আল মুওয়াত্তা - ইমাম মালিক রহঃ

২২. শপথ ও মান্নতের অধ্যায়

হাদীস নং: ১০১৯
৭. যে ধরনের কসমে কাফফারা ওয়াজিব হয়
রেওয়ায়ত ১১. আবু হুরায়রা (রাযিঃ) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলিলেনঃ কোন বিষয়ে কসম করার পর উহার বিপরীত বিষয় যদি অধিক ভাল ও মঙ্গলজনক মনে হয়; তবে ঐ কসম ভাঙ্গিয়া উহার কাফফারা দিবে এবং মঙ্গলজনক কাজটি করিবে।

মালিক (রাহঃ) বলেন, কেহ বলিলঃ আমি মান্নত করিলাম। কিন্তু কিসের উপর মান্নত করিল তাহা বলিল না। তবুও তাহার উপর কাফফারা ওয়াজিব হইবে।

মালিক (রাহঃ) বলেনঃ একই কসম কেহ যদি একাধিকবার করে, যেমন আল্লাহর কসম, আমি ইহা হইতে কম করিব না। এই বিষয়ের উপর সে তিনবার বা ততোধিক কসম করিল। তবে তাহার একবারই কাফফারা ওয়াজিব হইবে।

মালিক (রাহঃ) বলেনঃ কেহ কসম করিল-আল্লাহর কসম, আমি এই খাদ্য আহার করিব না, এই কাপড়টি পরিব না এবং এই ঘরে প্রবেশ করিব না। পরে এই কাজগুলি সে যদি করিয়া ফেলে তবে তাহার উপর একই কাফফারা ওয়াজিব হইবে। যেমন কোন ব্যক্তি তাহার স্ত্রীকে বলিল, তোমাকে যদি এই কাপড়টি পরিতে দেই এবং মসজিদে যাইতে অনুমতি দেই তবে তুমি তালাক। উহা সমস্তটা মিলাইয়া একই কথা বলিয়া গণ্য হয় এবং যে কোন একটি হইলে তালাক হইয়া যায় আর পরে অন্যটি সংঘটিত হইলে দ্বিতীয়বার তালাক হয় না। এইখানেও তদ্রূপ একবারই কাফফারা ওয়াজিব হইবে।

মালিক (রাহঃ) বলেনঃ আমাদের নিকট মাসআলা এই, স্বামীর অনুমতি ব্যতিরেকেও স্ত্রীর মান্নত করা জায়েয আছে। তবে উহা একান্ত ব্যক্তিগত হইতে হইবে। শর্ত হইল, স্বামীর কোন ক্ষতি যেন না হয়। স্বামীর ক্ষতি হইলে সে স্ত্রীকে এই ধরনের মান্নত হইতে বিরত করিতে পারিবে। তবে স্ত্রীর উপর ঐ মান্নত ওয়াজিব থাকিয়া যাইবে। যখনই স্বামীর অনুমতি লাভ করিবে উহা আদায় করিবে।
بَاب مَا تَجِبُ فِيهِ الْكَفَّارَةُ مِنْ الْأَيْمَانِ
حَدَّثَنِي يَحْيَى عَنْ مَالِك عَنْ سُهَيْلِ بْنِ أَبِي صَالِحٍ عَنْ أَبِيهِ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَنْ حَلَفَ بِيَمِينٍ فَرَأَى غَيْرَهَا خَيْرًا مِنْهَا فَلْيُكَفِّرْ عَنْ يَمِينِهِ وَلْيَفْعَلْ الَّذِي هُوَ خَيْرٌ
قَالَ يَحْيَى وَسَمِعْت مَالِك يَقُولُ مَنْ قَالَ عَلَيَّ نَذْرٌ وَلَمْ يُسَمِّ شَيْئًا إِنَّ عَلَيْهِ كَفَّارَةَ يَمِينٍ قَالَ مَالِك فَأَمَّا التَّوْكِيدُ فَهُوَ حَلِفُ الْإِنْسَانِ فِي الشَّيْءِ الْوَاحِدِ مِرَارًا يُرَدِّدُ فِيهِ الْأَيْمَانَ يَمِينًا بَعْدَ يَمِينٍ كَقَوْلِهِ وَاللَّهِ لَا أَنْقُصُهُ مِنْ كَذَا وَكَذَا يَحْلِفُ بِذَلِكَ مِرَارًا ثَلَاثًا أَوْ أَكْثَرَ مِنْ ذَلِكَ قَالَ فَكَفَّارَةُ ذَلِكَ كَفَّارَةٌ وَاحِدَةٌ مِثْلُ كَفَّارَةِ الْيَمِينِ فَإِنْ حَلَفَ رَجُلٌ مَثَلًا فَقَالَ وَاللَّهِ لَا آكُلُ هَذَا الطَّعَامَ وَلَا أَلْبَسُ هَذَا الثَّوْبَ وَلَا أَدْخُلُ هَذَا الْبَيْتَ فَكَانَ هَذَا فِي يَمِينٍ وَاحِدَةٍ فَإِنَّمَا عَلَيْهِ كَفَّارَةٌ وَاحِدَةٌ وَإِنَّمَا ذَلِكَ كَقَوْلِ الرَّجُلِ لِامْرَأَتِهِ أَنْتِ الطَّلَاقُ إِنْ كَسَوْتُكِ هَذَا الثَّوْبَ وَأَذِنْتُ لَكِ إِلَى الْمَسْجِدِ يَكُونُ ذَلِكَ نَسَقًا مُتَتَابِعًا فِي كَلَامٍ وَاحِدٍ فَإِنْ حَنِثَ فِي شَيْءٍ وَاحِدٍ مِنْ ذَلِكَ فَقَدْ وَجَبَ عَلَيْهِ الطَّلَاقُ وَلَيْسَ عَلَيْهِ فِيمَا فَعَلَ بَعْدَ ذَلِكَ حِنْثٌ إِنَّمَا الْحِنْثُ فِي ذَلِكَ حِنْثٌ وَاحِدٌ قَالَ مَالِك الْأَمْرُ عِنْدَنَا فِي نَذْرِ الْمَرْأَةِ إِنَّهُ جَائِزٌ بِغَيْرِ إِذْنِ زَوْجِهَا يَجِبُ عَلَيْهَا ذَلِكَ وَيَثْبُتُ إِذَا كَانَ ذَلِكَ فِي جَسَدِهَا وَكَانَ ذَلِكَ لَا يَضُرُّ بِزَوْجِهَا وَإِنْ كَانَ ذَلِكَ يَضُرُّ بِزَوْجِهَا فَلَهُ مَنْعُهَا مِنْهُ وَكَانَ ذَلِكَ عَلَيْهَا حَتَّى تَقْضِيَهُ

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছ দ্বারাও তাকওয়ার গুরুত্ব বোঝা যায়। ইসলামে কসম রক্ষার বিশেষ তাকীদ করা হয়েছে। যেমন কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে-

وَاحْفَظُوا أَيْمَانَكُمْ

'তোমরা তোমাদের শপথ রক্ষা কর।

শপথ বা কসম যেহেতু করা হয় আল্লাহর নামে, তাই আল্লাহর নামের মর্যাদা রক্ষার্থে কসম রক্ষা করাও জরুরি। অবশ্য এটা সে ক্ষেত্রে, যখন কসম করা হয় জায়েয কাজ সম্পর্কে এবং তার বিপরীত কাজটি তার চেয়ে উত্তম না হয়। পক্ষান্তরে নাজায়েয কাজের কসম করলে তখন সে কসম রক্ষা না করে ভেঙে ফেলাই জরুরি। এ হাদীছে বলা হয়েছে- কোনও বিষয়ে কসম করার পর যদি দেখা যায় যে কাজ করার কসম করেছে সেটি তাকওয়ার পরিপন্থী ও নাজায়েয কাজ এবং তার বিপরীত কাজই তাকওয়ার অনুকূল, তবে তার কর্তব্য কসম ভেঙে ফেলা এবং তাকওয়ার অনুকূল কাজটিই করা। কেননা তাকওয়ার পরিপন্থী বা নাজায়েয কাজ করা পাপ ও আল্লাহর অবাধ্যতা। কসম রক্ষার চেয়ে আল্লাহর অবাধ্যতা পরিহার করা অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ। তাই এরূপ ক্ষেত্রে অবাধ্যতা থেকে বাঁচার জন্য কসম ভাঙাই জরুরি। যেমন কেউ কসম করল সে তার ভাই বা বোনের সাথে সম্পর্ক রাখবে না। অথচ ভাইবোনের সাথে সম্পর্ক রক্ষা করা ফরয এবং সম্পর্ক ছিন্ন করা হারাম। তো এ ক্ষেত্রে কসমের বিপরীত কাজটি অর্থাৎ ভাইবোনের সাথে সম্পর্ক রক্ষা করা তাকওয়ার অনুকূল। সুতরাং তার কর্তব্য কসম ভেঙে ফেলা ও ভাইবোনের সাথে সম্পর্ক রক্ষা করা।

যদি এমন কোনও কাজের কসম করে, যে কাজটি করা জায়েয বটে কিন্তু তার বিপরীত কাজ উত্তম ও মুস্তাহাব, সে ক্ষেত্রেও কসম ভেঙে মুস্তাহাব কাজটি করাই শ্রেয়। যেমন এক হাদীছে বর্ণিত আছে-

من خلف على يمين فرأى غيرها خيرا منها قليات الذي هُوَ خَيْرٌ وَلي عَنْ يَمِينِهِ

যে ব্যক্তি কোনও কাজের কসম করে, তারপর তার বিপরীত কাজটি উত্তম দেখতে
পায়, তবে যে কাজটি উত্তম সেটিই যেন করে এবং তার কসমের কাফ্ফারা দিয়ে দেয়। কসম ভাঙার কাফফারা হল দশজন মিসকীনকে দু'বেলা খাবার খাওয়ানো। খাবার খাওয়ানোর সংগতি না থাকলে একাধারে তিনটি রোযা রাখা।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. সকল কাজকর্মে অন্তরে তাকওয়া ও আল্লাহভীতি জাগরুক রাখা চাই।

খ. কসম রক্ষা করা বা ভেঙে ফেলার ক্ষেত্রেও তাকওয়াকেই মানদণ্ড বানানো উচিত।

গ. কসম রক্ষার খাতিরে নাজায়েয বা তুলনামূলক অনুত্তম কাজটিই করতে হবে এ ধারণা ঠিক নয়, যেহেতু তা করা তাকওয়ার পরিপন্থী। সে ক্ষেত্রে কসম ভেঙে কাফ্ফারা দেওয়া বাঞ্ছনীয়।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান