্মিলিত খাবারের পাত্রে এখানে-ওখানে হাত দিলে তা দেখতে যেমন খারাপ দেখা যায়, তেমনি তা লোভেরও পরিচায়ক। এটা অন্যের পক্ষেও অরুচিকর। অবশ্য একই পাত্রে বিভিন্নরকম খাবার থাকলে ভিন্ন কথা। তখন রুচিমত বিভিন্ন স্থান থেকে খাওয়া যাবে।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছ দ্বারা শিক্ষা পাওয়া যায় যে, ছেলেমেয়েকে ছোটবেলা থেকেই ইসলামী আদব-কায়দা শিক্ষা দেওয়া চাই।
খ. খাওয়ার আগে বিসমিল্লাহ বলা সুন্নত।
গ. শুরুতে বিসমিল্লাহ বলতে ভুলে গেলে মাঝখানে যখন স্মরণ হয় তখন بسم الله أوله وآخره বলে নেওয়া চাই।
ঘ. কয়েকজন এক পাত্রে খেতে বসলে প্রত্যেকের উচিত নিজের নিজের কাছ থেকে খাওয়া।
ঙ. কাউকে কোনও ভুলচুক করতে দেখলে তা সংশোধন করে দেওয়া চাই, এমনকি খাবারের সময়ও।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
