আল মুওয়াত্তা - ইমাম মালিক রহঃ

৫. জুমআর অধ্যায়

হাদীস নং: ২২৪
১. জুম’আ দিবসের গোসল
রেওয়ায়ত ৫. আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাযিঃ) হইতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলিয়াছেন, তোমাদের কেউ জুম’আর নামাযে আসিতে ইচ্ছা করিলে সে অবশ্য গোসল করিবে।

মালিক (রাহঃ) বলিয়াছেন, জুম’আর দিন যে ব্যক্তি দিনের প্রারম্ভে গোসল করিয়াছে, সে ঐ গোসলে জুম’আর গোসলের নিয়ত করিয়াছে, তাহার জন্য সেই গোসল জুম’আর জন্য যথেষ্ট হইবে না যদি না সে জুম’আয় যাওয়ার জন্য পুনরায় গোসল করে*; কারণ ইবনে উমর (রাযিঃ)-এর হাদীসে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ফরমাইয়াছেনঃ তোমাদের কেউ জুম’আয় আসার ইচ্ছা করিলে সে অবশ্যই গোসল করিবে।

মালিক (রাহঃ) বলিয়াছেনঃ যে ব্যক্তি জুম’আ দিবসে গোসল করিয়াছে, তাড়াতাড়ি অথবা বিলম্বে, সে এই গোসলের দ্বারা জুম’আর গোসলের নিয়ত করিয়াছে; পরে ওযু যাহাতে ভঙ্গ হয় এমন কিছু ঘটিয়াছে তবে তাহার পূর্বেকার গোসল যথেষ্ট হইরে এবং তাহার উপর কেবলমাত্র ওযু ওয়াজিব হইবে।

* হানাফী মতে উক্ত গোসল জুমআর জন্য যথেষ্ট হয়।
بَاب الْعَمَلِ فِي غُسْلِ يَوْمِ الْجُمُعَةِ
وَحَدَّثَنِي عَنْ مَالِك عَنْ نَافِعٍ عَنْ ابْنِ عُمَرَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِذَا جَاءَ أَحَدُكُمْ الْجُمُعَةَ فَلْيَغْتَسِلْ
قَالَ مَالِك مَنْ اغْتَسَلَ يَوْمَ الْجُمُعَةِ أَوَّلَ نَهَارِهِ وَهُوَ يُرِيدُ بِذَلِكَ غُسْلَ الْجُمُعَةِ فَإِنَّ ذَلِكَ الْغُسْلَ لَا يَجْزِي عَنْهُ حَتَّى يَغْتَسِلَ لِرَوَاحِهِ وَذَلِكَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ فِي حَدِيثِ ابْنِ عُمَرَ إِذَا جَاءَ أَحَدُكُمْ الْجُمُعَةَ فَلْيَغْتَسِلْ قَالَ مَالِك وَمَنْ اغْتَسَلَ يَوْمَ الْجُمُعَةِ مُعَجِّلًا أَوْ مُؤَخِّرًا وَهُوَ يَنْوِي بِذَلِكَ غُسْلَ الْجُمُعَةِ فَأَصَابَهُ مَا يَنْقُضُ وُضُوءَهُ فَلَيْسَ عَلَيْهِ إِلَّا الْوُضُوءُ وَغُسْلُهُ ذَلِكَ مُجْزِئٌ عَنْهُ

হাদীসের ব্যাখ্যা:

হাদীস থেকে জুমআর দিনে গোসল করা এবং সুগন্ধি ব্যবহার করা ছুন্নাত ও ফযীলতপূর্ণ বলে প্রমাণিত হয়। আর এটাই হানাফী মাযহাবের মত। (বাদায়েউস সানায়ে’: ১/২৬৯) জুমআর দিন গোসল করা জরুরী বলে যদিও কোন কোন ইমাম মত প্রকাশ করেছেন। কিন্তু হযরত ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, ইসলামের শুরু যুগে সাহাবায়ে কিরামের আর্থিক দৈন্যতা ছিল চরমে। নিজেরা ক্ষেতে খামারে কাজ করতেন, মোটা কাপড় পরিধান করতেন এবং ঘর্মাক্ত শরীরে জুমার নামাযে আসতেন। ঘামের দুর্গন্ধে মানুষের কষ্ট হতো। কিন্তু পরবর্তীতে আল্লাহ তাআলা তাঁদের অনটন দূর করে আর্থিক স্বচ্ছলতা দান করেছেন। তাঁরা উন্নতমানের পাতলা কাপড় পরিধান করেন। কাজের মানুষে তাঁদের কাজ করে। তখন গোসল করার ঐ প্রয়োজনীয়তা থাকেনি যা শুরু যুগে ছিলো। (তহাবী শরীফ-৭০৭) এ হাদীসের আলোকে বলা যেতে পারে যে, রসূল স.-এর বাণী الغُسْلُ يَوْمَ الجُمُعَةِ وَاجِبٌ عَلَى كُلِّ مُحْتَلِمٍ জুমআর দিনের গোসল করা সকল প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ওয়াজিব’ (বুখারী-৮১৬) এটা ইসলামের শুরু দিকের কথা। এর আরো একটি প্রমাণ মেলে مَنْ تَوَضَّأَ فَأَحْسَنَ الْوُضُوءَ، ثُمَّ أَتَى الْجُمُعَةَ، فَاسْتَمَعَ وَأَنْصَتَ، غُفِرَ لَهُ مَا بَيْنَهُ وَبَيْنَ الْجُمُعَةِ، وَزِيَادَة ثَلَاثَةِ أَيَّامٍ، যে ব্যক্তি সুন্দর রূপে অযু করে জুমআর নামাযে যায় এবং চুপ করে মনোযোগ সহকারে (ইমামের খুৎবা) শোনে তার এই জুমআ থেকে পরের জুমআ এবং আরো অতিরিক্ত তিন দিনের গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। (মুসলিম-১৮৬১) এ হাদীসে জুমআর ফযীলত পাওয়ার জন্য তিনটি আমলের কথা বলা হয়েছে যার মধ্যে গোসলের কথা উল্লেখ করা হয়নি। এ থেকেও বুঝা যায় যে, জুমআর জন্য গোসল করা জরুরী নয়। তবে বুখারী: ৮৬৪ নং হাদীস থেকে গোসলের ফযীলত প্রমাণিত হয়েছে। অতএব এটা ছুন্নাত।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন
মুওয়াত্তা মালিক - হাদীস নং ২২৪ | মুসলিম বাংলা