আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ
৫০- নবীজীর সাঃ যুদ্ধাভিযানসমূহ
হাদীস নং:
আন্তর্জাতিক নং: ৪৪৬৭
২২৪৯. নবী কারীম (ﷺ)- এর ওফাত
৪১১৫। কাবীসা (রাহঃ) .... আয়েশা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী কারীম (ﷺ) ইন্তিকাল করেন এমন অবস্থায় যে, তাঁর বর্ম (যুদ্ধাস্ত্র) ইহুদীর কাছে ত্রিশ সা’ যবের বিনিময়ে বন্ধক রাখা ছিল।
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছ দ্বারা জানা যায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওফাতকালেও কী পরিমাণ খাদ্যভাবের মধ্যে ছিলেন। খাদ্যের জন্য তাঁকে এক ইহুদীর কাছে তাঁর বর্মটি পর্যন্ত বন্ধক রাখতে হয়েছিল। তিনি এর বিনিময়ে তার কাছ থেকে ৩০ সা' যব গ্রহণ করেছিলেন। অর্থাৎ তিনি ইহুদীর কাছ থেকে ৩০ সা' যব বাকিতে কিনেছিলেন। নগদ মূল্য পরিশোধ করার মত কিছুই তাঁর কাছে ছিল না। মূল্য বাবদ তিনি বর্মটি বন্ধক রেখেছিলেন।
যে ইহুদীর কাছে বর্মটি বন্ধক রেখেছিলেন তার নাম আবুশ শাহম। কোনও সচ্ছল সাহাবীর সঙ্গে লেনদেন না করে একজন ইহুদীর সঙ্গে তা করার কারণ কী, উলামায়ে কেরাম এর বিভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়েছেন। যেমন কেউ বলেন, এর দ্বারা বোঝানো উদ্দেশ্য ছিল যে, এরকম লেনদেন ইহুদীর সঙ্গেও করা জায়েয। অথবা এর কারণ ওই সময় হয়তো নিকটবর্তী কোনও সাহাবীর কাছে বাড়তি খাদ্যশস্য ছিল না। এমনও হতে পারে যে, তিনি আশঙ্কা করেছিলেন কোনও মুসলিমের নিকট থেকে গ্রহণ করলে সে এর বিনিময় নিতে চাবে না, আর বিনামূল্যে দেওয়ায় তার হয়তো কষ্ট হবে। কেননা অসম্ভব তো নয় যে, তার কাছে অতিরিক্ত খাদ্যশস্য খুব বেশি নেই। যতটুকু আছে তা তার কাজে লাগবে। হয়তো বিক্রি করে অন্য কোনও প্রয়োজন মেটাবে। এ অবস্থায় বিনামূল্যে দিয়ে দিলে তার উপর চাপ পড়বে। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রিয় সাহাবীদের কোনও রকম কষ্ট দিতে চাচ্ছিলেন না। এ কারণেই তিনি তাদের কাছ থেকে না নিয়ে ইহুদীর কাছ থেকে নিয়েছিলেন।
হাদীছটি দ্বারা বোঝা গেল নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওফাত হয়েছিল দেনাদার অবস্থায়। অথচ এক হাদীছে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
نفس المؤمن معلقة بدينه حتى يقضى عنه
মুমিনের আত্মা তার দেনার সঙ্গে ঝুলে থাকে, যতক্ষণ না তা পরিশোধ করা হয়।
কেউ কেউ এ কারণে বলেছেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দেনা বাবদ বর্ম বন্ধক রাখলেও তিনি ওফাতের আগে আগে দেনা পরিশোধ করে তা ছাড়িয়ে এনেছিলেন। কিন্তু আলোচ্য হাদীছটিতে যখন পরিষ্কার বলা হয়েছে যে, বন্ধক রাখা অবস্থায়ই তাঁর ওফাত হয়েছিল, তখন এরূপ কথা বলার কোনও সুযোগ নেই। সঠিক কথা হল দেনার দায়ে আত্মা আটক থাকে তখনই, যখন দেনা পরিশোধের কোনও ইচ্ছা না থাকে কিংবা পরিশোধের কোনও ব্যবস্থা না রেখে যায়। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেহেতু বর্ম বন্ধক রেখেছিলেন, তাই এটা তো পরিষ্কার যে, তিনি দেনা পরিশোধের ব্যবস্থা রেখে গিয়েছিলেন। বর্ম বিক্রি করলেই দেনা পরিশোধ হয়ে যেত।
অন্য বর্ণনা দ্বারা জানা যায় যে, হযরত আবূ বকর সিদ্দীক রাযি. নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওফাতের পর মূল্য পরিশোধ করে বর্মটি ছাড়িয়ে এনেছিলেন। কোনও কোনও বর্ণনা দ্বারা জানা যায়, হযরত আলী রাযি.-ই দেনা পরিশোধ করেছিলেন। আবার এক বর্ণনা দ্বারা জানা যায় হযরত আবূ বকর সিদ্দীক রাযি. বর্মটি ছাড়িয়ে এনে হযরত আলী রাযি.-এর হাতে সমর্পণ করেছিলেন।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. যারা দীনের উপর মজবুত থাকা অবস্থায় অভাব-অনটনের ভেতর ইন্তিকাল করে, তারা বড় ভাগ্যবান। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শের উপরই তাদের মৃত্যু হল।
খ. অভাব-অনটনের মধ্যে যাদের দিন কাটে, এ হাদীছের ভেতর তাদের জন্য সান্ত্বনার বাণী আছে যে, প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো অভাব-অনটনের মধ্যেই ইহলোক ত্যাগ করেছেন।
গ. এ হাদীছ দ্বারা জানা গেল যে, অমুসলিমদের সঙ্গে লেনদেন করা জায়েয আছে।
যে ইহুদীর কাছে বর্মটি বন্ধক রেখেছিলেন তার নাম আবুশ শাহম। কোনও সচ্ছল সাহাবীর সঙ্গে লেনদেন না করে একজন ইহুদীর সঙ্গে তা করার কারণ কী, উলামায়ে কেরাম এর বিভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়েছেন। যেমন কেউ বলেন, এর দ্বারা বোঝানো উদ্দেশ্য ছিল যে, এরকম লেনদেন ইহুদীর সঙ্গেও করা জায়েয। অথবা এর কারণ ওই সময় হয়তো নিকটবর্তী কোনও সাহাবীর কাছে বাড়তি খাদ্যশস্য ছিল না। এমনও হতে পারে যে, তিনি আশঙ্কা করেছিলেন কোনও মুসলিমের নিকট থেকে গ্রহণ করলে সে এর বিনিময় নিতে চাবে না, আর বিনামূল্যে দেওয়ায় তার হয়তো কষ্ট হবে। কেননা অসম্ভব তো নয় যে, তার কাছে অতিরিক্ত খাদ্যশস্য খুব বেশি নেই। যতটুকু আছে তা তার কাজে লাগবে। হয়তো বিক্রি করে অন্য কোনও প্রয়োজন মেটাবে। এ অবস্থায় বিনামূল্যে দিয়ে দিলে তার উপর চাপ পড়বে। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রিয় সাহাবীদের কোনও রকম কষ্ট দিতে চাচ্ছিলেন না। এ কারণেই তিনি তাদের কাছ থেকে না নিয়ে ইহুদীর কাছ থেকে নিয়েছিলেন।
হাদীছটি দ্বারা বোঝা গেল নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওফাত হয়েছিল দেনাদার অবস্থায়। অথচ এক হাদীছে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
نفس المؤمن معلقة بدينه حتى يقضى عنه
মুমিনের আত্মা তার দেনার সঙ্গে ঝুলে থাকে, যতক্ষণ না তা পরিশোধ করা হয়।
কেউ কেউ এ কারণে বলেছেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দেনা বাবদ বর্ম বন্ধক রাখলেও তিনি ওফাতের আগে আগে দেনা পরিশোধ করে তা ছাড়িয়ে এনেছিলেন। কিন্তু আলোচ্য হাদীছটিতে যখন পরিষ্কার বলা হয়েছে যে, বন্ধক রাখা অবস্থায়ই তাঁর ওফাত হয়েছিল, তখন এরূপ কথা বলার কোনও সুযোগ নেই। সঠিক কথা হল দেনার দায়ে আত্মা আটক থাকে তখনই, যখন দেনা পরিশোধের কোনও ইচ্ছা না থাকে কিংবা পরিশোধের কোনও ব্যবস্থা না রেখে যায়। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেহেতু বর্ম বন্ধক রেখেছিলেন, তাই এটা তো পরিষ্কার যে, তিনি দেনা পরিশোধের ব্যবস্থা রেখে গিয়েছিলেন। বর্ম বিক্রি করলেই দেনা পরিশোধ হয়ে যেত।
অন্য বর্ণনা দ্বারা জানা যায় যে, হযরত আবূ বকর সিদ্দীক রাযি. নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওফাতের পর মূল্য পরিশোধ করে বর্মটি ছাড়িয়ে এনেছিলেন। কোনও কোনও বর্ণনা দ্বারা জানা যায়, হযরত আলী রাযি.-ই দেনা পরিশোধ করেছিলেন। আবার এক বর্ণনা দ্বারা জানা যায় হযরত আবূ বকর সিদ্দীক রাযি. বর্মটি ছাড়িয়ে এনে হযরত আলী রাযি.-এর হাতে সমর্পণ করেছিলেন।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. যারা দীনের উপর মজবুত থাকা অবস্থায় অভাব-অনটনের ভেতর ইন্তিকাল করে, তারা বড় ভাগ্যবান। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শের উপরই তাদের মৃত্যু হল।
খ. অভাব-অনটনের মধ্যে যাদের দিন কাটে, এ হাদীছের ভেতর তাদের জন্য সান্ত্বনার বাণী আছে যে, প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো অভাব-অনটনের মধ্যেই ইহলোক ত্যাগ করেছেন।
গ. এ হাদীছ দ্বারা জানা গেল যে, অমুসলিমদের সঙ্গে লেনদেন করা জায়েয আছে।
