আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ
৫১- কুরআনের তাফসীর অধ্যায়
হাদীস নং:
আন্তর্জাতিক নং: ৪৬২১
২৩৬৪. আল্লাহর বাণীঃ হে মু’মিনগণ ! তোমরা সেসব বিষয়ে প্রশ্ন করো না, যা প্রকাশিত হলে তোমরা দুঃখিত হবে (৫ঃ ১০১)
৪২৬৬। মুনযির ইবনে ওয়ালিদ (রাহঃ) ......... আনাস (রাযিঃ) বর্ণিত। তিনি বলেছেন, রাসূল (ﷺ) এমন একটি খুতবা দিলেন যেরূপ আমি আর কখনো শুনিনি। তিনি বলেছেন, ‘আমি যা জানি তোমরা যদি তা জানতে তবে তোমরা হাসতে খুব কমই এবং বেশী বেশী করে কাঁদতে’’। তিনি বলেন, সাহাবায়ে কিরাম (রাযিঃ) আপন আপন চেহারা আবৃত করে গুণগুণ করে কান্না জুড়ে দিলেন এরপর এক ব্যক্তি (আব্দুল্লাহ ইবনে হুযাইফা বা অন্য কেউ) বলল, আমার পিতা কে? রাসূল (ﷺ) বললেন, ‘‘অমুক’’। তখন এই আয়াত নাযিল হলঃ لاَ تَسْأَلُوا عَنْ أَشْيَاءَ إِنْ تُبْدَ لَكُمْ تَسُؤْكُمْ
এই হাদীসটি শুবা থেকে নযর এবং রাওহ ইবনে উবাদা বর্ণনা করেছেন।
এই হাদীসটি শুবা থেকে নযর এবং রাওহ ইবনে উবাদা বর্ণনা করেছেন।
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছটিতে হযরত আনাস রাযি. নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিশেষ একটি ভাষণের অংশবিশেষ উল্লেখ করেছেন। তাঁর বর্ণনা অনুযায়ী এ ভাষণটি ছিল অন্যসব ভাষণ থেকে আলাদা। কেননা ভাষণটি ছিল অনেক বেশি হৃদয়গ্রাহী, ছিল অত্যন্ত মনগলানো এবং আখেরাতের ব্যাপারে অত্যন্ত ভীতিসঞ্চারক।
এ ভাষণটির পরিপ্রেক্ষিত হাদীছটির দ্বিতীয় বর্ণনায় উল্লেখ করা হয়েছে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রিয় সাহাবীদের এমন একটা অবস্থা দেখেছিলেন, যা তাঁর কাছে প্রীতিকর বোধ হয়নি। সম্ভবত তারা কোনও বিষয় নিয়ে হাসাহাসি করছিলেন। তিনি বেশি হাসাহাসি পসন্দ করতেন না। বেশি হাসিতে অন্তরে উদাসীনতা জন্ম নেয়। এক হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন
لا تكثر الضحك، فإن كثرة الضحك تميت القلب বেশি হাসবে না। কেননা হাসির আধিক্য অন্তরের মৃত্যু ঘটায়।৩৬৬
তিনি সাহাবায়ে কেরামের সে অবস্থা দেখে ইসলাহের প্রয়োজন মনে করলেন। তিনি তো তাঁর প্রিয় সঙ্গীদের এভাবেই তিলে তিলে গড়ে তুলেছিলেন। সুতরাং সে লক্ষ্যে তিনি এক হৃদয়গ্রাহী ভাষণ দিলেন। তাতে তিনি বললেন عرضت علي الجنة والنار (আমার সামনে জান্নাত ও জাহান্নাম তুলে ধরা হয়)। সম্ভবত তাঁর এবং জান্নাত ও জাহান্নামের মাঝখান থেকে সমস্ত অন্তরাল সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ফলে জান্নাতের নিআমতরাশি ও জাহান্নামের শাস্তিসমূহ সরাসরি দেখতে পাচ্ছিলেন, যেমনটা মি'রাজের ঘটনার পর তাঁর সম্মুখ থেকে সব আড়াল সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল, যদ্দরুন তিনি সরাসরি বায়তুল মাকদিস দেখতে পেয়েছিলেন এবং তা দেখে দেখে সকলের সামনে তার বিবরণ দিয়েছিলেন।
তিনি একাধিকবার এভাবে জান্নাত ও জাহান্নামের দৃশ্য দেখতে পেয়েছেন। বিভিন্ন হাদীছে তা বর্ণিত আছে। যাহোক তিনি জান্নাত ও জাহান্নামের দৃশ্য দেখে সাহাবায়ে কেরামের সামনে অভিব্যক্তি পেশ করলেন فلم أر كاليوم في الخير والشر (এদিনের মত ভালো ও মন্দ কখনও দেখিনি)। অর্থাৎ জান্নাতের যে নি'আমতরাজি আজ আমি দেখতে পেয়েছি, এমন ভালো কিছু আমি আর কখনও দেখিনি। এমনিভাবে জাহান্নামে যেসব শাস্তির ব্যবস্থা দেখেছি, সেরকম মন্দ কিছুও আর কখনও দেখিনি। তারপর তিনি এই বলে তাদের উপদেশ দিলেন ولو تعلمون ما أعلم ، لضحكتم قليلا ، ولبكيتم كثيرا (তোমরা যদি জানতে যা আমি জানি, তবে অবশ্যই তোমরা কম হাসতে এবং বেশি কাঁদতে)। অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা পাপীদের জন্য কী কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা রেখেছেন, কী কঠিন কিয়ামতের বিভীষিকা এবং কত কঠিন হাশরের ময়ানের পরিস্থিতি, তা আমি যেমনটা জানি তেমনি তোমরাও যদি জানতে, তবে অবশ্যই কম হাসতে এবং বেশি কাঁদতে। এক বর্ণনায় এরপর আছে ولما ساغ لكم الطعام ولا الشراب، ولما نمتم على الفرش، ولهجرتم النساء ولخرجتم إلى الصعدات تجأرون ‘তোমাদের কাছে পানাহার ভালো লাগত না। তোমরা বিছানায় ঘুমাতে পারতে না। তোমরা নারীদের থেকে দূরে থাকতে। তোমরা চিৎকার করতে করতে রাস্তাঘাটে বের হয়ে পড়তে।৩৬৭
হাদীছটি দ্বারা প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মতকে পার্থিব জীবনযাপন সম্পর্কে এ দিকনির্দেশনা দিয়েছেন যে, দুনিয়া আনন্দে মেতে থাকার জায়গা নয়। তা থাকা উচিতও নয়। তার সামনে আখেরাত আছে। সেখানকার পরিস্থিতি বড় কঠিন। সে কঠিন পরিস্থিতির ব্যাপারে চিন্তিত থাকা উচিত। মনে ভয় রাখা উচিত। উচিত আল্লাহ তাআলার কাছে বেশি বেশি কাঁদা, যাতে তিনি সেখানে নাজাত দান করেন। যেন তিনি নিজ রহমতের ছায়ায় আশ্রয় দান করেন। প্রকৃত মুত্তাকী-পরহেযগার ব্যক্তিগণ সর্বদা সেদিনের ভয়ে ভীত থাকতেন। ভয়ে কাঁদতে কাঁদতে বেহুঁশ হয়ে যেতেন। কিন্তু আমাদের সে অবস্থা হয় না। তা হয় না চিন্তা করি না বলে। চিন্তা করা দরকার। কবর, হাশর, হিসাব-নিকাশ, পুলসিরাত ইত্যাদি বিষয়গুলো নিয়মিত চিন্তা করতে থাকাই অন্তরে ভয় সৃষ্টির উপায়। বস্তুত আখেরাতের ভয় আত্মার সঞ্জিবনী শক্তি। এ শক্তি আল্লাহ তাআলার আদেশ-নিষেধ পালনের প্রেরণা যোগায়।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. ওয়াজ-নসীহতে হাসানো নয়; বরং কাদানোই প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তরিকা।
খ. অল্প হাসি দোষের নয়, যদি অন্তরে আখেরাতের ভয় থাকে এবং সে ভয়ে ক্রন্দনও করা হয়।
গ. অভিভাবক ও মুরুব্বীর কর্তব্য অধীনস্থদের অন্যায়-অনুচিত কোনও কাজ চোখে পড়লে বা জানতে পারলে অবিলম্বে তাদের সতর্ক করা ও সংশোধনের চেষ্টা করা।
৩৬৭. হাকিম, আল মুস্তাদরাক, হাদীছ নং ৮৭২৪; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীছ নং ৩৪৬৮২; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ২১৫১৬; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীছ নং ৪১৯০; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ২৩১২; তাবারানী, আল মু'জামুল আওসাত, হাদীছ নং ২৫৮৩; বায়হাকী, আস্ সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১৩৩৩৭
এ ভাষণটির পরিপ্রেক্ষিত হাদীছটির দ্বিতীয় বর্ণনায় উল্লেখ করা হয়েছে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রিয় সাহাবীদের এমন একটা অবস্থা দেখেছিলেন, যা তাঁর কাছে প্রীতিকর বোধ হয়নি। সম্ভবত তারা কোনও বিষয় নিয়ে হাসাহাসি করছিলেন। তিনি বেশি হাসাহাসি পসন্দ করতেন না। বেশি হাসিতে অন্তরে উদাসীনতা জন্ম নেয়। এক হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন
لا تكثر الضحك، فإن كثرة الضحك تميت القلب বেশি হাসবে না। কেননা হাসির আধিক্য অন্তরের মৃত্যু ঘটায়।৩৬৬
তিনি সাহাবায়ে কেরামের সে অবস্থা দেখে ইসলাহের প্রয়োজন মনে করলেন। তিনি তো তাঁর প্রিয় সঙ্গীদের এভাবেই তিলে তিলে গড়ে তুলেছিলেন। সুতরাং সে লক্ষ্যে তিনি এক হৃদয়গ্রাহী ভাষণ দিলেন। তাতে তিনি বললেন عرضت علي الجنة والنار (আমার সামনে জান্নাত ও জাহান্নাম তুলে ধরা হয়)। সম্ভবত তাঁর এবং জান্নাত ও জাহান্নামের মাঝখান থেকে সমস্ত অন্তরাল সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ফলে জান্নাতের নিআমতরাশি ও জাহান্নামের শাস্তিসমূহ সরাসরি দেখতে পাচ্ছিলেন, যেমনটা মি'রাজের ঘটনার পর তাঁর সম্মুখ থেকে সব আড়াল সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল, যদ্দরুন তিনি সরাসরি বায়তুল মাকদিস দেখতে পেয়েছিলেন এবং তা দেখে দেখে সকলের সামনে তার বিবরণ দিয়েছিলেন।
তিনি একাধিকবার এভাবে জান্নাত ও জাহান্নামের দৃশ্য দেখতে পেয়েছেন। বিভিন্ন হাদীছে তা বর্ণিত আছে। যাহোক তিনি জান্নাত ও জাহান্নামের দৃশ্য দেখে সাহাবায়ে কেরামের সামনে অভিব্যক্তি পেশ করলেন فلم أر كاليوم في الخير والشر (এদিনের মত ভালো ও মন্দ কখনও দেখিনি)। অর্থাৎ জান্নাতের যে নি'আমতরাজি আজ আমি দেখতে পেয়েছি, এমন ভালো কিছু আমি আর কখনও দেখিনি। এমনিভাবে জাহান্নামে যেসব শাস্তির ব্যবস্থা দেখেছি, সেরকম মন্দ কিছুও আর কখনও দেখিনি। তারপর তিনি এই বলে তাদের উপদেশ দিলেন ولو تعلمون ما أعلم ، لضحكتم قليلا ، ولبكيتم كثيرا (তোমরা যদি জানতে যা আমি জানি, তবে অবশ্যই তোমরা কম হাসতে এবং বেশি কাঁদতে)। অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা পাপীদের জন্য কী কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা রেখেছেন, কী কঠিন কিয়ামতের বিভীষিকা এবং কত কঠিন হাশরের ময়ানের পরিস্থিতি, তা আমি যেমনটা জানি তেমনি তোমরাও যদি জানতে, তবে অবশ্যই কম হাসতে এবং বেশি কাঁদতে। এক বর্ণনায় এরপর আছে ولما ساغ لكم الطعام ولا الشراب، ولما نمتم على الفرش، ولهجرتم النساء ولخرجتم إلى الصعدات تجأرون ‘তোমাদের কাছে পানাহার ভালো লাগত না। তোমরা বিছানায় ঘুমাতে পারতে না। তোমরা নারীদের থেকে দূরে থাকতে। তোমরা চিৎকার করতে করতে রাস্তাঘাটে বের হয়ে পড়তে।৩৬৭
হাদীছটি দ্বারা প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মতকে পার্থিব জীবনযাপন সম্পর্কে এ দিকনির্দেশনা দিয়েছেন যে, দুনিয়া আনন্দে মেতে থাকার জায়গা নয়। তা থাকা উচিতও নয়। তার সামনে আখেরাত আছে। সেখানকার পরিস্থিতি বড় কঠিন। সে কঠিন পরিস্থিতির ব্যাপারে চিন্তিত থাকা উচিত। মনে ভয় রাখা উচিত। উচিত আল্লাহ তাআলার কাছে বেশি বেশি কাঁদা, যাতে তিনি সেখানে নাজাত দান করেন। যেন তিনি নিজ রহমতের ছায়ায় আশ্রয় দান করেন। প্রকৃত মুত্তাকী-পরহেযগার ব্যক্তিগণ সর্বদা সেদিনের ভয়ে ভীত থাকতেন। ভয়ে কাঁদতে কাঁদতে বেহুঁশ হয়ে যেতেন। কিন্তু আমাদের সে অবস্থা হয় না। তা হয় না চিন্তা করি না বলে। চিন্তা করা দরকার। কবর, হাশর, হিসাব-নিকাশ, পুলসিরাত ইত্যাদি বিষয়গুলো নিয়মিত চিন্তা করতে থাকাই অন্তরে ভয় সৃষ্টির উপায়। বস্তুত আখেরাতের ভয় আত্মার সঞ্জিবনী শক্তি। এ শক্তি আল্লাহ তাআলার আদেশ-নিষেধ পালনের প্রেরণা যোগায়।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. ওয়াজ-নসীহতে হাসানো নয়; বরং কাদানোই প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তরিকা।
খ. অল্প হাসি দোষের নয়, যদি অন্তরে আখেরাতের ভয় থাকে এবং সে ভয়ে ক্রন্দনও করা হয়।
গ. অভিভাবক ও মুরুব্বীর কর্তব্য অধীনস্থদের অন্যায়-অনুচিত কোনও কাজ চোখে পড়লে বা জানতে পারলে অবিলম্বে তাদের সতর্ক করা ও সংশোধনের চেষ্টা করা।
৩৬৭. হাকিম, আল মুস্তাদরাক, হাদীছ নং ৮৭২৪; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীছ নং ৩৪৬৮২; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ২১৫১৬; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীছ নং ৪১৯০; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ২৩১২; তাবারানী, আল মু'জামুল আওসাত, হাদীছ নং ২৫৮৩; বায়হাকী, আস্ সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১৩৩৩৭
