আল মুওয়াত্তা - ইমাম মালিক রহঃ

২১. জিহাদের বিধানাবলী সম্পর্কিত অধ্যায়

হাদীস নং: ৯৮৩
১৪. আল্লাহর পথের শহীদগণ
রেওয়ায়ত ২৮. আবু হুরায়রা (রাযিঃ) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলিয়াছেন, কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তাআলা দুই ব্যক্তিকে দেখিয়া হাসিবেন। তাহারা ছিলেন একজন অন্যজনের হত্যাকারী। তাহারা উভয়ে জান্নাতে প্রবেশ করিবেন। একজন তো আল্লাহর পথে জিহাদ করিতে করিতে শহীদ হন। পরে তাহার হত্যাকারী ইসলাম গ্রহণ করিয়া তিনিও আল্লাহর পথে জিহাদ করিয়া শাহাদত বরণ করেন।
بَاب الشُّهَدَاءِ فِي سَبِيلِ اللَّهِ
وَحَدَّثَنِي عَنْ مَالِك عَنْ أَبِي الزِّنَادِ عَنْ الْأَعْرَجِ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ يَضْحَكُ اللَّهُ إِلَى رَجُلَيْنِ يَقْتُلُ أَحَدُهُمَا الْآخَرَ كِلَاهُمَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ يُقَاتِلُ هَذَا فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَيُقْتَلُ ثُمَّ يَتُوبُ اللَّهُ عَلَى الْقَاتِلِ فَيُقَاتِلُ فَيُسْتَشْهَدُ

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছে আল্লাহ তা'আলার হাসি দ্বারা রূপকার্থে তাঁর সন্তুষ্টি বোঝানো হয়েছে। তিনি এই দুই ব্যক্তির প্রতি খুশি হন এ কারণে যে, তাদের মধ্যে ছিল চরম শত্রুতা, যে কারণে তাদের একজন অন্যজনকে হত্যা পর্যন্ত করেছে। যাকে হত্যা করা হয়েছে সে তো শহীদ, আর শহীদের ঠিকানা জান্নাত। যে ব্যক্তি হত্যা করেছে তার জাহান্নামে যাওয়ার কথা। কেননা একে সে কাফির, তদুপরি একজন মু'মিনকে হত্যা করার মত কঠিন পাপ করেছে। কিন্তু কি আশ্চর্য! সেও জান্নাতে চলে গেল আর তাদের শত্রুতা বন্ধুত্বে পরিণত হয়ে গেল। জান্নাতে কারও অন্তরে কারও প্রতি কোনওরকম শত্রুতা ও বিদ্বেষ থাকবে না। কুরআন মাজীদে ইরশাদ

وَنَزَعْنَا مَا فِي صُدُورِهِمْ مِنْ غِلٍّ إِخْوَانًا عَلَى سُرُرٍ مُتَقَابِلِينَ

অর্থ : তাদের অন্তরে যে দুঃখ-বেদনা থাকবে তা দূর করে দেব। তারা ভাই-ভাই রূপে মুখোমুখি হয়ে উঁচু আসনে আসীন হবে।

এই যে নিহত ও হত্যাকারী উভয়ই জান্নাতে চলে গেল এবং পূর্বশত্রুতার স্থলে তারা ভাই-ভাই হয়ে গেল, দৃশ্যত এটা একটা মুগ্ধকর ব্যাপারই বটে। সে কারণেই আল্লাহ তা'আলা খুশিতে হাসেন।
বলাবাহুল্য হত্যাকারীর ইসলামগ্রহণ ও শাহাদাতলাভ আল্লাহপ্রদত্ত তাওফীকের ফলেই সম্ভব হয়েছে। তা সত্ত্বেও তার প্রতি আল্লাহর সন্তুষ্ট হওয়া তাঁর অপার মহানুভবতা ও রহমতের প্রকাশ ছাড়া কিছুই নয়।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. কাফের ব্যক্তি তার কুফর থেকে তাওবা করলে তার তাওবা কবূল হয়, যদিও সে এর আগে ইসলামের প্রতি শত্রুতাবশত মুসলিমদের জান-মালের ক্ষতিসাধন করে থাকে। বস্তুত ইসলামগ্রহণ দ্বারা পূর্বের সমস্ত গুনাহই মাফ হয়ে যায়।

খ. কোনও কাফিরকে তার বর্তমান কুফরী অবস্থার কারণে জাহান্নামী বলা ঠিক নয়। কেননা হতে পারে আল্লাহ তা'আলা তাকে তাওবার তাওফীক দেবেন, ফলে ঈমান অবস্থায় তার মৃত্যু ঘটবে। ঈমান নিয়ে মৃত্যুবরণ করলে আল্লাহ তা'আলা তাকে জান্নাতবাসী করেন।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান