আল মুওয়াত্তা - ইমাম মালিক রহঃ

৪৮. পোশাক-পরিচ্ছদের অধ্যায়

হাদীস নং: ১৭০৪
৮. কাপড় পরিধান প্রসঙ্গ
রেওয়ায়ত ১৮. আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাযিঃ) হইতে বর্ণিত যে, উমর (রাযিঃ) একখানা রেশমী কাপড় মসজিদের সম্মুখে বিক্রি হইতে দেখিলেন। তিনি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)কে বলিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! যদি আপনি এই রেশমী কাপড়খানা খরিদ করিয়া লইতেন তাহা হইলে শুক্রবারে উহা পরিধান করিতে পারিতেন অথবা কোন বৈদেশিক দূত আসিলে তাহা পরিতে পারিতেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলিলেন, ইহা ঐ ব্যক্তিই পরিধান করিবে পরকালে যাহার কোন অংশ থাকিবে না। পরে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিকট ঐরূপ আরও কাপড় আসিলে তিনি তাহা হইতে একখানা কাপড় উমর (রাযিঃ)-কে দান করিলেন।

উমর (রাযিঃ) বলিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আপনি আতারদের কাপড় সম্বন্ধে যাহা বলিয়াছেন তাহা দ্বারা ইহাই বুঝা যায় যে, ঐ ধরনের কাপড় পরিধানকারীর জন্য আখিরাতে কোন অংশ নাই। আর এখন আমাকে উহা দান করিতেছেন? রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলিলেন, আমি তোমাকে উহা পরিতে দেই নাই। অতঃপর উমর (রাযিঃ) ঐ কাপড় স্বীয় এক কাফির ভাই যে ছিল মক্কায় তাহাকে দান করিয়া দিলেন।
مَا جَاءَ فِي لُبْسِ الثِّيَابِ
وَحَدَّثَنِي عَنْ مَالِك عَنْ نَافِعٍ عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ أَنَّ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ رَأَى حُلَّةً سِيَرَاءَ تُبَاعُ عِنْدَ بَابِ الْمَسْجِدِ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ لَوْ اشْتَرَيْتَ هَذِهِ الْحُلَّةَ فَلَبِسْتَهَا يَوْمَ الْجُمُعَةِ وَلِلْوَفْدِ إِذَا قَدِمُوا عَلَيْكَ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّمَا يَلْبَسُ هَذِهِ مَنْ لَا خَلَاقَ لَهُ فِي الْآخِرَةِ ثُمَّ جَاءَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْهَا حُلَلٌ فَأَعْطَى عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ مِنْهَا حُلَّةً فَقَالَ عُمَرُ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَكَسَوْتَنِيهَا وَقَدْ قُلْتَ فِي حُلَّةِ عُطَارِدٍ مَا قُلْتَ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَمْ أَكْسُكَهَا لِتَلْبَسَهَا فَكَسَاهَا عُمَرُ أَخًا لَهُ مُشْرِكًا بِمَكَّةَ

হাদীসের ব্যাখ্যা:

হাদীছে জানানো হয়েছে, রেশমী পোশাক পরে এমন ব্যক্তি, আখিরাতে যার কোনও অংশ নেই। অর্থাৎ যে ব্যক্তি জান্নাতে যাবে না। তার মানে এটা অমুসলিমদের পোশাক। অন্য হাদীছে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি দুনিয়ায় রেশমী পোশাক পরে, সে আখিরাতে রেশমী পোশাক পরবে না। আর এ কারণে মুমিনদেরকে রেশমী পোশাক পরতে নিষেধ করা হয়েছে। সারমর্ম হল- রেশমি পোশাক দুনিয়ায় অমুসলিমদের পোশাক। তাই মুসলিম ব্যক্তির জন্য দুনিয়ায়। এটা পরা জায়েয নয়। তা সত্ত্বেও কোনও মুসলিম ব্যক্তি যদি রেশমী পোশাক পরে, তবে আখিরাতে সে এ পোশাক পরতে পারবে না। অর্থাৎ এ হুকুম অমান্য করার কারণে সে শুরুতে জান্নাতে যেতে পারবে না। জান্নাতের পোশাক রেশমী পোশাক। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে-
وَلِبَاسُهُمْ فِيهَا حَرِيرٌ
‘সেখানে তাদের পোশাক হবে রেশমের’ (সূরা ফাতির, আয়াত ৩৩)

কাজেই 'দুনিয়ায় যে মুমিন রেশমী পোশাক পরে, আখিরাতে সে তা পরবে না' দ্বারা বোঝানো হয়েছে সে প্রথমে জান্নাতে যেতে পারবে না। প্রথমে তাকে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে হবে। শাস্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ঈমানের বদৌলতে সে জান্নাত লাভ করবে। জান্নাত লাভ করার পর জান্নাতের অপরাপর নি'আমতের মতো রেশমী পোশাকও সে পাবে। কেউ কেউ বলেন, দুনিয়ায় যে মুমিন ব্যক্তি রেশমী পোশাক পরবে, সে জান্নাত লাভ করলেও জান্নাতের অন্যান্য নি'আমত ঠিকই পাবে, কিন্তু রেশমী পোশাক পাবে না।

প্রশ্ন দাঁড়ায়, তবে তো তার মনে রেশমী পোশাক না পাওয়ার কষ্ট থেকে যাবে, অথচ জান্নাত কষ্টের জায়গা নয়?
এর উত্তর হল, জান্নাতে এমন ব্যক্তির অন্তর থেকে রেশমী পোশাকের চাহিদাই দূর করে দেওয়া হবে। অন্তরে যখন এ পোশাকের চাহিদা থাকবে না, তখন না পাওয়ার দরুন কোনও কষ্টও সে পাবে না, যেমন সাধারণ স্তরের জান্নাতীগণ উচ্চস্তরের জান্নাতবাসীগণের মতো মর্যাদা না পাওয়ার কারণে কোনও কষ্ট বোধ করবে না।

হাদীছের মূল বার্তা হল মুমিনদেরকে রেশমী পোশাক সম্পর্কে সতর্ক করা, যাতে তারা এটা না পরে। কেননা এটা পরলে শরী'আতের হুকুম অমান্য করা হবে। পরিণামে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে হবে, যদি না আল্লাহ তা'আলা মাফ করেন।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. দুনিয়ায় রেশমী পোশাক অমুসলিমদের পোশাক। তাই মুসলিমদেরকে অবশ্যই এ পোশাক পরিধান করা হতে বিরত থাকতে হবে।

খ. রেশমী পোশাক পরিধান করলে আখিরাতে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে হবে।

গ. দুনিয়ায় রেশমী পোশাক পরিধান করলে জান্নাতে এ নি'আমত থেকে বঞ্চিত থাকতে হবে।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান