আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ

৭- নামাযের অধ্যায়

হাদীস নং: ৪১৬
আন্তর্জাতিক নং: ৪২৮
২৮৯। জাহিলী যুগের মুশরিকদের কবর খুঁড়ে ফেলে মসজিদ নির্মাণ করা।
৪১৬। মুসাদ্দাদ (রাহঃ) ...... আনাস ইবনে মালিক (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (ﷺ) মদীনায় পৌঁছে প্রথমে মদীনার উচ্চ এলাকায় অবস্থিত বনু আমর ইবনে আউফ’ নামক গোত্রে উপনীত হন। তাদের সঙ্গে নবী (ﷺ) চৌদ্দ দিন (অপর বর্ণনায় চব্বিশ দিন) অবস্থান করেন। তারপর তিনি বনু নাজ্জারকে ডেকে পাঠালেন। তারা কাঁধে তলোয়ার ঝুলিয়ে উপস্থিত হল। আমি যেন এখনো সে দৃশ্য দেখতে পাচ্ছি যে, নবী (ﷺ) ছিলেন তার বাহনের উপর, আবু বকর (রাযিঃ) সে বাহনেই তাঁর পেছনে আর বনু নাজ্জারের দল তাঁর আশেপাশে।
অবশেষে তিনি আবু আইয়্যুব আনসারী (রাযিঃ) এর ঘরের সামনে অবতরণ করলেন। নবী (ﷺ) যেখানেই নামাযের ওয়াক্ত হয় সেখানেই নামায আদায় করতে পছন্দ করতেন এবং তিনি ছাগল-ভেড়ার খোয়াড়েও নামায আদায় করতেন। এখন তিনি মসজিদ তৈরী করার নির্দেশ দেন। তিনি বনু নাজ্জারকে ডেকে বললেনঃ হে বনু নাজ্জার! তোমরা আমার কাছ থেকে তোমাদের এই বাগিচার মূল্য নির্ধারণ কর। তারা বললোঃ না, আল্লাহর কসম, আমরা এর দাম নেব না। এর দাম আমরা একমাত্র আল্লাহর কাছেই আশা করি।
আনাস (রাযিঃ) বলেনঃ আমি তোমাদের বলছি, এখানে মুশরিকদের কবর এবং ভগ্নাবশেষ ছিল। আর ছিল খেজুরের গাছ। নবী (ﷺ) এর নির্দেশে মুশরিকদের কবর খুঁড়ে ফেলা হল। তারপর ভগ্নাবশেষ সমতল করে দেওয়া হল, খেজুর গাছগুলো কেটে ফেলা হল এবং এর দুই পাশে পাথর বসানো হল। সাহাবীগণ পাথর তুলতে তুলতে ছন্দোবদ্ধ কবিতা আবৃত্তি করছিলেন। আর নবী (ﷺ)-ও তাঁদের সাথে ছিলেন। তিনি তখন বলছিলেনঃ

اللَّهُمَّ لاَ خَيْرَ إِلاَّ خَيْرُ الآخِرَهْ فَاغْفِرْ لِلأَنْصَارِ وَالْمُهَاجِرَهْ

হে আল্লাহ! আখিরাতের কল্যাণ ছাড়া (প্রকৃতপক্ষে) আর কোন কল্যাণ নেই। আপনি আনসার ও মুহাজিরগণকে ক্ষমা করে দিন।
بَابُ هَلْ تُنْبَشُ قُبُورُ مُشْرِكِي الْجَاهِلِيَّةِ، وَيُتَّخَذُ مَكَانَهَا مَسَاجِدَ
428 - حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، قَالَ: حَدَّثَنَا عَبْدُ الوَارِثِ، عَنْ أَبِي التَّيَّاحِ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ: قَدِمَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ المَدِينَةَ فَنَزَلَ أَعْلَى المَدِينَةِ فِي حَيٍّ يُقَالُ لَهُمْ بَنُو عَمْرِو بْنِ عَوْفٍ، فَأَقَامَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِيهِمْ أَرْبَعَ عَشْرَةَ لَيْلَةً، ثُمَّ أَرْسَلَ إِلَى بَنِي النَّجَّارِ، فَجَاءُوا مُتَقَلِّدِي السُّيُوفِ كَأَنِّي أَنْظُرُ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى رَاحِلَتِهِ، وَأَبُو بَكْرٍ رِدْفُهُ وَمَلَأُ بَنِي النَّجَّارِ حَوْلَهُ حَتَّى أَلْقَى بِفِنَاءِ أَبِي أَيُّوبَ [ص:94]، وَكَانَ يُحِبُّ أَنْ يُصَلِّيَ حَيْثُ أَدْرَكَتْهُ الصَّلاَةُ، وَيُصَلِّي فِي مَرَابِضِ الغَنَمِ، وَأَنَّهُ أَمَرَ بِبِنَاءِ المَسْجِدِ، فَأَرْسَلَ إِلَى مَلَإٍ مِنْ بَنِي النَّجَّارِ فَقَالَ: «يَا بَنِي النَّجَّارِ ثَامِنُونِي بِحَائِطِكُمْ هَذَا» ، قَالُوا: لاَ وَاللَّهِ لاَ نَطْلُبُ ثَمَنَهُ إِلَّا إِلَى اللَّهِ، فَقَالَ أَنَسٌ: فَكَانَ فِيهِ مَا أَقُولُ لَكُمْ قُبُورُ المُشْرِكِينَ، وَفِيهِ خَرِبٌ وَفِيهِ نَخْلٌ، فَأَمَرَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِقُبُورِ المُشْرِكِينَ، فَنُبِشَتْ، ثُمَّ بِالخَرِبِ فَسُوِّيَتْ، وَبِالنَّخْلِ فَقُطِعَ، فَصَفُّوا النَّخْلَ قِبْلَةَ المَسْجِدِ وَجَعَلُوا عِضَادَتَيْهِ الحِجَارَةَ، وَجَعَلُوا يَنْقُلُونَ الصَّخْرَ وَهُمْ يَرْتَجِزُونَ وَالنَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَعَهُمْ، وَهُوَ يَقُولُ: «اللَّهُمَّ لاَ خَيْرَ إِلَّا خَيْرُ الآخِرَهْ فَاغْفِرْ لِلْأَنْصَارِ وَالمُهَاجِرَهْ»

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ কথাটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একাধিকবার বলেছেন। এর দ্বারা তিনি সাহাবীদের বুঝাচ্ছিলেন যে, দেখ দুনিয়ার কষ্ট স্থায়ী কিছু নয়। দুনিয়া যেমন ক্ষণস্থায়ী, তেমনি এর কষ্ট-ক্লেশও ক্ষণস্থায়ী। তোমরা কষ্ট করছ আল্লাহর জন্য। একদিন কষ্ট থাকবে না। কিন্তু এর পুরস্কারস্বরূপ অনন্ত অসীম আখিরাতে তোমরা অফুরন্ত সুখ-শান্তি ভোগ করতে পারবে।

আবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বাক্যটির মাধ্যমে যেন উম্মতকে সতর্ক করছেন, দুনিয়ার কোনও সফলতা, সমৃদ্ধি কিংবা অন্য কোনও আনন্দদায়ক বস্তু অর্জিত হয়ে যাওয়ায় তোমরা খুশিতে মেতে যেয়ো না। কারণ ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ার সবই ক্ষণস্থায়ী। স্থায়ী সুখ ও আনন্দ কেবল আখিরাতেই আছে। তাই আসল লক্ষ্যবস্তু হওয়া উচিত আখিরাতের সফলতা। সর্বাবস্থায় সে চিন্তা-চেতনা অন্তরে জাগ্রত রেখো।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

দুনিয়ার সুখ-দুঃখ, আরাম-কষ্ট কোনও অবস্থায়ই আখিরাতের কথা ভুলে যেতে নেই। সর্বাবস্থায় মন-মস্তিষ্কে এ চেতনা জাগ্রত রাখা চাই যে, আখিরাতের জীবনই প্রকৃত জীবন। তাই সে জীবনে মুক্তিলাভ করাই হবে জীবনের আসল লক্ষ্যবস্তু।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন