আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ

৫১- কুরআনের তাফসীর অধ্যায়

হাদীস নং: ৪১৯৬
আন্তর্জাতিক নং: ৪৫৫৩
২৩১১. আল্লাহর বাণীঃ তুমি বলঃ হে কিতাবিগণ! এসো সে কথায় যা আমাদের ও তোমাদের মধ্যে একই; যেন আমরা আল্লাহ ব্যতীত কারো ইবাদাত না করি। (ইমরান ৩ঃ ৬৪) سَوَاءِ -অর্থ সঠিক ও ন্যায়।
৪১৯৬। ইবরাহীম ইবনে মুসা (রাহঃ) ......... ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবু সুফিয়ান আমাকে সামনাসামনি হাদীস শুনিয়েছেন। আবু সুফিয়ান বলেন, আমাদের আর রাসূল (ﷺ) এর মধ্যে সম্পাদিত চুক্তির মেয়াদে আমি ভ্রমণে বের হয়ে ছিলাম। আমি তখন সিরিয়ায় অবস্থান করছিলাম। তখন নবী (ﷺ) এর পক্ষ থেকে হিরাক্লিয়াসের নিকট থেকে একখানা পত্র পৌছান। দাহইয়াতুল কালবী এ চিঠিটা বসরাধিপতিকে দিয়েছিলেন। এরপর তিনি হিরাক্লিয়াসের নিকট পৌছিয়ে দিলেন। পত্র পেয়ে হিরাক্লিয়াস নবীর দাবিদার ব্যক্তির গোত্রস্থি কেউ এখানে আছে কিনা জিজ্ঞাসা করলেন। তারা বলল, হ্যাঁ আছে। কয়েকজন কুরাইশীসহ আমাকে ডাকা হলে আমরা হিরাক্লিয়াসের নিকট গেলাম এবং আমাদেরকে তাঁর সম্মুখে বসালেন। এরপর তিনি বললেন, নবীর দাবিদার ব্যক্তির তোমাদের মধ্যে নিকটতম আত্মীয় কে? আবু সুফিয়ান বললেন, উত্তরে বললাম আমিই।
তারা আমাকে তাদের সম্মুখে এবং আমার সাথীদেরকে আমার পিছনে বসালেন। তারপর দোভাষিকে ডাকলেন এবং বললেন, এদেরকে জানিয়ে দাও যে, আমি নবীর দাবিদার ব্যক্তিটি সম্পর্কে আবু সুফিয়ানকে কিছু জিজ্ঞাসা করলে সে যদি আমার নিকট মিথ্যা বলে তোমরা তার মিথ্যাচারিতা ধরিয়ে দিবে। আবু সুফিয়ান বলেন, যদি তাদের পক্ষ থেকে আমাকে মিথ্যুক প্রমাণের আশঙ্কা না থাকত তাহলে আমি মিথ্যা বলতামই।
সুফিয়ান বললেন, তিনি আমাদের মধ্যে অভিজাত বংশের অধিকারী। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন যে, তাঁর পূর্বপুরুষদের কেউ কি রাজা-বাদশাহ ছিলেন? আমি বললাম, না। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তাঁর সাম্প্রতিক বক্তব্যের পূর্বে তোমরা তাঁকে কখনো মিথ্যাচারের অপবাদ দিতে পেরেছ? আমি বললাম, না। তিনি বললেন, সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিবর্গ তাঁর অনুসরণ করছে, না দুর্বলগণ? আমি বললাম, বরং দুর্বলগণ। তিনি বললেন, তাদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে না হ্রাস পাচ্ছে। আমি বললাম বরং বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিনি বললেন, তাঁর ধর্মে দীক্ষিত হওয়ার পর তাঁর প্রতি ভীতশ্রদ্ধ হয়ে কেউ কি ধর্ম ত্যাগ করে? আমি বললাম, না। তিনি বললেন, তোমরা তাঁর বিরুদ্ধে কোন যুদ্ধ করেছ কি? আমি বললাম, জি হ্যাঁ। তিনি বললেন, তাঁর বিরুদ্ধে যুদ্ধের ফলাফল কি? আমি বললাম, আমাদের ও তাদের মধ্যে যুদ্ধের ফলাফল হলঃ একবার তিনি জয়ী হন, আর একবার আমরা জয়ী হই।
তিনি বললেন, তিনি প্রতিশ্রতি ভঙ্গ করেন কি? বললাম, না। তবে বর্তমানে আমরা একটি সন্ধির মেয়াদে আছি। দেখি এতে তিনি কি করেন। আবু সুফিয়ান বলেন, আল্লাহর শপথ এর সাথে আর অতিরিক্ত কিছু বক্তব্য সংযোজন করার সাহস আমার ছিল না। বললেন, তাঁর পূর্বে এমন কেউ কি আর দাবি করেছে? বললাম না। তারপর তিনি তার দোভাষিকে বললেন যে, একে জানিয়ে দাও যে আমি তোমাকে তোমাদের সাথে সে ব্যক্তির বংশ মর্যাদা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। তারপর তুমি বলেছ যে, সে আমাদের মধ্যে কুলীন। তদ্রূপ রাসূলগণ শ্রেষ্ঠ বংশেই জন্মগ্রহণ করে থাকেন।
আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম যে তাঁর পূর্বপুরুষের কেউ রাজা-বাদশাহ ছিলেন কিনা? তুমি বলেছ, না। তাই আমি বলছি যে, যদি তাঁর পূর্বপুরুষের কেউ রাজা-বাদশাহ থাকতেন তাহলে বলতাম তিনি তাঁর পূর্বপুরুষদের রাজত্ব পুনরুদ্ধার করতে চাচ্ছেন। আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম যে, দুর্বলগণ তাঁর অনুসারী না সম্ভ্রান্তগণ? তুমি বলেছ দুর্বলগণই। আমি বলেছি যে, যুগে যুগে দুর্বলগণই রাসূলদের অনুসারী হয়ে থাকি। আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম যে, এ দাবির পূর্বে তোমরা তাঁকে কখনো মিথ্যাচারের অপবাদ দিয়েছিলে কি? তুমি উত্তরে বলেছ যে, না। তাতে আমি বুঝেছি যে, যে ব্যক্তি প্রথমে মানুষদের সাথে মিথ্যাচার ত্যাগ করেন, তারপর আল্লাহর সাথে মিথ্যাচারিতা করবেন, তা হতে পারে না। আমি তোমাদের জিজ্ঞাসা করেছিলাম যে, তাঁর ধর্মে দীক্ষিত হওয়ার পর তাঁর প্রতি বিরক্ত ও অসন্তুষ্ট হয়ে কেউ ধর্ম ত্যাগ করে কিনা? তুমি বলেছ, না।
আমি বলেছি, ঈমান যখন অন্তরের অন্তস্থলে একবার প্রবিষ্ট হয় তখন এ রকমই হয়। আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, তাঁর অনুসারীরা বৃদ্ধি পাচ্ছে না হ্রাস পাচ্ছে? তুমি বলেছ, ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমি বলেছি, ঈমান পূর্ণতা লাভ করলে এ অবস্থাই হয়। আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম যে, তাঁর বিরুদ্ধে তোমরা যুদ্ধ করেছ কি? তুমি বলেছ যে, যুদ্ধ করেছ এবং তার ফলাফল হচ্ছে পানি উত্তোলনের বালতির ন্যায়। কখনো তোমাদের বিরুদ্ধে তারা জয়লাভ করে আবার কখনো তাদের বিরুদ্ধে তোমরা জয়লাভ কর। এমনিভাবেই রাসূলদের পরীক্ষা করা হয়, তারপর চূড়ান্ত বিজয় তাদের পক্ষেই হয়ে থাকে। আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম, তিনি প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করেন কিনা? তুমি বলেছ না। তদ্রূপ রাসূলগণ প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করেন না।
আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম, তাঁর পূর্বে কেউ এ দাবি উত্থাপন করেছিল কিনা? তুমি বলেছ, না। আমি বলি যদি কেউ তাঁর পূর্বে এ ধরণের দাবি করে থাকত তাহলে আমি মনে করতাম এ ব্যক্তি পূর্ববর্তী দাবির অনুসরণ করছে। আবু সুফিয়ান বলেন, তারপর হিরাক্লিয়াস জিজ্ঞাসা করলেন, তিনি তোমাদের কি কাজের নির্দেশ দেন? আমি বললাম, নামায কায়েম করতে, যাকাত প্রদান করতে, আত্মীয়তা রক্ষা করতে এবং পাপচারিতা থেকে পবিত্র থাকার নির্দেশ দেন। হিরাক্লিয়াস বললেন, তাঁর সম্পর্কে তোমার বক্তব্য যদি সঠিক হয়, তাহলে তিনি ঠিকই নবী, তিনি আবির্ভূত হবেন তা আমি জানতাম বটে; তবে তোমাদের মধ্যে আবির্ভূত হবেন তা মনে করিনি। যদি আমি তাঁর সান্নিধ্যে পৌছাবার সুযোগ পেতাম তাহলে আমি তাঁর সাক্ষাতকে অগ্রাধিকার দিতাম। যদি আমি তাঁর নিকট অবস্থান করতাম তাহলে আমি তাঁর পদযুগল ধুইয়ে দিতাম। আমার নীচের জমীন পর্যন্ত তাঁর রাজত্ব বিস্তৃত লাভ করবে।
আবু সুফিয়ান বলেন, তারপর হিরাক্লিয়াস রাসূল (ﷺ) এর পত্রখানি আনতে বললেন। এরূপ পাঠ করতে বললেন। চিঠির বক্তব্য এইঃ
দয়াময় পরম দয়ালু আল্লাহর নামে, আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ (ﷺ) এর পক্ষ থেকে রোমের অধিপতি হিরাক্লিয়াসের প্রতি। হেদায়েতের অনুসারীর প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক। এরপর আমি আপনাকে ইসলামের দাওয়াত দিচ্ছি, ইসলাম গ্রহণ করুন, মুক্তি পাবেন। ইসলাম গ্রহণ করুন, আল্লাহ তাআলা আপনাকে দ্বিগুণ প্রতিদান দেবেন। আর যদি মুখ ফিরিয়ে থাকেন তাহলে সকল প্রজার পাপরাশিও আপনার উপর নিপতিত হবে। হে কিতাবিগণ! এসো সে কথায়, যা আমাদের ও তোমাদের মধ্যে একই যে, আমরা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করবো না, কোন কিছুতেই তাঁর সাথে শরীক না করি। আর আমাদের একে অন্যকে আল্লাহ ব্যতীত প্রতিপালকরূপে গ্রহণ না করি। যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে বল, তোমরা সাক্ষী থাক, আমরা মুসলিম।

যখন তিনি পত্র পাঠ সমাপ্ত করলেন চতুর্দিকে উচ্চ স্বর উঠল এবং গুঞ্জন বৃদ্ধি পেল। তারপর তাঁর নির্দেশে আমাদের বাইরে নিয়ে আসা হল। আবু সুফিয়ান বলেন, আমরা বেরিয়ে আসার পর আমি আমার সাথীদের বললাম যে, আবু কাবশার সন্তানের ব্যাপারে তো বিস্তর প্রভাব লাভ করেছে। রোমীয় রাষ্ট্র নায়ক পর্যন্ত তাকে ভয় পায়। তখন থেকে আমার মনে এ দৃঢ় বিশ্বাস জন্মেছিল যে, রাসূল (ﷺ) এর দ্বীন অতি সত্বর বিজয় লাভ করবে। শেষ পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা আমাকে ইসলামে দীক্ষিত করলেন।

ইমাম যুহরী (রাহঃ) বলেন, তারপর হিরাক্লিয়াস রোমের নেতৃবৃন্দকে ডেকে একটি কক্ষে একত্রিত করলেন এবং বললেন, হে রোমকগণ! তোমরা কি আজীবন সৎপথ ও সফলতার প্রত্যাশী এবং তোমাদের রাজত্ব অটুট থাকুক? এতে তারা তার প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে বন্য-গর্দভের ন্যায় পলায়নরত হল। কিন্তু দরজা গুলো সবই বন্ধ পেল। এরপর বাদশাহ নির্দেশ দিলেন যে, তাদের সবাইকে আমার নিকট নিয়ে এসো। তিনি তাদের সবাইকে ডাকলেন এবং বললেন, তোমাদের ধর্মের উপর তোমাদের আস্থা কতটুকু আছে তা আমি পরীক্ষা করলাম। আমি যা আশা করেছিলাম তা তোমাদের থেকে পেয়েছি। অনন্তর সবাই তাঁকে সিজদা তথা কুর্নিশ করল এবং তার উপর সন্তুষ্ট থাকল।
باب قل يا أهل الكتاب تعالوا إلى كلمة سواء بيننا وبينكم أن لا نعبد إلا الله سواء قصد
حَدَّثَنِي إِبْرَاهِيمُ بْنُ مُوسَى، عَنْ هِشَامٍ، عَنْ مَعْمَرٍ،. وَحَدَّثَنِي عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مُحَمَّدٍ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّزَّاقِ، أَخْبَرَنَا مَعْمَرٌ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، قَالَ أَخْبَرَنِي عُبَيْدُ اللَّهِ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُتْبَةَ، قَالَ حَدَّثَنِي ابْنُ عَبَّاسٍ، قَالَ حَدَّثَنِي أَبُو سُفْيَانَ، مِنْ فِيهِ إِلَى فِيَّ قَالَ انْطَلَقْتُ فِي الْمُدَّةِ الَّتِي كَانَتْ بَيْنِي وَبَيْنَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ـ قَالَ ـ فَبَيْنَا أَنَا بِالشَّأْمِ إِذْ جِيءَ بِكِتَابٍ مِنَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم إِلَى هِرَقْلَ قَالَ وَكَانَ دِحْيَةُ الْكَلْبِيُّ جَاءَ بِهِ فَدَفَعَهُ إِلَى عَظِيمِ بُصْرَى، فَدَفَعَهُ عَظِيمُ بُصْرَى إِلَى ـ هِرَقْلَ ـ قَالَ فَقَالَ هِرَقْلُ هَلْ هَا هُنَا أَحَدٌ مِنْ قَوْمِ هَذَا الرَّجُلِ الَّذِي يَزْعُمُ أَنَّهُ نَبِيٌّ فَقَالُوا نَعَمْ. قَالَ فَدُعِيتُ فِي نَفَرٍ مِنْ قُرَيْشٍ فَدَخَلْنَا عَلَى هِرَقْلَ، فَأُجْلِسْنَا بَيْنَ يَدَيْهِ فَقَالَ أَيُّكُمْ أَقْرَبُ نَسَبًا مِنْ هَذَا الرَّجُلِ الَّذِي يَزْعُمُ أَنَّهُ نَبِيٌّ فَقَالَ أَبُو سُفْيَانَ فَقُلْتُ أَنَا. فَأَجْلَسُونِي بَيْنَ يَدَيْهِ، وَأَجْلَسُوا أَصْحَابِي خَلْفِي، ثُمَّ دَعَا بِتُرْجُمَانِهِ فَقَالَ قُلْ لَهُمْ إِنِّي سَائِلٌ هَذَا عَنْ هَذَا الرَّجُلِ الَّذِي يَزْعُمُ أَنَّهُ نَبِيٌّ، فَإِنْ كَذَبَنِي فَكَذِّبُوهُ. قَالَ أَبُو سُفْيَانَ وَايْمُ اللَّهِ، لَوْلاَ أَنْ يُؤْثِرُوا عَلَىَّ الْكَذِبَ لَكَذَبْتُ. ثُمَّ قَالَ لِتُرْجُمَانِهِ سَلْهُ كَيْفَ حَسَبُهُ فِيكُمْ قَالَ قُلْتُ هُوَ فِينَا ذُو حَسَبٍ. قَالَ فَهَلْ كَانَ مِنْ آبَائِهِ مَلِكٌ قَالَ قُلْتُ لاَ. قَالَ فَهَلْ كُنْتُمْ تَتَّهِمُونَهُ بِالْكَذِبِ قَبْلَ أَنْ يَقُولَ مَا قَالَ قُلْتُ لاَ. قَالَ أَيَتَّبِعُهُ أَشْرَافُ النَّاسِ أَمْ ضُعَفَاؤُهُمْ قَالَ قُلْتُ بَلْ ضُعَفَاؤُهُمْ. قَالَ يَزِيدُونَ أَوْ يَنْقُصُونَ قَالَ قُلْتُ لاَ بَلْ يَزِيدُونَ. قَالَ هَلْ يَرْتَدُّ أَحَدٌ مِنْهُمْ عَنْ دِينِهِ، بَعْدَ أَنْ يَدْخُلَ فِيهِ، سَخْطَةً لَهُ قَالَ قُلْتُ لاَ. قَالَ فَهَلْ قَاتَلْتُمُوهُ قَالَ قُلْتُ نَعَمْ. قَالَ فَكَيْفَ كَانَ قِتَالُكُمْ إِيَّاهُ قَالَ قُلْتُ تَكُونُ الْحَرْبُ بَيْنَنَا وَبَيْنَهُ سِجَالاً، يُصِيبُ مِنَّا وَنُصِيبُ مِنْهُ. قَالَ فَهَلْ يَغْدِرُ قَالَ قُلْتُ لاَ وَنَحْنُ مِنْهُ فِي هَذِهِ الْمُدَّةِ لاَ نَدْرِي مَا هُوَ صَانِعٌ فِيهَا. قَالَ وَاللَّهِ مَا أَمْكَنَنِي مِنْ كَلِمَةٍ أُدْخِلُ فِيهَا شَيْئًا غَيْرَ هَذِهِ. قَالَ فَهَلْ قَالَ هَذَا الْقَوْلَ أَحَدٌ قَبْلَهُ قُلْتُ لاَ. ثُمَّ قَالَ لِتُرْجُمَانِهِ قُلْ لَهُ إِنِّي سَأَلْتُكَ عَنْ حَسَبِهِ فِيكُمْ، فَزَعَمْتَ أَنَّهُ فِيكُمْ ذُو حَسَبٍ، وَكَذَلِكَ الرُّسُلُ تُبْعَثُ فِي أَحْسَابِ قَوْمِهَا، وَسَأَلْتُكَ هَلْ كَانَ فِي آبَائِهِ مَلِكٌ فَزَعَمْتَ أَنْ لاَ فَقُلْتُ لَوْ كَانَ مِنْ آبَائِهِ مَلِكٌ قُلْتُ رَجُلٌ يَطْلُبُ مُلْكَ آبَائِهِ، وَسَأَلْتُكَ عَنْ أَتْبَاعِهِ أَضُعَفَاؤُهُمْ أَمْ أَشْرَافُهُمْ فَقُلْتَ بَلْ ضُعَفَاؤُهُمْ، وَهُمْ أَتْبَاعُ الرُّسُلِ، وَسَأَلْتُكَ هَلْ كُنْتُمْ تَتَّهِمُونَهُ بِالْكَذِبِ قَبْلَ أَنْ يَقُولَ مَا قَالَ فَزَعَمْتَ أَنْ لاَ، فَعَرَفْتُ أَنَّهُ لَمْ يَكُنْ لِيَدَعَ الْكَذِبَ عَلَى النَّاسِ ثُمَّ يَذْهَبَ فَيَكْذِبَ عَلَى اللَّهِ، وَسَأَلْتُكَ هَلْ يَرْتَدُّ أَحَدٌ مِنْهُمْ عَنْ دِينِهِ بَعْدَ أَنْ يَدْخُلَ فِيهِ سَخْطَةً لَهُ فَزَعَمْتَ أَنْ لاَ، وَكَذَلِكَ الإِيمَانُ إِذَا خَالَطَ بَشَاشَةَ الْقُلُوبِ، وَسَأَلْتُكَ هَلْ يَزِيدُونَ أَمْ يَنْقُصُونَ فَزَعَمْتَ أَنَّهُمْ يَزِيدُونَ، وَكَذَلِكَ الإِيمَانُ حَتَّى يَتِمَّ، وَسَأَلْتُكَ هَلْ قَاتَلْتُمُوهُ فَزَعَمْتَ أَنَّكُمْ قَاتَلْتُمُوهُ فَتَكُونُ الْحَرْبُ بَيْنَكُمْ وَبَيْنَهُ سِجَالاً، يَنَالُ مِنْكُمْ وَتَنَالُونَ مِنْهُ، وَكَذَلِكَ الرُّسُلُ تُبْتَلَى، ثُمَّ تَكُونُ لَهُمُ الْعَاقِبَةُ، وَسَأَلْتُكَ هَلْ يَغْدِرُ فَزَعَمْتَ أَنَّهُ لاَ يَغْدِرُ، وَكَذَلِكَ الرُّسُلُ لاَ تَغْدِرُ، وَسَأَلْتُكَ هَلْ قَالَ أَحَدٌ هَذَا الْقَوْلَ قَبْلَهُ فَزَعَمْتَ أَنْ لاَ، فَقُلْتُ لَوْ كَانَ قَالَ هَذَا الْقَوْلَ أَحَدٌ قَبْلَهُ قُلْتُ رَجُلٌ ائْتَمَّ بِقَوْلٍ قِيلَ قَبْلَهُ. قَالَ ثُمَّ قَالَ بِمَ يَأْمُرُكُمْ قَالَ قُلْتُ يَأْمُرُنَا بِالصَّلاَةِ وَالزَّكَاةِ وَالصِّلَةِ وَالْعَفَافِ. قَالَ إِنْ يَكُ مَا تَقُولُ فِيهِ حَقًّا فَإِنَّهُ نَبِيٌّ، وَقَدْ كُنْتُ أَعْلَمُ أَنَّهُ خَارِجٌ، وَلَمْ أَكُ أَظُنُّهُ مِنْكُمْ، وَلَوْ أَنِّي أَعْلَمُ أَنِّي أَخْلُصُ إِلَيْهِ لأَحْبَبْتُ لِقَاءَهُ، وَلَوْ كُنْتُ عِنْدَهُ لَغَسَلْتُ عَنْ قَدَمَيْهِ، وَلَيَبْلُغَنَّ مُلْكُهُ مَا تَحْتَ قَدَمَىَّ. قَالَ ثُمَّ دَعَا بِكِتَابِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَرَأَهُ، فَإِذَا فِيهِ " بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ مِنْ مُحَمَّدٍ رَسُولِ اللَّهِ، إِلَى هِرَقْلَ عَظِيمِ الرُّومِ، سَلاَمٌ عَلَى مَنِ اتَّبَعَ الْهُدَى، أَمَّا بَعْدُ، فَإِنِّي أَدْعُوكَ بِدِعَايَةِ الإِسْلاَمِ، أَسْلِمْ تَسْلَمْ، وَأَسْلِمْ يُؤْتِكَ اللَّهُ أَجْرَكَ مَرَّتَيْنِ، فَإِنْ تَوَلَّيْتَ فَإِنَّ عَلَيْكَ إِثْمَ الأَرِيسِيِّينَ، وَ(يَا أَهْلَ الْكِتَابِ تَعَالَوْا إِلَى كَلِمَةٍ سَوَاءٍ بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمْ أَنْ لاَ نَعْبُدَ إِلاَّ اللَّهَ) إِلَى قَوْلِهِ (اشْهَدُوا بِأَنَّا مُسْلِمُونَ)". فَلَمَّا فَرَغَ مِنْ قِرَاءَةِ الْكِتَابِ ارْتَفَعَتِ الأَصْوَاتُ عِنْدَهُ، وَكَثُرَ اللَّغَطُ، وَأُمِرَ بِنَا فَأُخْرِجْنَا قَالَ فَقُلْتُ لأَصْحَابِي حِينَ خَرَجْنَا لَقَدْ أَمِرَ أَمْرُ ابْنِ أَبِي كَبْشَةَ، أَنَّهُ لَيَخَافُهُ مَلِكُ بَنِي الأَصْفَرِ فَمَا زِلْتُ مُوقِنًا بِأَمْرِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَنَّهُ سَيَظْهَرُ حَتَّى أَدْخَلَ اللَّهُ عَلَىَّ الإِسْلاَمَ. قَالَ الزُّهْرِيُّ فَدَعَا هِرَقْلُ عُظَمَاءَ الرُّومِ فَجَمَعَهُمْ فِي دَارٍ لَهُ فَقَالَ يَا مَعْشَرَ الرُّومِ، هَلْ لَكُمْ فِي الْفَلاَحِ وَالرَّشَدِ آخِرَ الأَبَدِ، وَأَنْ يَثْبُتَ لَكُمْ مُلْكُكُمْ قَالَ فَحَاصُوا حَيْصَةَ حُمُرِ الْوَحْشِ إِلَى الأَبْوَابِ، فَوَجَدُوهَا قَدْ غُلِقَتْ، فَقَالَ عَلَىَّ بِهِمْ. فَدَعَا بِهِمْ فَقَالَ إِنِّي إِنَّمَا اخْتَبَرْتُ شِدَّتَكُمْ عَلَى دِينِكُمْ، فَقَدْ رَأَيْتُ مِنْكُمُ الَّذِي أَحْبَبْتُ. فَسَجَدُوا لَهُ وَرَضُوا عَنْهُ.

হাদীসের ব্যাখ্যা:

রোম সম্রাটের কাছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের চিঠি ও সম্রাটের তদন্ত:

হিজরী ৬ সালে মক্কার মুশরিকদের সাথে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের একটি সন্ধি স্থাপিত হয়। হিজরতের পর থেকে সন্ধিস্থাপনের পূর্ব পর্যন্ত একের পর এক যুদ্ধ-বিগ্রহ চলতে থাকে। অধিকাংশ সময় নবী কারীম সাল্লা 'আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তা নিয়েই ব্যস্ত থাকতে হয়। ফলে চতুর্দিকে ইসলাম প্রচারে বিশেষ মনোযোগ দেওয়া যায়নি। হিজরী ৬ষ্ঠ সালে তিনি প্রায় দেড় হাজার সাহাবীসহ উমরা পালনের উদ্দেশ্যে মক্কা মুকাররামায় যাত্রা করেছিলেন। কিন্তু মুশরিকগণ তাঁকে সে সুযোগ দেয়নি। তিনি হুদায়বিয়া নামক স্থানে শিবির ফেলতে বাধ্য হন। সেখানে অনেক আলাপ-আলোচনার পর কুরায়শদের সংগে তাঁর যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্থাপিত হয়। এ চুক্তির ফলে পূর্ণোদ্যমে দা'ওয়াতী কার্যক্রম চালানোর সুযোগ হয়। অভ্যন্তরীণ প্রচার-প্রচারণার বাইরেও নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিভিন্ন দেশের রাজা-বাদশাদের কাছে দা'ওয়াতীপত্র প্রেরণ করতে থাকেন। এরকম একটি পত্র পাঠানো হয়েছিল রোমের বাদশার কাছেও। পত্রবাহক ছিলেন হযরত দিহয়া কালবী রাযি.।

তখনকার রোমের বাদশা ছিলেন হিরাল (হেরাক্লিয়াস)। উপাধি কায়সার/কাইযার। রোমের প্রত্যেক বাদশাকেই কাইযার বলা হত। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের চিঠি যখন তার হাতে পৌঁছায়, তখন তিনি ঈলিয়া (বায়তুল মুকাদ্দাস) অবস্থান করছিলেন।

হিরাকল অত্যন্ত বুদ্ধিমান ও বিচক্ষণ শাসক ছিলেন। চিঠি পাওয়ার পর চটজলদি কোনও প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলেন না। তিনি চাইলেন পত্রপ্রেরক (মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সম্পর্কে খোঁজখবর নেবেন। তারপর ভালোভাবে জেনেশুনে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। তাঁর সম্পর্কে বস্তুনিষ্ঠ তথ্যপ্রদান আরবের কোনও লোকের পক্ষেই সম্ভব। সে লোক যদি মক্কার হয়, বিশেষত তাঁর জ্ঞাতি-গোষ্ঠীর কেউ হয়, তবে আরও ভালো। এমন কোনও লোক পাওয়া যায় কিনা, তিনি খোঁজ নিতে বললেন।

ঘটনাক্রমে আবূ সুফয়ানের বাণিজ্য কাফেলা এ সময় ফিলিস্তীনে অবস্থান করছিল।

তারাও যুদ্ধ-বিগ্রহে ব্যস্ত থাকায় এতদিন ব্যবসা-বাণিজ্যে মনোযোগ দিতে পারেনি।
যাহোক হিরাকলের লোকজন আবূ সুফয়ানের বাণিজ্য কাফেলার সন্ধান পেয়ে গেল এবং তারা তাদেরকে রাজদরবারে নিয়ে হাজির করল। কাফেলার প্রত্যেকের সম্পর্কে খোঁজ-খবর নেওয়ার পর জানা গেল আবূ সুফয়ানই নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের সর্বাপেক্ষা ঘনিষ্ঠ। উভয়ে একই কুরায়শ বংশের লোক ও মক্কার বাসিন্দা। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে সর্বাপেক্ষা ভালো ধারণা তিনিই দিতে পারবেন। কাজেই কথোপকথনের জন্য কাফেলার লোকদের মধ্যে হিরাকল তাকেই নির্বাচন করলেন।

রোম সম্রাটের দরবারে আবূ সুফয়ান:

সম্রাটের পারিষদবর্গের গুরুত্বপূর্ণ লোকজন দরবারে উপস্থিত। আবূ সুফয়ানকে তাদের সামনে বসানো হল। তার সঙ্গীদের বসানো হল তার পেছনে। এটা ছিল হিরাকলের সতর্কতা। যাতে তারা পরস্পর ইশারা-ইঙ্গিতে ভাবের লেনদেন করতে না পারে।
হিরাকল তাকে নবী কারীম 'সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম' সম্পর্কে অনেকগুলো প্রশ্ন করলেন। আবূ সুফয়ান তার প্রত্যেকটির সঠিক উত্তর দান করেন। একটি প্রশ্নেরও উত্তরে কোনও অসত্যকথা বলেননি। রাজনৈতিক কুটকৌশলের দিকে লক্ষ করলে এ ক্ষেত্রে তার মিথ্যা তথ্য দেওয়ার কথা ছিল। কারণ নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন তার শত্রু। তাঁকে দমন করার জন্য এ যাবতকাল অনেক শক্তি ক্ষয় করেছেন। কিন্তু তাতে সফলতা লাভ করতে পারেননি। এবার সফলতা লাভের একটা বড় সুযোগ হাতে এসে গেছে। রোমসম্রাট বলে কথা!! তখনকার পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ শক্তি। তাকে যদি খেপিয়ে দেওয়া যায়, তবে মদীনায় হামলা চালিয়ে নিমিষেই সবকিছু চুরমার করে দিতে পারে। ইসলামের মূলোৎপাটন করার এ এক সুবর্ণ সুযোগ। কোনও বুদ্ধিমান ব্যক্তি শত্রু দমনের এই সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করতে পারে না। আবূ সুফয়ানেরও তা করার কথা নয়। কিন্তু সেজন্য যে কিছু মিথ্যাকথা বলতে হয়! সমস্যা এখানেই। আবূ সুফয়ান বলেন, আল্লাহর কসম! লজ্জাই বাধ সেধেছে। আমি মিথ্যা বলি- এ কথা দেশময় প্রচার হয়ে যাবে। সেই লজ্জা! নয়তো আমি অবশ্যই তাঁর সম্পর্কে মিথ্যাকথা বলতাম।

এর থেকে আমাদের শিক্ষা নেওয়ার রয়েছে। আবূ সুফয়ান তখনও কাফের এবং ইসলামের ঘোরশত্রু। তা সত্ত্বেও তিনি মিথ্যা বলাকে নিজের পক্ষে লজ্জাস্কর মনে করেছেন। লোকে জানবে তিনি মিথ্যা বলেন, এটাকে নিজের পক্ষে অপমানকর মনে করেছেন। বিশেষত তিনি একজন জননেতা। লোকে জানবে তাদের নেতা মিথ্যা বলে।
সেই লজ্জায় তিনি মিথ্যা বলা হতে বিরত থেকেছেন। আজ আমাদের কী অবস্থা!
কথায় কথায় মিথ্যা বলি। তা জনসম্মুখে প্রকাশ্যেই বলি। ছোটদের সামনে বলি, বড়দের সামনেও বলি। আপন-পর সকলের সামনেই বলি।

সংক্ষিপ্ত নববী শিক্ষার ভেতর পূর্ণাঙ্গ ইসলামের ছবি:

যাহোক হিরাকল আবূ সুফয়ানকে অনেকগুলো প্রশ্ন করেছিলেন। আমরা তার বিস্তারিত বিবরণের দিকে যাচ্ছি না। এখানে কেবল এতটুকু উল্লেখ্য যে, হিরাকল তাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, তিনি (অর্থাৎ নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তোমাদের কী আদেশ করেন (অর্থাৎ কী শিক্ষা দেন)? আবূ সুফয়ান উত্তর দিলেন, তিনি বলে থাকেন- তোমরা এক আল্লাহর ইবাদত কর। তাঁর সাথে কোনওকিছুকে শরীক করো না। তোমাদের বাপ-দাদাগণ যা বলে তা পরিত্যাগ কর। আর তিনি আমাদেরকে সালাত, সিদক (সততা ও সত্যবাদিতা), আফাফ (সংযম ও শুচিতা) ও আত্মীয়তা রক্ষার নির্দেশ দেন।

লক্ষ করলে বোঝা যায় এর ভেতর সংক্ষেপে ইসলামের মূল শিক্ষাসমূহ এসে গেছে। ইসলামের সর্বপ্রধান শিক্ষা ‘আকীদা-বিশ্বাস। আকীদা-বিশ্বাসের ভেতর সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে তাওহীদ। অর্থাৎ আল্লাহকে এক বলে বিশ্বাস করা এবং তাঁর সংগে কাউকে শরীক না করা। এ হাদীছে প্রথমে সেই শিক্ষাই দেওয়া হয়েছে। বলা যেতে পারে এটা 'আকীদা বিষয়ক একটি শিরোনাম। আখিরাত, রিসালাত, তাকদীর প্রভৃতি বিষয়ক বিশ্বাসও এর অন্তর্ভুক্ত। মু'মিন হওয়ার জন্য তার সবগুলোতেই বিশ্বাস রাখা জরুরি। তবে সবার আগে যেহেতু তাওহীদ, তাই শিরোনাম হিসেবে এখানে তাওহীদের কথাই উল্লেখ করা হয়েছে।

বাপ-দাদাগণ যা বলে তা পরিহার করতে বলে মূলত শিরক পরিহারের কথাই বলা হয়েছে। আরবে যুগ-যুগ ধরে মূর্তিপূজা চলে আসছিল। পরের প্রজন্ম আগের প্রজন্মকে দেখে দেখে সেটাকেই সত্যধর্ম বলে বিশ্বাস করছিল। এর বিপরীত কোনও কথা তারা মানতে রাজি ছিল না। সাধারণভাবে সর্বত্র এটাই মানুষের চরিত্র। বাপ-দাদাদের যা করতে দেখে আসে তা করতেই অভ্যস্ত হয়ে যায়, তার বিপরীত কিছু মানতে রাজি হয় না। আরব মুশরিকগণও তা মানছিল না। তাদের বড় অভিযোগ ছিল মহানবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেন তাদের বাপ-দাদাদের আমল থেকে চলে আসা মূর্তিপূজার বিরুদ্ধে কথা বলেন। আবূ সুফয়ান হয়তো নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ শিক্ষাটিকে অভিযোগ হিসেবেই উল্লেখ করেছিলেন যে, তিনি নিজেও বাপ-দাদার পথকে ভ্রান্ত আখ্যায়িত করে নতুন পথে চলছেন, অন্যদেরও সে পথে চালাতে চাচ্ছেন। এভাবে বাপ-দাদাকে গোমরাহ সাব্যস্ত করা ও যুগ-যুগ ধরে চলে আসা ধর্মমতকে ভ্রান্ত আখ্যায়িত করা কি কোনও সমর্থনযোগ্য কাজ? এটা কি চরম অন্যায় ও গর্হিত কাজ নয়? এজন্যই আমরা তার নতুন ধর্ম সমর্থন করতে পারছি না। সম্ভবত এই বলে তিনি হেরাক্লিয়াসকেও নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিরুদ্ধে খেপিয়ে তুলতে চাচ্ছিলেন। কারণ হেরাক্লিয়াস ও তার জাতিও হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের রেখে যাওয়া সত্যধর্মের বিপরীতে বাপ-দাদার আমল থেকে চলে আসা ভ্রান্ত রীতি-নীতি অনুসরণ করছিল আর তাকেই প্রকৃত খৃষ্টধর্ম বলে বিশ্বাস করছিল। কিন্তু আবূ সুফয়ানের সে উদ্দেশ্য পূরণ হয়নি। কেননা তার মুখ থেকে যাবতীয় তথ্য শোনার পর তিনি বুঝতে পেরেছিলেন হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন সত্য নবী এবং তিনিই সেই প্রতিশ্রুত শেষ পয়গম্বর, যাঁর সম্পর্কে আগের সমস্ত নবী-রাসূল ভবিষ্যদ্বাণী করে গেছেন। এ কারণে হেরাক্লিয়াস নিজেও ঈমান আনার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিলেন। কিন্তু যখন পারিষদবর্গ ও যাজক-পুরোহিতদের স্পষ্ট বিরোধিতা লক্ষ করলেন এবং তার পরিণতিতে সিংহাসন হারানোরও আশংকা বোধ করলেন, তখন ভ্রান্ত জানা সত্ত্বেও প্রচলিত খৃষ্ট ধর্মমতেই অবিচল থাকলেন। ক্ষমতার মোহে পড়লে মানুষ এভাবেই সত্যবিমুখ হয়ে থাকে এবং ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ার স্বার্থে আখিরাতের চিরস্থায়ী সফলতা বিসর্জন দেয়।
tahqiqতাহকীক:বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)